সারারাত পেটের যন্ত্রণা। গায়ে জ্বর। ফণীর বউ পাশে ঘুমিয়ে। ফণীর বাড়ির বারান্দায় এখনও প্যাণ্ডেল খোলা হয়নি। মেয়েটার বাৎসরিক কাজ ছিল। নাইনে পড়ত। যে ছেলেটাকে ভালোবাসত সে ছেড়ে গেল, মেয়েটা মায়ের নতুন কেনা শাড়ি পাখাটায় লাগিয়ে ঝুলে গেল। পাখাটা বদলে নিতে বলেছিল পাড়ার পুরোহিত। বদলায়নি, বেচে দিল হাফ দামে, ফণীর মামা কিনে নিল। এক বছর হল বাড়িতে পাখা নেই।
ফণী আবার পায়খানা গেল। বমি হল। পাতলা পায়খানা হচ্ছে। পেটটাও মোচড় দিচ্ছে সাংঘাতিক। ফণী ডাকল না বউকে। জানলার ধারে এসে শুলো। গরমকাল। হাওয়া দিচ্ছে বেশ। তার পরনে কিচ্ছু নেই। উপুড় হয়ে শুয়ে। মেয়েটা ঘরের মধ্যে হাঁটছে। পাখাটা খুঁজছে। ফণী জানে সে তাকালেই মেয়েটা চলে যাবে। মেয়েটা আলমারি খুলছে, শাড়ি খুঁজছে, কিন্তু ঝুলবে কোথায়? বাড়ির সামনে দুটো নারকেল গাছ শুধু।
ফণীর পেটটা আবার টাটাচ্ছে। উঠতে গিয়েই মাথাটা ঘুরে গেল। শুয়ে পড়ল। খুব ঘাম হচ্ছে। বুকটা ধড়ফড় করছে। ব্যথা করছে চিনচিন করে। মেয়েটা মাথার কাছে এসে দাঁড়ালো। ফণী তাকাবে না। ওর মা ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক। ওর মাথা ঠিক নেই। মেয়ের কাজের দিন বেণারসী পরে ঘুরেছে সারাদিন, সে জানে তার বিয়ে হচ্ছে। ফণী কিছু বলেনি। পাড়ার লোক হেসেছে। ফণীও হেসেছে।
ফণী মারা গেল। তার বউ বুঝল না। পাড়ার লোকে তার শাঁখা ভাঙল, ফণীর বউ চড় মারল। তাকে থান পরালো৷ ফণীর বউ আলতা পরে ঘুরল। ফণী আর তার মেয়ে দুটো নারকেল গাছের মাথা মুড়িয়ে দিল বর্ষায়, বাজ ফেলে। গ্রামের লোক নারায়ণ পূজো দিল। ফণী আর ওর মেয়ে পুকুরের জলের সব মাছ পচিয়ে দিল, গ্রামের লোক শনিপূজো দিল। ফণী আর ওর মেয়ে মিত্তিরদের বাচ্চাটাকে দু'দিনের জ্বরে মারল, ভটচাযদের বউটার গায়ে আগুন দিল, কুণ্ডুদের সব ফসলে পোকা ধরালো, গ্রামের লোক রক্ষাকালী পূজো দিল। তার পরেও যখন গ্রামের ছ'টা বাড়ি পৌষে পুড়ে ছাই হল, ওরা বুঝল ফণীর বউ এ গ্রাম না ছাড়লে ফণী আর ওর মেয়ে গ্রাম ছাড়বে না।
পাড়ার কয়েকজন পুরুষ রাতে ফণীর বাড়ি গেল। ফণীর বউকে পাওয়া যায়নি আর। কেউ বলে, সারারাত চীৎকার শুনেছে, দশজন পুরুষের পুরুষত্ব, মাগীর নাকি ইয়ের জোর আছে। ফণীর পাশের বাড়ির ঘোষের ছোটোবউ দেখেছে রক্তাক্ত ফণীর বউয়ের ল্যাংটো শরীর ভ্যানের সাথে বাঁধা। ডাইনীর মত দেখাচ্ছিল। সত্যিই সেই প্রথম সে ডাইনী দেখল। তার মাথার কাছে বসে ফণী আর তার মেয়ে। সামনে দশজন ধর্ষক, গ্রাম রক্ষক পুরুষ। গ্রামটা বেঁচে গেল।