অভিজ্ঞতা
অবশেষে বাবাকে নিয়ে হাস্পাতাল থেকে ফিরলাম। তা কেমন অভিজ্ঞতা হল? শুনুন বলি।
সময়
হঠাৎ করে সব ফুরিয়ে গেল
ঝরা পাতাটা তার সব বিস্ময়, সব বিহ্বলতা
ছেড়ে আসা বৃন্তক্ষততে রেখে নেমে এলো
জাল
...
দ্বন্দ্ব
মোহর
লোকটা বেলচা করে ময়লা তুলছিল। ময়লার গাড়ি এসেছে সকালবেলা। বিশ্রী বোটকা গন্ধ। শহরের ময়লা মানুষের তৈরি ময়লা। লোকটার আগে কৌতুহল ছিল। এখন নেই। ময়লার রকমেরও সীমা আছে। কিন্তু মাত্রা নেই পরিমাণের। লোকটা উদাস। বেলচা চলছে নিয়মমাফিক ঘচাঘচ।
আগন্তুক
আগন্তুক
তুমি গান থামিও না
সব বাঁকা হাসি
ম্লান হয়ে আসে ধার হারিয়ে
পাতা হাত
গুটিয়ে আসার শক্তি পায়
শূন্য হয়েও
তৃষ্ণা
রাস্তার শেষে কোনো গন্তব্য রাখিনি
দিগন্তরেখাকে রেখেছি
আধপোড়া সলতের বুকে
ভোরের তৃষ্ণাই দেখেছি
অ-ভেদ
চাঁদ জানে না
কবে সে ঈদের
পথ জানে না
আজ সে জগন্নাথের
ঈদের চাঁদের আলোয়
স্নাত হয় জগন্নাথ মন্দিরের চূড়ো
আত্মদানে
বিনা অভিযোগে পুড়লাম
অবহেলায়, স্বেচ্ছায়
সমস্ত ছাই হল
তবু সবটুকু ছাইও যখন তোমার দিকেই উড়তে চাইল,
তখন
অমলিন রবীন্দ্রনাথ
অপমানিত হওয়ার অভিজ্ঞতা সংসারে নেই এক পাগল আর শিশু বই কে আছে?
১লা আষাঢ়
তবু চলতে ফিরতে কেন জানি ক্যালেণ্ডারে চোখ। বাংলা দিনপঞ্জিকা তো নেই, ইংরাজী ক্যালেণ্ডারেই চোখ। ইংরাজি সংখ্যার নীচে ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষরে লেখা - ১ আষাঢ়।
ঈর্ষার স্মৃতি হয় না
আগুন যেমন পুড়িয়েও মনে রাখে না
উদাসীন
স্টেশান আবার ট্রেনের অপেক্ষায় কবে থাকল?
নাকি বাসস্ট্যান্ড থাকে বাসের অপেক্ষায়?
অপেক্ষায় তো থাকে যাত্রীরা, যাদের যাওয়ার আছে
কোথাও না কোথাও, দরকারে- অদরকারে
অসহায়তা
আমার কিছু কিছু অসহায়তা তো
আমি নিজেই বুঝি না
তোমায় বোঝাব কি করে?
সুড়ঙ্গ
লোকটা দরজা বানাতে চায়নি
শুধু কয়েকটা সুড়ঙ্গ বানিয়েছিল
একাকীত্ব
এবার কি কেউ এল? কেউ আসেনি, হে আমার সন্তপ্ত হৃদয়
হয়ত কোন পথিক ছিল, চলে যাবে অন্য কোথাও, তার নিজের পথে।
রাত ফুরিয়ে এলো, তারাদের আলোর মায়া হয়ে এলো ম্লান
প্রদীপের স্বপ্ন-শিখা কাঁপছে থরথর দুরন্ত হাওয়ায়
স্মৃতি
গভীর রাত। তোমার বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতিরা বুকে এসে ভিড় করল। কোনো কারণ ছিল না, এমনিই।
যেন শুকিয়ে যাওয়া বাগানে গোপনে এল বসন্ত
যেন ভোরের শীতল বাতাস মরুভূমির বুকের উপর দিয়ে গেল বয়ে
যেন দীর্ঘ অসুস্থতার পর, একটু স্বস্তি পেলো কেউ, অকারণে, এমনিই।
আমার কাছে থাকো
রাত্রির গভীর অন্ধকারের বিষাদে আমার কাছে থাকো
ওগো আমার ঘাতক, ওগো আমার বঁধু
আমার কাছে থাকো
~ ফৈয়জ আহমেদ ফৈয়জ
সন্ধিক্ষণ
খিচুড়ির পাতা নিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছে হীরু বারেবারে। হীরুর আঁচলটা পাতে পড়ছে দেখে বাড়ির গিন্নী বললেন, কি হল রে হীরু, কি ভাবতে বসলি খাবার মুখে করে? তোর ছেলেমেয়েদের জন্যে বেঁধে দিইচি তো রে।
এক রবীন্দ্রনাথ শ্বাস নিতে পারি, বুকে এতটা জোর কই?
