Skip to main content

দাবা

ইনি সুবিবেচক হিসাবে পরিচিত ছিলেনই। ইদানীং একটি ঘটনায় ইনি যে কত উচ্চ উদার হৃদয়বান পুরুষ তার প্রমাণ পাওয়া গেল। সংসারে এরূপ উদাহরণ সত্যিই বিরল। 
        ইনি তাহার কাকার (Sagar Sil) ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিলেন একটি অজ্ঞাত বস্তু খাটে শোভা পাইতেছে। অজ্ঞানতা উন্নতির অন্তরায়, ইনি বিশ্বাস করেন। সেই হেতু জিজ্ঞাসা করিলেন কাকাকে, ইহা কি বস্তু? কাকা উত্তর করলেন, এটি দাবা।
...

৩০শে জানুয়ারি

(যিনি কাউকে উদ্বিগ্ন করেন না, বা কারোর দ্বারা উত্তেজিত হন না, তিনিই আমার প্রিয় ভক্ত - গীতা)
আমার জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ভারতবর্ষ
আমার বোধ-মন্থনজাত ভারতবর্ষ
আমার তিনটে বুলেটে স্তব্ধ ভারতবর্ষ

সমাজ

মানুষ যা যা কিছুকে অত্যন্ত করে চায়, তার প্রধানতম হল সমাজ। সে নিজেকে দেখতে চায় সমাজের আয়নাতেই। সমাজ তার অস্তিত্ব। তার পায়ের তলার মাটি। ব্যক্তি আর সমাজের মধ্যে যে দ্বন্দ্বটা আমরা দেখি, সেটার মূলে আসলে গঠিত, জীবিত সমাজ বনাম আমার কল্পিত, ধী-দৃষ্ট সমাজ। ব্যক্তি বলে যা আমরা বুঝি, তা একটা মৌলিক অস্তিত্ব তো কিছুতেই নয়। না হলে অভিব্যক্তি কথাটা অর্থহীন হত। দীর্ঘকালের ধারাবাহিক এক প্রক্রিয়ার ক্ষণিক বুদবুদ এই ব্যক্তিসত্তা। এমনকি জীবনবিজ্ঞানের কথা অনুযায়ী গর্ভস্থ একটা ভ্রূণকেও তার প্রাচীন গতিপথের ধাপগুলিকে একবার করে স্মরণ করতে করতে আসতে হয় – ব্যক্তিজনি জাতিজনিকে স্মরণ করে – বিজ্ঞানী হেকেল মহাশয়ের অসামান্য পর্যবেক্ষণ।
...

ক্যানভাস

প্রেমের কবিতা স্মার্ট হয় না
আবার বোকা বোকা কথাই বা লিখি কি করে? 
দেখো বাপু, ভালোই তো বেসেছি শুধু
  তা বলে, "যেমন খুশী সাজো" প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিতে বোলো না

ভয়

ভয়, খোলা শামুকের মত হাঁটবে
  ভিজে জবজবে হবে সারা গা - 
       এত জায়গা দিই না আর
  ভয়ের মাথায় হাত রাখি
      শামুকের মত গুটিয়ে যায়
          গা থেকে গড়িয়ে পড়ে হড়হড় করে

ভক্ত

তো হল কি তিনি খুব ভক্ত মানুষ। অনেকটা পথ হাঁটছেন। শরীর আর দিচ্ছে না। বেজায় ক্লান্ত। রামকে কাতর হয়ে মনে মনে প্রার্থনা জানাচ্ছেন, হে রাম, হে প্রভু, আমায় একটা ঘোড়া পাইয়ে দাও, আর তো হাঁটতে পারছি না। 
        খানিক পর দেখা যায় রাস্তার উপর সত্যিই একটা ঘোড়া। ভক্ত উৎফুল্ল হয়ে "জয় প্রভু, জয় রামজীকী" বলে চড়ে বসে। ও বাব্বা! খানিকটা পথ যেতে না যেতেই ঘোড়াটার পা গেল মচকে। ঘোড়া আর চলতে পারে না। ওদিকে দয়ালু, শ্রান্ত ভক্তও অমন অসুস্থ ঘোড়াকে মাঝপথে একলা ফেলে আসতে পারে না।

বৃষ্টি

বৃষ্টি থাকে বাসুদেবপুরের জঙ্গলের মধ্যে। তার এক ভাই গৌর, আরেক ভাই নিতাই। বৃষ্টি ক্লাস ফাইভে পড়ে। মিড ডে মিলে সয়াবিন, ডিম, ডাল, ভাত পায়। বৃষ্টি টুইংকেল টুইংকেল বলতে পারে। বাংলা কবিতাও মুখস্থ বলতে পারে। সে হাতির পায়ে থেঁতলানো মানুষের মাথা দেখেছে। ভয় পায়নি নাকি। গৌর অমনি বলল, তুই ডর পাসনি? বৃষ্টি হেসে বলল, লা!

