অর্জুন বাড়ুজ্জে আচমন করে সবে কোশাকুশিতে গঙ্গাজল ঢেলেছে, অমনি মা কাটা মুণ্ডুটা বেদীতে নামিয়ে এক চড় কষালেন অর্জুনের গালে।
অর্জুন গালে হাত বোলাতে বোলাতে বলল, কি অন্যায় হল মা? আমি কি মন্ত্র কিছু ভুল পড়লাম....
মা বললেন, না বুঝে তো সেই ছোটোবেলা থেকেই মন্ত্র পড়ে আসছিস... সে দোষ আমি ধরিও না.. তাছাড়া আজকাল স্বর্গের কচি দেবতারাও ধাতুরূপ, শব্দরূপ মনে রাখতে পারে না, সব সারাদিন নয় হিন্দী, নয় ইংরাজিতে কথা বলে যাচ্ছে। মায় বাংলাটাও বলে না। সে জন্যে মারিনি..
অর্জুন ধুতির খুঁটে চোখ মুছে বলল, তবে?
বলি, কোশাকুশি স্যানেটাইজ করেছিলি? নিজে যখন খেতে বসিস ফিল্টারের জল নিয়ে বসিস, হাত ধুস সাবানে। আর আমার বেলায় ওই গঙ্গাজল? বলি নিজে যা বিশ্বাস করে গিলিস না, আমায় তা দিস কি করে?
অর্জুন ঘাবড়ে গিয়ে বলল, তা মা, মন্দির কর্তৃপক্ষ তো তোমার জন্য ওসবের ব্যবস্থা করেনি গো....
মা বললেন, বাহ বাহ, নিজের মা বলে যদি বোধ থাকত, তবে নিজের পকেট থেকে পয়সা বার করে কিনে আনতিস রে বাবা। কিম্বা আজকাল তো অনলাইনেও আনা যায়, দিয়ে দিতিস আমার নামে অর্ডার। খুব তো রামকৃষ্ণের ছবি টাঙিয়ে ধূপধুনো দিস, তা আচরণটা সেরকম হয় না কেন রে? আমি কি ধর্ণায় বসব স্যানিটাইজারের জন্য?
অর্জুন বলল, না না মা, আমি এখনই দেখছি...আজই আনছি....
মা আবার কাটা মুণ্ডুটা হাতে নিয়ে বললেন, মনে থাকে যেন। আর ওর জন্য একটা মাস্ক আনিস, বলে পায়ের কাছে মহাদেবের দিকে তাকিয়ে ইঙ্গিত করলেন।
অর্জুন বলল, আচ্ছা মা।
মা আবার বললেন, দেখ আমি তো সোজা দাঁড়িয়ে, কিছুটা দূরে তাও, আমার মাস্ক না হলেও চলবে। আর জিভে ঘষাঘষি হবে, সেও এক। কিন্তু ও তো একেবারে নীচে না.... তোদের মুখের কাছে একেবারে। তোরা যে কবে একটু সচেতনভাবে আমাদের দেখবি বাপ, পাথর ভেবে ডাকিস বলেই বুদ্ধি মন সব পাথরের স্বভাব পেয়েছে তোদের, ওঠ.... যা...
অর্জুন, যাই মা, বলে উঠতে গিয়েই খাট থেকে ধড়াম করল পড়ল। বাড়ির সব লোক ছুটে এলো, হুলুস্থুল লেগে গেল। অর্জুন সবাইকে কিছু হয়নি বলে আশ্বস্ত করে, কোনো রকমে রেডি হয়েই ছুটল মন্দিরের দিকে। যাওয়ার আগে একটা বড় স্যানিটাইজারের বোতল আর একটা মাস্ক কিনে মন্দিরে ঢুকতে যাবে, মন্দির কর্তৃপক্ষের সেক্রেটারি এসে বলল, এ সব নিয়ে মন্দিরে যাচ্ছেন কেন? এগুলো দাহ্যবস্তু, কিছু হলে?
অর্জুন ঘাবড়ে গেল। তাও তো। তারপর আবার কি ভাবল, বলল, আমি সাবধানে রাখব, আপনি ভাববেন না দাদা। এই প্যাণ্ডেমিকে হাইজিনটা আগে তো।
সেক্রেটারি কিছুটা বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু এমন জোরে একটা হাঁচি দিল যে তার চশমা ছিটকে গিয়ে ভেঙে দু টুকরো হল মেঝেতে পড়ে। মাস্ক তো ছিলই না মুখে। সে সলজ্জ দৃষ্টিতে অর্জুনের দিকে তাকিয়ে বলল, মায়ের ইচ্ছা।