এখনই না
পুকুরপাড়ে হাঁসগুলোকে ছেড়ে দিয়ে পা ছড়িয়ে ছাতিম গাছটার তলায় বসল বিহান। নীল আকাশ, সাদা সাদা কয়েক টুকরো মেঘ ছড়িয়ে ছিটিয়ে। বিহানের শাড়ির উপর উড়ে এলো কয়েকটা কাশফুলের রোঁয়া। বিহান নিজের পায়ের দিকে তাকালো। কড়া পড়েছে, আঙুলে ফাঁকে ফাঁকে হাজাও আছে। এই শাড়িটা চার বছর আগে
আকাশ তো আছে একটাই
রাস্তার পাশে দোকান ছিল
দোকান আছে
তার পাশে একটা পুকুর ছিল
পুকুর আছে
সেই পুকুরের পাশে ওদের বাড়ি ছিল
বাড়িটা আছে
গো-সঙ্গ
ব্যায়াম করা যে স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো, এই নিয়ে কোনো সন্দেহ কোনোদিন ছিল না পরাশর কবিরাজের। কিন্তু মুশকিল হল আজকাল ব্যায়াম করতে গেলেই ঘুম পায়। আর ঘুম পেলেই স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে ঘুম ভেঙে যায়, বেজায় খিদে পায়, বেশি খেয়ে ফেলেন, আর ওজন বেড়ে যায়।
এখনই যাব না সেখানে
এই তো শ্রদ্ধা ছিল। গেল কোথায়? এই তো ভক্তি ছিল। গেল কোথায়? একটা পাখি সকাল থেকে ডাকছে, তোর নাম কি? থাক, নাম জেনেই বা কি হবে! কটা নামই আর মনে থাকল সারা জীবন?
ছাদ
লোকটা বিখ্যাত হবে বলে
সকাল বিকাল সন্ধ্যে ভোর
বৃষ্টি খরা শীত গরম
সব উপেক্ষা করে ছাদে দাঁড়িয়ে থাকত
নীচের তলা থেকে কেউ ডাকলে সাড়া দিত না
ধীরে ধীরে সাড়া দিতে ভুলেই গেল
শিশু
হাস্পাতালের কোলাহলে
বছর তিনেকের বাচ্চা
মায়ের কোলের নির্জনতায়
মানুষের বানানো বোমার আঘাতে
মানুষের বানানো ব্যথা কমানোর ওষুধে
গুরু কহিলেন
গুরু কহিলেন, তবে বাবা সত্য কি?
শিষ্য গদগদ হইয়া কহিল, আপনি যাহা কহিলেন।
গুরু উৎফুল্ল হইয়া কহিলেন, আর আমি কি কহিলাম?
শিষ্য বলিল, সত্য, গুরুদেব, সত্য কহিলেন।
ফোনটা কেটে দিয়ে, খুঁজুন
সেবার কলকাতা বইমেলায়
তুমি তো গেলে না
সন্ধ্যে হব হব
সন্ধ্যে হতে শুরু করলে যে মন খারাপটা হয়
সে আড়মোড়া ভাঙতে শুরু করেছে ততক্ষণে
ফুরিয়ে যাওয়া কথার দলদল
প্রতিদিন সব কিছু গুছিয়ে রাখার পরও
যেটুকু অগোছালো থাকে -
সেটুকুই
শুধু সেটুকুই কালকের সম্বল
বাকি তো সব গুছিয়ে রাখা
ফুরিয়ে যাওয়া কথার দলদল
আমগাছ
মানুষটা আমগাছের চারাটা লাগিয়ে, কয়েকদিন মাত্র নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছিল। ভেবেছিল, গাছটা না হলেই ভালো। কিন্তু একদিন ভোর সাড়ে চারটে উঠে বাগানে এসে যেই দাঁড়িয়েছে, তার চোখ ঠোক্কর খেল দুটো সবুজ পাতায়, একটা চারাগাছ জন্মিয়েছে।
যেমন চলা
ভীষণ ভিড়, যেমন হয়, তেমনই
একটা ফাঁকা জায়গায় খানিক দাঁড়ানো
কিছুক্ষণ,
যেমন আগুন
...
