মোহনা
মাত্র দুটো ছবি ছিল মনে
এক, তুমি আসবে
দুই, তুমি থাকবে
দিন গেল
মাস গেল
বছর গেল
আমার মনে দুটো আশা
এক, হয়তো তুমি আসবে
দুই, হয়তো তুমি থাকবে
দিন গেল
মাস গেল
বছর গেল
আমার মনে দুটো ভয়
এক, বোধহয় তুমি আসবে না
দুই, বোধহয় তুমি থাকবে না
দিন গেল
মাস গেল
বছর গেল
সংশয়ীর রোজনামচা
একটা ইতস্ততঃ বাঁচা
আগু- পিছু ভাবছে
ভাবতে ভাবতে দু'পা গিয়ে
চার পা ফিরে আসছে
একটা অস্বস্তির হাসি
ঠোঁটের আগায় ঝুলছে
ভাবের ঘরে চুরি-
বুঝছে, তবু করছে
একটা না-ভরসার মানুষ
হাতেতে হাত রাখছে
আঙুলের ফাঁকে জ্বালা জ্বালা
তবু হাত দেখি না ছাড়ছে
সম্পর্ক
কিছু সম্পর্ক এত আলগা
আগে থেকে যায় না বোঝা -
একটা হালকা ঝাঁকুনিতেই
এক্কেবারে ফালা ফালা!
কিছু সম্পর্ক এমনই ফাঁস
গলার কাছে এখনো লাল
ছেড়ে গেছে ফাঁস, তবু -
বুকের মধ্যে জ্বালা জ্বালা
কিছু সম্পর্ক এত পিছল
ধরতে শিখতে জম্ম কাবার
এই বুঝি সে কাছের ছিল
বাঁক ঘুরতেই, পালা পালা!
আকাশকে খোঁজ
কি আশ্বাসে তাকাবো তোমার মুখে?
বিকালের পড়ন্ত রোদ বটগাছটার মাথায়
শুকনো কিছু পাতা ডাল ছড়ানো মাটিতে
এতো বিষন্ন কেন তোমার মুখ?
সারাদিনের সাজানো প্রদীপ ভেঙেছে?
আলগোছে রেখেছিলে হয়তো বা
কিম্বা হয়তো ওদের ভাঙারই ছিল আজ।
উঠে এসো
সামনের পুকুরটার পাড়ে গিয়ে বসো
দেখো একটু পরেই জ্বলবে সন্ধ্যাতারা
সে তোমারও সন্ধ্যাতারা, আমারও।
বিশ্ব দিবস
বিষুবরেখার মধ্যভাগে দাঁড়াতে পারি
চীৎকার করতে পারি গলা চিরে
হয়তো পৃথিবীর দুই প্রান্তদেশে
কিছু বরফের পাহাড়ে ধরতে পারে চিড়
কটা পেঙ্গুইন, শীল চমকে তাকাতেও পারে এদিকে
দান
যা নিয়ে গেলে, যাও
ফেরৎ চাইব না।
চেয়েছিলে দু'হাত পেতে
শূন্য হাতে ফেরাতাম কি করে?
তুমি জানতে, আমি তা পারব না
যাওয়ার সময় পিছনে ফিরে তাকালে না একবারও।
আমি তাকিয়েছিলাম,
যদি কিছু ফেলে যাও
কুড়িয়ে ফিরিয়ে দেব বলে
আমি যা দিই, একেবারেই দিই।
তুমি হতভাগ্য,
যদি তিলমাত্র বুঝতে সে ব্যাথার সুখ
আর হাত পাততে হত না
তীক্ষ্ণ উপস্থিতি
রোজ রোজ দরজার কাছে দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যেত
আজ ডাকলাম, বললাম কি চাও?
সে তাকিয়ে থাকল শুধু
অনেকদিন গেল
রোজ দেখি তাকে পুকুর পাড়ের রাস্তার পাশে
আমারই জানলার দিকে তাকিয়ে
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি চাও?
আরো অনেক বছর গেল
রোজ তাকে দেখি আমার সান্ধ্যভ্রমণের পথে দাঁড়িয়ে
আমারই দিকে চেয়ে
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি চাও?
নীল নীরবিন্দু
দীঘির ধারে ডাকলে, মৃদু হাসির ইশারায়
বললে, নামো
আমি বললাম ভয়ে, সাঁতার জানি না যে!
বললে, তবু নামো
নামলাম
যত নামলাম শরীর হতে লাগল হাল্কা
মাঝ দীঘিতে দাঁড়িয়ে তুমি
চোখে তোমার দৃঢ় প্রত্যয়ের জ্যোতি
স্নেহের কিরণে মাখা
বললে, চিৎ হয়ে ভাসো
দু'হাত মেলো ডানে বাঁয়ে
মেললাম
এখন নীলাকাশে চোখ
সারা শরীর দীঘির জলে মগ্ন
সময় সমুদ্র
মন একলা দাঁড়িয়ে সময়-সমুদ্রের সামনে
অনেক কিছু হারিয়েছে এ সমুদ্রে সে
ঢেউয়ের পরে ঢেউ আছড়ে ভেঙেছে তার ঘর
কেড়েছে তার সুখ
বুকের পাঁজরগুলোতে করেছে বড় বড় ফাঁক
কিছু কথা
আমার সব কথা অক্ষরের মত না, শব্দের মত না।
কিছু কথা কৃষ্ণচূড়া ফুলের মত
কিছু কথা বর্ষার পাতাঝরা জলের মত
কিছু কথা ফসল তোলা ক্ষেতের মত
কিছু কথা মাটিতে ঝরা, তবু না যেতে চাওয়া ফুলের মত
কিছু কথা টিন কাটা তীক্ষ্ণ আর্তনাদের মত
কিছু কথা শেষ ট্রেন চলে যাওয়া প্ল্যাটফর্মের মত
এরকম আরো অনেক অনেক কথা
যার শব্দ অভিধানে নেই, বলব কি করে?