সে
মানুষ নিশ্ছিদ্র একাকিত্বে, দুঃসহ যন্ত্রনায়, ঘুমহীন রাতে
নিজের বুকের মধ্যে যাকে খোঁজে, যার সাড়া পায়
তাকে সে বলে ঈশ্বর
সেই স্পর্শের, সেই দৃষ্টির ছায়া যখন সে বাইরে তাকিয়ে কোনো করুণ চোখে দেখে
তাকে সে বলে বন্ধু
গাছ
রমাকান্ত রাত্রের খাওয়া দাওয়া সেরে সবে ছাদে উঠেছে। রাত তখন এই পৌনে এগারোটা। মোবাইলে হেমন্ত'র গান বাজছে - 'বসে আছি পথ চেয়ে...' আহা! প্রাণটা জুড়িয়ে আসছে রমাকান্তর। ফুরফুরে হাওয়াও দিচ্ছে না সাথে! রমার খালি শ্যামার মুখটা মনে আসছে। তার স্ত্রী। তাকে ভবানীপুরের বাড়িটায় রেখে আসতে হল। তা হবে না ছেলেটার মাধ্যমিক যে!
পায়ে পায়ে পথ এগোনো
হে মহামরণ
প্রকৃতি
পুকুর পাড়ের ঝোপের নিবিড় যে অন্ধকারটা, আমার খুব চেনা। সামনের বাড়ির ছাদে নারকেল গাছটার পাতার বড় ছায়াটা লুটিয়ে আছে, সেও আমার খুব চেনা। হাল্কা হওয়ায় পুকুরের বুকে যে শিরশিরানো ঢেউ ওঠে, তাদের প্রত্যেক ঢেউটাকে আমি জানি।
একটা সকাল তোমার জন্য হবে
একটা সকাল তোমার জন্য হবে
শুধু তোমার জন্য
তাই যন্ত্রণাটাকে ভালো রেখো
যন্ত্রণাই চিনতে পারে নতুনকে
বরণ করে নতুনকে
তাই জেগে থেকো
কারণ জেগে থাকা মনে
যন্ত্রণাকে ভালো রাখা
মহাশ্বেতা
কিছু কথা বলেছিলেন
যে কথাদের কেউ ঘাঁটায় না
কিছু মানুষদের কথা লিখেছিলেন
যাদের অস্তিত্ব সভ্য সমাজে ব্রাত্য
সে মানুষদের কাছে গবেষকের মস্তিষ্ক পৌঁছেছে কখনো কখনো
কখনো সরকারি বা বেসরকারি কৃপা
একটা মরমী হৃদয় পৌঁছেছিল বহুদিন পর
কর্ম যখন প্রবল-আকার
আমার একজন পরিচিত, ভাইয়ের বয়সী, অফিস থেকে ফিরে আমায় ফোন করল। কুশল বিনিময়ের জন্য। নতুন অফিস তার। আমায় ফোন করল যখন তখন রাত পৌনে এগারটা। বলল, "অফিসের পরিবেশ খুব ভালো। আমায় ৯ ঘন্টা থাকতেই হবে, তারপর যদি কাজ বাকি থাকে তো সেটা পুরো করে আসতে হবে।"
ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
আত্ম-কথন
প্রতিদিন ভোরের এই সমুজ্জ্বল অরুণোদয়
প্রতিদিন উচ্ছল ঝরণায় আঁকা
এই মায়াময় রামধনু
প্রতি সন্ধ্যায় দূরের অসীম আকাশের বুকে
আরক্ত হয়ে ওঠা তুষারাবৃত পর্বতশিখর
সূর্যালোকস্নাত ক্ষুদ্র মক্ষিকার আত্মমগ্ন গুঞ্জন
মেঘ নিরুদ্দেশ
মেঘ পাল্টানো মেঘের ছবি
তোমার চোখেতে চোখ
দমকা হাওয়ায় খোলা চিঠি
এবার বন্যা হলেও হোক
মেঘ ঢেকেছে তারার আলো
আলোর স্পর্শে হাত
ফুলের গন্ধ তোমাতে মিশে
শ্বাসেতে রাখল হাত
প্রবর্তন
ওই শুকনো ফুলটার দিকে তাকাও
দেখো, কোনো প্রজাপতি, কোনো মৌমাছি
ওর ধারপাশ দিয়েও ঘেঁষে না।
ভালো করে খুঁজলে কটা কীট পেলেও পেতে পারো।
১লা শ্রাবণ
প্রথম বর্ষা না তো !
