আশা
আমার প্রদীপটা নিভেছে খানিক আগে
শেষ ধোঁয়াটাও মেলালো বাতাসে, এই তো,
পোড়া পলতেটা লেগে আছে এখনও
একটা আলতো ছোঁয়ায় ঝরে যাবে যদিও
ও নিজেও জানে
তবু হাত দিয়ে দেখো
হলুদ পাতা
হলুদ পাতায় ভরেছে আমার উঠান
আমি সকাল বিকাল ঝাঁট দিয়ে দিয়ে ক্লান্ত।
বস্তা বস্তা পাতা ফেলে এসেছি নদীর ধারে, একা, গোপনে।
দুদিন পরেই জমেছে পাতা, হলুদ ঝরা পাতা এদিক ওদিক সারাটা বাগান ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
ঝরা পালকের রোঁয়া উড়ে এসেছে পাতার সাথে, কোন পাখির জানি না।
মৃত পাখির শাবক মুখে করে পাঁচিল ডিঙ্গিয়েছে বেড়াল
ঝরা পাতায় লেগে রক্ত, আবার ফেলেছি সরিয়ে।
ঝড়
ভেবেছিলাম তুমি আসলে
আমি হব নিশ্চিন্ত
তখনো কি জানতাম
তুমি ঝড়কে নিয়ে ফেরো?
তোমায় ঘরে আনতে গিয়ে
ঘুড়িটা
আকাশ থেকে ছিঁড়ে পড়া ঘুড়িটা
বিদ্যুতের তারে আটকে পরশু থেকে ঝুলছে।
এক একটা দমকা বাতাসে মনে হচ্ছে-
এই বুঝি উড়ে যাবে, একটা গতি হবে।
হল না।
শেষমেশ বৃষ্টির জলে নেতিয়ে
মাথা বুক হেঁট করে, কাঠিগুলো বার করে ঝুলছে।
যারা পরশু থেকে আশা করেছিল, পাড়বে
তারা ওর কথা ভুলে গিয়ে, নীচে দৌড়াচ্ছে।
আমি ভাবছি, কোথায় আটকালো ঘুড়িটার-
নামতে, না উড়তে?
সঙ্কল্প
চিন্তার আগাছা কিছু ছাঁটতে হবে
অনেকদিন ধরেই ভাবছি
কয়েকটা মুখভার করা শব্দ অভিধানে রাখব না আর
কয়েকটা মই নামিয়ে রাখব এবার
উঠব উঠব করে বসে আছি আকাশের দিকে চেয়ে
পায়ে ঝিঁঝিঁ ধরে গেছে, হাঁটব এবার, ওঠার কথা ভুলে।
কিছু নদীর মুখ ঘুরিয়ে ক্ষেতের দিকে আনতে হবে
আগুন ফাঁদে মারতে হবে কিছু পোকা
চর্বিত চর্বনের পিক ফেলে ফেলে দেওয়ালটা নোংরা করেছে যারা
ফিরব
কি ভাবে কখন বেলা হল বুঝলাম না,
হঠাৎ দেখলাম সূর্যাস্তের রঙ
আমগাছটার মাথায়
পাখিগুলো ফিরছে দল বেঁধে, ঘরে।
আমিও ফিরব, আজ না হয় কাল
এরকম করেই হঠাৎ কোনো একদিন
যখন সূর্যাস্তের আলো সবুজ ক্ষেতকে
দেবে শেষ চুম্বন, পরম আদরে।
যেদিন আমি ক্ষেপব
যেদিন আমি ক্ষেপব-
সেদিন টগরকে বলব, লাল গোলাপ
তোমায় তাই মানতে হবে
মানতেই হবে
বাড়ির উঠানের জবা গাছকে বলব-
"হে পারিজাত বৃক্ষ, দাও একটি পারিজাত পুষ্প
আমার হস্তে, গাঁথিব তাহার খোঁপাতে!"
তুমি জবা গাঁথবে খোঁপাতে
তুমি ভিতরে এসো
বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?
ভিতরে এসো
পায়ে ধুলো?
তার চেয়ে অনেক বেশি ধুলো
আমার ঘরে বন্ধু
ময়লা জামা?
সে ময়লা সহ্য হবে
জামার নীচে যে হৃৎযন্ত্রটা?
আমার সে যন্ত্রটা বিকল হয়েছে অনেকদিন,
তোমায় বাইরে রেখে।
দূরে
তোমার দিকে কম তাকাই
কারণ, তোমার হৃদয় ফোঁড়া চোখ।
তোমার সাথে কম কথা বলি
কারণ, তোমার কথা বলার ফাঁকে
শুদ্ধ নীরবতা।
তোমার কাছে যাই না
কারণ আমার নিঃসঙ্গ হৃদয়।
দূরত্ব বাড়বে স্মৃতিতেও
জানো
যে পেনটায় তোমায় চিঠি লিখতাম
সেটা পাশের বাড়ির হাবলু নিয়ে গেছে
কাল থেকে ওর মাধ্যমিক
যে ডায়েরীটার পাতা ছিঁড়ে চিঠি লিখতাম
সেটা লুকিয়ে রেখেছিলাম
কাল দেখলাম উইয়ে কেটেছে এমন
একটা পাতাও আস্ত নেই আর!
যে গোলাপ ঝাড়ের গোলাপ তোমায় দিতাম
সেটা নেই আর
ওখানে ড্রেন বানাবার জন্য মাটি কেটে রেখেছে
মিউনিসিপ্যালিটির লোকেরা