Skip to main content

টিফিন বক্স

যখন স্কুলে পড়তাম, টিফিন বক্সের একটা রহস্য ছিল। মা কি টিফিন দিয়েছেন আজ? ম্যাগী না পরোটা? চাউ না রুটি? না সুজি? না অন্য কিছু!

আজও টিফিন বক্সের ঢাকনা খুলছি প্রতিদিনের মোড়কে। রোজই ভাবি, আজ কি এনেছে আমার জন্য? ঠোঁটের কোণে হাসি, না চোখ জ্বালা ধরা ব্যাথা? নাকি পাঁচ মিশালি তরকারী? 

যাই আনুক, নিতে হবে হাসি মুখেই, পরের দিনের দিকে তাকিয়ে।

তবু

ভয়ের জিনিসকে যত সহজে বিশ্বাস হয়, অভয়কে তত সহজে বিশ্বাস হয় কই? তুলসীদাসজী বলছেন, অমৃত সারা জীবন কানেই শুনে এলাম, চোখে পড়ল শুধু বিষ।
 
এ অভিজ্ঞতা কার জীবনে না নেই। তবু নিজের সামনে যখন দাঁড়াই, প্রশ্ন করি তোমার এ সংসারে চলার পুঁজি কি? মন বলে, কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা। হ্যাঁ, এইটাই আজ থেকে কাল, কাল থেকে পরশু হাত ধরে নিয়ে চলেছে।
 

সম্পদ


সব সম্পদ সিন্দুকে, লকারে, আলমারীতে রাখা যায় না। কিছু সম্পদ বুকের মধ্যেও সযত্নে রাখতে হয়। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, ভালোবাসা - এ সম্পদ চুরি হয় না, যদি না আমি হারিয়ে ফেলি।

সব ফসল ক্ষেতেই জন্মায় না। কিছু জীবনেও জন্মায়। উপলব্ধির ফসল ছাড়া জীবন রিক্ত। সাধক রামপ্রসাদের সেই বিখ্যাত গান আছে না- 'এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা'।

থাক


মাঝে মাঝে সব গুলিয়ে যাওয়া ভাল। আবার করে গোছাতে গিয়ে, কিছু জিনিসকে আবার নতুন করে চেনা যায়। যাকে মনের নীচের তাকে রেখেছিলাম তুচ্ছ করে, তাকেই হঠাৎ করে ড্রয়ারে তালা দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে ইচ্ছা করে। মনে হয়, এতো মূল্যবান জিনিসটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল কি করে!
 

বাজার

বাজারে তো আর জামার অভাব নেই। কত কায়দা, কত রঙ, কত বাহার! তা বলে কি সব জামা আমার মাপের হয়, না সব জামায় আমায় মানায়!?

এটা বুঝে গেলে, বাজার আর আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় না। বাজারের প্রয়োজন নিজের প্রয়োজন ফুরালেই ফুরায়।
 
এটা না বুঝলে বাজার আর কিছুতেই পিছু ছাড়ে না। আত্মার দেহ ছাড়ার সময় হয়ে যায়, কিন্তু দেহের আর বাজার ছাড়ার সময় হয় না। মন সাবধান!

প্রকাশ


গভীর রাতে আমার বুকের ভিতর থেকে দুজন বেরিয়ে আসল।

আবরণ


  ভারী বাতাস। জলে ভারী। কালো মেঘের বুকে জমে থাকা বিদ্যুতের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে অবাক হয়! এত আলো! এত তেজ! তবু সে মেঘের বুকে মিলিয়ে থাকে কি করে? কেন সে থাকে?

সে বৃষ্টি হয়ে নীচে পড়ে। কত রঙের ফুল পৃথিবীর বুকে ফুটে। তার অবাক লাগে। এত রঙ! এত রূপ! তবু এই একরঙা সবুজ গাছগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকে কি করে? কেন তারা থাকে?

হিংসা


দুর্বলের হিংসাই একমাত্র সম্বল আর অভিযোগই একমাত্র হাতিয়ার। এটা বেশ বুঝতে পারছি। কবে একটা গল্প পড়েছিলাম। একটা মশা হাতির পিঠে বসেছিল। তা আচমাকাই হাতির লেজের বাড়ি খেয়ে ঘায়েল হয়ে, ঘ্যান ঘ্যান শুরু করে, এটা কি ন্যায্য বিচার হল!

    তারপর অনেক জল এনে হাতিটাকে ডুবিয়ে মারার চেষ্টাও করে মশা। হয় না।

হাল্কা জ্ঞান


জ্ঞান মানে, অনেক জানা না। জ্ঞান মানে অনেক কিছুই যে জানি না, এটা জানা। তখন থেকেই বাঁচা শুরু, নির্ভয়ে, সপ্রেমে।
 
নির্ভয়ে, কেন না ভয়ের মূল যে 'আমি' নামক গ্যাস বেলুন, তাতে 'ছিদ্র হইয়াছে'। সমস্ত গরম হাওয়া বেরিয়ে, সে অসীমের কোণে চুপসে পড়ে আমার দিকে জুলজুল চোখে তাকিয়ে আছে। তাই আর ভয় নাই। ওই যে ঠাকুর বলতেন না, 'আমি মলে ঘুচিবে জঞ্জাল', অনেকটা সেই আর কি।
 

বেরিয়ে এসো


রেগো না। রেগে লাভ নেই। বরং মুখ ফেরাও। চলন্ত রিকশার স্পোক গোনার চেষ্টা করো। বা নিজের বুকের জামাটা খামচে ধরে নিজেকে হেঁচড়ে বার করো, তবু রেগো না। রেগে লাভ নেই।

প্রত্যাশা রেখো না। লাভ নেই। ভুলে যাও। যেমন উনুনে আঁচ ধরিয়ে ধোঁয়াকে ভুলে যায়। কারোর চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিও না। কুকুরটার ল্যাজটার দিকে তাকাও। হাজার চেষ্টাতেও সোজা হয় নি যেটা। হাত দুটো পকেটে ভরো। পেতো না।

Subscribe to চিন্তন