ছড়ানো ছেটানো

ছড়ানো ছেটানো 
    এবড়ো খেবড়ো 
        টুকরো টাকরা ভালোবাসা
    এখানে সেখানে 
                   হেলায় ফেলায়

সুবর্ণ

ছেলেটা মেয়েজাতটাকে ভালোবাসতে পারতো না, তাই শ্রদ্ধা করত প্রাণের সমস্ত শক্তি দিয়ে। কারণ যাকেই না শ্রদ্ধা করি তা-ই বিরুদ্ধ শক্তি হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েজাতের মত এত বড় একটা শক্তিকে বিরুদ্ধসত্তা বানিয়ে লড়তে চাইলে মনের শান্তি বিঘ্নিত হয়। তাই সুবর্ণ মেয়েদের শ্রদ্ধা করত। সে নিজেও কারণটা স্পষ্ট বুঝত না যদিও। কিন্তু সে খেয়াল করত মেয়েদের নারীরূপটা সে মেনে নিতে পারে না। সেটা যেন পাশ্চাত্য সভ্যতার একটা বিকাররূপ তার কাছে। মেয়ে মানে মা। মেয়ে মানে একটা আশ্রয়। এমনকি ভারতীয় মেয়েদের পর্ণও দেখলে অসহ্য লাগত সুবর্ণ'র। ওরকম হয় না ভারতীয় মেয়েরা।

দেখা হয়ে ছিলো

দেখা হয়ে ছিলো
      মনে আছে
মনে-ই রয়ে গেল 
   দেখা হয়ে ছিলো

কাল কি হল থেকে হেলমেট দেবে না নিয়ে যেতে হবে সাথে করে?

কাল কি হল থেকে হেলমেট দেবে না নিয়ে যেতে হবে সাথে করে? কোর্টের অর্ডার পড়ি নাই। তাই সাদা মনে জিগাইতেসি। আমার যদিও বামুনের শরীর। তায় রক্ষে পাব কি না কে জানে? রাজপুতেরা কি পৈতে দেখে ভয় খায়? কে জানে বাপু।          আর একটা কথা, ক্যালানি খাওয়া, থুড়ি মার খাওয়ার (কি ম্লেচ্ছ ভাষা বেরিয়ে গেল হাত ফসকে, আসলে নার্ভাস ফিল করছি) আগে রাজপুত চেনে কি করে? তাইলে আগে থাকতে সাবধান হই আর কি! 

তাই তো বরাবর ছিল

তাই তো বরাবর ছিল
        যা এখন আছে
আমিই চেয়েছিলাম অন্যরকম হোক
...

পারলে অন্য কিছু ভাবো

সবই কি ভালো লেগেছিলো ?
লাগে নি তো
তবু তো পসরা সাজিয়ে বসেছি রোজ 

উঠে যেতে ইচ্ছা তো করেছিল লক্ষবার
উঠিনি তো। পালাবো কার থেকে?
ভাগ্য আর মন
    পালালেও কি শান্তিতে থাকবে?
...

ভারতীয় রেলের, প্লেনের লোগো আছে

ভারতীয় রেলের, প্লেনের লোগো আছে। দেশ বিদেশের সব বিখ্যাত, কম খ্যাত, অখ্যাত কোম্পানীর লোগো আছে। আগে কুইজে লোগো দেখিয়ে প্রশ্ন করত - বলো তো খোকা এটা কিসের লোগো? 
        সব খেলাগুলোরও আছে। নামী নামী ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, টেনিস ইত্যাদি খেলার রোজকার ফলাফল যখন কাগজে বেরোয় তখন বাঁদিকে উপরে ছোট্ট করে একটা লোগো আঁকা থাকে। দেখেই বোঝা যায় কোন টুর্নামেন্টের কথা লিখছে। 
...

