Skip to main content

তখন আমি স্কুলে পড়ি। সেভেন কি এইট হবে। একদিন স্কুল থেকে ফিরে দেখি, বাবা ক্যাসেট প্লেয়ার নিয়ে এসেছেন। সাথে তিনটে ক্যাসেট। কণিকার, 'আমার না বলা বাণী', 'বাল্মীকি-প্রতিভা' আর যে লিঙ্কটা শেয়ার করলাম, এই ক্যাসেটটা - 'ছুটি' - প্রদীপ ঘোষ আর সুচিত্রা মিত্রের পাঠ, তার সাথে সুচিত্রা মিত্রের গলায় গান। 
        নতুন যন্ত্রটার মোহ কাটতে বেশি সময় লাগল না। কিন্তু সব কেমন ওলট-পালট করে দিল এই ক্যাসেটটা। তখন শরৎ আসবে আসবে। রেল কলোনির বিরাট ফাঁকা ফাঁকা কোয়াটার্স। সামনে প্রশস্ত মাঠ। তাতে শিউলি ধরছে। শিশির পড়ছে প্রতিদিন ভোরে। কিন্তু এ তো প্রতি বছর হয়, এবার অন্য রকম হতে শুরু করল যেন সব। একটা লোক সিলেবাস ছেড়ে পড়পড় করে বুকের ভিতর, মাথার ভিতর সেঁধোচ্ছে, সব কিছু এধার ওধার করে দিচ্ছে - আমি শুধু দেখছি। বুকের মধ্যে অসহ্য যন্ত্রণা। একটা লোক যে আমার সব অনুভূতি জানে, অথচ সে নাকি বিখ্যাত লোক - অসহ্য!! হতেই পারে না। তখন কে জানত, কোনটা শান্তিনিকেতন, কোনটা কোন কাব্যগ্রন্থ? শুধু মানুষটা যেন আমার বাড়ির সামনের শিউলি গাছটা চেনে এতটা বুঝেছি। আর বুঝেছি আমার শোয়ার সময় জানলা দিয়ে দেখা আকাশটার ভাষা জানে। আমার অনেক অনেক গোপন কথাও জানে। অন্যমনস্ক... অন্যমনস্ক... অন্যমনস্ক। আমার শিরায় শিরায়, ধমনীতে ধমনীতে ঢুকছে বিষাক্ত রবীন্দ্রনাথ। আমি পুড়ে যাচ্ছি। 
        আজ হঠাৎ ইউটিউবে ক্যাসেটটা পেয়ে কি যে লাগছে তা ভাষায় বোঝানোর নয়! প্রদীপ ঘোষের 'ছুটি' ছোটোগল্পের নির্বাচিত অংশের পাঠ, শান্তিনিকেতন প্রবন্ধের অংশ বিশেষ, সুচিত্রা মিত্রের গলায় কিছু কবিতা, কিছু গান...'তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে'..'আকাশে আজ কোন চরণের যাওয়া আসা'...'আমারে বাঁধবি তোরা'...কত বলব!!
        সব্বাইয়ের কাছে শোনার অনুরোধ রইল। আমার বুকে জমছে দীর্ঘশ্বাস। উত্তেজনায়। এক রবীন্দ্রনাথ শ্বাস নিতে পারি, বুকে এতটা জোর কই? রোজই তো 'বোধ'টাকে বাড়ানোর চেষ্টা, যে চেষ্টাটা করতে বলেছিলেন। পারছি কই? ওদিকে রিচার্জ ফুরোবার সময় হয়ে এলো। তবু...