তখন আমি স্কুলে পড়ি। সেভেন কি এইট হবে। একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি, বাবা ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে এসেছেন। সাথে তিনটে ক্যাসেট। কণিকার, 'আমার না বলা বাণী', 'বাল্মীকি-প্রতিভা' আর যে লিঙ্কটা শেয়ার করলাম, এই ক্যাসেটটা - 'ছুটি' - প্রদীপ ঘোষ আর সুচিত্রা মিত্রের পাঠ, তার সাথে সুচিত্রা
স্ব-ভাব
কিছু ভুল কেন যেন শোধরানোই যায় না
আসলে তো ওরা ভুল নয়
স্বভাব। স্ব-ভাব।
তাই হোক। না হয় বারবার ফিরি।
ভাবের ঘরে চোর না ঢুকুক।
জাল
দাঁড় বাইতে বাইতে লোকটা পাড়ের দিকে তাকিয়ে ছিল
তার ছোট্টো কুঁড়েঘরটা মিলিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে মিলিয়ে যাচ্ছে....ক্রমশ একটা বিন্দুর মত হয়ে যাচ্ছে...মিলিয়ে গেল...
মেঘলা চিরকুট
এই মেঘলা আকাশেই সে যাবে
যে শাড়িটা গেলবার পূজোয় কেনা, ভাঙা হয়নি
সেই শাড়িটাই পরে যাবে
কে?
মাথার মধ্যে যারা ঘোরে
যারা ঘুরতে ঘুরতে কথা বলে
এক একটা সাম্রাজ্য তৈরি করে
আবার ভেঙে ফেলে,
তারা কারা?
না হয় না
এমন অন্ধকার হয় না
যে তারাদেরও দেখা যায় না
গায়ত্রী চক্রবর্তী
গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক। প্রতিবারই ধাক্কা দেন। বইতে, আলোচনায়, সাক্ষাৎকারে, ভাষণে। চিন্তার ধারাটা ছিন্ন হয়, নয় তো জেগে ওঠে। গায়ত্রী ভাবিয়ে চলেন। ঝাঁকিয়ে চলেন। জ্ঞানতত্ত্
তাই?
কথা দিল?
না গারদ বানিয়ে গেল?
প্রেম জন্ম নিল?
না বনসাই বানানোর টব-মাটি দিয়ে গেল?
জীবনের অর্থ মিলে গেল?
না চাঁদ-তারা স্টীকার ছাদেই চিপকে গেল?
সাজঘর
মাথার ভিতর ড্রেসিংরুম
সাজঘর
যারা সেজেগুজে বেরোয়
তারা রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে বাড়ি ফেরে
অনেক রাত অবধি রঙ তুলে
পাশের মানুষ খোঁজে হাতড়িয়ে
একাকার
মাঝে মাঝে গন্তব্য আসার আগেই নেমে পড়ি,
মাঝপথে।
তারপর হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, গন্তব্য কে ঠিক করেছিল?
আমি না ভবিতব্য?