পারলে অন্য কিছু ভাবো

সবই কি ভালো লেগেছিল?
লাগেনি তো
তবু তো পসরা সাজিয়ে বসেছি রোজ হাসিমুখে

ভবাকান্তবাবু

ভবাকান্ত দুপুরে ভাত আর অল্প একটু ডাল তরকারি খেলেন। বাইরের বারান্দাটায় এখন রোদ। খেয়ে উঠে বসবেন। খাওয়ার থেকে রোদে বসার তাড়া বেশি। 
        গায়ে একটা শাল। শালটার বয়েস পঁচিশ। তার বয়েস একাশি। চেয়ারে বসলেন। মুখটা রোদের বাইরে রেখে চোখ বুজে শুলেন। মাইকের গান আসছে "চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো"। সামনের ক্লাবে চলছে। উপরে পতাকা, নীচে নেতাজি। চারদিকে চারটে দড়ি। তাতে ছোটো ছোটো পতাকা। যাননি এবার দেখতে, তবু জানেন। নেতাজির জিলিপি খেতেও মন চায়নি। অম্বল হয়। কম দামী তেলে ভাজা। 
...

সবই তো আছে

সবই তো আছে। নেতা আছে, নীতি আছে, ধর্ম আছে, ধর্মস্থান আছে, গুরু আছে, শিষ্য আছে। তবু কি যেন নেই। কার যেন একটা অভাব। কত পাণ্ডিত্য আছে। কত গবেষণা আছে। কত বড় বড় প্রতিষ্ঠান, কত চিন্তাবিদ আছেনই তো। তবু কি যেন নেই, কি যেন নেই। 
        সুভাষচন্দ্রের ভাষণ দিতে গিয়ে কণ্ঠ অবরুদ্ধ হয়েছে এমন ঘটনা ঘটেছে। মোহনদাস গান্ধী নুন বানাতে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ সাড়া দিয়েছে – ইতিহাস সাক্ষী। সুভাষ বা গান্ধী কেউই তাদের মতাদর্শ অনুসরণ করলে চাকরি দেবেন এমন কথা দেননি। তবু মানুষ গেছে। মেরেছে। মরেছে।

বাংলা ভাষার গান কি শুধু শিক্ষিত মধ্যবিত্তের

বাংলা ভাষার গান কি শুধু শিক্ষিত মধ্যবিত্তের? আরেকটু নিচুতে নামলে বাংলা গানের সাথে কি নিজেকে 'রিলেট' করতে পারেন না বাঙালী? নাকি ওই রিদম, ওই ভাষার ঝোঁক বাংলা গানে হয় না। অবশ্য একটু বদলিয়ে মধ্যবিত্ত বাঙালী কথাটাও সরিয়ে দেওয়া যায়। বলা যায় এক ধরনের বাঙালী, মনে যাকে সংস্কৃতি মনস্ক, বা আঁতেল ইত্যাদি বলা যায় তারা ছাড়া সব্বাই হিন্দিগানের আবেগের সাথেই দেখি সহজ। 
...

ভাগ্যিস তুমি তুমিই

ভাগ্যিস তুমি তুমিই, নইলে আমার পাশের বাড়ি আমার এত পাশের হত না। ওই যে প্রদীপটা জ্বলছে তুলসীমঞ্চের নীচে ওর উষ্ণতায় আমার বুক পুড়ত না। ওই যে চারজন মহিলা, অল্প টাকার খুব দামী শাড়ি পরে টোটো থেকে নেমে অপরাধীর মত মুখ করে বলল, বাড়িটা একটু দেখব (যেন আমি এই বাড়ির রক্ষক), ওদের আঁচলের গন্ধে আমার গরম ভাত আর আলুসিদ্ধ মাখা আটপৌরে গন্ধ পেতুম না। এত মানুষের মধ্যে হয়ত পরবাসী হয়ে জীবনটা কাটত। জীবনটা ধুলোমাখা হয়ে চোখে মুখে লেগে থাকত কি? জানি না।
...

