Skip to main content

তুচ্ছ প্রাণ

অতি তুচ্ছ প্রাণ, উর্দ্ধে তুলি শির
   প্রণমিল স্রষ্টারে, করি আত্মদান
বৃহৎ এ সংসারে রচিল
     আপনার ক্ষুদ্রতম স্থান

(ছবিঃ প্রীতম পাল)

দেশলাই

রাস্তাটা পেরোলেই দোকান। পরিতোষ তাও যেতে পারছে না। ওর পা যেন কিসে আটকে ধরেছে। কোমর থেকে পায়ের পাতা অবধি ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যাথায়। তবু এক প্যাকেট সিগারেট না হলে চলছেই না।

ছিটকিনিতেই আটকায়

দরজা জানলা কব্জায় না, ছিটকিনিতেই আটকায়
সম্পর্কগুলো সম্পর্কে না, বিধি-নিষেধেয় সমস্যায়

হাতের কাছেই আছো ভেবে

হাতের কাছেই আছো ভেবে, কখনো হাত বাড়ালাম না
আজ হাত বাড়াতে গিয়ে দেখি, হিসাবে ঠিক ছিলাম না

সিনেমা শেষ হলে

সিনেমা শেষ হলে, সাদা পর্দাটা চুপ, সব কথা ফুরিয়ে যায়
কিছু কিছু মানুষ কি করে কখন যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়

সত্য যেখানে মাধুর্য ছোঁয়

সত্য যেখানে মাধুর্য ছোঁয়
         সেখানে তুমি আমার
প্রশ্ন যেখানে বিস্ময় ছোঁয়
         সেখানে আমি তোমার

তুমি জন্মেছো

তুমি জন্মেছো
     তোমার বুকে জগৎ জন্মেছে

তুমি জন্মেছো
    তোমার বুকে প্রেম জন্মেছে

তুমি জন্মেছো
    তোমার বুকে দুঃখ জন্মেছে

ওরা আছে, কারণ তুমি আছো
   এটাই সত্যি, বাকিটা গল্প
      তারা বানিয়েছে, যারা নেই
   সে গল্পও আছে, কারণ তুমি আছো

মাঝে মাঝে

মাঝে মাঝে নুড়িকেও পাহাড় মনে হয়,
                 ভয়ের নামতা পড়লে
সে নুড়ির ছায়াও পাহাড় মাড়িয়ে যায়
                   একটু এগিয়ে দেখলে

কারোর অপেক্ষায় না

কারোর অপেক্ষায় না
বরং নিজেকে পাল্টে নাও
   তবে বন্ধ রাস্তা আপনিই খুলবে
যদি সত্যিই এগোতে চাও

প্রতিটা সূর্যাস্তের সাথে

প্রতিটা সূর্যাস্তের সাথে
কটা শ্বাসের হিসাব ফুরিয়ে যায়
  বিকালের পড়ন্ত আলোয়
কিছু স্মৃতির গায়েও রোদ্দুর খেলে যায়

(ছবিঃ প্রীতম পাল)

বাসি অভিমানগুলো

বাসি অভিমানগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি কোরো না আর
   বাইরে বেরিয়ে এসো
  দেখো বাগানে নতুন কুঁড়ি এসেছে
আর দেখো, ধ্রুবতারাটাও একই জায়গায় আছে

 

শীতলতা

উদ্বিগ্ন ছায়ার শীতলতা
  জ্বলন্ত দশদিক
 ক্লান্ত কাকের ডাক
আকাশে মরীচিকার খোঁজ

 

একক সুর

অন্দরমহলে কটা চেয়ার পাতা
এদিক ওদিক ছড়ানো ছেটানো
     (হয়তো বা সাজানো)
                কয়েকটা সোফা
মাটিতে মাদুর পাতা

ধুলো পড়েছে স্তরে স্তরে
সোফাতে, চেয়ারে, মাদুরে
কেউ বসেনা আজকাল

শীতল সুখে

গত সূর্যের বাণী নিয়ে চাঁদ এলো রাতের বুকে
রাত বলল,
ধীরে এসো, প্রাণের বিশ্রাম আনো শীতল সুখে

(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)

বারুদ

নিজে জ্বলেই জ্বালানো যায়
শুধুমুধু বারুদের দোকান সাজিয়ে কি হবে?

