পৃথিবী
প্রতিটা মানুষ তার একটা নিজের পৃথিবী নিয়ে ফেরে। তাতে তার নিজস্ব নদী, পাহাড়, বন, সমুদ্র সব আছে। তার হাতে লাগানো বাগান আছে, তার হাতে তৈরী ঘর আছে। সে পৃথিবীতেও তার বাইরের পৃথিবীর মতই ঋতু পরিবর্তন হয়। গ্রীষ্মের তাপ যেমন লাগে, বসন্তে ফুলও তেমন ফোটে। বর্ষা যেমন প্লাবন আনে, শীত তেমন কুয়াশাতেও ঢাকে।
মেঘ-মল্লার
ঝড়
ভেবেছিলাম তুমি আসলে
আমি হব নিশ্চিন্ত
তখনো কি জানতাম
তুমি ঝড়কে নিয়ে ফেরো?
তোমায় ঘরে আনতে গিয়ে
ঘুড়িটা
আকাশ থেকে ছিঁড়ে পড়া ঘুড়িটা
বিদ্যুতের তারে আটকে পরশু থেকে ঝুলছে।
এক একটা দমকা বাতাসে মনে হচ্ছে-
এই বুঝি উড়ে যাবে, একটা গতি হবে।
হল না।
শেষমেশ বৃষ্টির জলে নেতিয়ে
মাথা বুক হেঁট করে, কাঠিগুলো বার করে ঝুলছে।
যারা পরশু থেকে আশা করেছিল, পাড়বে
তারা ওর কথা ভুলে গিয়ে, নীচে দৌড়াচ্ছে।
আমি ভাবছি, কোথায় আটকালো ঘুড়িটার-
নামতে, না উড়তে?
একমুখী
এই মুহুর্ত্তে আমি হাওড়া-যশোবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেসে আছি। সারা ট্রেন থিকথিক করছে বাঙালী। যেন বাঙলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাচ্ছে ট্রেনটা। কিন্তু তা তো নয়। এক রাজ্য ছেড়ে ভিন রাজ্যে এতগুলো মানুষ প্রতিদিন ছুটছে - কাজের জন্য, উচ্চশিক্ষার জন্য। দোকানের কাজ থেকে শুরু করে আইটি-র বড় বড় কম্প্যানীতে কাজ করেন এঁনারা, অনেকের সাথে কথা বলে জানলাম।
নদী
আমার শরীরে-বুকে স্মৃতির নদী
শাখা-প্রশাখায় প্রাণের শিকড় ছুঁয়ে গেছে
কোন শাখাতে কখন লাগে ঢেউ
সে খবর কি তার নিজের কাছেই আছে?
আমি যদি এ বলি,
এসব কথা ভুলেই আমি ছিলাম
সে বলে হেসে
ভোলো নি তুমি, সে কথা জানিয়ে গেলাম।
খেলা
খেলতে খেলতে বুঝিনি
কখন খেলার সাথীর বেলা এসেছিল ফুরিয়ে
তাকে বললাম খেলা শেষে কি খেলা ভাঙতেই হয়?
সে বলল, হ্যাঁ
বললাম, বেশ ভাঙলাম না হয় খেলা,
যদি সত্যি সত্যিই চাই?
সে বলল, এ আবার কি নতুন খেলা করলে শুরু!
সঙ্কল্প
চিন্তার আগাছা কিছু ছাঁটতে হবে
অনেকদিন ধরেই ভাবছি
কয়েকটা মুখভার করা শব্দ অভিধানে রাখব না আর
কয়েকটা মই নামিয়ে রাখব এবার
উঠব উঠব করে বসে আছি আকাশের দিকে চেয়ে
পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে, হাঁটব এবার, ওঠার কথা ভুলে।
কিছু নদীর মুখ ঘুরিয়ে ক্ষেতের দিকে আনতে হবে
আগুন ফাঁদে মারতে হবে কিছু পোকা
চর্বিত চর্বনের পিক ফেলে ফেলে দেওয়ালটা নোংরা করেছে যারা
ফিরব
কি ভাবে কখন বেলা হল বুঝলাম না,
হঠাৎ দেখলাম সূর্যাস্তের রঙ
আমগাছটার মাথায়
পাখিগুলো ফিরছে দল বেঁধে, ঘরে।
আমিও ফিরব, আজ না হয় কাল
এরকম করেই হঠাৎ কোনো একদিন
যখন সূর্যাস্তের আলো সবুজ ক্ষেতকে
দেবে শেষ চুম্বন, পরম আদরে।
টিফিন বক্স
যখন স্কুলে পড়তাম, টিফিন বক্সের একটা রহস্য ছিল। মা কি টিফিন দিয়েছেন আজ? ম্যাগী না পরোটা? চাউ না রুটি? না সুজি? না অন্য কিছু!
আজও টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলছি প্রতিদিনের মোড়কে। রোজই ভাবি, আজ কি এনেছে আমার জন্য? ঠোঁটের কোণে হাসি, না চোখ জ্বালা ধরা ব্যাথা? নাকি পাঁচ মিশালি তরকারী?
যাই আনুক, নিতে হবে হাসি মুখেই, পরের দিনের দিকে তাকিয়ে।