সেদিন বেসিনে মুখ ধুচ্ছি

সেদিন বেসিনে মুখ ধুচ্ছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম বেসিনের সাদা রঙের উপর আরেকটা উজ্জ্বল সাদা আলো। বুঝলাম বেসিনের উপর যে ছোট্ট জানলা সেই দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়েছে। এ যেন হঠাৎ করে বাড়তি একটা পাওয়া। মন চমৎকৃত হল। খুব দূরের অধরা কিছু আজ যে তার নাগালের মধ্যে, সে যে কি পুলকিত হল, তা বলার নয়।

বিশ্রাম

সব যন্ত্রপাতিগুলো ব্যাগে ভরে মিস্ত্রীটা বাড়ি ফিরে গেল খানিক আগে
      সন্ধ্যা হল। এবার বিশ্রাম নেবে ও। আজ আর কাজ না।

    সন্ধানী চোখদুটো আমার 
            অভিধানে বিশ্রামহীন এখনও

রজঃস্বলা

তুমি রজঃস্বলা। তুমি ঠাকুরঘরে যেয়ো না। তুমি কোনো পবিত্র কাজ কোরো না। তুমি অপবিত্র। তুমি অশুচি। 
        এর বিরুদ্ধে একজন গর্জিয়েছিলেন। বহু আগে। আমি ঋতুচক্রের উপর বিভিন্ন ধর্মের মনোভাব পড়ছিলাম। ক্রিশ্চিয়ানিটি, হিন্দুধর্ম, ইসলাম সবার মতে অশুচি। চমকে উঠলাম গুরুনানকের দৃষ্টিভঙ্গি পড়ে। অনুগ্রহ করে পড়ুন। আর এই প্রথাটা ভাঙতে শুরু করুন আজ থেকেই। নিজের বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে অন্ধকার জমতে না দিলে বাইরেও জমতে পারবে না। 
...

দেখো

জীবনটা কি সুন্দর গুছিয়ে নিয়েছি দেখো
পছন্দ করে করে, কত ঘুরে ঘুরে রঙ বেছেছি যদি জানতে!
   কত রকম আলো লাগিয়েছি এ কোণা, সে কোণায়
      কোনো কোণায় যদি পাও এক রত্তি অন্ধকার, আমায় বোলো!
...

ভালোবাসা

ভালোবাসা আর ভালোবাসার পাত্রটি কি এক বস্তু? তা তো নয়। আলোতে যাকে দেখি, তাকে আলো বলে ভুল করি না, কিন্তু যাকে ভালোবাসি তাকেই ভালোবাসা বলে কতবার ভুল করে বসি। তারপর তার থেকে যখন আঘাত আসে, তখন ভাবি ভালোবাসা বলে সংসারে যা আছে তা বুঝি কেবলই ফাঁকি, মিথ্যা। এতে শুধু যে গাছটা শিকড় উপড়িয়ে মাটিতে পড়ে তাই না, মাটিটাকেও বলে, 'তুমি - মিথ্যা, মায়া, কুহক।'
...

Some thoughts

'When one person suffers from a delusion, it is called insanity. When many people suffer from a delusion it is called Religion.' ~ Robert Pirsig.
I want to add one line more.
...

খাঁচা

যদি খাঁচা খুলে বাইরে আসো
   যদি দাঁড়াও
      খাদের কিনারার শেষ পাথরটায় সাহস করে
...

রজনী

পয়মালের জামা। রজনী নিজের শুকনো কাপড়টা তুলতে তুলতে খেয়াল করল। পয়মাল ইচ্ছা করে তার শাড়ির পাশে মেলে গেছে। রজনী আড়চোখে একবার নিত্যকে দেখে নিলো। নিত্য খেয়াল করেনি। সে ধান সিদ্ধ করতে মশগুল।
        রজনীর গায়ের রঙ কালো। বিয়ের সময় একেবারে ছিপছিপে গড়ন ছিল। লোকে বলত কেউটে। তার চোখে, চলনে নাকি বিষ। অবশ্য বিষ ছিল বলেই বাপটা মরার পর গ্রামে টিকতে পেরেছিল। নইলে ছিঁড়ে খেত তাকে শকুনের দল।
...

ভিড়

যদি প্রশ্ন করতে
   হয়ত উত্তর দিতাম
প্রশ্ন এড়িয়ে যেতে যদি
   হয়ত চুপ থাকতাম
...

লজ্জা

Shame মানে কি? লজ্জা। Shy মানে কি? লাজুক। তবে নির্লজ্জ মানে কি? Shamless না Shyless? 
        কঠিন কথা।
        "লোকটার লজ্জা নেই গা? এত টাকা মাইনে পায়, তাও এত টাকা ঘুষ নেয়!" কিম্বা "বাড়িতে বউ থাকতেও কেন পরের বউ নিয়ে এত ঢলাঢলি বুঝি না বাপু! লজ্জাও করে না?"
...

