Skip to main content

আমি এখানে, তোমার জন্য

সিঁড়ির একদম নীচের ধাপটায় বসে আছি
এখানে
এক পা বাড়ালে মাটি
এক পা বাড়ালে জল
এক হাত বাড়ালে ঘাস
এক হাত বাড়ালে বাতাস

সব কাজ মিটিয়ে
আমার কাছে এসো
আমার পাশে বোসো

একবুক শান্তি ঘটে ভরে দেবো
তুমি স্নান সেরে এসো
একটাই কথা মনে রেখো -
উপরের সিঁড়িগুলোতে কিছু ফেলে এসো না
রেখে এসো
আর ফিরতে না হয় দেখো

পারো যদি

তুমি সরে দাঁড়াও
তোমার শরীরে এমন কিছু নেই
যা হৃদয় গুহায় আলো জ্বালাতে পারে
তাই অকারণে নগ্ন হয়ে এসো না

পারো যদি একটা আবেগ জ্বালো চোখে
সত্যি হোক তা
আমার হৃদয় গুহা থেকে আদিম প্রাণ
উড়ে আসুক ওই আলোর দিকে চেয়ে
বসুক নিভৃতে তোমার বুকে
শরীর থাকুক সংযত
প্রাণের উৎসে প্রেমকে করে ধারণ
শুদ্ধ হোক তা

সে

রোজ দেখা হয় না
তবু রোজ দেখা হয়

রোজ কথা হয় না
তবু সব কথা হয়

রোজ হাতে হাত রাখি কই?
তবু সারা শরীরের স্পর্শ 
এই তো, এখনও আমার সর্বাঙ্গে


সে - 
বাইরে থেকেও ভিতরে থাকে
ভিতরে থেকেও হারিয়ে থাকে
হারিয়ে গিয়েও আমায় খোঁজে
আমি, হারিয়ে গিয়েও তারই মাঝে

দেখেছি

আমি দেখেছি
একবার না, বহুবার দেখেছি

যে অন্যকে ব্যর্থ করার সঙ্কল্পে
এক বুক ষড়যন্ত্র নিয়ে
বাড়ি থেকে বেরোলো ভোরবেলা

তাকে দেখেছি
একবার না, বহুবার দেখেছি
মাথা নীচু করে, নিজেকে ব্যর্থ করে
গোপনে ফিরছে সে চোরের মত, সন্ধ্যাবেলা

তবু তুমি

তোমায় দেখে বুঝেছিলাম
বিধাতা কাউকে নিজের হাতে সাজান

তোমার চোখের ওপর চোখ রেখে বুঝলাম
চোরাবালি শুধু পায়ের তলায় না
বুকের তলায়ও আছে

পলাশ ও জাল

ছিন্ন পরিত্যক্ত মাকড়সার জাল। কুয়াশা ঘেরা বসন্তের সকালে সে চোখ মেলে চেয়ে দেখে, তার পাশে ফুটেছে পলাশ। কি তার রূপ, কি তার রঙ! ছিন্ন জাল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ পলাশের দিকে। সম্মোহিত তার দৃষ্টি। হঠাৎ ভ্রমরের গুঞ্জনে তার ঘোর ভাঙল। ভ্রমর এসেছে পলাশের ঘুম ভাঙাতে। 

ভুল পথে

যৌথ পরিবারে কোনো বড় মানুষ যখন কোনো অবিবেচক বা আলপটকা মন্তব্য করে ফেলেন, অমনি অন্যান্য বিবেচক মানুষেরা সেটা নিয়ে কথা না বাড়িয়ে বিষয়টাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। যাতে পরিবারে শান্তি বজায় থাকে। এ অভিজ্ঞতা কম বেশি সব মানুষেরই থাকবে যাঁরা যৌথ পরিবারে মানুষ।

কালবৈশাখী

বুকে হাত রাখল
আমার হৃৎপিন্ড ছুঁয়ে বলল-
     এত তাড়াতাড়ি ছোটে?

আমি বেগ কমালাম

আবার এল
হাত রেখে বলল, এত ধীরে?

বেগ বাড়ালাম

সেবার বলল
হয় নি এখনও

এমন কেন?