এবছরের মত খেলাটা শেষ হল
এবছরের মত খেলাটা শেষ হল। বড়দের খেলা। চালাকদের খেলা। ধনীদের আমোদ। নেতাদের শক্তি প্রদর্শন। বোকাদের আবেগের তুবড়ি, জ্বলে ধাঁধাঁ লাগিয়ে চোখে, ফুরালো এ বছরের মত। কাছের সব কিছু ঝাপসা হয়ে গিয়েছিল, এত আলো। এবার শ্লথ পায়ে আসবে অবসাদ। উত্তেজনার পর যা অবধারিত। কাজের গতি বেগ ফিরে পেতে নেবে আর
ফেরিওয়ালা
একটা ঘোর লাগিয়ে দাও
জ্ঞানও নেশা, যদি তা মাতাল করে
LoC ভোলায়
আমি প্রেম ত্যাগী সন্ন্যাসী তো নই
ফিরে যাও
উৎসব
তুমি বড় দাম্ভিক
তুমি বড় উন্নাসিক
তুমি বড় নিষ্ঠুর
কেন্নো
মানুষটা রাতদিন অতীতের গল্প বলত
বলতে বলতে অতীতগুলোকে কেন্নোর মত ধরে
বর্তমানের গাছের শাখায় ছেড়ে দিত
অতীত হামাগুড়ি দিয়ে এ ডাল, সে ডাল
এ পাতা, সে পাতা বেড়াতো
গান্ধী - দ্য ইয়ার্স দ্যাট চেঞ্জড দ্য ওয়ার্ল্ড
অষ্টমী
মণ্ডপে আমাদের দাঁড়ানোর লাইন দেখেছেন? পুরুষের লাইন দেখেছেন, মহিলার লাইন দেখেছেন। আমাদের? আমরা ওই মহিলাদের লাইনেই দাঁড়াই। আমরা হলাম জ্বলন্ত উৎপাত বুঝলেন তো। ট্রেনে, বাসে, রাস্তাঘাটে আমরা হলাম জ্বলন্ত উৎপাত।
সপ্তমী
কেটস
সাদা কেটস কিনে দিত বাবা। জুটমিলে কাজ করত। আমরা তিন বোন, এক ভাই। আমি সবার বড়, দিদি। ওই কেটসই পেতাম প্রতি বছর। স্কুলেও ওই দিয়েই হয়ে যাবে তাই।
আজ তৃতীয়া
শুচি আগরওয়াল
বয়েস পঁয়তাল্লিশ
আড়াই মাসের গর্ভ সাবধানে বাঁহাতে ধরে
অত্যাধুনিক গাড়ির দরজা খুলে,
নীচে কাদা আছে কিনা দেখে
মাটিতে পা দিল
যার বুকে সাত সমুদ্রের জল
তবু তো শোক শুদ্ধ করে
রোদে পোড়া তপ্ত একটা রেললাইন
তখন উষ্ণ ফুৎকারে
পৃথিবীকে তালুতে রেখে গড়িয়ে নিচ্ছে মহাকাল
ঝিম ধরা দুপুরে চিলের ডাক
বড়ি দেওয়া কাপড় কুঁচকে যাচ্ছে ছাদে
মিথ্যা
সেদিন
মিথ্যা মানে জানতাম প্রেম
মিথ্যা মানে জানতাম সুখ
মিথ্যা মানে জানতাম নীড়ের স্বপ্ন
যতদিন মিথ্যা ছিল আমার ঘরের দুটো শালিক
এখন মিথ্যা মানে জানি অপমান
মিথ্যা মানে জানি যন্ত্রণা
মিথ্যা মানে জানি শূন্যতা
যখন মিথ্যা আমার ঘরের ঘুণপোকা
কতক্ষণ হল ?
ঘড়িটা থেমে যায়নি
...
আপনি প্রচুর বেড়ান, না?
- আপনি প্রচুর বেড়ান, না? ( বয়েস পঁয়ত্রিশের নীচেই হবে, মহিলা, লেখকের সামনের চেয়ারে বসে, ছাত্রের মা)
- ওই একটু আধটু
- উনিও খুব বেড়ান জানেন তো...ভীষ....ণ নেশা...( মুখটা ঊর্ধ্বমুখে ৪৫ ডিগ্রি কোণ করে উঠে গেল, ঠোঁটটা আগেকার দিনের পাঁচ পয়সার মত হাঁ হয়ে রইল)
- বাহ্, ভালো তো
কয়টা?
সবুজ সবুজ সবুজ
যেখানে গিয়ে সবুজ থামল
সেখানে জাল
সেই জালেতে আটকে আছে কয়টা শালিক?