দিনগুলো

একদিন এমনও হল
পায়ের উপর ঢেউ গড়ালো
ঢেউ বেয়ে এক ঝিনুক এলো
ঝিনুক ঘেরা মুক্ত মিললো

মকর সংক্রান্তি

বাইরে আছি। বাবার ফোন এলো হঠাৎ। একটু লজ্জা লজ্জা গলা। "হ্যাঁ রে মিষ্টির দোকানে পাটিসাপটা করে না? দেখিস তো পাস যদি আসার সময়। আসলে আজ মকর সংক্রান্তি তো। তোর যদিও এসব জানার কথা না। ..না পেলেও ক্ষতি নেই কোনো"। 
        আমার গল্পের তার কাটল। মকর সংক্রান্তি মনে ছিল। ফেসবুকের নানা ছবিতে মকর সংক্রান্তি আর পিঠের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছিল। বাবারও যে মনে আছে বুঝিনি। আশেপাশের জ্ঞানীগুনী লোকরা বলেন, "বিয়ে না করলে এগুলো সইতে হয়"। শুনে হাসি পায়। ভাগ্যে মিষ্টির দোকানী এই তত্ত্বে বিশ্বাসী নয়। 
...

ছবি তুলিয়ে আমি নই

ছবি তুলিয়ে আমি নই। বাড়ি থেকে কিছুদূর হেঁটে আসতেই সব বদলিয়ে যায়। শীতের দুপুর। ঠাণ্ডা হাওয়া। কুয়াশায়ার আদরে ঢাকা চারপাশ। সব মিলিয়ে মনে হল ফেলি না হয় তুলে কয়খান ছবি। 
        ধানকাটা মাঠ, ছোটো নীল ফুল, সরষে ফুলের সাগর, কুয়াশায় কোমল সূর্যের তেজ কিছু পাঠালাম। যা পাঠাতে পারলাম না তা হল মানুষের কোলহল আর যন্ত্রের আওয়াজহীন পাখিদের ডাক, তাদের নিঃসঙ্কোচ উড়ে যাওয়া, মলিন বস্ত্রে চাল ঝাড়া বৃদ্ধার হাসিমুখে সতর্কবাণী উচ্চারণ ..."কাছে আসবেন না...আপনারা ভদ্রলোক..গায়ে ধুলোবালি লাগবে যে"...

এদিকে টোটো পাওয়া যাবে

বাইক সার্ভিসিং হচ্ছে। দাঁড়াতে হবে বেশ কিছুক্ষণ। মাইকে শুনছি তত্ত্বকথা, "অজ্ঞানের এ সংসার। মায়ায় আবদ্ধ আমরা। কেন একটা থাকলে দুটো চাইবেন? অল্পে তুষ্ট হতে শিখুন। সংসারকে ঈশ্বরের করে তুলুন। গোলকের মত"।
...

বিবেকানন্দের ঈশ্বর কে ছিলেন?

“আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছেন”? 
        উত্তর এলো “হ্যাঁ দেখেছি” শুধু না, “তোকেও দেখাতে পারি”। দেখালেন। তিনি ছুঁয়ে দিতেই নরেনের বিশ্বজড়বোধ লোপ পেয়ে যায়। বিশ্ব চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তার চেতনা। সেকি ঈশ্বর দর্শন? এরপরেও তিনি শোনেন তাঁর গুরুই এই বিশ্বসংসারের বিশ্বপিতা, “যে রাম, যে কৃষ্ণ, সেই রামকৃষ্ণ”। সেই কি তবে ঈশ্বরদর্শন? না, তাতেও তো শান্তি হল না তাঁর! অথচ শাস্ত্র বলছেন একবার ঈশ্বরকে লাভ করলেই মানুষ চিরশান্তিতে ডুবে যায়, তার নাকি আর কিছুরই তৃষ্ণা, খোঁজ থাকে না? সে নাকি ‘তৃপ্ত ভবোতি... স্তব্ধ ভবোতি... অমৃত ভবোতি’ হয়ে যায়? হল না তো নরেনের বেলায়। 
...

ততটা অনিশ্চিত হয়ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নই

ততটা অনিশ্চিত হয়ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে নই, যতটা মানুষের মনুষ্যত্ব নিয়ে হই
জানি আমি আগে বহুবার লিখেছি। আবারও লিখছি। পাকিস্তান হলেও লিখছি। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তেই ঘটুক না কেন লিখছি। কারণ আমি আর কিছু করতে পারি না। 
...