এমন কেন?
সব সময় নদীর ওপারেই দাঁড়াবে?
তুমি জানো না
আমি সাঁতার জানি না?
নৌকা থাকে না, তাও জানো না?
কান পেতে শোনো
আমার হৃৎপিন্ডের স্পন্দনে ওপারে গাছের পাতাগুলো
কেঁপে কেঁপে উঠছে থরথর করে
চাঁদের আলো তোমার রক্তিম
ঠোঁট ছুঁয়ে ঠিকরে পড়ছে জলে
মুক্তোর মত


আর না-
হয় তুমি এপারে এসো
না হয় আমায় সাঁতার শেখাও

নিঃস্ব রাজার চেলা

মাথাটা যখন খুব ভারী
চোখটা যখন ঝাপসা
যখন পায়ে অদৃশ্য শিকল
বুক নিরুৎসাহে ভ্যাপসা

তখন বাইরে এসে দাঁড়া
নীচুর দিকে তাকা
জলের মত হ
তুই যে নিঃস্ব রাজার চেলা

বিজয়িনী

বাগানে নানান ফুলগাছ। হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা ক্যাকটাস গাছ জন্মালো। অন্য গাছেদের ভুরু কোঁচকাল, নাক উঁচু হল। বেশ কিছুদিন কাটল। সব গাছে ফুল ফুটল। গোলাপ, রজনীগন্ধা, জুঁই, জবা আরো কত কি। শুধু ক্যাকটাস থাকল ফুলহীন। অন্য ফুলগাছেরা ক্যাকটাসের দিকে তাচ্ছিল্যভরে তাকালো। বলল, শুধুই কাঁটা? আহা বাছা থাকো কি করে! ক্যাকটাস হাসল শুধু।

উপলব্ধি

প্রশ্ন কোরো না
আমি উত্তর জানি না

আমার হাতে অনেক রেখা
কোনো জ্যোতিষীর হাতে হাত রেখে
উত্তর পায় নি ওরা

আমার মাথার মধ্যে জিজ্ঞাসাগুলো
এলোমেলো তারার মত সাজানো
আমি অন্ধকারে ডুবে আছি

তবু ভোরের আকাশের দিকে
চেয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়
আমার প্রশ্নগুলোর দরকার নেই
উপলব্ধির কোনো প্রশ্ন থাকে না
প্রশ্ন থাকে না ছুঁতে পারা তারার

কাসন্দী


-শুধু ঠকলাম
-কে ঠকালো
-তার চাইতে জানতে চাও কে ঠকালো না
-বেশ। তাতে কি হয়েছে? খুব ক্ষতি হয়ে গেছে কি?
-তা হয় নি! আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না এখন
-কি মনে হয়?
-মনে হয় মুখোশ সব
-ছিঁড়ে ফেললেই হয়!
-একটা আলপটকা কথা বললেই হয়! কে ছিঁড়বে? আর কত ছিঁড়বে?
-তা হলে উপায়?

যদি সেটা মাতৃভাষা হয়

একটা ভাষাই এ জন্মে জন্মান্তর ঘটাতে পারে
যদি সেটা মাতৃভাষা হয়

একটা ভাষাই মায়ের আঁচল
বিশ্ব আঙিনায় আনতে পারে
যদি সেটা মাতৃভাষা হয়

একটা ভাষাই আমার সাথে আমার বুকে নামতে পারে
যদি সেটা মাতৃভাষা হয়

একটা ভাষাই চিন্তামণির সব জ্যোতিতে রাঙতে পারে
যদি সেটা মাতৃভাষা হয়

তীর্থযাত্রা


দেহের সাথে আত্মা গেল তীর্থে
দুজনেই ফিরল
আত্মা ফিরল সারা গায়ে মেখে লাল আবীর
শরীর ফিরল মেখে ধূলো
শরীর বলল, ভাই এটা কেমন হল?
তুমি পেলে রঙ, আর আমি মাখলাম ধূলো!
আত্মা বলল, তুমি গিয়েছিলে পেতে
আমি গিয়েছিলাম দিতে
যে চায়, সে পায় ধূলো
যে দেয়, সে রঙীন হয় প্রেমে