তিনটে শালিক তিনটে শালিক তিনটে শালিক
সবুজ সবুজ সবুজ
যেখানে গিয়ে নীলে মিশল
সেখানো ধোঁয়া
সেই ধোঁয়াতে মুখ লুকালো কয়টা মোরগ?
তিনটে মোরগ তিনটে মোরগ তিনটে মোরগ
বহমান পত্রিকা - সেপ্টেম্বর সংখ্যা
অবশেষে আর যুক্তি না খুঁজে
অবশেষে আর যুক্তি না খুঁজে, সান্ত্বনা না খুঁজে,
হেসে উড়িয়ে দিতে শিখলাম
ব্যস, পাথর কই আর?
এ যে পাথুরে পথ শুধু
'me to' আর মিডিয়া
এতে কি সত্যিই কিছু হচ্ছে? মিডিয়া কি বিচার পাওয়ার জায়গা? আমরা কি একটা ক্যাঙারু আদালতের কথা ভাবছি এই সোশ্যাল মিডিয়ায়? আমরা কি বিশ্বাস রাখি না ন্যায়-বিচার ব্যবস্থায়? আমরা কার কাছে এই আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছি? কোন সমাজের কাছে?
ভয় তাকে নিয়েই
যে দরজা খুলে বাইরে পা রাখেনি কখনও
তাকে নিয়ে কি ভয়?
যে বাইরের ধুলো ঘরে নিয়ে যায়
ঘরের গন্ধ মাখা হাত বাইরের ফুলগাছে বুলায়
তাকে নিয়ে কি ভয়?
তসলিমা লিখছেন
তসলিমা লিখছেন -
লাল সিগন্যাল
মধ্যরাতের প্ল্যাটফর্ম
শেষ ট্রেন কখন বেরিয়ে গেছে কেউ খেয়াল করেনি
শুধু ঝিম ধরা চোখে
সবুজ পতাকাটা কোনো রকমে দেখিয়ে
ঘরে গিয়ে কাঠের বেঞ্চে শুয়ে পড়েছে সনাতন হালদার
সামনের ডিসেম্বরে অবসর
ভারতে যখন প্রথম ভোট হয়
কিসের দেবীপক্ষ?
না
রাস্তা পেরিয়ে ওই যে দূরে যে বটতলাটা, ওই যে দূরে কাশের ঝালর, বহুকাল আমি ওই দিকেতে চাই না। আমার শিউলি গাছে বাজ পড়ল যেদিন, সেদিন থেকেই যাই না। নতুন জামা, নতুন গোছানো ঘর, নতুন কত কিছুই, তাকাই না। আকাশে শরৎ, ফুলেতে শরৎ, রাস্তাঘাটে শারদোৎসব, সাড়া আজ আর দিই না। আলো, আওয়াজ ঠেকিয়ে রাখি বার দুয়ারে। আমার ঘরের কোণে সাদ
'৪৭ এর মুরাদেরা
মুরাদের নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর থেকে অনেক পোস্ট দেখলাম। অনেকগুলো সাক্ষাৎকার যা আগে শুনেছি কয়েকটা, লাস্ট গার্ল বেরোনোর সময় বিশেষ করে। রিভিউও পড়েছিলাম বইটার। কিন্তু বইটা পড়ে ওঠা হয়নি। কিন্ডল-এ আছে, কিন্তু সাহস পাইনি পড়ার। একটা নিশ্চিত জীবনযাপনের মধ্যে বসে অমন একট
সুখী হতে তো চাইনি
ভিক্ষাপাত্র
বোষ্টুমি (এ বানান অভিধানে নেই, জিভেতে আছে) এসে দাঁড়ালো দরজায়, নামগান শুনতে পাচ্ছি। বোষ্টুমির গায়ে গেরুয়া শাড়ি। কপালে চন্দন। কালো মুখের মধ্যে খোদা দুটো পোড় খাওয়া চোখ।
ভালোবাসা না
ভালোবাসা না
বেঁচে থাকার মাসকাবারি নিতে এসেছি
তাকিও না
আমি তাকিয়ে নিয়েছি
ভালোবাসা না
সামান্য প্রাণের
বেঁচে থাকার বায়না মেটাতে এসেছি
আগুন
সময় ফুটল মনের মধ্যে
ঘুম ছাড়া চোখ ভোমরা
ঝড় ঠেকাচ্ছি ভাঙা শিকলেতে
নিলামেতে হৃদি পসরা
পরিযায়ী পাখি, মধুর ঠোকর
প্রাণে বিষাক্ত রঙ ফাগুন
যার ভুলের ঘরে বসতি পাতা
তারই চুম্বনে চিতা, আগুন
বড় রাস্তাটা
বড় রাস্তাটা আরো চওড়া হওয়ার কথা ছিল
তাই অনেক উচ্ছেদ হল, সংস্কার হল
তারপর বড় রাস্তাটা
কি করে, কি করে জানি
প্রতিটা মানুষের পরিস্থিতি আলাদা
প্রতিটা মানুষের পরিস্থিতি আলাদা, আর সেই পরিস্থিতির সাথে বোঝাপড়া করার রীতিটাও আলাদা। এমনকি দেখেছি একই পরিস্থিতিকে রাম শ্যাম যদু মধু এক এক রকমভাবে সামাল দেয়।
কলিংবেল সারাতে আসার কথা ছিল
কলিংবেল সারাতে আসার কথা ছিল। এলো না। ফোন করলাম, "আপনি এলেন না যে"?