দিনের বেলা ঘর অন্ধকার করে মেঘ ছেয়েছে তো বহুবার
তবে তারা কারোর দূত ছিল কি? জানি না
আমার বর্ষার মেঘ দূত হয়নি কোনোদিন,
বন্ধু হয়েছে একলা আকাশের আমার
আশা
যা গিয়েছে যাক
যেটুকু ক্ষতি হওয়ার আছে হোক
ঝড় উঠেছে উঠুক
বাঁধ ভাঙা বন্যা আসার আছে আসুক
তবু মিথ্যা অলসতার আবিলতা নয়
জয়-পরাজয় ক্ষণিক স্থায়ী
পরোয়া করো না
তুমি এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিলে
বলতে পারতে লাগছে তোমার
যে ফুলগুলো বাসি,
সেগুলো ফেলার আগে
কেউ জিজ্ঞাসা করে না - ফেলব?
নদী
কিছু ভালোবাসা দু'হাতে ধরে না
দু'হাত ছাপিয়ে নদী হয়ে যায়
সে নদী শুধু কি একলা গোপনে?
না গো না, না গো না
সে নদীর কুলে স্তব প্রার্থনা
আজান কলমা সে নদীর ঢেউয়ে
তুমি চাইলেও নামতে পারো
শুধু দু'চোখে আনো আলোর খিদে
মায়া
মিল
কোনো মিল নেই
তবু মিল তো আছেই
না হলে সব বসন্তে একই ফুল
নতুন হয়ে আসে কি করে?
সব মৃত্যুই পরিচিত করে কেন
অপরিচিতকেও
ফার্নিচার
- ওই ঘরটাকে বাবুর পড়ার ঘর করে দিই বুঝলে। ও ঘরের ফার্ণিচারগুলো বিক্রি করে দিলে হবে।
- সে কি! তুমি যে বলেছিলে ঠাকুরঘর করবে?
- সে পরে হবেখন। কি জানো বাড়িতে লোকজন এলে ওর পড়ার ভীষণ ডিস্টার্ব হয়। আর ঠাকুর যেমন শোয়ার ঘরের তাকে আছে থাক। পরে ভাবা যাবে।
****** ******* ****** *********
চুপচাপ দূরে
Some unknown faces
Some unknown faces
Chirp an unsung tune
On my withered window sill,
Every morn....
Sometimes, a little squirrel squeaks,
Or a soothing breeze wakes me up by a ravenous call,
Every morn....
Their song beckons my soul, an untouched chord
Of my silent self...
My stranger heart replies,
To a stranger friend of mine..
অতলে
অপরিচিত একটা মুখ
রোজ আমার জানলায় এসে দাঁড়ায়
কখনো কাঠবিড়ালি, কখনো কাক
কখনো ভোরের বাতাসের আলতো ছোঁয়া সাথে
বুকের মধ্যে কুলকুল শব্দ
বুকের মধ্যে কুলকুল শব্দ
অর্থ নেই, গতি আছে
জিজ্ঞাসা নেই,
সুর আছে, ছন্দ আছে
আর আছে স্মৃতির পাথরে পাথরে
শ্যাওলা জমা অভিমান
বুকের মধ্যে স্রোতের প্রশান্তি
শীতল জলে ভাসা কয়েক টুকরো সময়ের নুড়ি
এই তো জীবন। বেশ আছি।
টিপ
টিপের আঠাটা নষ্ট হয়ে গেলে খুব মন খারাপ লাগে। বারবার আয়নার সামনে দাঁড়ায়। কপালে আঙুল ছুঁইয়ে দেখে, না তো আঠাটা লেগে নেই তো! টিপটা হাতে নিয়ে, টিপের পিছন দিকে আঙুল ছুঁইয়ে দেখে, খসখস করছে, আঠাটা কোথায় গেল?! প্রত্যেকবারই এমন হয়, আঠাটা খুঁজেই পায় না।
ক্ষণিক
সাড়া দিয়েছি
অধিকার দিই নি
সময়ের স্রোতে ক্ষনিকের কাছে আসা
হাওয়াতে ভাসা তুলোর অঙ্গীকার
হয়তো ভুল ছিল সময়
সবুজ
কাজল মেঘভেজা অন্ধকারে কি হারালে
কাজল মেঘভেজা অন্ধকারে কি হারালে?
