বাউল সত্যজিৎ
ইন্টেলেকচুয়াল অ্যারিস্ট্রোকেসি আর সোশ্যাল অ্যারিস্ট্রোকেসি - দুই-ই যত গর্জায় তত বর্ষায় না। সত্যজিৎবাবু হয় তো হাঁপিয়ে উঠেই 'আগন্তুক' সিনেমার স্ক্রিপ্টটা লিখে ফেলেছিলেন। সিনেমা মানে তো আদতে স্ক্রিপ্ট। স্ক্রিপ্টটাই তো ভাবনা। সেই ভাবনাটা নিশ্চয়ই কোনো এক যন্ত্রণা থেকেই উঠে এসেছিল। নইলে শেষ দুটো সিনেমায়, 'শাখা-প্রশাখা' আর 'আগন্তুক'-এ এমন দুটো চরিত্রকে দাঁড় করাতে চাইলেন কেন?
থেকেই যা
স্বপ্ন সাগর
ক্লান্তিতেই হবে, নইলে হঠাৎ করে বিদ্যাসাগর মশায় এসে ঘুমের মধ্যে ঢুকবেন কেন? যা হোক, ঢুকেই যখন পড়েছেন, সে ঘুমের মধ্যে হলেও, বসতে বলতে হয়। তা তিনি আমার কথা না শুনে সারা ঘরময় ঘুমের মধ্যেই পায়চারি শুরু করে দিলেন। আমি বললাম, ও মশায়, অমন হাঁটেন কেন, একটু বসেন না, দুটো কথা কই?
খবরের কাগজ
বিচিত্র ছলনাজাল
প্রতিদিন পেপার খুললেই পড়ছি প্রতারণার গল্প। কেউ উচ্চ আধিকারিক সেজে প্রতারণা করছে। কেউ প্রেমিক সেজে। কেউ চিকিৎসক সেজে। কেউ গুরু সেজে। কেউ চলচিত্র পরিচালক সেজে। মানুষের কত সাজ, কত কৌশল। কত কত নকল।
পাপের ইচ্ছা
পয়সাকড়ি নেই, মেয়েমানুষ পাবো কোত্থেকে?
কথাটা সত্যি নয়। সনাতন পুরোহিতের কথায় নেশা আছে। আজ অবধি কত মেয়েমানুষের সঙ্গ করেছে সে নিজেও গুনে বলতে পারবে না। সনাতন পুরোহিতের বয়েস ছাপান্ন। এক ছেলে অম্বর, এম. এ. পাস করেছে। সংসারে সচ্ছলতা নেই ঠিক, কিন্তু শান্তি আছে। অণিমা সব জানে। মাথা ঘামায় না।
চলো
শান্তি ছিল
আত্মসম্মানহীন
প্রেম ছিল
দখল করে বসে
নিরাপত্তা ছিল
শুষ্ক নদীতে
নোঙর ফেলা নৌকার মত
মৃত্যু এলো যখন
সবাই ভাবল সে বলবে -
"এখন না, এত সুখ!"
খয়ের
ভিক্ষায় বেরোতে আলিস্যি লাগে এখন। বৃষ্টি পড়লে তো আরো। বিছানায় শুয়ে শুয়েই চালডালের হিসাব হল। আরো দুদিন চলে যাবে। দেওয়ালের কোণে একটা মাকড়সা। ঝড়জলে ঘরে এসে ঢুকেছে। ঘরে যা আরশোলা ওর সারাজীবন চলে যাবে। পশুপাখি-কীটপতঙ্গ ভিক্ষা করে না। খাবার খোঁজে। কাড়াকাড়ি করে। সে ভিক্ষা করে। রত্না বোষ্টুমি। লোকে বলে। সে নিজেকে বলে - "অখাদ্য!" যত বয়েস বাড়ছে তত মাথার মধ্যে প্যাঁচ বাড়ছে। সংসার
গভীর সর্বনাশে
ভারত অর্থনীতিতে উন্নতি লাভ করছে শুধু না, ভারতীয়ের প্রতি যে আগে দুর্নাম ছিল, এরা বড্ড পরকালমুখী চিন্তাভাবনা করে দিন কাটাতে ভালোবাসে, একদম ইহকালের ভোগসুখ নিয়ে, জাগতিক উন্নতি নিয়ে ভাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি, সে কলঙ্ক ঘুচেছে।
আমি কি ভুল?
