Skip to main content

শোধন

        মহিলাকে ক্লাবের ছেলেরা রাতে ডেকে নিয়ে যেত। ভোরে ছেড়ে দিত। উনি ভোরে আবার যে কটা বাড়ি কাজ করেন, পর পর করে বাড়ি ফিরতেন। স্বামী নেই। দুই মেয়ে, এক ছেলে। ছেলেটা বড়, কুড়ি বছর, বেকার। বড় মেয়েটা অন্যরকম। কেউ বলে পাগলী, কেউ বলে সাধিকা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যেও বড় মেয়েটাকে প

এই তো কবিতা

পদ্মপাতার উপর এক বিন্দু জল
টলোমল

তার অবয়ব ঘিরে নীলাকাশের ছবি
ছলছল

শান্ত মন, আত্মগত প্রাণ
দূরে, বহুদূরে সব কোলাহল

জানা-অজানা ও কবিতা

        জানার একটা সীমা আছে। জানার একটা দৃষ্টিকোণ আছে। যাকে যা জানছি তাকে অনুভবে জানছি না তথ্যে জানছি সেও আছে। জানার পরিসরের বাইরে আরো অনেক এমন কিছু আছে যা আমার জানা উচিৎ ছিল, আবার জানার মধ্যেও এমন অনেক জিনিস আছে যা আমার না জানলেও চলত। এই জানা আর অজানার মধ্যে যে মেঘ ও রৌদ্রের খেলা তা নিয়ে বেশ একটা মজা আছে। অহংকারটা আছে এর মধ্যে কোথাও একটা। বনের মধ্যে যেমন

আসলে কোনো কিছুরই কোনো নিয়ম নেই

আসলে কোনো কিছুরই কোনো নিয়ম নেই
এটা বুঝতে যতটা ভালোবাসা থাকা দরকার
             তা কই?

তবু সব কিছুরই একটা সময় আছে
যে ভালোবাসায় সে নিরুদ্বিগ্ন অপেক্ষা 
            সে কই?

মানুষ না হই, আর্য তো বটে

        আমার ছাত্র, ব্যাঙ্কে চাকরি পেল। ভারতের প্রথম সারির রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। পোস্ট - PO. এখন দক্ষিণ ভারতের একটা বিখ্যাত শহরে প্রশিক্ষণরত। ওর মুখে শুনলাম, ওদের মধ্যে একজন বিকলাঙ্গ বন্ধু আছে, পোলিও আক্রান্ত হয়েছিল যে ছোটোবেলায়। সেই বিকলাঙ্গ ছেলেটির রুমমেট তার সাথে এক ঘরে থাকতে আপত্তি জানিয়ে ঘর ছাড়ল, কারণ?

এক ছটাক ভালোবাসা পেয়েছ বলে

এক ছটাক ভালোবাসা পেয়েছ বলে
  রোদ্দুরের সাথে আড়ি কোরো না
        শ্যাওলা ধরা পথে
           ভালোবাসাও আত্মঘাতী হয়

আরেকটু

যদি জানলাটা আরেকটু খোলা থাকত
বিস্তীর্ণ মাঠ, সবুজ পুকুর, নীল আকাশ 
  জেগে থাকত আরো খানিকক্ষণ 
ভেজা মাটি, গাছ লাফানো জলবিন্দু, ব্যাঙের উল্লাস 
   হয়ত আরো বেশি প্রয়োজন ছিল 
   মসৃণ দেওয়াল বেয়ে ওঠানামা 
       সহজ হত 

তারপর

        যতটা আকুতি, আর যতটা সংযম নিয়ে ডাকত, "কেউ আছেন নাকি... ভিক্ষা পাই গো"... ততটা ভিক্ষা কোনোদিন পেত না।

অনেকের মত আমিও দৌড়েছিলাম

অনেকের মত আমিও দৌড়েছিলাম। একাই দৌড় লাগিয়েছিলাম। সবার আগে শেষ প্রান্ত পৌঁছানোর নেশা আমাকেও পেয়ে বসেছিল। ছুটতে ছুটতে আমিও সমুদ্রের তীরে এসে পৌঁছালাম। বালিতে অনেক পায়ের ছাপ, যারা আমার আগে এসেছিল, নানা যুগে, নানা কালে। অনেকের মত আমিও বুঝলাম, আর যাওয়ার নেই কোথাও। কেউ কেউ সব যুগের কিছু নির্বোধের মত সাঁতরাতে লাগল, কেউ ওপারে নিয়ে যাওয়ার নাবিকের অপেক্ষায় রইল। আমি ফেরার পথ ধরলাম, অনেকের মত। আমার আগে অনেক