এমন হোক

এমন হোক
ফেরার তাড়া না থাকুক

অপেক্ষায় আছি
  আমার তাড়া নেই

আগাছা

গাছটার নাম জানি না। এক হাত তার দৈর্ঘ্য হবে। ফুলের বালাই নেই। কয়েকটা শ্রীহীন এবড়ো খেবড়ো সবুজ পাতা আর খয়েরি খয়েরি সরু লিকলিকে কান্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক মাস হল মাটির উপরে। মাড়িয়ে গেলেই হয়, এমনই বিপদসঙ্কুল অবস্থান তার। চোখে পড়ার মত কোনো গুণ নেই, কিন্তু পায়ে আটকাবার মত পাতার খোঁচা তার।
...

পর্ণা

পর্ণা সানন্দাটা ভাঁজ করে কোলের উপর রাখতেই চমকে উঠল, সামনের প্ল্যাটফর্মে অনিকেত। অনিকেত দেখেনি। একটা চেয়ারে বসে খবরের কাগজে ডুবে আছে। সেই পুরোনো অভ্যাস।
        পর্ণা শ্যামনগর যাবে। সেখানে একটা হাইস্কুলে ভূগোল পড়ায়। পর্ণার ডিভোর্স হয়েছে বছর নয়-দশ হল। বিয়ে অনেক কম বয়সে হয়। তখন পর্ণা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেছে। অনিকেতরাও নাগেরবাজারেই থাকত। তার থেকে বছর তিনেকের বড়, সদ্য মার্কেটিং এগজিকিউটিভের চাকরি পেয়েছিল একটা ওষুধ কম্প্যানীতে।
...

সংশয়

সন্ধ্যায় পসার সাজায়ে বসিয়াছে 
   ব্যবসায়ীকূল পথপাশে 
      মনোহারী নয়নাভিরাম সাজে
তীব্র তীক্ষ্ণ উত্তরের বাতাস নখদন্ত মেলি
   ফিরিতেছে পথেঘাটে আপন শিকার লাগি,
      ক্ষণিক অসতর্কতায় আছাড়ি পড়িছে দেহে
                    হিম-দংশন, কোনো ক্ষমা নাহি

তোমায়, না আমায়?

তোমার শরীর মাড়িয়ে রোদ নামেনি কোনোদিন
তোমার বৃষ্টিভেজা চুলের ছাঁট পড়েনি কোনোদিন বারান্দায় 
তোমার ছাদে শুকোতে দেওয়া কাপড় 
কালবৈশাখী উড়িয়ে নিয়ে প্রতিবেশীর ছাদে ফেলেনি কোনোদিন

হিন্দুরা মানুষ-পুজো করতে ভালোবাসে

অবনী কান্ত মাজি । বলুন তো কে? পারলেন না তো? বলছি, একজন আশি ঊর্ধ্ব ধনবান হৃদয়বান মানুষ। কি করেছেন জানেন? বিশাল কাজ, এক্কেবারে যাকে বলে সমাজসেবার চূড়ান্ত। তার জন্য ওনাকে সম্বর্ধনাও জানানো হয়েছে অবশ্য। কারা জানিয়েছেন বলুন দিকিনি? রামকৃষ্ণ মিশন সেবা প্রতিষ্ঠানের সন্ন্যাসীরা।
...

কারোর সাথে কথা বলা মানে যেন হাঁটতে যাওয়া তার সাথে

কারোর সাথে কথা বলা মানে যেন হাঁটতে যাওয়া তার সাথে। কোনো একটা বিষয়ে কথা শুরু হওয়া মানে যেন কোনো একটা রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু হওয়া। খানিকটা এগিয়ে এলো মোড়। অনেকগুলো বিষয়ে যাওয়ার অবকাশ। কে সিদ্ধান্ত নেবে, কোন দিকে যাওয়া হবে? কোনো কথা যাবে সমুদ্রের ধারে, কোনো কথা যাবে জঙ্গলে, কোনো কথা যাবে বাজারে, কিম্বা হেঁশেলে, কখনও বা নিষিদ্ধপল্লীতে। কেউ একজন সিদ্ধান্ত নিল, কথা চলল সেই পথে, মানে আবার হাঁটা তার সাথে। চলতে ভালো লাগল তো এগোনো গেল, নইলে খানিক এগিয়ে আবার গলি খোঁজার চেষ্টা, পথ বদলাতে হবে যে।
...