রুমাল?
রুমাল হারিয়ো না
রুমালের ভাঁজে অনেক হারানো গল্পের বাসা
দীঘির গভীর কালো জল ছুঁয়ে দিলেই
মনের মধ্যে এক হাঁটুজল কান্না
ভাঁড়
বেশ রাতে স্টেশানে নামে। বাড়ি ফেরার পথে নেয় একভাঁড় চা রোজ। শক্ত করে আঁকড়ে থাকে গরম চায়ের ভাঁড়। জীবনে বেঁচে তার এই একটাই উষ্ণতা অবশেষে।
কিছু পথ
অরুপরতন
ঝিঁঝিঁর ডাক
ঝিঁঝিঁর ডাক
পথের সাথে আলাপ
যে গেল সে কি ফিরবে?
না বিষন্ন আকাশে থাকবে
গোধূলির বিষাদ প্রলাপ
(ছবিঃ দেবাশিষ বোস)
সাগর কথন
১
----
বুদ্ধি নিজে না বুঝেও বোঝাতে পারে
সে তো নাক উঁচু তাই দাম্ভিক
অনুভব নিজে বুঝেও কি বোঝাতে পারে?
সে কবে হল ভাই তার্কিক?!
চুপ করে শোনো
চুপ করে শোনো
তারারা ফিরে যাওয়ার আগে কি বলে গেছে
দেখো ফাতনা না ডুবলেও লোকটা বসে আছে
এই আড়াই ঘন্টা হল
বাচ্চা মেয়েটা স্কুলে যাওয়ার ব্যাগ নিয়ে রাস্তায়
স্কুলের থেকে রাস্তাটা টানছে বেশি
তুমি
তোমার গলার আওয়াজ শুনলে
আমার ফুটোফাটা দুঃখগুলোতে
চুণকাম পড়ে যায়
তুমি ফিরে তাকালে
আমার যত ব্যর্থ চেষ্টাগুলোর ঝোঁপে
প্রজাপতি ডানা মেলে পা ছড়িয়ে বসে
স্রোত
নদীর স্রোতে পা ডোবাতো
মাথা ভিজিয়ে স্নান করত
তার উছ্বল স্রোতের সুরে গান গাইত
ভালোই ছিল
কে বলল, ওকে ঘড়ায় যদি বাঁধতে পারিস
তবে ও চিরকালের তোর!
সে ঘড়ার জলে নদী বাঁধতে চাইল
ঘড়া ভরা জল ঘরের কোণে রাখল
নৈর্ব্যক্তিক
আমার সব কবিতাই তোমায় নিয়ে।
যে তুমি আমার চেনা-অচেনার আলপথে
নিশ্চিন্ত আপন অস্তিত্বে।
সম্পর্কের সুনিপুণ সংজ্ঞায় না -
যে আলো জাগরণের শেষ সীমানায়
ঘুমের প্রান্তে আলোর লালিমা ছড়াতে জানে -
কাঁঠাল
কিছু কথা
কিছু কথা উড়ে যেতেই দাও
আটকিও না
না হলে তুলোর আঁশের মত আঙুলে আটকে থাকবে
ছাড়াতে গেলে আরো জড়িয়ে পড়বে
শ্বাস নিতে অসুবিধা হবে,
গলার কাছে দলার মত পাকিয়ে থাকবে
তুমি কি তবে এড়িয়ে যাবে?
না তো, এড়িয়ে যাবে কেন?