প্রভু

পুকুরের চার ঘাট বাঁধালে
ওয়াটার পানি অ্যাকুয়া জলে
বললে ওরে বিভেদ কোথায়?
বেড়াগুলো সব ভাঙ দেখি আয়
তাঁর ইতি কেউ করতে পারে?
সব মতই যায় তাঁরই দ্বারে
'আমার' বলে যেই ঢেকেছিস
জগৎ আঁধার সেই করেছিস
'তুমি' 'তোমার' বলতে শেখ
দু'হাত তুলে নাচতে শেখ
অহং ম'লে ঘুচে জঞ্জাল
পুঁথি শাস্ত্র ঘোর মায়াজাল
ওসব ছেড়ে ডাকতে শেখ

আপন বলতে

মন ডুবে যা শব্দতলে
বাক্য সেথায় ডুবতে নারে
মিলবে সে মুখ, অনন্তসুখ
জ্বলছে রে তোর হৃদ-মাঝারে

তারে বেঁধে আনবি পাড়ের কাছে?
কোনোকালেই হবে না তা
জগৎ বাঁধা তাঁর দুয়ারে
তোর ভ্রমের শেষে শিখি পাখা

ডুব দে রে মন, পাড়ে সে নেই
কথার ফাঁদে হারাস নে খেই
অহং অন্তে পারবি জানতে
আপন বলতে সেই শুধু সে-ই

কালবৈশাখী

একলা একটুকরো হাওয়া আমার শোয়ার ঘরে
আমার দিকে তাকিয়ে বলল, চেনো আমায়?
আমি স্মৃতির জানলা খুলে, যতদূর চোখ যায় চাইলাম, চিনলাম না

বললাম, কে তুমি?
সে বলল, তোমার দীর্ঘশ্বাস

সুন্দর


আমার একটা অভিযোগ
     তুমি বড্ড বেশি সুন্দর
আমার একটা স্বীকারোক্তি
     আমি বড্ড বেশি লোভী
আমার একটা সিদ্ধান্ত
     আমি বঁড়শি হাতে না নেবো 
আমার একটা উপলব্ধি
     তুমিই আমার প্রাণের কবি

মনের মধ্যে একটা ঘর বানাও

মনের মধ্যে একটা ঘর বানাও। শুধু নিজের জন্য। সে ঘরের চাবি কারোর হাতে দিও না। কারোরই হাতে না, সে যেই হোক। ঘরটা নিজের মত সাজাও।

সে ঘরে দেখা পেতে পারো হঠাৎ কোনো একদিন অচেনা অতিথির। যুগান্তরের নিমন্ত্রণ যেন তার তোমার সেই ঘরে। কি মন্ত্রবলে খুলে ফেলেছে সে তোমার গোপন ঘরের দরজা। সেই তোমার প্রাণের সখা, তোমার বঁধূ। তাকে বরণ করে নিও।

সংশয়ী

কে বলল, সন্ধ্যা হয়ে গেছে
আমি বললাম, ফিরবে কি?
উত্তর পেলাম না

কে বলল, সন্ধ্যা হয়ে এল
আমি বললাম, আলো জ্বালি?
উত্তর পেলাম না

কে বলল, সন্ধ্যা কি হয় নি?
আমি বললাম, হয়েছে তো
সে বলল
তবে ঘরে ফেরো নি কেন?
আলো জ্বালো নি কেন?
আমি নিরুত্তর রইলাম

যে মানুষটা


যে মানুষটা দেবতা হতে গিয়েছিল
ওই যে ওইখানে, পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে

যে মানুষটা শয়তানী শিখতে গিয়েছিল
সে অন্ধকারে পথ হারিয়েছে, হারিয়ে গেছে

যে মানুষটা ভোরবেলায় লাঙল হাতে বেরিয়েছিল
ফিরে এসেছে, একঝুড়ি শস্য মাথায় করে এনেছে

ওই যে বাচ্চাটা দাওয়ায় বসে মুড়ি খাচ্ছে
উঠানে ছড়িয়ে কাকগুলোকে ডাকছে
ও মানুষের বাচ্চা
দেবতারও না, শয়তানেরও না

