দম্ভ
সাগরের দাম্ভিক জলকণা
পড়ল বালুতটে, চায় পৃথক অস্তিত্ব
কেন সে থাকবে একাকার হয়ে
প্রকাশ কি করে হবে, ব্যক্তিত্ব!
তবু সে আজ
সাগরের দিকে কাতর নয়নে চেয়ে
আজ বুঝেছে, সূর্য্য কি ভীষণ!
মরণ যে তার মাথার উপরে ছেয়ে
ফিরে এসে
সারাদিনের পর যখন তোমার কাছে ফিরে আসি
মনে হয় দিনের অন্য সব চাওয়াগুলো ব্যর্থ হলেও এমন কিছু ক্ষতি হবে না
ওগুলো শিশিরের মত মিলিয়ে যাবে
বুকে দাগ না রেখেও।
কিন্তু ফিরে এসে তোমায় না পেলে একলা হয়ে যাবো
অন্য সব চাওয়াগুলো ফুটে থাকবে কাঁটার মত বুকে
চারিদিকে নামবে এক চোরাবালি শূন্যতা
তুমি থেকো
আরেকটু হলেই
যেন ছুঁয়েই ফেলেছিলাম আরেকটু হলেই
আরেকটু হলেই যেন জেনে ফেলেছিলাম
বোধায় বুঝেই ফেলতাম প্রথম থেকে শেষ
হল না যে
যবনিকা পড়ল হঠাৎ, যেমন পড়ে
প্রজাপতির মত উড়ে গেল, ফুড়ুৎ!
মন বলল, ইস্, আর একটু হলেই..
প্রাণ বলল, ধুস্
কে যেন বলল, বেশ হয়েছে
প্রার্থনা
দরজা আমার এদিক থেকে
শক্ত করে আঁটা
তুমি যদি ওদিক থেকে খোলো
বেরোতে পাই তোমার টানে
আসা যাওয়ার পথ খুলে যায়
মোহ আমায় বাঁধতে না পায়
যদি তোমার বাঁশি বাজে
আমার প্রাণে
মৃত্যুঞ্জয়
কিছু ধুলো আলোর সাথে উড়ছে
কিছু কাদা স্রোতের সাথে ভাসছে
কিছু কাঁকড় ভিজে রাস্তা বাঁধছে
কিছু ডাস্টবিন কিছুতো খেতে দিচ্ছে
কিছু আস্তাকুঁড় এখনো আশ্রয় হচ্ছে
কিছু প্রতিবাদ অলিতে গলিতে মরছে
তবু ঝোঁপে ঝাড়ে নতুন ভ্রুকুটি উঠছে
সব আশা শেষে, সব চিতা নিভে
বুকের ভিতরে তবু ওটা কি নড়ছে?
আমন্ত্রণ
দেখো, তোমার ভালবাসা গ্রহণমুক্ত আজ
দুঃস্বপ্নের পাখিরা ওই গা ঝাড়া দিল
তোমার বিন্দু বিন্দু অশ্রুতেই হবে সাগর
ততদিন শুধু হাসিটা জীবিত রেখো
কোনো দিগন্তে সূর্যাস্ত যদি দেখো
জেনো, কোনো দিগন্তে সূর্যোদয়ও আজ
রাতের গুহায় কান্না ঘুমিয়ে আছে
তোমার বুকের তলায় গঙ্গোত্রীর ডাক
একাকীত্ব
১
-----
তুমি যখন আসো
আমার সামনে এসে দাঁড়াও
মনে হয় তুমি আমার বহু জন্মের চেনা
কৃষ্ণগহ্বর সৃষ্টিরও আগে থেকে
তুমি যখন যাও
আমার মনে হয়
আমি যেন জন্ম জন্ম একা
ইতিহাস সৃষ্টিরও আগে থেকে
২
----
আমার একাকীত্বের কোনো মানচিত্র নেই
তুমি যে ভাবে খুশী এসো
নিস্প্রাণ
সংসারের দিকে পিছন ফিরে
সিংহাসনের দিকে মুখ করে
ওনার তিরিশটা বছর কাটল
স্বামী পূত্র পূত্রবধূ পৌত্র সবাই আছে
শুধু উনি থাকলেন না
এত বছর ধরে উনি এত বড় সংসারের
দিকে পিছন ফিরেই কাটালেন
থেকেও না থেকে
সেদিন রাস্তায় যেতে যেতে আবার চোখ পড়ল
ওনার গারদ ঢাকা শীর্ণ শরীর
সিংহাসনের দিকে ফেরা
আনন্দহীন শুকনো মুখে বন্ধ দুটো চোখ
সারাদিন
আমার ঘরের উত্তরের জানলাটা খুললে
উত্তাল সমুদ্র, সেদিকটা আমি রাতের বেলায় খুলি
আমার ঘরের দক্ষিণের জানলা খুললে রুক্ষ
পাথর পাহাড়, সেদিকটা আমি দুপুরবেলায় খুলি
আমার ঘরের পূবের জানলা খুললে
আবর্জনার স্তূপ, সেদিকটাও মাঝে মাঝে খুলি
আমার ঘরের পশ্চিমের জানলা খুললে
ধূ ধূ মরুভূমি, সেদিকটা আমি রাতদিন খোলা রাখি,
প্রার্থনা - ৩০ শে জানুয়ারী
আমায় যেভাবেই হোক
মানুষের পাশে থাকতে দাও
হাত ধরার হাত দাও
না বলতে পারা চোখের কোণে আটকে থাকা
কথাগুলো বুঝিয়ে দাও
আমার চোখে ওদের চোখের জলগুলো লুকিয়ে এনে ভরে দাও
আমার বুকে ওদের বুক থেকে কাঁটাগুলো তুলে গেঁথে দাও
কোনো কাজে না লাগি যদি
আমার সারা শরীরে ধুলোবালি আবর্জনা
ভরে দাও পাপোষের মত
তবু আমায় মানুষের পাশে থাকতে দাও!