ওপাশ থেকে উত্তর, "গিয়েছিলাম তো দাদা, কতবার বেলটা বাজালাম, কেউ তো সাড়াই দিল না"!
তবুও আমি নাইব
সাবান আছে?
নেই
শ্যাম্পু?
তাও নেই
টাওয়েল?
নেই
গামছা?
সেও নেই
টব আছে?
না, নেই
বালতি, কিম্বা গামলা?
নেই নেই, সেও নেই
আশেপাশে পুকুর?
নেই
দীঘি
নেই
নদী
নেই
তুমি না
তুমি না
তোমায় বিশ্বাসঘাতক করেছি আমি
মেঘলা আকাশে ছাতা খুলতে বলে
ঝরণার জলে ঢেউ গুনতে বলে
বলেছিল, যাবে না
বলেছিল, যাবে না
তবু গিয়েছিল
মন বলেছিল,
ফিরবে না
ফিরেওছিল
মন বলেছিল,
থাকবে না
থেকেওছিল
মন বলেছিল -
ঠকব না
তবু ঠকেওছিল
মন বলেছিল
ভালোবাসবে না
চাঁদ
চাঁদ,
চাঁদের মুখ ভার
মেঘের আড়ালে তুমি
তারও মেঘের আড়াল আজ
দেওয়ালের রঙের আলোচনা হল
দেওয়ালের রঙের আলোচনা হল
দরজার কাঠ,
বাড়ির সম্ভাব্য আসবাব, সাজসরঞ্জাম
সে নিয়েও কথা হল
বাকি শুধু ভিতের আলোচনাটা
কতটা গভীর, কতটা পোক্ত হবে?
সে আলোচনা আজও হচ্ছে-হবেই রইল
নানান ঘোরে তুফান তোলে
দর্শন শুষ্ক, অনেকে বলেন। যদিও আমার কাছে আজ অবধি তা মনে হয়নি কখনও। নিজেকে জানার, নিজের বাইরে ভিতরে আসা যাওয়া করার এর থেকে ভালো পথ আর দেখি না। প্রতিটা অনুভবের একটা ছায়া থাকে। সে ছায়ার থেকে সরে দাঁড়িয়ে যদি কিছুক্ষণ নিবিষ্ট চিত্তে সেই ছায়ার দিকে তাকিয়ে থাকা যায়, ত
অনেক মানুষকে পাশ কাটিয়ে এগোতে এগোতে
অনেক মানুষকে পাশ কাটিয়ে এগোতে এগোতে
অনেকটা এগিয়ে এসে, খানিক থেমে
প্রথম কাটিয়ে আসা মানুষটার কাছে
আবার ফিরে যেতে ইচ্ছা করে,
তাকে যেন কি একটা বলা হয়নি
মহাত্মা
বাসি
এমন কিছু ছিল না হয়ত
তবু মন খারাপটা ছিল
কিছু মন যেন এখনও বাসি
কড়া পড়া পা
কিসেতে হোঁচট খেলো?
শুধু যুক্তি না তো
শুধু যুক্তি না তো
সময়ও যে গো লাগে
ক্যালেণ্ডারের পাতা ওল্টালেই বসন্ত আসে না
শীতের কুয়াশা মিলিয়ে যাক আগে
অনুরোধ
তোমাকে আমায় কেন্দ্র করে ঘুরতে হবে না
শুধু দিনের শেষে,
যেখানে আমি দাঁড়িয়ে
সেখানে ফিরে এসো
যদি না ফেরো,
জানি হারিয়ে যাবে না
আমার নিজেকে অপরিচিত লাগবে