শুভ একাই থাকে, অন্তত আমি তো তাই জানি। যখন টেক্সট করল 'চাবিটা নিয়ে নিস', আমার একটু অবাকই লাগল। আমি আসব জেনেও কেন থাকবে না?
যা হোক, বাড়ির চাবি কোথায় রাখে আমি জানি। সেইমত দরজাটা খুলে ঢুকলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর। কেমন একটা বোঁটকা গন্ধ। কদ্দিন নেই বাড়িতে? ফোন করলাম। সুইচ অফ্।
যা হোক, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা। ল্যাপটপ অন্ করে বসলাম। অফিসের কিছু পেণ্ডিং কাজ আছে। ওদের বাড়িটায় দুটো বড় বড় বেডরুম আর একটা বড় হলঘর। রান্নাঘর, আর দুটো রুমের সঙ্গে অ্যাটাচড টয়লেট।
ঝড় উঠল। তাড়াতাড়ি উঠলাম, কোনো জানলা খোলাটোলা আছে কিনা কে জানে। আমি কোনো নতুন জায়গায় গেলেই আগে দেখে নিই, কোথাও মাকড়সা আছে কিনা। ভীষণ বিশ্রী লাগে আমার। এবারেও তাই করলাম। নাহ্, বাবু সব জানলা বেশ টাইট করেই লাগিয়েছে। আর মাকড়সাও নেই।
সাড়ে বারোটা। ডিনার সঙ্গেই এনেছিলাম, বিরিয়ানি। শুভদের বাড়িতে ঢোকার আগে, গলির মোড়েই বানায়, হেব্বি। ওর জন্যেও এনেছিলাম। কিন্তু ভাগ্যে নেই। আমার খাওয়া শেষ হতে ওরটা ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিয়ে ব্রাশ করে শুলাম। মাথাটা ধরেছে।
ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎ টুক্ করে আওয়াজ হল। মোবাইলটা অন্ করে যেদিক থেকে আওয়াজ হল সেদিকে ফেলতেই চমকে উঠলাম। দরজা দিয়ে হলঘরের খাওয়ার টেবিলটা দেখা যাচ্ছে। তার উপরে বসে একটা কালো বেড়াল!
ঢুকল কোথা থেকে? তবে কি লুকিয়েছিল? শুভ বেড়াল পোষে বলেনি তো! যা হোক, মাথাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। এটা আমার হয়, ধুম করে ঘুম ভেঙে গেলেই মাথা ধরে যায়। কিন্তু মুশকিল হল এখন ঘুম কিছুতেই আসবে না। চুপ করে শুয়ে আছি। বেড়ালটা খাটে উঠে আসবে না তো? বিচ্ছিরি একটা অনুভূতি হল। অস্বস্তি একটা। হঠাৎ মাথার কাছে ধুপ্ করে আবার একটা শব্দ হল। আবার ধড়মড় করে উঠে পড়লাম। এবার মোবাইল না, আলো জ্বাললাম। একি রে? সারা ঘর জুড়ে আর না হোক বারো-চোদ্দোটা বেড়াল। সব স্থির বসে আমার দিকে তাকিয়ে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি? উঠলাম। বাইরের ঘরে এসে তো মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড়। সারা বাড়ি বেড়াল, চুপ করে বসে। ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম কেউ চোখ খুলে নেই। সব বন্ধ চোখ। মানে আগে ভুল দেখলাম? আবার ঘরে এলাম। হ্যাঁ ভুলই দেখেছিলাম। সব বন্ধ চোখ।
আমার বুকের ভিতরটা ধড়াস ধড়াস করছে। আমি ল্যাপটপের ব্যাগটা নিয়ে উঠলাম। এভাবে সারারাত কাটানো যায় নাকি? দরজার কাছে এসে মাথাটা গুলিয়ে গেল। দরজা কই? একটা সুড়ঙ্গ। অন্ধকার। আমি মোবাইলের টর্চটা অন্ করতেই দেখি সার দেওয়া বেড়াল বসে সুড়ঙ্গ জুড়ে। আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। বসে পড়লাম। মাথা ঘুরছে। গা গুলাচ্ছে। হৃৎপিণ্ডটা গলার কাছে এসে দাপাচ্ছে। আমার মনে হল আমি অজ্ঞান হয়ে যাব।
পিঠে কিসের ছোঁয়া পেলাম। সাঁ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি শুভ। কিন্তু একি চেহারা হয়েছে? সারা গায়ে কালো কালো লোম। মুখটার গড়নটা অন্যরকম। আর কত ছোটো হয়ে গেছে। আমি ফিরতেই লাফ দিয়ে সোফায় গিয়ে বসল। যেন বেড়াল একটা। ইশারায় পাশে যেতে বলল।
কাছে গেলাম। আমিও হামাগুড়ি দিয়ে ওর পাশে গেলাম। ও ওর মুখটা আমার কানের কাছে এনে বলল, বড্ড একা একা লাগছিল রে…. থেকেই যা...
[ছবিঃ ইন্টারনেট]