ওর কি হয়েছে বলুন তো? ঘুমাচ্ছে না ক'দিন হল। সারারাত এপাশ ওপাশ করে। মশারি তুলে বাইরে এসে জিজ্ঞাসা করে আমায়, দাদা, এখন রাত না দিন? আমি বলি, রাত তো! সে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বলে, আমারও তো তাই মনে হচ্ছে, এখন তো রাত, তবে!?
বড় সংকট
কথা হচ্ছে ব্যঙ্গ করবেন না কেন? অবশ্যই করুন। আমরা ট্রোল, মিম আরো কি কি সব নামে এই সব উন্নত মানের ইতরামি দেখতে অভ্যস্ত এখন। সেখানে কেউ বাদ যায়?
আরশিনগর
গোঁসাই বসে দীঘির ধারে। গুনগুন করে গান ভেসে আসছে, “গেরাম বেড়ে অগাধ পানি, নাই কিনারা নাই তরণী পারের... বাঞ্ছা করি দেখব তারে কেমনে সেথা যাই রে…”
গোঁসাই, বসি একটু?
গোঁসাই চোখের ইশারায় বলল, বসো।
মা যা করেন
("শংকর কহেন, জগৎ মায়া; প্লেটো কহেন জগৎ ছায়া; কান্ট কহেন, জগৎ আমাদের মনের প্রতীতি মাত্র, সত্য পদার্থ নহে। পৃথিবীর তিন বিভিন্ন প্রদেশে এই এক মত দেখা দিয়েছে, কিন্তু ইহার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কেবল কান্ট-দর্শনের মধ্যেই আছে।"- রবীন্দ্রনাথ)
কাণ্ট (ইম্যানুয়েল কান্ট, ক্রিটিক অব পিওর রিজন -এর লেখক) জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কি ঘরে আছেন?
fact আর value
গীতায় বলা হল হৃদয়ের দুর্বলতা ছেড়ে দাঁড়াও। আবার বলা হল হৃদয়ের মধ্যেই ঈশ্বরের অবস্থান। প্রথম কথাটা ব্যাসদেব প্রথমেই বললেন কৃষ্ণের বয়ানে। দ্বিতীয়টা একদম শেষে, সেও কৃষ্ণের বয়ানে।
এখন কথা হল একই হৃদয় দুর্বল আবার ঈশ্বরের অবস্থানে সবল হয় কি করে? তবে কি আমাদের দুটো করে হৃদয় আছে?
আয় রে আয় হাঁড়ি হাঁড়ি
আজ তো আমরা জোম্যাটো, সুইগি ইত্যাদি কত কত নাম শুনছি। কিন্তু একি খুব নতুন? মোটেই না। এই সব কাজ আগে ভূতে সারত। হাতে তালি দিয়ে, "আয় রে আয় হাঁড়ি হাঁড়ি মণ্ডামিঠাই কাঁড়ি কাঁড়ি", এসব সুর করে গাইলেই হত। অ্যাপ্সের কথা ভাবছেন? মানে সে সব ছিল কিনা? মোটেই না। খালি গান গেয়ে, সে সুরে হোক চাই বেসুরে হোক, ভূতের রাজাকে খুশি করলেই হত। আপনাকে তখন আর পায় কে?
ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যবহার
দীর্ঘদিন অনলাইন ক্লাস নিচ্ছি, কয়েকটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য খেয়াল করছি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। তাদের ব্যবহারগুলো অনেক ক্ষেত্রে ভীষণ অসামাজিক শুধু না, ভীষণ অভদ্রোচিত। এটা কি করে হচ্ছে জানি না, নাকি আমি মফঃস্বলে থাকি বলেই এটা ফেস করছি জানি না। কয়েকটা উদাহরণ দিই--
মালী আর লোকটা
লোকটা বাগান খুব ভালোবাসত। রোজ রোজ তার বাগানে কত রঙের, কত রকমের ফুল ফোটে। লোকটা সকালে উঠে বাগানে আসে। খুব খুশি হয়, আবার দুঃখও পায়। কেন দুঃখ পায়? কারণ একটু পরেই একজন লোক আসবে, সব ফুল তুলে নিয়ে গাড়িতে ফেলবে, বাজারে চলে যাবে। লোকটা শুধু একটা ফুল রোজ বাঁচিয়ে নিয়ে আসে তার বউয়ের জন্য। কিন্তু তাও রোজ হয় না, এক একদিন সেই ফুলটাও নিয়ে চলে যায় ওই বাজারের লোকটা।
মোহের বশে
লকডাউনে রাস্তায় বেরোচ্ছেন, খুব সাবধান। জানি না ভ্যাক্সিন হয়েছে কিনা, মাস্ক পরাবে কিনা আপনাকে। তবে যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখার চেষ্টা করবেন, জানি যদিও সেটা আপনার হাতে নেই।
আংটিটা
অঞ্জু চায়ের কাপদুটো টেবিলে রাখতে রাখতে ঘরের পরিবেশটা বুঝে নিল। প্লাবনের চোখের কোল ফোলা। জুঁই যে সারারাত ঘুমায়নি অঞ্জু জানে। চোখ এতটা না ফুললে এত সকালে কেউ আসে? অঞ্জু কারোর মুখের দিকে না তাকিয়েই বলল, প্লাবন আজ দুপুরে খেয়ে যেও এখানেই….