চিরদিন মাধব মন্দিরে মোর

        চৌকির উপর দুটো পাতলা কাঁথা দিয়ে বানানো বিছানায় শুয়ে শুয়েই সুবাস বুঝতে পারল বৃষ্টিটা ধরেনি। গতকালও সারাদিন হয়েছে। এখন আন্দাজ ভোর সাড়ে পাঁচটা হবে। সুবাস উঠে বসল। দুটো শীর্ণ হাত জড়ো করে সামনের দেওয়ালে টাঙানো রাধাকৃষ্ণের ছবিতে প্রণাম করল। ফর্সা হাতদুটোতে নীলচে শিরার রেখা। মন্দিরের পিছনেই নদী। চূর্ণী নদী। সুবাস স্নান সেরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই ফুল তুলত

বন্দর


শেষ জাহাজ কবে ছেড়ে গিয়েছে মনে নেই
এমন কোনো এক পরিত্যক্ত শ্রীহীন বন্দরে
   সেদিন পূর্ণিমার আলো এসে পড়েছিল 
     নাম না জানা কোনো এক পাখি ডেকে যাচ্ছিল অবিরাম, প্রত্যাশাহীন

কর্মনাশা!


সোঁদা গন্ধে পিছলে পড়েছ কখনও? 
আচমকা দেখলে, জানলায় বাইরে টাঙানো কালো স্লেট আকাশ? 
তোমার ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তোমারই মত আরেকটা মেঘলা তুমি? 
তাকে সামাল দিতে হাতড়াচ্ছ গীতবিতান 
   কবিতার ফেরিওয়ালাকে বলছ,
      “এই ঝাঁকা নামিয়ে বসো দেখি”
তোমার ভেজা চোখে কোনো বিগত দিনের ডুব সাঁতার

অভিসার

        অবশেষে বর্ষা এলো। আজ থেকে যাও। আমায় একবার আজ ছাদে নিয়ে যাও। সিঁড়ির ঘরের দরজার সামনে আমার হুইলচেয়ারটা রেখো। হাত বাড়িয়ে সিঁড়ির ঘরের কার্ণিশ চোঁয়ানো জল এসে পড়ুক আমার হাতের তালুতে। হাতের তালুর ভাঁজে ভাঁজে বৃষ্টির জলের নদী।

        আমি জানি আকাশটায় আজ কাল পরশু মেঘ থাকবে। আমি জানি সারা সপ্তাহ মেঘ থাকবে। আমি জানি সারা মাস মেঘ থাকবে, যতদিন না কাশ এসে বলে, এবার তোমার ছুটি। মিনতি বৌদি আবার চীৎকার শুরু করবে কাল থেকে, “কাচা জামাকাপড়গুলো কোথায় মেলব? আমার মাথায়?... কি গন্ধ হয়েছে... একটাও শুকালো না... কবে যে সুয্‌যের মুখ দেখব?”... সেই মিনতি বৌদিই দুপুরবেলা “শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা” গাইবে... ছায়া ঘনাইছে বনে বনে... গাইতে গাইতে কাঁদবে... তুমি রাতে কান পাতলে শুনবে আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার..... আসলে সব মানুষই তো অভিসারে যেতে চায়... ক'জন যেতে পারে বলো?... আমার সন্দেহ হয় রাধাও কি পেরেছিল... একটা মেয়ে এত ভালোবাসা সারাজীবন কোনো পুরুষের পায়?... রাধা পেয়েছিল?... ওই মেঘ সেই পুরুষ... রাধা কি তবে ওই সবুজ মাঠ?... এই কি অভিসার!
...

ছোটোবেলায় মনে হত প্লেনটার সাথে বুঝি তারাগুলোর ধাক্কা লাগবে এক্ষুণি


ছোটোবেলায় মনে হত প্লেনটার সাথে বুঝি তারাগুলোর ধাক্কা লাগবে এক্ষুণি। তারাগুলো ভেঙে পড়বে ঝুরঝুর করে। প্লেনটা মুখ ঘুরিয়ে চলে যাবে অন্যদিকে।
বাস্তবে তা হয় না তো! সব প্লেন ওড়া শেষ হয়ে যায়, তারাগুলোও অক্ষতই থেকে যায়।

ছায়া


বারবার একটা ছায়া মুখের ওপর এসে পড়ছে 
বারবার সরিয়ে দিতে চাইছি
  হাতের তালুতে পাঁচ আঙুলে চেপে ধরে 
               ছুঁড়ে দিতে চাইছি আস্তাকুঁড়ে 
বারবার ছায়াটা ফিরে ফিরে এসে মুখের ওপর পড়ছে
ছায়ার সাথে কথা বলি না

