সেদিন ছিল শিবরাত্রি
সেদিন ছিল শিবরাত্রি। মন্দিরে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। ঘন্টা,কাঁসর, ভক্তদের কোলাহলে মুখরিত ছিল দেবালয় প্রাঙ্গণ।
আজ মন্দিরে কয়েকটা টিকটিকি আর পোকাদের ভিড় - মন্দিরে দেওয়ালে, বিগ্রহের গায়ে। শূন্য প্রাঙ্গণ। দেবতা একা। তিনি নীরব চোখে আমায় বললেন,
প্রয়োজন ফুরালে সবাই একা হয়। এমনকি দেবতাও।
পঞ্চভূত
কেউ আগুনকে ভালোবাসে
পোড়ায় বলে
কেউ আগুনকে ভালোবাসে
উজ্বল বলে
তুমি কেন ভালোবেসেছো?
আদৌ বেসেছো কি?
ঘ্রাণ
তবু তো বসন্ত এসেছে
তবু তো ভাঙা রাস্তায় পড়েছে
কুর্চি, পলাশ
তবু তো একটা চিঠি জন্মেছে
প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে, তীব্র অপেক্ষার গর্ভ থেকে
মাটির অভিশাপ
"মেয়েদের সম্মান করতে শেখো"
কেন বললে এরকম একটা কথা?
কেন বললে? বলো বলো, কেন বললে?
বলোনি তো চোখ দিয়ে দেখতে শেখো
পা দিয়ে হাঁটতে শেখো, জিভ দিয়ে বলতে শেখো
তবে কেন কেন কেন?
কেন এরকম অসভ্য, ইতর একটা কথা
ভদ্রতার মোড়কে সাজিয়ে রেখেছ বসার ঘরে
তবে কি তোমার মনে অসম্মানের বীজ আছে?
টের পেয়েছ?
কেউ তা জানার আগেই ঢেকে ফেলতে চাও স্লোগানে -
লাইনটানা খাতা
ছোটবেলায় লাইনটানা কাগজে লিখতাম। খানিক বড় হতে সাদাখাতা দেওয়া হল। বলা হল, এখন থেকে এই খাতাতেই লিখতে হবে।
কি মুশকিল, লিখতে গিয়ে লাইন হয় একবার ঊর্দ্ধমুখী তো একবার নিম্নমুখী। কি অসহায় অবস্থা, লাইন কই?
ধীরে ধীরে আয়ত্তে এল। বুঝলাম মনে মনে একটা সীমারেখা টেনে নিয়েই লিখতে হবে। তবেই লাইন এদিক ওদিক হবে না।
মহাশিবরাত্রি
অনুরাগের কোনো রঙ হয় না, গ্রীষ্ম বলেছিল। প্রকৃতির বুকে বেজেছিল কথাটা। সে সাধনায় বসল। বর্ষার জল, শরতের উদাস আকাশ, শীতের হিম তার বুকের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে বয়ে গেল। প্রকৃতি বললে, এ নয়, এ নয়।
তুমি এসো
তুমি রোজ একবার করে
আমার দরজায় আসবে?
যখন তোমার সময় হবে
আমি কোনোদিন একটা ফুল
কোনোদিন একটা কবিতা
দরজার কাছে রেখে দেব
অথবা যেদিন কিছুই না থাকবে
একটা গোটা সাদা পাতা –
তুমি এসো না গো
প্রতিদিন দরজার কাছে আমার
এসো সময় করে
ড্যানিশ গার্ল
তোমার পাশের বাড়িতে আমি থাকতাম
তুমি চিনতে না আমায়
রোজ যখন তুমি বাইরে বেরোতে
তোমার গায়ের গন্ধ আমার বাড়ির বাগানে আসত
আমি চুলগুলো বিছিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে আসতাম
তুমি টের পেতে না
যখন সন্ধ্যেবেলা এক আকাশ তারা
বিকালের গরম হাওয়া, বনফুলের গন্ধ-
সবাই থাকত পড়শীর মত
চাপা গলায় কথা বলত তোমার সিলিং ফ্যান
তুমি জানতে না, আমি শুনতে পাচ্ছি
ফুলপথ
এক চিলতে রোদ্দুর
ওর গায়ে মুখে এক চিলতে রোদ্দুর
আলোর বায়না মিটিয়েছে দুচোখের বিস্ময়
অন্ধকারকে শাসিয়ে বলেছে - 'হুস্'
দরজায় দাঁড়িয়ে থমকে গিয়ে
কি ভেবে পিছন ফিরেছে
ইতস্তত করা বাইরের জগৎটাকে
ডেকেছে তার ছোট্টঘরে,
অভয় দিয়ে বলেছে -
'জায়গা হবে না ভাবলি কি করে? - ধুস্'
(ছবিঃ দেবাশিষ বোস)