উড়ে যেতেই দাও
ওরা বাসা পাবে হয় তো কোথাও
সেখানে তুমিও থাকবে অন্যভাবে
গারবেজ
ব্যথার প্রজাপতি
মুঠো খুলে দিলে
ব্যথারা প্রজাপতির মত উড়ে যায়
আকাশে, বাগানের গাছে, খাটের কিনারায়
প্রজাপতির মত রঙিন ব্যথারা
আড়মোড়া ভাঙা শরীরের মোচড়ে এসে বসে
সুখের মত ব্যথারা
জগন্নাথ ও রামকৃষ্ণ
দূরদর্শনের বিভিন্ন চ্যানেলের বহু মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে বাড়ির টিভির পর্দায় ভেসে আসছে পুরীর রথযাত্রার দৃশ্যাবলী। অজস্র মানুষের অসীম উৎসাহ, নৃত্য-গীত-কীর্তনে মুখরিত মন্দিরের সম্মুখস্থ বড়দাণ্ড বা মহৎপথ। ধারাবিবরণকারীদের বিভিন্ন ভাষায় ভক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যান।
সীমা
'তবু আমার শীর্ন দেহে ধরেছে তোমার রঙ'
নদী এই বলে তাকালো আকাশের দিকে
আকাশ অনন্ত চোখে তাকালো নদীর মুখের দিকে
তখন দিনান্তের রঙ সারা আকাশ বিছিয়ে
নদীর ছলছল চোখে যে তৃষ্ণা
সে তৃষ্ণা সন্ধ্যাকাশের আকুল আকাঙ্খায়
মহাকাশের দিকে তাকিয়ে
অনন্তকাল ধরে
স্বামীজী
শঙ্করদা
জাগাও
এ পাঁকের দহ থেকে বাঁচাও
তৃষ্ণার জ্বলন্ত কুণ্ডে কিছুকাল আমারও তো কাটল
সব ব্যর্থ হত যদি তুমি না ডাকতে ব্যাথার মত ডাকে
ওরা স্নান সেরে হয় তো এপথ দিয়ে যাবে
ওদের স্তবমালার একটি সুর আমার প্রাণে জাগাও
হোক অক্ষয় সে সুর
প্রাণের সবকটা তার ছিঁড়ে গেলেও
বিকট
কড়িবরগার দিকে তাকিয়ে হাঁ করে শুয়েছিল বিকট।সকাল থেকে বাইরে বেরোয়নি আজ। মনটা ভাল নেই। কেন ভাল নেই অবিশ্যি সে নিজেও জানে না। শুধু এটুকু জানে তার আজ মন ভাল নেই। রোজ সকালে এই সময়টায় সে জঙ্গল থেকে শুকনো কাঠ এনে, চকমকি ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে, একটু চা করে খায়। চা খেতে খেতে জঙ্গলের শোভা দেখে। সূর্যের আলো, গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে তার এই জরাজীর্ণ বাড়ির উঠোনে কেমন আলপনা আঁকে, সেগুলো আবার কেমন সরে সরে যায়, পাল্টে
আবারও একজন হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করা হল
আবারও একজন হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করা হল। বৌদ্ধ একজনকেও। নৃশংস হত্যা। মৃত্যু, হত্যা - এর কোনো জাত, সম্প্রদায় হয় না। রক্ত গড়ালে সেটা মানুষেরই রক্ত গড়ায়। মৃত্যুর তীব্র যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে যে মারা যায় সে আদতে রক্তমাংসে গড়া একটা মানুষই তো। স্নায়ুগুলো সুতীক্ষ্ণ অত্যাচারের নির্মম যন্ত্রণা নিয়ে যায়। এ সবই অবশ্য আমাদের কল্পনা। টিভিতে, পেপারে দেখা ছবিতে যা অনুভূত হয়, তার সাথে নিজেদের অ্যাক্সিডেন্ট,
স্মৃতির উড়ো বালি
জলের নীচে বুদবুদ
একটা দুটো তিনটে
তাতে প্রতিচ্ছবি
এর ওর তার
উপরে উঠে ফেটে যাবে
হাওয়ার সাথে মিলিয়ে যাবে
কিছু গাছ, কিছু ফুল, কিছু কথা
মাটির উপরে রোদ বসে পোয়াবে
তুমি ওদের গল্প শুনে বুঝবে
ওরা ওই বুদবুদের গল্প বলছে
তুমি চিনতে পারবে
বলতে পারবে না
ওরা বুদবুদ না এখন
ওরা মিলিয়ে যাওয়া হাওয়া
একাকিত্ব
একা ঘরে একাকিত্বের এক্কা দোক্কা
পর্দা উড়ছে
আলোতে ছায়াতে সোহাগ চলছে খাটে
পরিপাটি করা বিছানার চাদর
হাত বুলিয়েছে কে কবে?
দেওয়ালের আছে কান
চোখ তো নেই,
তার স্পর্শটুকু ইঁটেতে রেখেছে ঢেকে
নীলে ডোবানো
হত নিজের সঙ্গে দেখা
তাঁর মুখোমুখি সিটটা সব সময়েই ফাঁকা
যখনই চাও বসতে পারো,
হলেই না হয় কিছুটা সময় তাঁর সঙ্গে একা
আর কিছু না
তেমন কিছু না
হত নিজের সঙ্গে দেখা