অ-সামাজিক


       (সেই সব তথাকথিত প্রান্তিক মানুষদের জন্য, যাদের কথা শুনলে মনে হয়েছে কত সমান্তরাল জগতের পাশাপাশি হেঁটে চলেছি)

তর্পণ

বাঁ হাতটা পড়ে গেছে, স্মৃতি বলতে অফিসের ঘরটা, শেষ সই করা পেপারের শেষ লাইন ক’টা। জানলার ধারে একটা আরাম কেদারায় বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ফুলের কুঁড়ি ধরা, পতঙ্গদের খেলা, রঙবেরঙের ফুলের সমাহার, ফুলের ঝরে পড়া, শুকনো পাতার স্তূপাকারে জমে থাকা, গেট দিয়ে নানা মানুষের যাতায়াত যারা সবাই অপরিচিত এখন, কুকুর বেড়াল পাখিদের মত সচল জীব - সব চোখের মণির উপর ধারাবাহিক অর্থহীন প্রতিবিম্ব এখন।
...

শিবনারায়ণ রায়

শিবনারায়ণ রায়কে বাঙালি বোধকরি সে ভাবে নেয়নি। অন্তত আমার পাঠ অভিজ্ঞতা তো তাই বলে। আমি ওনার নাম প্রায় বহু বছর জানতাম না। এ লজ্জা আমার ব্যক্তিগত না সমষ্টিগত বলতে পারি না। সে প্রসঙ্গ থাক। অকারণ স্বঘোষিত জ্ঞানীগুণীদের চটিয়ে লাভ নেই। মজার কথা হচ্ছে, মানুষটাকে পড়া মানে নিজের মুখোমুখি বাবু হয়ে বসা। মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমতা সে চিন্তা করতে পারে।
...

মজলিশ


আজও মজলিশে একটা তাকিয়াও খালি যায়নি
আজও হাসির ফোয়ারা উঠেছিল নিঃসঙ্গ দেওয়ালের
   আত্মমগ্নতাকে ক্ষুব্ধ করে

ভিক্ষুণী


প্রচণ্ড দাবদাহ
তাপ প্রবাহ চলছে আবহাওয়া দপ্তরের পরিভাষা অনুযায়ী
দুপুর দুটো। জনশূন্য রাস্তা। 
ঘরের কাছে কান পাতলে টিভির আর পাখার আওয়াজ

'ন্যূনতম' থিওরি

        শুনেছি, একজন লোকের নীচের রক্তচাপ (ডায়াস্টোলিক) কত সেটাই নাকি আসল কথা। সেটা বেশি হলেই নাকি দুশ্চিন্তা বেশি। অর্থাৎ হৃদিযন্ত্রখানা না চাপলে কত চাপ, সেই হল গিয়ে আমার চাপ। 

বিকল্প


গুঞ্জন চলছে, এটা কি করে হতে পারে?
বিকাশের চায়ের দোকান। চালু দোকান।
অফিস পাড়ায় সকালের ভিড়।

পাশে ফাস্টফুডের দোকান – রেহমতের,
 উত্তরপ্রদেশে বউ, দুই ছেলে, তিন মেয়ে
ছোটোছেলেটা এখানে এখন, ছুটিতে এসেছে
  দোকানটা খোলে বেলায়

একদিন


সব জানাশোনারা
পাঁচিলের মত দাঁড়িয়ে

আগাম জানাশোনারা
গুহাপথের মত সামনে

একদিন এই জানাশোনার বাইরে যার পা পড়বে
সে আমি না
জানাশোনার বাইরে কেউ

এমন যদি হয়

এমন যদি হয়
বাজারে আনকোরা কিছু নেই আর তোমার জন্য

এমন কোনো
পাহাড়, নদী, ঝরণা, জঙ্গল, সমুদ্র নেই যা তুমি দেখোনি

অথবা এমন কোনো রতিসুখ নেই
যা তোমার অভিজ্ঞতার বাইরে

কি করবে সেদিন?

টিনের বাক্স

সরস্বতী প্রাইমারি স্কুল। আমার প্রাথমিক শিক্ষানিকেতন। আমি আর দিদি এক ক্লাস উঁচু নীচুতে পড়তাম। হাওড়ার সালকিয়ায় থাকি তখন। শ্রদ্ধেয় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের বাড়ির ঠিক সামনের গলিতে স্কুল। ভোরে উঠে জল বিস্কুট খেয়ে টিনের বাক্সে খাতা পেন বই নিয়ে হাঁটা দিতাম দিদির সাথে। আমরা যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি।
...

