Skip to main content

প্রাণহীন মানুষ

অনেক রাত। ট্রেনটা দাঁড়িয়ে গেল। পাশেই একটা মালগাড়ি দাঁড়িয়ে। ইঞ্জিনটা পড়ল সামনে। একা চালক। দুজন নেই কেন? সাধারণত দুজন থাকেই? নেই। চারদিক অন্ধকার ঘুটঘুটে। কোনো বাড়ি ঘরদোর নেই। আলো নেই। এক আকাশ তারা। নীচে দাঁড়িয়ে সর্পিল রেললাইনে চালক একা।
          ট্রেন ছাড়ল আমাদের। মালগাড়ির এক একটা প্রাণহীন বগি পর পর দাঁড়িয়ে। আমরা পেরিয়ে যাচ্ছি। পেরিয়ে গেলাম দেখতে দেখতে। জানলায় মাথা রেখে যতক্ষণ দেখা যায় দেখলাম। মালগাড়িটা দাঁড়িয়েই।
...

ডেসিবেলি ভক্তি

স্বামীজি বলেছিলেন, ধর্মের সার চিত্তশুদ্ধি।
          এর উদাহরণ স্বামীজি হয় তো নিজেও আজীবন দেখেছেন কিনা সন্দেহ হয়। বাঙালির ধর্মের সার হল শব্দ উৎপাদন। ঢাক, ঢোল, কাঁসা, শাঁখ, খঞ্জনি, মন্ত্র, হুলুধ্বনি, আধুনিক জগতে মাইক।
          শব্দ না হলে দুর্গা, কালী, কার্তিক, জগদ্ধাত্রী, বিশ্বকর্মা যেই হোন কেন তিনি তুষ্ট হন না, এমন কথা নিশ্চয়ই কোথাও লেখা থাকবে। এত শাস্ত্র এক জীবনে পড়ে শেষ করা তো যায় না, তাই হয় তো হবে আমার পড়া হয়নি। থেকে থেকেই কোথাও নানাবিধ শব্দ উৎপন্ন হলেই বুঝি কোথাও দেবতার আগমন হয়েছে।
...

ঝক্কি

অনেক রাত। বাঁধা পাঁঠাটার ঝিমুনি এসে গিয়েছিল। হঠাৎ পাশ থেকে কে যেন ঠেলা মেরে বলল, অ্যাই...
          পাঁঠাটা ঘোলা ঘোলা চোখে তাকিয়ে বলল, আমায় বলছেন?
          কুকুরটা পাশে বসে বলল, কাল তবে জবাই?
          পাঁঠাটা আবার চোখ বুজে বলল, মনে তো হচ্ছে। 
...

ত্রিযামা ও জগদ্ধাত্রী

"আমি এখন তোমায় অল্প অল্প বুঝতে পারছি"

            "তাই হয়, আমারও বিয়ের বেশ কয়েক বছর পর মনে হত তোর দিদাকে অল্প অল্প করে বুঝতে শুরু করলাম। এখন আরো বেশি বেশি মনে হয়। তোর দিদার সারাদিনের টুকিটাকি ঘটনা, এই যেমন ধর রান্নাঘরে রান্না করতে করতে বাসনগুলো মেজে ফেলা, উনুনে আঁচ দিয়ে সামনে বসে উদাস তাকিয়ে থাকা, অঞ্জলি দিতে গিয়ে চোখে জল আসা, আমাদের বকার ঝাঁঝে কিছু অপ্রিয় সত্যি বলে ফেলা, আবার সেগুলো ঢাকার চেষ্টা করা…. কত কি…."
...