একলা একলা

বুকে কিছুটা আগুন জ্বলেছিল
পুড়ছিলাম নিঃশব্দে
আঁচটা নিভাইনি জেনেশুনেই
   শেষে শুধু ছাই পড়ে থাকবে জেনেও

নরককে নরকেই চাই

আমাকে নরকের দরজায় রেখে
নিশ্চিন্তে ফিরে যাও
আমি আমার মত স্বর্গ বানিয়ে নেব 

তোমার স্বর্গে যেতে পারবো না
সেখানে পরতে পরতে দেখি
নরকের আতঙ্ক

আমি নরককে নরকেই চাই
স্বর্গীয় আতঙ্কে না

অঞ্জলি


আমি তোমারই প্রতিধ্বনি
তোমার দানই দিই ফিরে তোমায়
সেই আমার অঞ্জলি

আজ বলব তোমায়

আজ বলব, তোমায় আমি ভালবাসি
আজ বোঝাব, তোমায় কতটা ভালবাসি

কিন্তু কিভাবে?

সকাল থেকে কাগজ পেন নিয়ে
লিখব আজ জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটা
কোহিনুরের মত রাখব তোমার পায়ে
বলব তোমায়, বোঝবো তোমায়
আমি তোমায় কতটা চাই
কতটা ভালোবাসি

কিন্তু একি, বেলা গড়িয়ে দুপুর হল
সাদা কাগজ সাদাই পড়ে আছে!
একটা আঁচড়ও নেই!
শব্দগুলো হারালো কার কাছে?

টপ-আপ


-হ্যালো, সায়ন্তনী?
-বলছি
-আমি কুশল
-হুঁ
-আমার খুব জ্বর
-এটা বলতেই কি ৬ মাস তেরোদিন বাদে ফোন করলি?
-তোর এতটা মনে আছে!
-ন্যাকামো না করে, কেন ফোন করেছিস বল
-আমার খুব জ্বর
-শুনলাম তো। আমি ডাক্তার নই, নার্স নই, না তো আমার বাবার ওষুধের দোকান আছে।

বোঝা-বুঝি

তুমি কথা বলতে বলতে পাশ থেকে উঠে গেলে
আমায় বোঝাতে কি সব
আঁকিবুকি কথা
বোঝালেও
মানে বোঝানোর চেষ্টা করলে
শেষে বললে, বুঝেছ?
আমি মাথা নেড়ে বললাম, হ্যাঁ

কি বোঝালে বুঝিনি
বুঝলাম এটুকুই-
তুমি পাশ থেকে উঠে গেছো

আটপৌরে

তোমায় নিয়ে একটা কবিতা লিখব?

সামনে দাঁড়াও তবে

কেমন লাগল?

ভাল

আমার চোখের থেকে চোখ সরাও এবার
আমি পাতা উল্টাবো

হিসাব করব
মাসকাবারি বাজারের

তুমি?

রাত দুটো

পরদাটা একটু নড়ল
তুমি এলে?

রাত আড়াইটে

ঘরে তোমার গায়ের গন্ধ
তুমি এসেছ?

রাত তিনটে

আমার বুকের মধ্যে ছুঁচ ফুটছে
তুমি দেখতে পাচ্ছ আমায়?
আমি পাচ্ছি না তো!

ভোর চারটে

আমার গলার কাচ্ছে কান্না
চোখদুটোতে জ্বালা
তুমি চলে যাচ্ছ?
আবার!

আসবে আবার?