যে আসবে কিনতে,
সে চারদিকের অন্ধকারে বিভ্রান্ত হবে
আলোকে করবে অবিশ্বাস
   দুর্ভাগ্য এই, আজ বারুদ বিক্রেতাই চারিদিকে
 কেউই পুড়তে চায় না
   চায় অন্যকে জ্বালিয়ে সে আগুনে তাপ পোয়াতে

কালবৈশাখী

আশ্চর্য হওয়ার তো কিছু হয়নি, বলে রণিতা পাশের ঘরে চলে গেল শাড়ি ছাড়তে। রণিতার মা কিছুক্ষণ ছাদ থেকে আনা শুকনো কাপড়গুলো কোলে নিয়ে সোফাটায় বসে রইলেন। জানলা দিয়ে সামনের বড় রাস্তাটা দেখা যায়। দুপুর তিনটে, বৈশাখের কাঠফাটা রোদ। রাস্তাটা শুনশান।

আর ডেকো না

ওগো তোমরা ফিরে যাও
  আমি নাও ভাসিয়েছি অকুলে

লোভী তুমি ফেরো,
  তোমার পথ আটকে লোভ

ধনী তুমি ফেরো
  তোমার গায়ে আঁশটে গন্ধ

ওগো মেয়ে তুমি ফেরো
  তোমার ঠোঁটে কপট বাঁধন

ওগো সন্ন্যাসী তুমি ফেরো
  তোমার পথ আটকে অহং

আমার চোখ ডুবেছে যে অতলে
  যে অরূপের সাথে হয়েছে চোখাচোখি

নিজের মানুষ

কাছের মানুষ আছে ক'জন
   নিজের মানুষ নেই
নিজের মানুষ খুঁজতে গিয়ে
   তোমায় পেলাম সেই

মনের মানুষ হয়ে এলে
   নিজের মানুষ যে গো
ও মন ছাড় রে এবার দুনিয়াদারি
   ভিতর ঘরটা গোছা না গো

তুমি সুন্দর

তুমি সুন্দর
   আমি না তো!
তবু তোমার বুকে আমার ঠাঁই
       বারণ করলে না তো?

(ছবিঃ প্রীতম পাল)

যে যায়

আজ সকাল থেকেই মনটা খারাপ। আজ বলে না বেশ কিছুদিন ধরেই। Suvajit বদলি হয়ে পোরবন্দর চলে যাচ্ছে। আমার বন্ধু। ছিল ছাত্র। এখন কখনো বন্ধু, কখনো আত্মজ, কখনো অভিভাবক। যা হয়। ভালোবাসার আর কবে স্থির আয়তন হল বা গতিপথ হল!

দুই

ভাব যেখানে রাজী
শরীর সেখানে নয়
শরীর যে পথে রাজী
ভাব সেখানে নয়
এ দ্বন্দ্ব সব দ্বন্দ্বের মূল রে মন
হাওয়া যেখানে ভাসে
     পাথর সেখানে নয়
পাথরের বুকে বাতাস কোথায়?
   তবু দুই অস্তিত্বই কালের স্রোতে বয়

বে-হিসাবী

সারাদিন চোখের পাতা ক'বার ফেলি?

নত হয়ে আসি

নত হয়ে আসি
  শুধু ভালোবেসে
ছুঁয়ে যাও তুমি
  বুক ভরা শ্বাসে

(ছবিঃ সমীরন নন্দী)

যেদিন মিটবে ঘূর্ণিপাক

প্রতিদিন যদি একবার ডাকো
যদি একবারই যাও ছুঁয়ে
যদি একবার চাও তৃপ্ত নয়নে
যদি এক পা-ই হাঁটো -
                  সাথে নিয়ে

প্রতিদিন তবে তোমারই হোক
  প্রতিদিন শুধু তুমি
তোমার বাইরে আর কি বা খোঁজা
  তোমার আড়ালে আমি

কাছে দূরে

প্রেম করবেই ঠিক করেছিল
    কাছে আসলেই থমকে গিয়ে বলত
  না না না, এখন না।
মনে বলত, এ সে না, এ সে না।

এখন সে থাকে, কার যেন একটা সাথে
  প্রেমের কথা বললেই বলে, ও সব মিছেকথা,
ছেলে ধরানো কথা, মেয়ে বোকানো কথা।

সূর্যাস্তের পথ

যে রাস্তাটা সূর্যাস্ত ছুঁয়ে এসেছে
  সে রাস্তায় হেঁটেছ কখনো?
সে রাস্তার ধারে দাঁড়ানো
অভিভাবক বৃক্ষের আশীর্বাদ
          নিয়েছো কখনো মাথা পেতে?
সে রাস্তার ধুলোতে
      যুগান্তরের পায়ের ধুলো মিশে
তোমার পায়ে মিশেছে কখনো সে ধুলো?

