এমনটাও ঘটে
সংসারে প্রকৃত সুখী সেই, যে সুখে থাকার চেষ্টাই করে না। ভাবেই না কতটা জমল, কতটা গেল।
যেদিন আমি ক্ষেপব
যেদিন আমি ক্ষেপব-
সেদিন টগরকে বলব, লাল গোলাপ
তোমায় তাই মানতে হবে
মানতেই হবে
বাড়ির উঠানের জবা গাছকে বলব-
"হে পারিজাত বৃক্ষ, দাও একটি পারিজাত পুষ্প
আমার হস্তে, গাঁথিব তাহার খোঁপাতে!"
তুমি জবা গাঁথবে খোঁপাতে
তুমি ভিতরে এসো
বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?
ভিতরে এসো
পায়ে ধুলো?
তার চেয়ে অনেক বেশি ধুলো
আমার ঘরে বন্ধু
ময়লা জামা?
সে ময়লা সহ্য হবে
জামার নীচে যে হৃৎযন্ত্রটা?
আমার সে যন্ত্রটা বিকল হয়েছে অনেকদিন,
তোমায় বাইরে রেখে।
আমিও
দিদার মুখে ছোটবেলায় অনেক গল্প শুনতাম। তার মধ্যে একটা গল্প আজও সময়ে অসময়ে খুব মনে পড়ে। গল্পটা বলছি। দিদা কোথায় পড়েছিলেন জানি না। হয়তো অনেকের জানা। তবু যাঁদের অজানা তাঁদের জন্যই বলছিঃ
দূরে
তোমার দিকে কম তাকাই
কারণ, তোমার হৃদয় ফোঁড়া চোখ।
তোমার সাথে কম কথা বলি
কারণ, তোমার কথা বলার ফাঁকে
শুদ্ধ নীরবতা।
তোমার কাছে যাই না
কারণ আমার নিঃসঙ্গ হৃদয়।
তবু
ভয়ের জিনিসকে যত সহজে বিশ্বাস হয়, অভয়কে তত সহজে বিশ্বাস হয় কই? তুলসীদাসজী বলছেন, অমৃত সারা জীবন কানেই শুনে এলাম, চোখে পড়ল শুধু বিষ।
এ অভিজ্ঞতা কার জীবনে না নেই। তবু নিজের সামনে যখন দাঁড়াই, প্রশ্ন করি তোমার এ সংসারে চলার পুঁজি কি? মন বলে, কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা। হ্যাঁ, এইটাই আজ থেকে কাল, কাল থেকে পরশু হাত ধরে নিয়ে চলেছে।
সম্পদ
সব সম্পদ সিন্দুকে, লকারে, আলমারীতে রাখা যায় না। কিছু সম্পদ বুকের মধ্যেও সযত্নে রাখতে হয়। বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, ভালোবাসা - এ সম্পদ চুরি হয় না, যদি না আমি হারিয়ে ফেলি।
সব ফসল ক্ষেতেই জন্মায় না। কিছু জীবনেও জন্মায়। উপলব্ধির ফসল ছাড়া জীবন রিক্ত। সাধক রামপ্রসাদের সেই বিখ্যাত গান আছে না- 'এমন মানব জমিন রইল পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা'।
দূরত্ব বাড়বে স্মৃতিতেও
জানো
যে পেনটায় তোমায় চিঠি লিখতাম
সেটা পাশের বাড়ির হাবলু নিয়ে গেছে
কাল থেকে ওর মাধ্যমিক
যে ডায়েরীটার পাতা ছিঁড়ে চিঠি লিখতাম
সেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম
কাল দেখলাম উইয়ে কেটেছে এমন
একটা পাতাও আস্ত নেই আর!
যে গোলাপ ঝাড়ের গোলাপ তোমায় দিতাম
সেটা নেই আর
ওখানে ড্রেন বানাবার জন্য মাটি কেটে রেখেছে
মিউনিসিপ্যালিটির লোকেরা
মহাকাশ কারোর অপেক্ষা করে না
কেন আমার জন্য বসে থাকবে?
ইচ্ছা হলে ডানদিক, বাঁদিক
যেদিক খুশী যেতে পারো
সমুদ্র, পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি
যেখানে খুশী যাও
কিম্ আশ্চর্যম!
পার্কে এক যুবক এক যুবতীর ঠোঁটে চুমু খেল।
তার কিছু দুরে নর্দমা থেকে এক মৃতপ্রায় মানুষকে কোলে তুলে নিলেন এক বিদেশী সন্ন্যাসীনী।
অভিধান বলল, প্রেম।
ক্লাসে এক ছাত্রের গায়ে আরেক ছাত্র দিল পেন ফুটিয়ে।
আর ওদিকে এক পারমাণবিক বোমে এক নিমেষে লক্ষ মানুষ পড়ল কালের গ্রাসে।
অভিধান বলল, হিংসা।
ধন্য অভিধান, আর তার শিষ্যেরা।