নিজের চিত্তের প্রসাদ
সৌরভ ভট্টাচার্য
10 November 2021
এমন একটা লেখা লিখুন যাতে কেউ বুঝতে না পারে। মানুষ সহজে বুঝলে সহজে ভুলে যায়। সহজে পেলে মান কম দেয়। সহজ না, জটিল কিছু লিখুন।
এইবার? এই যে এতবড় জটিল পৃথিবী, এত এত প্যাঁচাল, এত এত ঝুটঝামেলা, এই কি শেষ? না তো। এক মেলা লোক। হাজার রকম আলো, হাজার রকম মানুষ, হাজার রকম আমোদ, সমস্যা, ব্যবসা, উদ্দেশ্য। এ সবের শেষে কি থাকে? ভাঙা মেলা। তারপর শূন্য মেলা।
যে ট্রেন হিল্লিদিল্লি ঘুরে এত এত রাস্তা পেরিয়ে যাত্রা শেষ করল, তাকেও কারশেডে গিয়ে বিশ্রাম করতে হয়।
...
এইবার? এই যে এতবড় জটিল পৃথিবী, এত এত প্যাঁচাল, এত এত ঝুটঝামেলা, এই কি শেষ? না তো। এক মেলা লোক। হাজার রকম আলো, হাজার রকম মানুষ, হাজার রকম আমোদ, সমস্যা, ব্যবসা, উদ্দেশ্য। এ সবের শেষে কি থাকে? ভাঙা মেলা। তারপর শূন্য মেলা।
যে ট্রেন হিল্লিদিল্লি ঘুরে এত এত রাস্তা পেরিয়ে যাত্রা শেষ করল, তাকেও কারশেডে গিয়ে বিশ্রাম করতে হয়।
...
একদিন জিতে যাবে
সৌরভ ভট্টাচার্য
8 November 2021
সারারাত আকাশই পারে না সব তারা চাঁদ এক জায়গায় রাখতে, এদিকে ওদিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নেয়। আর তুমিই নাকি সব গুছিয়ে এক জায়গায় রাখবে। যতসব পাগলের মত কথা।
দুজনে
সৌরভ ভট্টাচার্য
7 November 2021
বাচ্চাটা দুটো তুবড়ি, আর চারটে ফুলঝুরি জ্বালানোর পর মায়ের মুখের দিকে তাকালো। বুঝল আর নেই। মা তাকে নিয়ে ছাদে উঠল। কত কত বাড়িতে টুনি লাইট লাগানো। সামনের পুকুরটা জ্বলজ্বল
কাকটা
সৌরভ ভট্টাচার্য
7 November 2021
কাকটা গঙ্গার পাড়ে কিছু একটা খুঁটে খেতে চাইছে। বারবার কাদায় পা আটকে যাচ্ছে। কি সেয়ানা দেখো, এক দুবার খুঁটে খেতে না খেতেই দু তিনবার লাফিয়ে নিচ্ছে, যাতে কাদায় পা না জমে যায়। পা যদি একবার কাদায় জমে যায়, তবে ডানায় যত শক্তিই থাকুক, পা দুটোকে যে কিছুতেই টেনে তুলতে পারবে না। মাটিতে পায়ের ধাক্কা দিয়ে, ডানায় হ্যাঁচকা টান মেরেই না আকাশে ওড়া!
কি চালাক দেখো, সে কাদার মধ্যে কি একটা খুঁটে খেতে খেতে চারদিকে বারবার তাকিয়ে নিচ্ছে। যেন কেউ এসে চেপে না ধরে তাকে, ছোবল না দিয়ে যায়, ঢিল না মারে।
....
কি চালাক দেখো, সে কাদার মধ্যে কি একটা খুঁটে খেতে খেতে চারদিকে বারবার তাকিয়ে নিচ্ছে। যেন কেউ এসে চেপে না ধরে তাকে, ছোবল না দিয়ে যায়, ঢিল না মারে।
....
কাজরি
সৌরভ ভট্টাচার্য
6 November 2021
বৃষ্টি এলো হঠাৎ। বেমানান লাগল না। যেন আসারই ছিল। ছোটো স্টেশান। ঘাস উঠেছে নেড়া হয়ে সদ্য চুল গজানো মাথার মত এখানে সেখানে অল্পস্বল্প। মুখোমুখি দুটো প্ল্যাটফর্ম ভিজছে। দিগন্ত ছোঁয়া সবুজ মাঠ উৎফুল্ল হয়ে আকাশকে ডাকছে বুকের উপর, এসো।
ট্রেনের জানলার উপর হাত রেখে জাহ্নবীও বলেছে, এসো তবে, ভালো থেকো, সাবধানে যেও।
...