আমার দু'চোখ জোড়া ঘুম

সর্দিলীলা


(কীর্তনাঙ্গের প্রচলিত সুরে গেয়)
------------------------------

মরিব মরিব সখী নিশ্চয় মরিব
আমার এত সাধের অ্যান্ড্রয়েডখানা
                           কারে দিয়ে যাব

ভরসা

সন্ন্যাসী একটা বড় তালা মঠের দরজায় আটকালেন
দু'বার টেনে দেখলেন, আশ্বস্ত হলেন

তিনি ভগবানে বিশ্বাস করেন
মানুষের দেবত্বে বিশ্বাস করেন

তালাতে ভরসা রাখেন

ফাঁকি

ভেবেছিলাম ফাঁকি দিয়ে নেব
পেয়েছিলামও হাতে


কে নিয়ে গেল ফাঁকি দিয়ে?
আমি আবার শূন্যহাতে

শিকড়


গায়ে কেউ কটা ফুল ছড়ালো
গলায় কেউ মালা পরিয়ে গেল
                        অতর্কিতে
ভাল লাগছিল
তারপর ফুলগুলো কুটকুট করতে লাগল সারা গায়ে
মালাটা ভারী হতে হতে 
আমার মাথাটাকে নীচে নামিয়ে আনছিল
আমারই পায়ের কাছে

অরূপ


রূপ নেই, অস্তিত্ব আছে
বাঁধন নেই, প্রেম আছে
তাপ নেই, জ্যোতি আছে
দাবী নেই, প্রকাশ আছে

ফুলঝুরি


দেরি ছিল আসার। বাঁধানো উঠানের ধারে দুটো কলাগাছ। তার পাশে একটা বড় জামগাছ। তাতে মৌচাক হয়েছে বেশ কয়েকমাস হল। খুব কথা বলত ছোটবেলা থেকে, তাই বাড়ির লোক নাম রেখেছিল, ফুলঝুরি। বর্ধমান থেকে কিছুটা ভিতরে এক অখ্যাত গ্রামে জন্ম ফুলঝুরির। এখন বয়স চৌষট্টির দোরগোড়ায়। শরীরে গড়ন বেশ মজবুত এখনো। চোদ্দ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে এল রাণাঘাটে। এটা ২০১৪।

জল


আমার চারিদিকে চারটে মরা নদী
আগে জল ছিল, কোনো না-দেখা পাহাড়ী ঝরণা থেকে নামত
এখন খালি নুড়ি পাথর বালি আর বালি
আমি জল চাইতে এ পাড়া ও পাড়া ঘুরেছি
কই জল?
শুকনো খাল, শুকনো দীঘি, শুকনো নদী
ওরা বলল, চলুন খুঁজি জল, যাবেন?
হাঁটতে হাঁটতে বন পাহাড় পেরিয়ে মরুভূমিতে এলাম সবাই
ওরা বলল খুঁড়বেন বালি?
বালি খুঁড়তে খুঁড়তে নীচের দিকে নামছি তো নামছি

ঘোগ

শাসকদল আর বিরোধীদল। যা কিছু হোক, আলোচনাটা এর বেশি এগোতে শোনা আর আমাদের ভাগ্যে জুটছে না। টিভিতে, কাগজে, পত্রিকায়, রাস্তায় ঘাটে - একই বিষয়, শাসকদল আর বিরোধীদল। বার্ট্রান্ড রাসেলের একটা বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ে - আমরা ভোট দিয়ে কাউকে একটা মন্ত্রীত্বে বসাই কারণ সব কিছুর জন্য কাউকে তো একটা দায়ী করতে হবে। আমাদের আলোচনাকেও তাই ওর বেশি এগোতে দিতে ভয় পাই। কি জানি বাইরের অন্ধকার যদি ঘরের অন্ধকারের দিকে আঙুল

দম্ভ


সাগরের দাম্ভিক জলকণা
পড়ল বালুতটে, চায় পৃথক অস্তিত্ব
কেন সে থাকবে একাকার হয়ে
প্রকাশ কি করে হবে, ব্যক্তিত্ব!

