Skip to main content
বেগতিক

সঙ্কটজনক অবস্থা নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখেছেন। ভবিষ্যতে লিখবেনও। আমি ওসব কিছু বলতে চাই না। আমি প্রতিদিনের তুচ্ছ (?) কিছু সঙ্কটজনক অবস্থা নিয়ে কিছু বলতে চাই।
(তবে খেতে খেতে না পড়াই ভাল। আর যাঁরা একটুতেই, "ইস! ম্যাগো!" করে ওঠেন, তাঁরা তো একদমই পড়বেন না।

১) হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল-

আপনি আপনার বান্ধবীর সাথে বা বন্ধুর সাথে বা বসের সাথে বা শাশুড়ির সাথে, আর না হোক কাস্টমার কেয়ারের সাথে কথা বলছেন। কিন্তু ঠিক বুঝিয়ে উঠতে পারছেন না। মানে উপযুক্ত শব্দটা মুখের গোড়ায় এসেও, কিসে জানি গোত্তা খেয়ে পেটে ঢুকে পড়ছে। অথচ কথার মাঝখানে কথা থামিয়ে অভিধান খুঁজে সঠিক শব্দটা বলবেন, সে অবস্থাও নেই। কি অসহায় অবস্থা!

২) সে কোন পথে যে এল-

খুব ভীড়। সিনেমা হল বা বিয়ে বাড়ি বা শ্রাদ্ধ বাড়ি বা ধরুন বাসের জন্য, কি ট্রেনের জন্য অপেক্ষায়। এমন সময় আপনার কোনো অস্বস্তিকর অঙ্গ চুলকাতে শুরু করল। কি করবেন? মনটা যত অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, সে তত আপনার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। একচুলও যদি নড়ে। অগত্যা কি দুরূহ কঠিন ব্যাপার, আপনার স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা বজায় রাখা!

৩) আমারে ডাক দিল কে ভিতর পানে-

এর কথা আলাদা করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখেনা। যত্রতত্র, গুরুত্বপূর্ণ সময়ে, স্থানে, অবিবেচকের মত যখন এটি হাজির হয়, 'বড় বাইরের' কথা বলছি। তখন? প্রথম ধাক্কাটায় আপনি টের পেলেও পাত্তা দেন না। তাতেই সামলে গেল তো হল। ভাবলেন, এই তো একটু পরেই ছাড়া পেয়ে নিশ্চিন্তে সেরে নেব নাহয়। আরেকটু পর আরো বড় ধাক্কা। আপনার কপাল ঘামতে শুরু করেছে, বগল ঘেমে, ঘাম গড়িয়ে পেটে শীতল সুড়সুড়ি দিতে শুরু করেছে। বসে থাকা বা দাঁড়িয়ে থাকা দায় হচ্ছে। তখন? আবার মানসিক 'সন্তুলন' ছুটল।

৪) তারে ধরি ধরি মনে করি-

আপনি কাঁটা চামচে খেতে খুব চোস্তও নন আবার একেবারে অনভ্যস্তও নন। বড় টেবিলে সবার সাথে বসেছেন। এক টুকরো খাবার কিছুতেই আপনার চামচে ধরা দিচ্ছে না। পাতে 'পাঁই পাঁই' করে ঘুরে যাচ্ছে চাপ দিলেই, কিম্বা ছিটকে অন্য কারোর পাতে ল্যান্ড করার উপক্রম করছে। মনে হচ্ছে দেশাত্মবোধটা জাগিয়ে তুলে হাত গুটিয়েই নেমে পড়ি। কিন্তু তা কি হয়! ফলে এটা ওটা কথা বলে নিজের অপ্রস্তুত অবস্থা ঢাকতে চেষ্টা করা আর প্রাণপণে চেষ্ট চালিয়ে যাওয়া, ধরা দাও... ধরা দাও....

৫) দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে-

তিনি হাসছেন। আপনিও হাসছেন। হাসতে হাসতে ওনার দাঁত, কপাল, মুখ, উচ্চতা, গড়ন ভাল করে লক্ষ্য করছেন, আর মনের ভিতর হাতড়াচ্ছেন, কোথায় যেন দেখেছি... আরে আদৌ চিনি তো.... কে যেন....
কিন্তু কিছুতেই আপনার মনের স্ক্রিনে ডেটা শো করছে না। কি আর করা। 'কে আপনি মশায়?'- বলা যাচ্ছে না, কারণ আগেই ঢপটা দেওয়া হয়ে গেছে, আরে হ্যাঁ চিনতে পারব না কেন? সবচেয়ে কেসটা গুবলেট হয়ে যায়, যখন অপর পক্ষ বলে বসেন, মশায়ের বোধায় আমাকে ঠিক মনে পড়ছেন না।
উফ্, কি যে মুখের অবস্থা হয় তখন! ভাগ্যিস নিজেকে দেখতে হয় না।

৬) যেতে যেতে চায় না যেতে-

পাবলিক টয়লেট বা আপনার বাড়ির কমোডে আপনি একা। অবশ্য ওখানে একাই থাকাটা বাঞ্ছনীয়। সে যাক। এদিকে আপনার বাড়ি ভর্তি লোক। আপনার বাঞ্ছিত কাজটা সারা হয়ে গেছে। কিন্তু যে দুর্ঘটনাটা ঘটল তার জন্য আপনি মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলেন না মোটেই।
আপনি ফ্ল্যাশ করলেন। সমস্ত জল ঘুরে ঘুরে হাস্যমুখে নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেল। অথচ যাকে নিয়ে যাওয়ার, সে 'যাব না যাব না ঘরে' করে কয়েকবার পাক খেয়ে যথাস্থানেই থেকে গেল। তখন? আরেকবার ফ্ল্যাশ করলেন, একই ঘটনা। এবার আপনার ঘাম আসবে। আশেপাশে বড় বালতি খুঁজবেন। চিরাচরিত নিয়মে ঢালার জন্য। বেরিয়ে যে আসবেন সে উপায়ও নেই, পরের জন হয়তো বা বাইরেই দাঁড়িয়ে। তিনি আপনার এই অসমাপ্ত কীর্তি বা সৃষ্টিকে ভালো চোখে নাও নিতে পারেন। তখন? জানি না। অপেক্ষা করুন। মানসিক জোর আর আশা হারাবে না। সফলতা আসবেই!

মোটামুটি কিছু সমস্যা বললাম। আরো তো আছেই। সে সব না হয় আপনারা বলবেন। তাই আপাতত ইতি টেনে আপনাদের অপেক্ষায় রইলাম।

(ছবিঃ সুমন দাস)