ঝাঁটা

রোজ সকালে আধঘন্টা ধরে ঝুঁকে পুরো উঠোনটা ঝাঁট দিতে হয় রুকমির মাকে। আজ পঁচিশ বছর ধরে দিয়ে আসছে। তার আগে তার শাশুড়ি দিত - অশোকের মা। 
        রুকমির মায়ের অসহ্য লাগে। শরীরখারাপের সময়টা আর শীতের সময়টা। ভেবেছিলো অশোকের মা ঘাটে উঠলে এই ঝাঁটা দেওয়ার চলটা উঠিয়ে দেবে। মাসে একবার কি দুবার দেবে। শরীরখারাপের পর আর কম শীতের সময় বাদ দিয়ে।
...

কবরস্থান

        লোকটা উঁচু পাঁচিলটা টপকিয়েই বুঝল কবরস্থানে ঢুকে পড়েছে। উপায় ছিল না, বড় দরজাটায় তালা। না টপকিয়ে ঢুকত কি করে? 
        শীতের রাত। কুয়াশা কুয়াশা চারদিক। কেউ একটা বসে না? কাছে গিয়ে দেখে একটা লোক, তার দিকে পিছন ফিরে। তার পাশে একটা ক্রাচ রাখা।
...

বিষয়ীর দেবস্বপ্ন

লুচ্চকবাবু কালরাতে স্বপ্ন দেখে কেঁদেছেন। কেউ জিজ্ঞাসা করলেই ঠাকুরঘরের দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন। কথা বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসক এসে বলেছেন ঘুমের ঘোরে তীব্র মানসিক আঘাত পেয়ে শিরা-ধমনী-স্নায়ু গিট্টু পাকিয়ে গেছে।
        লুচ্চকবাবু আর কয়েক ঘন্টা টিকলেন। যতক্ষণ টিকলেন ঠাকুরঘরের দিকে আঙুল তুলে, 'উঁ উঁ' করে কিছু বলতে চাইলেন। ওনার স্ত্রী, দশ ছেলে, দশ ছেলের বউ, চল্লিশটা নাতি-নাতনি, পাঁচশো দাসদাসী ভাবলে, কত্তাবাবার ঈশ্বরদর্শন হয়েছে।
...

ভালোলাগা

সূর্যের আলো কাঞ্চনজঙ্ঘায় লেগে বিচ্ছুরিত হোক
   কি ঘাসের আগায় জমা শিশিরবিন্দু থেকে
   তুলনার প্রাচীর টেনে
        ভালোলাগাকে খণ্ডিত করি না
           অপমান করি না সূর্যকেও

শিক্ষার অন্ধকার

আজ রামকৃষ্ণ জিতে গেলেন। বলেছিলেন না, “চালকলা বাঁধা বিদ্যা আমার চাই না”। কি স্পর্ধা না এক মূর্খ বামুনের? এতবড় এডুকেশান সিস্টেম, এত কোটি কোটি টাকা খরচ করে শিক্ষিত মানুষ তৈরির উপায়। এত গবেষণা, এত গবেষক, এত শিক্ষক, এত অধ্যাপক, এত স্কলার... সব শেখালো, শুধু অসুস্থ মাকে কি করে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, সেবা করতে হয়... না ‘সেবা’ কথাটা আবার সেকেলে, কি করে take care করতে হয় আর শেখাল না। 
...

সন্ন্যাসী

সন্ন্যাসী ঘাটে এসে দেখলো, ঘাটে একটাই নৌকো বাঁধা। কারা দুজন যেন মুখোমুখি বসে। কুয়াশায় অস্পষ্ট চারদিক। গভীর সংশয়ের মত শীত। সে নৌকার আরো কাছে এলো। নৌকায় ঈশ্বর আর এক যুবতী মুখোমুখি বসে।
...

মরিব, মরিব সখী

মরিব, মরিব সখী, শৌচেই মরিব
   এমন হাড়-হিম করা বারি হে প্রিয়
      কেমনে শ্রী-অঙ্গে দিব..
কেমনে দিব...আহা, এমন হাড়-হিম করা
   কলমুখাধারা কেমনে অঙ্গে ঢালিব..

