Skip to main content

তাদেরও যাওয়ার কথা ছিল

"শুবি না? এই শালা, এদিকে আয়, এই... আরে এই... কাঁথাটা ফেললি কেন?"
     একটা ঘর। কাঠের পাতলা পাটাতনের দেওয়াল। শীতের হাওয়া, বর্ষার জল, কিছুই বাধা মানে না। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেললাইন। ট্রেনের কাঁপুনিতে দেওয়ালে ঝোলানো আয়নায় সারাঘরের দুলুনি দেখা যায়।
     শীতের সন্ধ্যে। দুটো কাঁথার তলায় শুয়ে তিন চারটে রাস্তার কুকুর। প্রমাণ সাইজের কুকুর। ষাটোর্ধ মানুষটা একটা লুঙ্গি কোমরের কাছে জড়িয়ে, হাঁটু অবধি তুলে, মেঝেতে মদের বোতল নিয়ে বসে। ঘরে টিমটিম করছে হলুদ ডুমের আলো।

সানাই

সানাই তাকে পেয়ে হারিয়ে কাঁদে? না, তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাঁদে?
     এ দ্বন্দ্ব আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মনোরমা। যখনই সানাই বেজেছে, বুকে কান্না উঠেছে। কিন্তু কেন? কাকে সে চায়? সে মুখটা স্পষ্ট নয়। বিয়াল্লিশ বছর আগে যখন পুরোহিত মন্ত্র পড়ছিল, চারদিক হুল্লোড়, সানাই বাজছিল মনোরমাকে কাঁদিয়ে একা একা, গোপনে। মনোরমা নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছে, কে সে? কার জন্য এমন বুক হাহাকার কান্না তার?
      মন উত্তর দেয়নি স্পষ্ট করে। শুধু বলেছে, এ সে নয়, যার হাতের উপর হাত, এ নয় সে।

সেদিনের আকাশ ভাঙা মেঘ

জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকে বুড়ি দুটো পেঁপে বার করে পুরোহিতের হাতে দিয়ে বলল, একটু ঝোল রেঁধে খাইয়ো তো, আমায় কাল স্বপ্নে বলল পেটটা ভালো যাচ্ছে না, তোর বাগানে তো ভালোই পেঁপে হয়েছে, আমায় দুটো দিয়ে যাস না।
     পুরোহিত বলল, তোমার বাড়ি কোথায়?
     বুড়ি বলল, খড়দা...
     পুরোহিত বলল, তা তুমি নিজে রেঁধে আনলেই পারতে..

ছবি

টোটোর পিছনে নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তির ছবি। মোবাইল নাম্বারটা লাল দাগ দিয়ে কাটা।
চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, কার ছবি?
...

অবসেসান

রমাকান্তর আজকের বক্তৃতার বিষয়, "মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ"।

কিন্তু গাড়িতে যেতে যেতে মনটা ভীষণ খচখচ করছে রমাকান্তর। কেন জানি মনে হচ্ছে বাইরের দরজার তালাটা একবার টেনে দেখলে হত। তালাটার একটু গোলমাল আছে। চাবি ঘুরে যায়, কিন্তু তালাটা গলা ঝুলিয়ে কাত হয়ে খুলে যায়। এতক্ষণে কি খুলে গেছে তবে? কেউ ঢুকেছে? যে ঢুকেছে সে চোর না মানুষ?
...

বাদী উপাখ্যান

একজন বলল, আয়না সত্য। আরেকজন বলল আয়নায় ভাসা যা কিছুর সবের ছায়া তারাই সত্য। নইলে তোমার আয়না কেবল কাঁচ। প্রতিবিম্ব দেখলেই যে না আয়না!
          আরেকজন এসে বলল, আয়না সত্য, প্রতিবিম্ব সত্য, দুই-ই সত্য, তবে যে আয়না আর প্রতিবিম্ব দুই-ই দেখছে সে মূল সত্য। 
          তিন দলের লোক হল। একজন হল আয়নাবাদী। একজন হল প্রতিবিম্ববাদী। একজন হল দ্রষ্টাবাদী। 
...

এত জল, এত জল

এত বৃষ্টি বহুকাল হয়নি। সব ভাসিয়ে নিয়ে যাবে যেন।

    পাহাড়ের কোলে ছোটো মন্দির। একটু দূরে নদী। নদী পেরিয়ে গেলেই গাঁ। পুরোহিতের গাঁ। 
    পুরোহিত প্রদীপটা নেভানোর আগে, ভালো করে আবার গোবিন্দের দিকে তাকালো। স্থির, কালো চোখ। পাথর গেঁথে এমন চোখ বানানো যায়! 
    পুরোহিত প্রদীপটা তুলে গোবিন্দের চোখের মণির দিকে তাকালো। উত্তর নেই। গোবিন্দ স্থির তাকিয়ে। অপলক। 
...

তোমার নাম 'অসুবিধা'

আমি তোমার নাম দিলাম 'অসুবিধা'। আমার কলেজের দিন শেষ। আমি চিনছি জীবন। তুমি তখন সেকেন্ড ইয়ার। আমাদের এক কমোন বন্ধু নিয়ে এলো তোমায় একদিন। জৈব রসায়নের একটা জটিল বিষয়ে তুমি আটকে। আমিই নাকি পারব তোমায় দিতে সমাধান। দিলামও। তুমি তাকিয়ে থাকলে। আমার প্রথম অনুভব হল আমার অসুবিধা হচ্ছে। তুমি তাকালে আমার অসুবিধা হচ্ছে। এ অসুবিধা সুবিধার চেয়ে সহজ, কিন্তু সুবিধার চেয়ে তীক্ষ্ণ।
          এরপর অবধারিত ভাবেই আবার যোগাযোগ হল। বুঝতে দেরি হল না তুমি আমার অসুবিধার কথা বুঝে গেছ।
...

জয় মা

নতুন বউকে নিয়ে মায়ের মন্দিরে ঢুকল নতুন বর। নতুন বউ হাঁটু মুড়ে বসে মাকে অনেকক্ষণ ধরে প্রণাম করল। বর আড়চোখে ভুরু কুঁচকে দেখতে দেখতে ভাবল, এত ভক্তি! বাহ্।
             ফুলশয্যার রাত। বউকে বর গদগদ স্বরে জিজ্ঞাসা করল, হ্যাঁ গো, জানো তো, মা ভীষণ জাগ্রত আমাদের! পটলাদার ছেলে হচ্ছিল না। খালি মেয়ে, খালি মেয়ে। শেষে মায়ের কৃপায় ছেলে হল। নাম রেখেছে কালীচরণ। সেকেলে নাম। কিন্তু ভীষণ আধুনিক ওরা।
             বউ বলল, সে তো বুঝতেই পারছি।
...

শান্ত শিব

ট্রেনে পিছনের একটা পা কাটা কুকুরটা রেললাইনের পাশের নির্জন শিব মন্দিরের চাতালে শুয়েছিল সন্ধ্যেবেলা।
          ভক্ত এলো। এসেই এক লাথি মেরে বলল, ভাগ শালা!
          কুকুরটা কাঁপা কাঁপা শরীরটা নিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে, ঘুমের মধ্যে আচমকা ধাক্কাটা সামলিয়ে, ধীরে ধীরে নেমে গেল।
...
Subscribe to অনুগল্প