মহৎ সমীপে

কাল গভীর রাতে ছাদে এসে দাঁড়ালাম। সারাটা আকাশ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে। আশেপাশে গাছগুলোর মাথায় চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে দুধ সাদা রঙ। ঠান্ডা বাতাস দুরন্ত বাচ্চার মত শরীরকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। দেহ শীতল হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'এই যে বাতাস দেহে করে অমৃতক্ষরণ'।

তোমার অপেক্ষায়

তোমার অপেক্ষায়
      তোমারই পথ চেয়ে
সময়ের স্রোতে স্নান
            আগমনী গেয়ে

(ছবিঃ Pritam Pal)

খাঁটি সোনা

গঙ্গার ধারটা বিকালে প্রচুর লোকজন হয় এখন। বিশুপাগলার রাগ হয়। অকারণেই রাগ হয়। এত লোক কেন? আগে তো হত না। সে সবাইকে মুখ খারাপ করে। যেদিন প্রচণ্ড রাগ হয়, সেদিন থুতুও ছিটিয়ে দেয় লোকেদের গায়ে। আর দেবে নাই বা কেন? এই গঙ্গার ধারটা তো জঙ্গলই ছিল। বিশু পাগলা আগে শ্মাশানে থাকত। তা বছর তিরিশ আগের কথা। তারপর এই জলা জঙ্গলটায়। সে আর কালু, হরেন, ডাবলু। এরা সব ওর নেড়ি কুকুরের দল। তারা কোথায় এখন?

মেঘনীল

তুমি কখন এসে দাঁড়িয়েছিলে একা?
     সংসার যখন গভীর ঘুমে ঢাকা?

সবার অলক্ষ্যে ফিরে গেলে শুকতারার সাথে
  আমি যখন এলাম
তখন দেখি আকাশ, মেঘ, নদী
     তোমার উত্তরীয়র নীল রঙেতে মাখা

(Samiran দার অপূর্ব দেখা......)

 

দ্বন্দ্ব

রাস্তাটা নিজের হাতে দু'টুকরো করে কাটলে
  এখন নিজেকে দু'টুকরো করবে কিনা ভাবছ
চেনা রাস্তার একঘেয়েমিতে ঘরের ভিত নাড়লে
  একই গুটি সাজিয়ে বসে
     নিজেকে নিজেরই প্রতিপক্ষ করছ

বাউল

বাউল আমার পায়ে ঘুঙুর
  হাতের আঙুলে একতারা
বুকের মধ্যে অকাল মেঘে
  ঝমঝমিয়ে বৃষ্টিধারা

বাউল আমার চোখ নিয়ে নে
  বুকের দরজা হা-পাট খোল
পায়ের চলা দিক ভুলে যাক
  কানে তোমার সুরের রোল

বাউল আমার কান্না গেছে
  সংসার ছেড়ে তেপান্তরে
সুখের নেশাও হারিয়ে গেছে
  প্রেম সাগরের ডুব লহরে

ভোট অম্বল

স্লোগানে স্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত ভরপুর
নরমে গরমে গরজি উঠিছে জনতা কর্ণপুর
সকলের ভাল করিবার লাগি তাহাদের ব্যাকুলতা
"ছাড়িয়া দেগো মা কাঁদিয়া বাঁচি" উঠিছে মর্মব্যাথা
তবু ছাড়িবে না, করিবেই ভাল, মিলিয়া কিম্বা একা
কার মতদান কে করিয়া যায়, কার মুখে কার কথা!
ওগো ভোটনাথ, কর্ণ, মর্ম হয়েছে ভীষণ তপ্ত
ক্ষ্যামা দাও এবে, ঝরেছে তো কত রক্তও

এখনই না

     এখনই যাবে কি?
 বাতাসে না আছে ফুলের গন্ধ
         না বারুদের

ঠিকানা রেখে গেল

সন্ধ্যে এমন আচমকা ভেসে এলো
যেন মনের বাক্সে হারানো কথার
    ঠিকানা রেখে গেল


(ছবিঃ মৈনাক বিশ্বাস)

বাদল বাউল

কোথায় ওরা?
এত শব্দহীন কেন?
উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস জর্জরিত
            মাটির আঁচল
আকাশ আর মাটির মাঝে
        তীব্র বিরহের সন্তাপ
দীর্ঘ অপেক্ষা 'বাদল বাউল'-এর
   যার একতারায় বাজবে মিলনের সুর