ডারউইন

      আচ্ছা চার্লস ডারউইন কি কর্মফলে বিশ্বাসী ছিলেন? না, ধরুন বুদ্ধের জাতকের গল্প উনি পড়েছিলেন কিনা তো আমরা জানি না, যদি পড়তেন, তবে কি বিবর্তন তত্ত্বের একটা নতুন দিশা পেতেন? 
        "Origin of species by means of Karma" - কি লেখা হত না? 
...

প্রেম

আজ সকালেই হাবুডুবু খাওয়া প্রেমে পড়েছি,
জানতে চাইছ কার?
...

অবিন্যস্ত

তোমার অবিন্যস্ত চুল সব এলোমেলো করে দিয়ে গেল
আমার ঘর জুড়ে যে সাজানো গোছানো শান্তি ছিল
...

রাত অনেক হল

রাত অনেক হল
   না তুমি আসবে
      না তো আসবে ঘুম
...

কয়েক বিঘা

শোক চাইলো কয় বিঘা গো?
কয়েক ছটাক, কয়েক ছটাক 
তোমার আশঙ্কাতেই কয়েক বিঘা 
   তাই নয় কি?
    তাই নয় কি?
...

আধা এবং আধা

মানুষটা একটা ডোবার ধরে থাকত। ডোবার জলে নাইত। তার মাথায় ছিল দিগন্তলীন অসীম এক সমুদ্র স্বপ্ন।
মানুষটা কুঁড়ে ঘরে থাকত। কুঁড়ে ঘরেই ঘুমাতো। বর্ষা-বসন্ত-গ্রীষ্মের সাথে কুঁড়ে ঘরে একা একাই কাটত। তার মাথায় ছিল জন-অরণ্যের একটি প্রান্তে মানুষে ঘেরা ঘর বাঁধার স্বপ্ন।
মানুষটা সিদ্ধভাত একা একাই দুপুরে-রাতে খেত। ডোবার জলেই আঁচাতো। তার মাথায় ছিল এক বিরাট দাওয়তের স্বপ্ন। অযুত নিযুত মানুষ বসেছে খেতে, কোলাহলে সে ছুটে ফিরছে এদিক ওদিক সেদিক - চৌদিকে তার আনন্দ আনন্দ আনন্দ।

তাকিয়ে দেখো

তাকিয়ে দেখো 
তারাটা অনেকক্ষণ উঠেছে 
   ওটা কি ঈশান কোণ?
...

৩রা জানুয়ারি

শীতকালে আমার ভীষণ ভয়
   শীতকাল যেন ICU এর ঠাণ্ডা ঘর
দু নম্বর বেডে মা
শীতকাল যেন কোমাচ্ছন্ন
   মাথার কাছে জানলা
      জানলা দিয়ে অসীম আকাশ
            দাঁড়িয়ে রথ
...

বিশ্বাসী

এতটাও বিশ্বাসী সেজে থেকো না, যে -
  বাইরের দেওয়াল রঙিন রেখে
...

রামকৃষ্ণদেবের ছবি

‘দেশ’ পত্রিকার এবারের সংখ্যাটা হাতে পেলাম। রামকৃষ্ণদেবের অপূর্ব একটা ছবিতে মন আটকালো। লেখাগুলো মন দিয়ে পড়লাম। প্রথম লেখাটা নিয়ে কিছু বলার নেই, অর্থাৎ মার্টিন কেম্পশেনের লেখাটা, কথামৃতের অনুবাদ সংক্রান্ত।
...

রামধনু

ছেলেটা কাদা মেখে পাড়ে উঠল। হাতে কয়েকটা শালুক ফুল। বাজারে যাবে। পরনের গামছাটা খুলে পাড়েই নিংড়ে নিল। লোকজন কেউ নেই। তার লজ্জাও কম। বয়েস বারো। বাবার সাইকেল সরানোর দোকান। মা ঠিকে ঝি। সে এক ছেলে। 
...

নববর্ষ

কিন্তু তবু নববর্ষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। হলই না হয় ম্লেচ্ছদের নতুন বছর। তবু ইহাই আমাদিগের নববর্ষ। বামুনে যাই বলুক। বঙ্গাব্দ সরকার মানে না। কণিষ্কব্দের ক্যালেন্ডার মেলে না। আরো কি কি সব অব্দের কথা ইতিহাসে মুখস্থিয়েছিনু, এহন মনে নাই।
...