সারাদিন
আমার ঘরের উত্তরের জানলাটা খুললে
উত্তাল সমুদ্র, সেদিকটা আমি রাতের বেলায় খুলি
আমার ঘরের দক্ষিণের জানলা খুললে রুক্ষ
পাথর পাহাড়, সেদিকটা আমি দুপুরবেলায় খুলি
আমার ঘরের পূবের জানলা খুললে
আবর্জনার স্তূপ, সেদিকটাও মাঝে মাঝে খুলি
আমার ঘরের পশ্চিমের জানলা খুললে
ধূ ধূ মরুভূমি, সেদিকটা আমি রাতদিন খোলা রাখি,
প্রার্থনা - ৩০ শে জানুয়ারী
আমায় যেভাবেই হোক
মানুষের পাশে থাকতে দাও
হাত ধরার হাত দাও
না বলতে পারা চোখের কোণে আটকে থাকা
কথাগুলো বুঝিয়ে দাও
আমার চোখে ওদের চোখের জলগুলো লুকিয়ে এনে ভরে দাও
আমার বুকে ওদের বুক থেকে কাঁটাগুলো তুলে গেঁথে দাও
কোনো কাজে না লাগি যদি
আমার সারা শরীরে ধুলোবালি আবর্জনা
ভরে দাও পাপোষের মত
তবু আমায় মানুষের পাশে থাকতে দাও!
আবদার
কথা বলার দরকার নেই
একটু বসতে তো পারিস
ভাল লাগে তো সব কিছু তা হলেই
ঝুল নোংরা লাগে না
ধূলোতে অসুবিধা লাগে না
আঁচের ধোঁয়ায় চোখ তো জ্বলে, রাগ হয় না
শুধু তুই পাশে বসলেই
নিজের জন্য
সারাদিনে অন্তত একটা জানলা নিজের জন্য খুলো
যে আকাশটা দেখতে চেয়েছিলে, পুরোটা না হোক তার খন্ডাংশই দেখো
সে জানলা দিয়ে একটু বাতাস আসুক
আর আসুক কিছুটা আলো
কিছু ধুলো আসুক না হয় ঝরাপাতা নিয়ে
কিছু অবসর হঠাৎ আসুক
বুকের ভিতর অচেনা পথ দিয়ে
জেনে গেছে?
রাস্তার ধারে চাদরে ঢাকা একটা আস্ত মানুষ
ঘুমাচ্ছে
একটা কুকুর শুঁকে দেখে গেল, বেঁচে আছে!
একটা মানুষ (ভাল পোশাক পরা) লাথি মেরে বলল, বেঁচে আছে শালা!
কিছুটা দূরে কল থেকে, ভাঙা কানা উঁচু থালায় জল ভরে তার বাচ্চা মেয়ে
কয়েকটা যমদূতের মত গাড়ি ডিঙিয়ে লোকটার পাশে এসে বলল, বাবা ছাতু মাখ্
ভেংচী
যার কাছে ভালবাসা চেয়েছিল মানুষটা
সে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিল
যার কাছে একটা চুম্বন আর একটা গোলাপ চেয়েছিল
সে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছিল
এখন আর 'ধন্যবাদ' আর 'কৃতজ্ঞতা' শব্দদুটো সহ্য করতে পারে না লোকটা
শব্দদুটো বড্ড ভেঙ্গায় তাকে
কে তুমি?
একটা হারানো বিকাল আমার ছাদে এসে দাঁড়াল
একটা কাক আর একটা বুনোফুলের গন্ধ নিয়ে
আমার সামনে দাঁড়িয়েই থাকল
নাছোড়বান্দা সেলসম্যানের মত
যতক্ষণ না পুরোনো, রঙ চটা, জং ধরা তালাটা খুললাম
আমার বন্ধুরা
আমার বন্ধুরা মাথা ঘামায় না
আমি কি পারি তা নিয়ে
তারা জানে, জানে শুধু না
হাড়ে মজ্জায় জানে, আমি কি কি পারি না
সেগুলোকে তারা এমন ভাবে ঢেকে রাখে,
যেন আমিই পৃথিবীর সবচেয়ে নিখুঁত মানুষটা
অথচ আমি জানি, বেশ জানি
ওদের মত হাড়ে মজ্জায় শুধু না
শিরায় ধমনীতে জানি
ওরা না থাকলে আমি জীবনে অনেকগুলো
সূর্যোদয়ই দেখতে পেতাম না
সরে যেও না
সরে যেও না
তুমি সরে গেলে
ফুসফুসে অক্সিজেন এসে ফিরে যাবে
বুকের সাথে মিশবে না
শপথ
শপথ করবে যদি করো
কোনো বইয়ে হাত রেখে না
কোন গত মানুষের নামে না
এমনকি ঈশ্বরের নামেও না
শপথ কর নিজের বুকে হাত রেখে
যেখানে হাত রাখলে সমুদ্রের গর্জন শোনা যায়
যেখানে হাত রাখলে আগ্নেয়গিরির উত্তাপ পাওয়া যায়
যেখানে হাত রাখলে ঝড়ের বাতাস ছোঁয়া যায়
বুকের ওপর রাখো হাত
আর বলো তোমার শপথবাক্য
যে বাক্যের মরণ আবীরে রাঙা হয় জীবনের মুখ, পরমানন্দে