খোলামকুচি

খোলামকুচির মত ছড়িয়ে ফেললাম
সবাই বলল, খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল
এখনও বুঝলাম না
সময়, মৃত্যু, না জীবন
...

বুলেট ও সাংবাদিকতা

একটা রঙের জোয়ার এসেছে আমাদের দেশে। এতদিনের বিচ্ছিন্নতা আর পোষাচ্ছে না। একটা নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে দাঁড়াবার নির্দেশ আসছে। যারা দাঁড়াতে পারছে না তাদের ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার নির্দেশও আছে সার্কুলারে। ধর্ম প্রাচীন না। ধর্মের একটা শক্তি আছে। ধর্মের ভূগোলে বিশ্বাস করা কিছু মানুষ বলছে এই সীমার মধ্যে নিজেকে বেঁধে ফেলো। তারপর ধর্মের সেই আদিম শক্তিটাকে ভাপিয়ে তোলো। পাতলা, মিহি দর্শন যা ধরতে গেলে পিছলে যায় সেই ধর্ম না। একটা মোটা কাতা দড়ির মত শক্ত কিছুর গায়ে দর্শনের প্রলেপ দাও। বোঝাও প্রাচীন ধ্রুব সত্যের মহিমা।
...

পালক

আগলে রাখতে চাইছিলাম 
বিস্তৃত ডানায় পেলাম ভয়

ভালোবাসতেই তো চাই

আকাশকে বললাম, 
        ছেড়ে দিলাম
              যা -
        তোরই হল জিত

দোল পূর্ণিমার নিশি নির্ম্মল আকাশ


        যদ্দূর মনে পড়ে জীবনে শোনা প্রথম ভাব জগতে ছবি আঁকা কবিতা শুনেছিলাম ঠাকুমার কণ্ঠে, প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়, গুজিয়া সহযোগে –


"দোল পূর্ণিমার নিশি নির্ম্মল আকাশ।

রোচক


মেয়েটা প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করত 
কারখানায় যেতে
খারাপ পাড়ার পাশের গলিতেই যেতে হত

সবার ভাবতে শান্তি লাগত
মেয়েটা খারাপ পাড়াতেই কাজে যেত

কবির বিড়ম্বনা


সহস্র কণ্ঠে ধ্বনিত হল কবির গান। কবির ছড়া-কবিতা।

কোলাহল উঠল আকাশে বাতাসে

শঙ্কা

        রমজানের হাতে কড়া। তাও মাথায় বিলি কেটে দিলে ভালোই লাগে পরাশরবাবুর। রমজান বছর দশেক আগে পরাশরবাবুর বাগানের কাঁঠাল গাছে গলায় দড়ি দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল কেউ জানে না। সে অকৃতদার ছিল। গরীব মানুষ, পরাশরবাবুদের বাড়িতেই ফাইফরমাশ খেটে দিন চলে যেত। তাকে অবশ্য হাসতে দেখেনি কেউ কোনোদিন। গায়ের রঙ তামাটে, রোগা-বেঁটেখাটো শরীর, তবে খাটতে পারত। পরাশরবাবুর স্ত্রী বেঁচে

আমি এক হাতে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে


হল কি, আমি এক হাতে মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে, খাবার টেবিলে বসে, আরেক হাতে তারিয়ে তারিয়ে আমের আঁটি চুষছিলাম। পুরো সাদা হয়ে আঁটিটার রঙ প্রায় আমার মোবাইলটার মতই হয়ে এসেছে। এমন সময় বাবা জিজ্ঞাসা করলেন, "হ্যাঁরে আজ পাম্প চালানো হয়েছিল?" আমি খানিক অন্যমনস্ক হয়ে পড়লাম, চালিয়ে ছিলাম কি? ভাবতে ভাবতে আঁটিটা কিরকম বিস্বাদ ঠেকল...ওমা! তাকিয়ে দেখি আমি তো আঁটি না, মোবাইলটা চুষে দিয়েছি...

সীতা

একজনের জীবনী লেখার জন্য সে মানুষটাকে যতটা কাছ থেকে দেখতে হয় ততটা কাছ থেকে দেখা আমার হয়ে ওঠেনি। এমনও নয় যে তিনি একজন সেলিব্রিটি যে গাঁয়েগঞ্জে সবাই তাকে চেনে। অথবা এত তথ্য চারদিকে ভেসে বেড়াচ্ছে যে হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে। তবু সে জীবনের নিজস্ব একটা আলো ছিল। ধার করা আলো নয়, তবে তো আর লেখার তাগিদই সহ্য করতে হত না। বরং যেটুকু জানি সেটুকু বলার চেষ্টা করি।
...