রাতের পড়ুয়া

সব জিনিসের একটা সীমা থাকে তো। গোপাল সামন্ত রোজ কলকাতা ঠেঙিয়ে অফিস করে এসে চাট্টি ডালভাত খেয়ে রাতে শোবে, অমনি রাত একটা বাজলেই পড়ার ঘরে টুক করে টেবিল টানার শব্দ। মানে উনি এলেন। তারপর ঘস ঘস করে বইয়ের পাতা উল্টানোর শব্দ। মানে উনি পড়ছেন। আলো জ্বালতে লাগে না। এমনিই অন্ধকারে পাতার পর পাতা পড়ে যান। গোপাল সামন্তের মাথাটা গরম হয়ে যায়। মাঝে মাঝে আবার খুক খুক করে হাসে। 'বিন্দুর ছেলে' পড়ে তো ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে কান্নার শব্দও পেয়েছে গোপাল সামন্ত বিছানায় কোলবালিশে ঠ্যাঙ তুলে শুয়ে শুয়ে।
...

সুহৃদ

গোঁসাই বলল, দরদীকে খোঁজো, নইলে সব ফাঁকি। ফাঁকিতে কি জীবন চলে?
          একজন বলল, দরদী পাই কই?
          গোঁসাই বলল, দরদ দিয়ে তাকা, দরদ দিয়ে শোন, দরদ দিয়ে ছোঁ। দেখ দরদের ঝুনঝুনি বাজছে জগতে।
          সে বলল, পেলাম তো শুধু আঘাত গোঁসাই…. দরদ কই?
...

রত্নামাসি

রত্নামাসির যা ছিল অন্তর জুড়েই ছিল। রত্নামাসির দুটো ছোটোঘর জোড়া সংসার, স্বামী, দুটো বাচ্চা ছেলে, একটা খাট, একটা আলমারি, গ্যাসওভেন, একটা ড্রেসিংটেবিল, দুটো সাইকেল, একটা লেডিস, একটা জেন্টস - সব রত্নামাসির অন্তর জুড়েই ছিল। দুটো কি তিনটে বাড়ি কাজ করত রত্নামাসি। হাসিমুখ, বারবার পরা শাড়ি, মাটি ছুঁয়ে যাওয়া ঢালু হয়ে আসা চটি, একটা কালো ছাতা, কি একটা তেলের গন্ধ - এই তো রত্না মাসি।
          শীতেরবেলা গেছি কয়েকবার। খোঁজ নিতে - কাজে এলে না কেন?
...

পরিবর্তন

    দোকানে তালা লাগিয়ে, তালাটা একবারও টেনে দেখার ইচ্ছা যখন হল না, তখন আর বাড়ি না গিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে, উজ্জ্বল হলুদ আলোটার নীচে বসে, কুকুরগুলোকে ডাকলেন। 
          কুকুরগুলো পরিচিতের মত ঘিরে বসল যখন, উনি ব্যাগ থেকে দুটো বিস্কুটের প্যাকেট খুলে, বিস্কুটগুলো ছড়িয়ে, কারোর কারোর গায়ে হাত বুলিয়ে বললেন, খা। 
...

ভুল হয় না জোনাকিদের

মা আড়চোখে দেখছে মাঝে মাঝে। বারণ করছে না। ধীরে ধীরে বুঝে যাবে। জোনাকিরা ধরা দেয় না। তামাকের উগ্র গন্ধ সহ্য করা অভ্যাস এখন। যে নাক আগে যোজন দূরের হাসনুহানার অস্তিত্বে সাড়া দিত।
          বাচ্চাটা কোলের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। তার ছেঁড়া প্যান্টের উপর বসে একটা জোনাকি এখনও দব দব করে জ্বলছে।
....

কত্তাবাবা ও ছাগল

টুপ করে ঢিলটা ডুবে গেল। ছাগলটা লাফ দিয়ে বলল, আরেব্বাস! কত্তা আপনার কি টিপ! এক টিপে ফড়িংটাকে ঘা দিলেন!
          কত্তা বলল, আগে এক টিপে বাঘ মারতাম রে। তখন তো তুই জন্মাসইনি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ঘোড়া, সিংহ এই সব নিয়ে হাঁটত। ছাগল কি কেউ নিত রে!
          ছাগলটা উদাস হয়ে বলল, তাও...
....
Subscribe to অনুগল্প