জেদ চেপে যায়। দুজনের কথাই মানব না।
দুপক্ষ
রাস্তাটার মাঝ বরাবর চিড় ধরল। সবাই ভাবল দুটো পথ হবে বুঝি এবার। ফাটল ধরে ধরে এগোতে লাগল সবাই। কোথায় গেছে তবে দুটো রাস্তা দুদিকে?
তাকিয়ে থাকতে থাকতে
কয়েক লক্ষ চোখ মেলে তাকিয়েছিলাম
গুরুগাঁও
আসলে তো বর্বরতা কোনোদিন যায় না। যাবেও না।
কবি তাও কোনো এক কাল্পনিক রক্ষাকর্তাকে পেয়েছিলেন ধৃতরাষ্ট্রের সভায়
আজ জন্মালে সে কল্পনাও হত কল্পনাতীত
ডুবলেই হল
আমার বাগানে যে জবা, টগর, নয়নতারা ফোটে
তারা নতুন কোনো ফুল নয়
নতুন করে ফুটেছে মাত্র
তাই বলতে চাইছিলাম,
নতুন কিছু অনুভব করিনি
নতুন করে অনুভব করছি শুধু
কেউ পৌঁছায়নি
চলাটা কেবল থামিয়ে দিয়েছে কেউ কেউ
তুমি ওকে শান্তি বলো বুঝি?
আমি বলি না।
অশান্তিতে 'না' বলি না শুধু
সমুদ্র বুকে মাঝি কি বলে -
মর্মযোগ
যতদিন শিরদাঁড়ায় আছে জোর
পরিপাটি করে সাজানো ঠাণ্ডা ঘর
রঙীন আলোর মোহময়ী আচ্ছন্নতা
হাসিমুখে পাশ্চাত্য ভাষায় শৌখিন ভদ্রতামাখা
চেয়ারে টেবিলে পরিষ্কার থালা বাসনে কাঁটাচামচ
ইংরাজী ভাষায় কোনো পুরুষ কণ্ঠের গান বাজছে
মুক্তি
পাখিটা উড়ে গেল
ডাল থেকে বৃন্তচ্যুত হয়ে পাতা ঝরে পড়ল মাটিতে।
পাখি লজ্জিত হল। ফিরে এসে মাটিতে বসল, পাতার পাশে। সাশ্রুলোচনে বলল, একি করলাম আমি, তোমার জীবনমূল দিলাম ছিন্ন করে!
সব মাটিতে সব গাছ হয় না
সব ঋতুতে সব ফুল ফোটে না
সব ভালোবাসা জড়ো করে
অভিমান করে বসেছ
জানো না,
সব হৃদয়ে সব ভালোবাসা ধরে না?
আলোর সাগরে
সিদ্ধেশ্বরবাবু এমনিতে বেশ খোলা মনের মানুষ। কিন্তু নিজের নামটা নিয়ে ওনার খুব আক্ষেপ। এখনও সিদ্ধিলাভ বলতে যা বোঝায় তা হল না। অবশ্য ঠিক কি বোঝায় তাও সঠিকভাবে কোনো ধারণা নেই ওনার। তবু খুব ইচ্ছা, সিদ্ধিলাভ হোক। বয়েস চুয়ান্ন। সরকারি অফিসে
লজ্জা যে সমাজে নেই
আজ আমার বাংলা সিরিয়ালগুলোর উপর রাগ কিছুটা কমল। আসলে খানিক দিব্যজ্ঞান পেলুম কিনা, তাই।
বেঁচে যেত লোকটা
যখন তখন সাইরেন বাজতে পারে
আচম্বিতে হতে পারে বোমারু বিমানের হামলা
সাবধানে হাঁটো।
যে কোনো মুহূর্তে ছদ্মবেশে ঢুকে যেতে পারে শত্রুপক্ষের চর ভালোবাসার মানুষ সেজে
বুঝে ভালোবাসো।
মানবিক না অমানবিক?
বন্দনা
লতানো গাছটা সারা গা রোদে মাখামাখি হয়ে দাঁড়িয়ে
ভোরের হাওয়ার মৃদু আন্দোলন ওর ক্ষীণ শরীরে
যে আমগাছটার গোড়ায় ওর বাস
সে আমগাছের প্রতিটা পাতার উপর লেগে আছে ভোরের রোদ