বাবা তুমি কোনোদিন সমুদ্দুরের ওদিকে গেছো?
বাবা ছেলের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে, জালটা গোটাতে গোটাতে বলল, না বাবা।
ছেলে বলল, তবে রোজ রোজ সমুদ্দুরে নৌকা নিয়ে কেন যাও?
বাবা বলল, মাছ ধরতে। মাছ বিক্রি না করলে আমাদের যে না খেয়ে থাকতে হবে।
ছেলে বলল, আমি একদিন তোমার নৌকাটা নিয়ে ওপার থেকে ঘুরে আসব। বড় হই। তুমি দেবে তো তোমার নৌকাটা আমায়?
বাবা বলল, আমার নৌকা তদ্দিনে বুড়ো হয়ে যাবে বাবা। তুমি সেদিন নতুন নৌকা বানিয়ে নিও। যে তোমায় ওপারে নিয়ে যাবে।
ছেলে ঘুমিয়ে পড়ল। বাবা পাশে শুয়ে। সমুদ্রের গর্জন আসছে অন্ধকার বেয়ে বেয়ে জানলা দিয়ে। বাবার মনে পড়ল তার নিজের বাবার কথা, সে নিজেও নাকি বাবাকে বলতো, ওপারে নিয়ে চলো, কি আছে দেখব।
বাবা উঠে এসে দাঁড়ালো তারা ভরা আকাশের নীচে। শূন্য সমুদ্রের তট। নৌকাটা একটা ঘুমন্ত জন্তুর মত শুয়ে। বাবা গিয়ে নৌকাটা ছুঁয়ে দাঁড়ালো। তার কত স্বপ্নের কথা জানে এ নৌকা। কত স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার কথাও তো জানে।
হাতে ছোট্টো হাতের ছোঁয়া লাগল। "তুমি উঠে এসেছ কেন? জানো না আমার একা অন্ধকারে ভয় করে?"
তার ছেলে দাঁড়িয়ে। তারার আলোয় তার তারার মত দুটো চোখে অভিমানের জল।
বাবা তাকে জড়িয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল, এই তো আমি। কোত্থাও যাইনি।
বাবা ছেলেকে কোলে নিয়ে ফিরছে ঘরের দিকে। ছেলে ঘুমিয়ে পড়েছে কাঁধে মাথা রেখে আবার। তার মাথার মধ্যে সমুদ্রের ওপারে যাওয়ার স্বপ্ন গুটি সাজিয়ে এক্কা দোক্কা খেলছে, বাবার হাত ধরে।