Skip to main content

স্বপ্ন

বাবা তুমি কোনোদিন সমুদ্দুরের ওদিকে গেছো?

বাবা ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে, জালটা গোটাতে গোটাতে বলল, না বাবা।

ছেলে বলল, তবে রোজ রোজ সমুদ্দুরে নৌকা নিয়ে কেন যাও?

বাবা বলল, মাছ ধরতে। মাছ বিক্রি না করলে আমাদের যে না খেয়ে থাকতে হবে।

ছেলে বলল, আমি একদিন তোমার নৌকাটা নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে আসব। বড় হই। তুমি দেবে তো তোমার নৌকাটা আমায়?

মায়ের ইচ্ছে

​​​​​​​অর্জুন বাড়ুজ্জে আচমন করে সবে কোশাকুশিতে গঙ্গাজল ঢেলেছে, অমনি মা কাটা মুণ্ডুটা বেদীতে নামিয়ে এক চড় কষালেন অর্জুনের গালে।

অর্জুন গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, কি অন্যায় হল মা? আমি কি মন্ত্র কিছু ভুল পড়লাম....

মা বললেন, না বুঝে তো সেই ছোটোবেলা থেকেই মন্ত্র পড়ে আসছিস... সে দোষ আমি ধরিও না.. তাছাড়া আজকাল স্বর্গের কচি দেবতারাও ধাতুরূপ, শব্দরূপ মনে রাখতে পারে না, সব সারাদিন নয় হিন্দী, নয় ইংরাজিতে কথা বলে যাচ্ছে। মায় বাংলাটাও বলে না। সে জন্যে মারিনি..

ক্যাডবেরি

ধুম করে আলোটা নিভিয়ে চলে এলে যে?

দিলীপ কম্বলের ভিতর থেকে বলল।

রত্না শুতে গিয়েও বসে পড়ে বলল, মানে, আলো জ্বালিয়ে শোবে নাকি। যত বুড়ো হচ্ছ, তত ভীমরতি ধরছে...

দিলীপ উঠে বসে বলল, বাহাত্তুরেও বলতে পারো, তিয়াত্তর তো হল না?

রত্না বলল, শোনো এই মাঝরাতে আমার খেজুরে আলাপ করার কোনো ইচ্ছা নেই, শোও...

বোকা কোথাকার!

ঘুঁটেগুলো তুলে নিয়ে ফিরতে যাবে, হঠাৎ গাছের উপর থেকে কেউ যেন বলল, দুটো দিয়ে যা না রে, ঠাণ্ডায় জমে যাচ্ছি, একটু আগুন জ্বেলে বসি।

  রমার ঠাকুমার তো দাঁত কপাটি লাগার জোগাড়। "রাম রাম" বলতে আবার দু পা এগিয়েছে, অমনি গাছ থেকে আবার সে বলল, রাম নামে পালাবো আমি অমন পাপী ভূত না রে, ভ্যাকেন্সি নেই উপরে তাই মাঝখানে রিজার্ভে আছি। বডি পেলেই ঢুকে যাব।

তাদেরও যাওয়ার কথা ছিল

"শুবি না? এই শালা, এদিকে আয়, এই... আরে এই... কাঁথাটা ফেললি কেন?"
     একটা ঘর। কাঠের পাতলা পাটাতনের দেওয়াল। শীতের হাওয়া, বর্ষার জল, কিছুই বাধা মানে না। ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রেললাইন। ট্রেনের কাঁপুনিতে দেওয়ালে ঝোলানো আয়নায় সারাঘরের দুলুনি দেখা যায়।
     শীতের সন্ধ্যে। দুটো কাঁথার তলায় শুয়ে তিন চারটে রাস্তার কুকুর। প্রমাণ সাইজের কুকুর। ষাটোর্ধ মানুষটা একটা লুঙ্গি কোমরের কাছে জড়িয়ে, হাঁটু অবধি তুলে, মেঝেতে মদের বোতল নিয়ে বসে। ঘরে টিমটিম করছে হলুদ ডুমের আলো।

সানাই

সানাই তাকে পেয়ে হারিয়ে কাঁদে? না, তাকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাঁদে?
     এ দ্বন্দ্ব আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি মনোরমা। যখনই সানাই বেজেছে, বুকে কান্না উঠেছে। কিন্তু কেন? কাকে সে চায়? সে মুখটা স্পষ্ট নয়। বিয়াল্লিশ বছর আগে যখন পুরোহিত মন্ত্র পড়ছিল, চারদিক হুল্লোড়, সানাই বাজছিল মনোরমাকে কাঁদিয়ে একা একা, গোপনে। মনোরমা নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছে, কে সে? কার জন্য এমন বুক হাহাকার কান্না তার?
      মন উত্তর দেয়নি স্পষ্ট করে। শুধু বলেছে, এ সে নয়, যার হাতের উপর হাত, এ নয় সে।

সেদিনের আকাশ ভাঙা মেঘ

জগন্নাথ মন্দিরে ঢুকে বুড়ি দুটো পেঁপে বার করে পুরোহিতের হাতে দিয়ে বলল, একটু ঝোল রেঁধে খাইয়ো তো, আমায় কাল স্বপ্নে বলল পেটটা ভালো যাচ্ছে না, তোর বাগানে তো ভালোই পেঁপে হয়েছে, আমায় দুটো দিয়ে যাস না।
     পুরোহিত বলল, তোমার বাড়ি কোথায়?
     বুড়ি বলল, খড়দা...
     পুরোহিত বলল, তা তুমি নিজে রেঁধে আনলেই পারতে..

ছবি

টোটোর পিছনে নিরুদ্দিষ্ট ব্যক্তির ছবি। মোবাইল নাম্বারটা লাল দাগ দিয়ে কাটা।
চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, কার ছবি?
...

অবসেসান

রমাকান্তর আজকের বক্তৃতার বিষয়, "মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ"।

কিন্তু গাড়িতে যেতে যেতে মনটা ভীষণ খচখচ করছে রমাকান্তর। কেন জানি মনে হচ্ছে বাইরের দরজার তালাটা একবার টেনে দেখলে হত। তালাটার একটু গোলমাল আছে। চাবি ঘুরে যায়, কিন্তু তালাটা গলা ঝুলিয়ে কাত হয়ে খুলে যায়। এতক্ষণে কি খুলে গেছে তবে? কেউ ঢুকেছে? যে ঢুকেছে সে চোর না মানুষ?
...

বাদী উপাখ্যান

একজন বলল, আয়না সত্য। আরেকজন বলল আয়নায় ভাসা যা কিছুর সবের ছায়া তারাই সত্য। নইলে তোমার আয়না কেবল কাঁচ। প্রতিবিম্ব দেখলেই যে না আয়না!
          আরেকজন এসে বলল, আয়না সত্য, প্রতিবিম্ব সত্য, দুই-ই সত্য, তবে যে আয়না আর প্রতিবিম্ব দুই-ই দেখছে সে মূল সত্য। 
          তিন দলের লোক হল। একজন হল আয়নাবাদী। একজন হল প্রতিবিম্ববাদী। একজন হল দ্রষ্টাবাদী। 
...
Subscribe to অনুগল্প