তবু সে আজ
সাগরের দিকে কাতর নয়নে চেয়ে
আজ বুঝেছে, সূর্য্য কি ভীষণ!
মরণ যে তার মাথার উপরে ছেয়ে

ফিরে এসে


সারাদিনের পর যখন তোমার কাছে ফিরে আসি
মনে হয় দিনের অন্য সব চাওয়াগুলো ব্যর্থ হলেও এমন কিছু ক্ষতি হবে না
ওগুলো শিশিরের মত মিলিয়ে যাবে
বুকে দাগ না রেখেও।
কিন্তু ফিরে এসে তোমায় না পেলে একলা হয়ে যাবো
অন্য সব চাওয়াগুলো ফুটে থাকবে কাঁটার মত বুকে
চারিদিকে নামবে এক চোরাবালি শূন্যতা 

তুমি থেকো

আরেকটু হলেই


যেন ছুঁয়েই ফেলেছিলাম আরেকটু হলেই 
আরেকটু হলেই যেন জেনে ফেলেছিলাম
বোধায় বুঝেই ফেলতাম প্রথম থেকে শেষ

হল না যে

যবনিকা পড়ল হঠাৎ, যেমন পড়ে
প্রজাপতির মত উড়ে গেল, ফুড়ুৎ!

মন বলল, ইস্, আর একটু হলেই..
প্রাণ বলল, ধুস্

কে যেন বলল, বেশ হয়েছে

ভুল কথা

একটা মাছ জলে ডুবে মরেছিল
একটা মাকড়সা জালে আটকে মরেছিল
একটা মৌমাছি মৌচাকে আটকে মরেছিল
ভুল কথা
একটা মানুষ সংসারে আটকে মরেছিল
ঠিক কথা

প্রার্থনা

দরজা আমার এদিক থেকে
শক্ত করে আঁটা
তুমি যদি ওদিক থেকে খোলো
বেরোতে পাই তোমার টানে
আসা যাওয়ার পথ খুলে যায়
মোহ আমায় বাঁধতে না পায়
যদি তোমার বাঁশি বাজে
আমার প্রাণে

মৃত্যুঞ্জয়


কিছু ধুলো আলোর সাথে উড়ছে
কিছু কাদা স্রোতের সাথে ভাসছে
কিছু কাঁকড় ভিজে রাস্তা বাঁধছে
কিছু ডাস্টবিন কিছুতো খেতে দিচ্ছে
কিছু আস্তাকুঁড় এখনো আশ্রয় হচ্ছে
কিছু প্রতিবাদ অলিতে গলিতে মরছে
তবু ঝোঁপে ঝাড়ে নতুন ভ্রুকুটি উঠছে
সব আশা শেষে, সব চিতা নিভে
বুকের ভিতরে তবু ওটা কি নড়ছে?

স্পর্শ

কেউই হাত বাড়ায় না
বাড়ায় কেবল শর্ত

শর্ত না চাই
চাই হাতের সরল স্পর্শ

আমন্ত্রণ

দেখো, তোমার ভালবাসা গ্রহণমুক্ত আজ
দুঃস্বপ্নের পাখিরা ওই গা ঝাড়া দিল
তোমার বিন্দু বিন্দু অশ্রুতেই হবে সাগর
ততদিন শুধু হাসিটা জীবিত রেখো

কোনো দিগন্তে সূর্যাস্ত যদি দেখো
জেনো, কোনো দিগন্তে সূর্যোদয়ও আজ
রাতের গুহায় কান্না ঘুমিয়ে আছে
তোমার বুকের তলায় গঙ্গোত্রীর ডাক

ঢেউ

পুরীর সমুদ্রে যখন প্রথমবার বাবার হাত ধরে নামি, আমার সে কি উত্তেজনা! ঢেউ আসলেই তার উপর দিয়ে লাফাবার চেষ্টা করছি। এমন সময় একটা বড় ঢেউ আসল। লাফাতে গিয়ে বালির তীরে পড়লাম ছিটকে। বাবা হাসলেন, বললেন, "বড় ঢেউ আসলে লাফায় না বোকা, মাথা নীচু করে দিতে হয়। মাথার উপর থেকে ঢেউটা চলে যায়, আর ছিটকে পড়তে হয় না।"

একাকীত্ব



-----
তুমি যখন আসো
আমার সামনে এসে দাঁড়াও
মনে হয় তুমি আমার বহু জন্মের চেনা
কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টিরও আগে থেকে
তুমি যখন যাও
আমার মনে হয়
আমি যেন জন্ম জন্ম একা
ইতিহাস সৃষ্টিরও আগে থেকে



----
আমার একাকীত্বের কোনো মানচিত্র নেই
তুমি যে ভাবে খুশী এসো