কে আমার পরম বন্ধু? যিনি আমার সব সমস্যার সমাধান করে দেন? না। তা হলে তিনি আমার পরম বন্ধু নন, তিনি পঙ্গুর লাঠি।
তবে? তিনিই আমার পরম বন্ধু যিনি সমস্যায়, বিপদে আমার বুদ্ধিটাকে স্থির পথে এনে দেন, চিন্তাটাকে আরো স্বচ্ছ করে দেন। সমস্যার সমাধান না, সমস্যাটাকেই আরো স্পষ্টভাবে বুঝতে সাহায্য করেন। ফলস্বরূপ সমস্যার সমাধানের পথ আমি আপনিই পেয়ে যাই।
সময়ে সময়ে আমরা যখন পথভ্রষ্ট হয়েছি। নিজেদের হননের পথ নিজেই তৈরী করছি, যখন কোনোমতেই বুঝতে পারছি না কি কর্তব্য - ঠিক তখনই এমন একজন মহাত্মাকে আমাদের মধ্যে পেয়েছি, যিনি আমার সমস্যার সমাধান করেননি, সমস্যাটা আমায় বুঝিয়ে দিয়েছেন। শান্ত করেছেন। সমাধানের পথ আমি নিজের ভিতরেই খুঁজে পেয়েছি।
মহাত্মা বলছি কারণ তিনি অনেক উঁচুতে বলে নন। আমার মত বহু ক্ষুদ্রাত্মা তাঁতে আশ্রয় পেয়েছে বলেই তিনি মহাত্মা।
বুদ্ধ এঁদের মধ্যে একজন। তিনি আমার তৈরী ঈশ্বরকে আমার সামনে থেকে সরিয়ে নিলেন। বললেন, নিজের পায়ে দাঁড়াও। আমার তৈরী আচার, ধর্ম, রীতিনীতি কেড়ে নিলেন। বললেন, অনেক খেলেছ, আর না।
আমি অসহায়ের মত তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, তুমিই ঈশ্বর তা হলে?
তিনি বললেন, না। ঈশ্বরকে তোমার কি দরকার?
বললাম, আমায় রক্ষা করবে কে? আমায় ঠিক পথে চালনা করবেন কে?
বললেন, তুমি নিজে।
বিস্মিত হয়ে বললাম, তাও কি সম্ভব?
বললেন, যাঁকে চেনো না, জানো না, দেখো নি তাঁর হাতে সব সঁপা কি আরো বেশি অসম্ভব নয়?
বললাম, আমার বিশ্বাস?
বললেন, সে বিশ্বাস নিজের উপরে রাখো।
বললাম, আমার ধর্ম?
বললেন, তোমার তৈরী কাল্পনিক ধর্মের পথ ছাড়ো। সে ধর্মের পথে চলো, যা আকাশ, আলো, মাটি, জলের মত সরল। সময়ের মত অনাদি। যা বুঝতে জটিল তত্ত্ব লাগে না, লাগে শুদ্ধ হৃদয়।
বললাম, কি সেই ধর্ম?
বললেন, মঙ্গলের পথে চলো, পাপ কোরো না, হৃদয়কে রাখো শুদ্ধ।
বললাম, এসব তো আমি জানি।
বললেন, জানি। শুধুই জানো। এবার করো।
বললাম, কি পাবো?
বললেন, শান্তি।
(ছবিঃ সুমন দাস)