জুঁই বলে উঠল, না মা, তুমি ওকে নিয়ে ভেবো না, ও একটু পরেই বেরিয়ে যাবে…
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
এমন মানুষের সামনে তো আমাদের বসতেই হয় যে মানুষটা হয় তো আর কয়েক মাস পরে মারা যাবে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন। যে মানুষটা মারা যাবে সে অনেক সময় স্পষ্টভাবে জানে, অনেক সময় আন্দাজে জানে। বেশির ভাগ সময়েই সে তথ্যে জানে না, কিন্তু অনুভবে জানে, সে আর থাকবে না। আমি দেখা করতে গেছি, যেমন আপনারাও কখনও না কখনও দেখা করতে গেছেন, 'অন্য কথা' খোঁজার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। 'স্বাভাবিক আচরণ' করার আ
চুপ
এত কোলাহল
এও তো চুপ করে থাকা
ধরো ধরো, সুর ধরো
কোনো অজ্ঞাত কারণ ছিল। কেউ কিচ্ছু জানল না। কারণ কি ছিল, কাকে জিজ্ঞাসা করবে আজ? সে কই?
কারণ জিজ্ঞাসা করা হয় না। সময় পাওয়া যায় না। সবটুকু সময় তো আমার একার। তোমায় দেব কেন? সবটুকু সময় নিংড়ে নিংড়ে বার করব আমার জীবনের মহাকাব্য। সময়কে ঘাড় ধরে সকাল সন্ধ্যে, গ্রীষ্মবর্ষাশীতবসন্ত আমার ক্ষেতে জোয়াল টানাই। তুমি কে?
আর তুমি
আমার বুক ভরে নেওয়া শ্বাস প্রশ্বাস
আর তুমি
আমার চোখে জেগে থাকা আলোর সাগর
আর তুমি
আমার শ্রবণ জুড়ে বাতাসের আনাগোনা
আর তুমি
আমার জিহ্বায় জাগা জলের তৃপ্তি
আর তুমি
আমার স্পর্শে জাগা প্রাণের সাড়া
আর তুমি
আমার হৃদয় জুড়ে বওয়া জোয়ারভাটা
আর তুমি
সত্য কি?
জগৎ সংসারটা আমার বুদ্ধি-বোধের ক্যানভাসে? না আমার বুদ্ধি-বোধ জগৎ সংসারের ক্যানভাসে?
অনুভব করেছি
দেখা হয়নি
শোনা হয়নি
জানা হয়নি
অনুভব করেছি
দেখায়
শোনায়
জানায়
মল্লিকা আর মল্লিকারা
চারটে দেওয়ালের মধ্যে যারা বেঁচে ছিল, তাদের মধ্যে সামাজিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ দুজন, বিপিন আর মল্লিকা। আর কিছু টিকটিকি, আরশোলা, মাকড়সা, পিঁপড়ে, এরা এসেছে গেছে, নিজের আয়ু সবাই পূর্ণ করে যেতে পেরেছে তা ঠিক নয়, তবে কেউ কেউ পেরেছে। বিপিন ছাদ, বাথরুম, শোয়ার ঘর, বসার ঘর, পুজোর ঘর ছেড়েছে অনেক দিন হল। এখন একটা ফ্রেমে শীতগ্রীষ্মবর্ষা এক মুখভঙ্গি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। সে মুখটা দেখে