ট্রেনের জানলার উপর হাত রেখে জাহ্নবীও বলেছে, এসো তবে, ভালো থেকো, সাবধানে যেও।
...
শ্যামাপোকার আব্বুলিশ
সৌরভ ভট্টাচার্য
6 November 2021
মানুষটা শ্যামাপোকা খুঁজতে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগল। ফোন করলে ধরল না। লোক পাঠালে ধরা দিল না। এ পাড়া, সে পাড়া ঘুরে কোথাও শ্যামাপোকা না পেয়ে লোকটা একটা রাস্তার মোড়ে বসে পড়ল, হাঁটুতে মাথাটা গুঁজে। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সাড়া দিল না।
তার ছোটোবেলার সব শ্যামাপোকারা ভিড় করে তার সারা শরীর মন ছেয়ে গেল। বাবা, মা, ভাই, বোন সবার গায়ে শ্যামাপোকা। সবাই নতুন জামা পরেছে। না, সবাই তো না, বাবা আর মায়ের নতুন জামা, শাড়ি নেই। তারা তখন গরীব।
...
তার ছোটোবেলার সব শ্যামাপোকারা ভিড় করে তার সারা শরীর মন ছেয়ে গেল। বাবা, মা, ভাই, বোন সবার গায়ে শ্যামাপোকা। সবাই নতুন জামা পরেছে। না, সবাই তো না, বাবা আর মায়ের নতুন জামা, শাড়ি নেই। তারা তখন গরীব।
...
পাঁঠাবিলাস
সৌরভ ভট্টাচার্য
4 November 2021
গুটিগুটি পায়ে গিয়ে আবার হাজির ঠাকুরমশায়ের কাছে। তিনি আড়চোখে দেখে কথা বললেন না। জবার মালাগুলো আলাদা করছেন। পুজো শুরু হতে বেশি দেরি নেই। এই হম্বিতম্বি গ্রামে এইটাই সব চাইতে বড় কালীপুজো। লোক হয় মেলা। দু'দিন খাওয়ানো হয়। একদিন খিচুড়ি। পরেরদিন লুচি। কিন্তু নিরামিষ। এই কালীকে অনেকে ওইজন্যে নিরামিষ কালী বলে। বলি বন্ধ প্রায় বছর পঁচিশেক হল। গ্রামের জমিদার হরিকান্ত একবার স্বপ্ন দেখেছিলেন মা চলে যাচ্ছেন হেঁটে হেঁটে, পিছনে সার দিয়ে পাঁঠার দল। হরিকান্ত কেঁদে মায়ের পায়ে পড়ে বলেছিল, মা তুই কই যাস?
মা বলেছিলেন, কাশী। দেশ কি তুই পাঁঠাহীন করবি হরিকান্ত?
...
মা বলেছিলেন, কাশী। দেশ কি তুই পাঁঠাহীন করবি হরিকান্ত?
...
ওদের জন্য
সৌরভ ভট্টাচার্য
3 November 2021
অবশেষে নিবারণ যখন স্কুলের মাস্টারির চাকরিটা নিল, তখন পড়িমরি ঠাকুমা আর সহ্য করতে না পেরে শয্যা নিলেন।
কারণটা ভেঙে বলি। নিবারণ ঘোষেদের ওঝা বংশ। শোনা যায় নিবারণদের কোনো এক পিতৃপুরুষ, চোল বংশের পুরোহিত ছিলেন। তার কানে কিছু সমস্যা ছিল। দীক্ষার সময় ঠিক মন্ত্র শুনতে পাননি। কিন্তু পরম নিষ্ঠা নিয়ে জপের জন্য শিবকে না পেলেও ভূতসিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই থেকে নিবারণদের ভাগ্য ফিরে যায়। কি করে তারা ঘোষ হল আর এই বাংলায় এলো সেও এক ভৌতিক কাণ্ড। সে নিয়ে কারোর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু শোনা যায় যে কোনো এক পূর্বনারী (পূর্বপুরুষ যদি হয় পূর্বনারী হতেই বা দোষ কি!) নাকি এক ব্রহ্মদৈত্যের সঙ্গে এ দেশে এসে ঘর বেঁধেছিলেন। সেই থেকেই তারা এই হুড়ুমকুণ্ড গ্রামে এসে আছেন। তারকেশ্বর থেকে বেশি দূরে নয় এ গ্রাম।
....