সুতো


সূত্র কথাটার অর্থ সুতো। আমার লজ্জা নিবারণের জন্য যে বস্তুটি সর্বাগ্রে প্রয়োজন - পোশাক, সে এই সহস্র সুতায় নির্মিত। আমার জীবনে সুতার প্রথম প্রয়োজন - আমার পরিধেয় বস্ত্র।
 

সেদিন যত কথা বলার ছিল

সেদিন যত কথা বলার ছিল
    অভিধানে তত শব্দ ছিল না
আজ শব্দ ভরতি অভিধান ঘুমিয়ে
কেন যেন ওরা আজ বাক্য গড়তে পারে না

 

যে কোনো মুহুর্তে

যে কোনো মুহুর্তে যা কিছু হয়ে যেতে পারে
                      যেতেই পারে
এক নিমেষেই এত নিবিড়ভাবে থাকা
                  না থাকা হয়ে যেতে পারে

সব দিয়ে শেষ ধরা দিলে

ফুল রাত্তিরের বুকে মাথা রেখে শুয়েছিল। বাতাস এসে বলল, গন্ধ? ফুল বলল, নিয়ে যাও।
ফুল রাত্তিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বসেছিল। পতঙ্গ এসে বলল, মধু? ফুল বলল, নিয়ে যাও।

ফুলের নিঃস্ব বুকে রাত্তির চুমু খেল। বলল, সব দিলি কেন বোকা!

ফুল বলল, তোমার এই একটা চুমুর জন্য, আমার নিজেকে নিঃস্ব করা বুকে।

(ছবিঃ সুমন)

তবে নাও ফিরিয়ে

কেউ ফেরেনি
কেউ ছুটে যায়নি অবাধ্য হয়ে
          ধুলো থেকে গ্রহপুঞ্জ
  প্রতিটা ফুল স্ববৃন্তে - সার্থক

শুধু আমি রইলাম অবাধ্য হয়ে
        অসন্তোষে, অভিযোগে
যা কিছু ছুঁই, যেদিকে যাই
   সব কিছুই যেন- অকারণ অনর্থক

তার পরশরেণু মাগে

তোমার চরণ স্পর্শে গোধুলির প্রাণ
     রাঙিয়েছ যে অনুরাগে
আমার মুগ্ধ হৃদয় নম্র চিত্তে
       তার পরশরেণু মাগে


(ছবিঃ দেবাশিষ বোস)

নাকছাবি

- হাতমোছার ন্যাকড়াটা একটু এদিকে দেবে?

শুভ নববর্ষ

সব মেঘ কাটবে না      সব বাধা সরবে না
           তবু রে মন হাঁটতে হবে

সব আলো জ্বলবে না     সব আশা মিটবে না
           তবু রে মন হাঁটতে হবে

অনুরাগ

কাল বয়ে যাক
তুমি তাকাও, না তাকাও
  আমার রাঙা অনুরাগ
    তোমারই জন্য
         শুধু তোমার জন্য
  পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে ক্লান্ত হতে পারে
      আমার উন্মুখ হৃদয় নয়


(চৈত্রাবসানে Samiran দার উপহার)

একাকীত্ব

তোমার ব্যস্ততা আর আমার একাকীত্ব
দু'জনেই দুজনকে এড়িয়ে চলে
চেনা রাস্তায় দুজনেই অচেনার ভান করে
আড়চোখে বিনা ছকে এক্কাদোক্কা খেলে

মুখ্যু ঢেকি

খুঁজবি কেন শূন্যে বসে?
কল্পনারই অঙ্ক কষে!
আছের মধ্যে দেখ দেখি
যে আছে তারে চিনিস নাকি?
তার ফাঁকিতে পড়েছে সবাই
চোখ বেঁধে নাচ ধিতাই ধিতাই

চুরি

তুমি যাওয়ার পর
তন্নতন্ন খুঁজলাম সারা ঘর

কি খুঁজলাম?

কি আবার,
রাতের ঘুম আমার!

নিয়ে গেছো তাতে ক্ষতি নেই
       বলে যাবে তো একবার!

