বীজ
কিছু যন্ত্রণার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছে
কিছু বীজ সুপ্ত এখনো
সময় হয় নি যে।
কিছু গাছে কুঁড়ি ধরেছে
ফুলও ফুটেছে কটায়।
সুখ?
ওই যে
এক যন্ত্রণা ভুলে আরেক যন্ত্রণার পথে -
মধ্যখানের ব্যবধান।
এতেই নিজেকে ভুলিয়ে নাও তো ভালো
অনুশাসন
যে ভালোবাসায় শাসন নেই, শুধুই প্রশ্রয় আছে, সে ভালোবাসা খাঁটি না। সুদিনে তাতে লাগাম ছাড়া আমোদ চলতে পারে কিন্তু দুর্দিনে তাতে নির্ভর করা যায় না।
তাই প্রার্থনা করলেই যে মিলবে তা না। তাঁর প্রেম ভেজাল না। তাতে স্নেহের সাথে শাসনও আছে। প্রথমটি দু'হাত পেতে নেওয়ার আগে, দ্বিতীয়টির কাছে মাথা নীচু করতে শিখতে হয়। তখনই সে স্নেহ ধারণের অধিকার জন্মায়।
অনিকেত
সন্ধ্যাকাশের দিকে তাকালাম
সব তারা যে যার জায়গায় ফুটে
মাটিতে চোখ নামালাম,
গাছগুলো যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে
পাতাগুলো সাজানো ডালে ডালে
পাখিগুলো নীড়ে ঘুমন্ত,
পোকারা গর্তে।
যে যার স্থানে
নিজের মত, নিশ্চিত।
আমার স্থান কোথায়?
কোন ঘরে, কার কাছে?
তবু
হাতের থেকে পিছলে পিছলে যাচ্ছে সময়
খাদের গা ঘেঁষে ঘেঁষে হেঁচড়ে হেঁচড়ে উঠছি-
উঠছি কি?
জানি না তো।
এগোচ্ছি কোনো দিক না জেনেই,
কম্পাস জবাব দিয়েছে,
বাঁ-ডান গেছে গুলিয়ে।
চিন্তার ভাগাড়ে জমে আছে ফেলে আসা সময়ের জীবাশ্ম
মাঝে মাঝে খুঁড়ে খুঁড়ে তুলছি তাদের
কঙ্কালময় শরীরে কোথায় প্রাণের স্পন্দন?
অন্ধকার! অন্ধকার!
বন্ধু শত্রু মুখোশে একাকার!
জেগে আছো?
আমি জেগে আছি
তুমি জেগে?
যদি জেগে থাকো তবে
কিছুটা অন্ধকার ঠেলে সরিয়ে
পাশে এসো।
অনেক যুগ ধরে কিছু কথা বলা হয় নি।
বাকলের মত মনের গায়ে লেগে আছে
কিছু কথার আবরণ।
ওগুলো মিথ্যা কথা।
তুমি সত্যি কথাটা খুঁজে বার করো
আশা
ভীষণ ধূলো ঝড় উঠেছে
কানে নাকে চোখে মুখে ঢুকছে ধূলো
দেখতে দেখতে দুটো হাতের মুঠো
ভরে উঠলো ধূলোয়
বারে বারে ফেললেও
আবার ধূলো উঠছে মুঠো ভরে
তবু হাত পাতছি অভ্যাসের বশে।
আমি ধূলো চাই না
কিছু পেতে চাই
তুমি
আমি বুঝি।
তবু ভুলি।
আমার বোঝা আর ভোলার মাঝে
তুমি নীরব,
জানা-অজানার পারে
তোমার স্থির দৃষ্টিপাত।
এ আমার একান্ত বিশ্বাস
আমার অন্তিম সম্বল।
তুমি
আমার উৎস
আমার অববাহিকা
আমার মোহনা।
কথা-কলি
নুনের কৌটোয় জল
চিনির কৌটোয় পিঁপড়ে
চালের কৌটোয় পোকা
পাশাপাশি বসে গল্পাচ্ছে।
নুন বলল, কি জল!
চিনি বলল, কি পিঁপড়ে!
চাল বলল, কি পোকা!
নুন চিনিকে বলল, চালের পোকায় কি গন্ধ!
চাল নুনকে বলল, চিনির পিঁপড়েরা কি চেঁচায়!
চিনি চালকে বলল, নুনের জল কি নোনতা!
নুন বলল, তোর পোকা!
চিনি বলল, তোর জল!
চাল বলল, তোর পিঁপড়ে!
নির্ভরতা
আমি নীলাকাশ ভালোবাসি। সবুজ মাঠ ভালবাসি। দিগন্তে মনকে বিলীন করতে ভালবাসি।
এরকম আরো অনেক কিছু ভালোবাসি। কিন্তু নির্ভর করি কি এগুলোর ওপর? না। নির্ভর করি মাটির উপর, যে নীরবে আজন্ম আমার ভার বহন করে চলেছে। এমনকি তাতে কম্পন ধরলেও হুমড়ি খেয়ে পড়তে হয় তারই বুকের ওপর। আবার ঘরও বাঁধতে হয় তারই বুকে।
উপহার
আমার জন্য কি আনবে?
পারো যদি এনো-
এক মুঠো সময়।
সে হোক না গোধূলির মত রাঙা
কিম্বা নদীর কলকল শব্দের মত বিহ্বল
ভোরের মত স্নিগ্ধ
নতুবা তোমার চোখের মত চঞ্চল।