কারণটা ভেঙে বলি। নিবারণ ঘোষেদের ওঝা বংশ। শোনা যায় নিবারণদের কোনো এক পিতৃপুরুষ, চোল বংশের পুরোহিত ছিলেন। তার কানে কিছু সমস্যা ছিল। দীক্ষার সময় ঠিক মন্ত্র শুনতে পাননি। কিন্তু পরম নিষ্ঠা নিয়ে জপের জন্য শিবকে না পেলেও ভূতসিদ্ধ হয়েছিলেন। সেই থেকে নিবারণদের ভাগ্য ফিরে যায়। কি করে তারা ঘোষ হল আর এই বাংলায় এলো সেও এক ভৌতিক কাণ্ড। সে নিয়ে কারোর স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা নেই, কিন্তু শোনা যায় যে কোনো এক পূর্বনারী (পূর্বপুরুষ যদি হয় পূর্বনারী হতেই বা দোষ কি!) নাকি এক ব্রহ্মদৈত্যের সঙ্গে এ দেশে এসে ঘর বেঁধেছিলেন। সেই থেকেই তারা এই হুড়ুমকুণ্ড গ্রামে এসে আছেন। তারকেশ্বর থেকে বেশি দূরে নয় এ গ্রাম।
....
ফিরে আসা
সৌরভ ভট্টাচার্য
2 November 2021
গভীর রাতে দরজায় টোকা।
বাবা, আমি এসেছি, তুমি কি ক্ষমা করবে আমায়?
বাবা দরজা খুলে দাঁড়ালো।
ছেলে মাথা নীচু করে পা ছুঁলো বাবার। বাবা বলল, শুধু আমি না, আমার চোদ্দো পুরুষ অপেক্ষা করছে তুই ফিরে আসবি বলে। ঘরে এসে দেখ।
...
বাবা, আমি এসেছি, তুমি কি ক্ষমা করবে আমায়?
বাবা দরজা খুলে দাঁড়ালো।
ছেলে মাথা নীচু করে পা ছুঁলো বাবার। বাবা বলল, শুধু আমি না, আমার চোদ্দো পুরুষ অপেক্ষা করছে তুই ফিরে আসবি বলে। ঘরে এসে দেখ।
...
চোদ্দোশাক
সৌরভ ভট্টাচার্য
1 November 2021
ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের কথাগুলো সব পর পর বলে যাওয়া স্বভাব। মাথাটা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকিয়ে অনর্গল এক দেড় ঘন্টা কথা বলে, নাক চোখ মুছে উনি ঘরে এসে বসেন। এ রোজকার স্বভাব। যত না আত্মীয়স্বজন মাটির উপর দাঁড়িয়ে, তার চাইতে অনেক বেশি আকাশে। একজন দূর সম্পর্কের ভাগ্নী ছাড়া কেউ নেই আজ সত্যি বলতে।
আজ সকালে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশে থাকা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে, হঠাৎ চোখ গেল সামনের ফ্ল্যাটের ঝুলবারান্দায়, এক কিশোর টুনি লাগাচ্ছে। কি নাম? জানেন না। কারোরই নাম জানেন না। ইলেকট্রিসিটি বোর্ড থেকে রিট্যায়ার করার পর থেকে কাউকে চিনতে ইচ্ছা করে না। কারোর নাম জানতে ইচ্ছা করে না।
...
আজ সকালে ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশে থাকা ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, আকাশের দিকে তাকিয়ে, হঠাৎ চোখ গেল সামনের ফ্ল্যাটের ঝুলবারান্দায়, এক কিশোর টুনি লাগাচ্ছে। কি নাম? জানেন না। কারোরই নাম জানেন না। ইলেকট্রিসিটি বোর্ড থেকে রিট্যায়ার করার পর থেকে কাউকে চিনতে ইচ্ছা করে না। কারোর নাম জানতে ইচ্ছা করে না।
...