নীল

কাজের দিদি সাতসক্কালে এসে উপস্থিত। বললাম, এত সকাল সকাল? সে বলল, আজ নীলের উপোস যে। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে গঙ্গায় যাব স্নানে।

খানিক পর রান্নার দিদি। সেও তাড়াতাড়ি। কারণ এক, নীলের উপোস। মায়ের, সন্তানের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা।

সীমা মানে

সীমা মানে লক্ষণরেখা না তো!
সীমা মানে নিজের বুক ভরে
    নিজের মত বাতাস নিতে পারা

সীমা মানে পাথর তোলা পাঁচিল না তো!
সীমা মানে দু'চোখ ভরে
   আমার মত আকাশ দেখতে পারা

সীমা মানে শিকল না তো!
সীমা মানে জীবনকে আমার
   সুখে দুঃখে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা

ছল

তুমি দূরে থাকলে
নিজের চোখকে এড়িয়ে যাই

ওর সব প্রশ্নের উত্তর আমি কি ছাই জানি!

তাই বুকের উপর ঢাকনা টেনে পাড়া বেড়াতে যাই

কিছু কথা মনে করেই ভুলতে হয়,
                    তা নিয়ম করে মানি!

হাজার দূরত্ব সরিয়েও

কেউ কেউ অখণ্ড অবসর নিয়ে ফেরে
হাজার কাজের দমবন্ধ করা ভীড়েও
কেউ কেউ দৃষ্টির আলিঙ্গনে আশ্রয় নিয়ে ফেরে
হাজার বেড়া, হাজার দূরত্ব সরিয়েও

একলা না

মশারির চারদিকটা ভাল করে গোঁজা হল কিনা দেখতে দেখতে ওনার বেশ কিছুটা সময় কেটে যায়। মাথার কাছে টর্চ, জলের বোতল নিয়ে যখন বিছানায় ঢোকেন, মনে হয় এ যেন তার রাতের সংসার। একা মানুষটা কাটাল দোকা ভাবে সাঁইত্রিশ বছর। তারপর হঠাৎ এখন একা। নিঃসন্তান বলে না, দুর সন্তান বলে। বাইরের দূরত্ব না, ভিতরে।

অপরাজিতার খোঁজে

আসল যেন উজান ঠেলে
তার পায়ে লাগল বালি
   সারা গায়ে মাখল ধুলো
এসে বসল হাটের এক পাশে
    সবার মধ্যেই, সবার অলক্ষ্যে

আত্মপ্রকাশ


আত্মপ্রকাশ কিসে ঘটবে? বেলুচিস্তান না কাশ্মীরে?

পদাদা রোজ ব্রাশ করতে করতে এটা ভাবে। হনলুলু না গোবরডাঙা? কিম্বা বনগাঁ না ক্রৌঞ্চদ্বীপ?

পদাদা এমনিতে হাসিখুশী মানুষ। রাগিয়ে দিলে তুবড়ি। হাসিয়ে দিলে চরকী। ভাবিয়ে দিলে রকেট। বয়েস পঞ্চান্ন। দুই ছেলের বাপ। এক স্ত্রী'র স্বামী।

সোজা কথা

আঁকাবাঁকা কিছু কথায় তুমি সোজা কথাটা ছুঁতে চাও। সোজা কথাটা সিঁড়ির নীচে, ছাদে, হাবুলের চায়ের দোকানের কোণে থাকে লুকিয়ে। তুমি ঘুমিয়ে পড়লে, তোমার বুকের ওপর একলা একলা বেয়ে ওঠে, কেন্নোর মত। কখনো বা সার দেওয়া পিঁপড়ের সারির মত। তুমি ঘুমের মধ্যে টের পাও - সোজা কথাটা তোমার বুকে। সকাল হয়। তুমি হারিয়ে ফেলো।

রাস্তা পেরোলে

রাস্তা পেরোলে
খুব কি হল পার্থক্য?
আগে যেদিকে ছিলে?

যেই চিনেছ

কাজের সূত্র কাজকে চেনায়
   কাজ চেনায় মনকে
মন চিনলে জগৎ সোজা
   বেড়া যাবি টপকে

মনের মালিক তুই তো বটেই
   তোর মালিক সে সেয়ানা
বাইরে আছিস মোহে মেতে
   খুঁজে সুখের বাহানা

সব ভুলে সব আটকে আছে
   জালের মধ্যে ঝপাং ঝপ
মন চিনে নে, মন চিনে নে
   সত্য শান্তি মিলবে সব

ঘরকুনো

ফুলগাছগুলোতে সবে কুঁড়ি এসেছে, আর তুমি কিনা বেড়াতে যাওয়ার টিকিট কেটে আনলে!
আচ্ছা বলো তো, কি করে আমি এই উঠোন ছেড়ে, সমুদ্রের ধারে যাই!
বললেই বলবে, ঘরকুনো! আরে ওরাও তো কত সাধ করে আমার উঠানে বেড়াতেই এসেছে বলো! ছেড়ে যাই কি করে!

ইঙ্গিত

বাঁধ ভাঙার শব্দ
বিসর্জনের শব্দ
ঝরণার শব্দ
তোমার পায়ের শব্দের মত
ঝরা পাতার সজ্জা
সন্ধ্যের উদাস হাওয়া
তারা খসার মুহুর্ত
তোমার আসার ইঙ্গিতের মত

পদচিহ্ন

চৌকাঠ পেরোলাম
বারান্দা পেরোলাম
উঠান পেরোলাম

  রাস্তায় আসলাম
শুধু তোমার জন্য

শুনলাম তুমি ফিরে গেছো
অনেকক্ষণ ওই পাকুড় গাছটার তলায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে

তুমি শুনতে পাও নি?
আমি চৌকাঠ পেরোচ্ছিলাম
বারান্দা পেরোচ্ছিলাম
উঠান পেরোচ্ছিলাম

বোঝোনি, সে শুধু তোমারই জন্য?

সন্ধ্যামালতী

মেয়েটার সেদিন সন্ধ্যামালতী ফুল দেখতে ইচ্ছা করছিল। ফুলটা না দেখতে পেলে সে যেন মরেই যাবে আজ। সত্যিই মরে যাবে।

মনসুর

সোজা রাস্তাটা বন্ধ ছিল
বুকের ঘরে আগল ছিল
কান্নাগুলো হিসাবী ছিল
দিনরাত খুব উদাস ছিল

বিধির কি যে খেয়াল হল
রাস্তা ঘুরে কি পাড়া গেল
চিন্তা হৃদ্-আঙনে হোঁচট খেল
কুলকুল কি শব্দ পেল

আসছে শোনে কিসের বান
প্রাণের মূলে মরণটান
মনসুরের সে পাগল গান
সুরে তালে মাতাল প্রাণ

মনসুরের আঙিনায়

ঈশ্বর বলো, আল্লাহ্‌ বলো - তাঁর বাগানে ঘুরে এলাম।

জোছনা

এক মুঠো জোছনা চুরি করে
সিঁড়ি দিয়ে পা টিপে টিপে
       তোমার ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ালাম

তুমি বললে -
  মোছা মেঝে, একটু দাঁড়াও
           জলটা শুকিয়ে যাক আগে

ডাক

হাত ছেড়ে গেলে
  হাতের কথাও বুঝি ভুলে যায় মানুষ?
ঝরাপাতার গান বোঝে কালবৈশাখি
  গাছের হৃৎপিণ্ডে লাগায় পক্ষীরাজের ছুট
       উদাস নৃত্যের তালে বসন্ত ফেরে
     ঝরা ফুলের পাপড়ি মাড়িয়ে,
  পথের বাঁকে বাঁকে রেখে যায়
        টুকরো কথার কোমল ছায়া

ডাক

আমায় অন্যমনস্ক করল তোমার ডাক। আমায় ভাবালো তোমার ডাক। আমায় আমার সামনে দাঁড় করালো তোমার ডাক।

কিছু স্পর্শের অনুভব

কিছু স্পর্শের অনুভব
শরীরের সাথে সময়ও মনে রাখে
যখন উদাস বাতাস পাতার গাল ছোঁয়
শিকড়ের কোলে কুঁড়িও মাথা রাখে


(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)

কত?

কত স্মৃতির বিন্দু জমে জমে ধ্রুবতারা হয়?
কত ব্যাথা উদাসীনতায় ঘুমিয়ে একতারা হয়?
কত রাত জাগা অভিমানে শিউলিবৃন্ত লালাভ হয়?
কত একা থাকলে রক্তনদীর গভীরতা মাপা যায়?
কত চেষ্টার পর ব্যর্থতাকে প্রদীপের শিখা করা যায়?

যদি

কয়েক পশলা বৃষ্টি হয়ে
 সব ধুয়ে যদি যেত
সব রক্ত ধুইয়ে নিয়ে
 মিথ্যা করে দিত!
হাত ছুঁয়েছিল যে মহানগর
বুক ছুঁয়েছিল যারা
    ফিরিয়ে দিত বৃষ্টি একাই
       যেন কেউ না স্বজনহারা

জানি এ সব ছাই কল্পনা
  গল্পের মত সব
কাল থেকে চোখ মাড়িয়ে চলেছে
  আচমকা হওয়া শব