মার্কেজ- রবীন্দ্রনাথ

মনুষ্যজাত একটাই। তার গাত্রবর্ণের, তার বাহ্যিক শব্দোচ্চারণে পার্থক্য আছে, তার দেশ-কালের নিরিখে বাহ্যিক আচরণে, প্রথায়, খাদ্যাভাসে পার্থক্য আছে। কিন্তু তার বোধ আর অনুভবের পার্থক্য নেই। সেই কথাটাই সঙ্গীত আর সাহিত্য বারবার বলে এসেছে প্রাচীনযুগ থেকে। শিল্পের এইটাই সবচাইতে বড় দায় বোধহয়, দেশ-কালের সীমারেখার ঊর্দ্ধে গিয়ে এক অবিনাশী মনুষ্যত্বের ধ্বজা বহন করা। যে বোধ না বুঝে অনুভব করা যায় তাই সার্বজনীন। তাই শান্তি, সৌহার্দ, সহমর্মিতার বিশ্বজনীন ভূমি।
...

বুঝতে পারলাম না


বৃন্ত থেকে ঝরে যেতে যেতে
    ফুলটা কি যেন বলে গেল

বুঝতে পারলাম না

ভাবতে ভাবতে ক্রমশ গাছ হলাম 
কুঁড়ি ধরল। ফুল হল। ঝরে পড়ল।

বিনাবাক্যে ঝরে পড়ল
কেন,
   কিছু বুঝতে পারলাম না

রিলে রেস

পর্দাটা টানা। বাইরের আলো পর্দার ফাঁক দিয়ে অবাধ্যের মত আসছে। আজ কি বার? মঙ্গলবার। আরো চারটে দিন। ক্যালেণ্ডারটা দুলছে। পাখার আওয়াজ শুনে মনে হচ্ছে কারেন্ট নেই। ইনভার্টারে চলছে। জল কবে দেওয়া হয়েছে লাস্ট? চশমাটা টেবিলে। নইলে মোবাইলেই লিখে রাখা আছে - চশমা ছাড়া পড়া যাবে না। কত তারিখ? চব্বিশ। ব্যাঙ্কে টাকা ঢুকতে আরো সাত আটদিন বাকি।
...

মেজো ছেলে

        পনেরো হাজারের মধ্যে স্মার্টফোনের সেটটা ভালোই লাগল। বললাম এটাই দিন। 
        প্রচণ্ড গরম। দরদর করে ঘাম হচ্ছে। দোকান ভিড়ে ঠাসা। রবিবারের ভিড়। সকাল সাড়ে বারোটা হবে। দোকানে পাঁচজন হিমসিম খাচ্ছে খদ্দের সামলাতে।

গভীরতা

        তুমি গভীরতা ছুঁতে চাও? নিতে পারবে অতটা শ্বাস? 
        যে বাতাসে ভেসে থাকতে চাও, সে বাতাসে ঝড়ও ওঠে। সে ঝড়ের তালে দিতে পারবে তাল? পাগল নারকেল গাছটার মত?
        তুমি গভীরতা ছুঁতে চাও? কতটা জল জমেছে বুকে? কাঁদার শেষে তাকাতে শেখে চোখ। টইটুম্বুর কান্না বাঁধ দিলে, জীবন হ্রদ স্থির। কি ভেবেছিলে কেঁদেই জীবন পার হবে?

অপেক্ষায় থাকছি

আমি কখনও ত্রিভুজ
       কখনও চতুর্ভুজ
       কখনও বৃত্তের
           ভিতর দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছি

প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা

মাধ্যমিকের পর কি পড়ব আর উচ্চ-মাধ্যমিকের পর কি পড়ব এই নিয়ে একটা বড় সংশয়, বিভ্রান্তি হওয়া খুব স্বাভাবিক। মাধ্যমিকের পর কি পড়ব তা অনেকটাই বাড়ির বড়রা ঠিক করে দেন, যেমন ভালো নাম্বার হলে সায়েন্স, মাঝারি নাম্বার হলে কমার্স আর খারাপ নাম্বার হলে আর্টস। এর ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, তবে তার সংখ্যা খুবই কম।
...

ফেরিওয়ালা

দোকানগুলোর ঝাঁপ ফেলা
অসম্ভব গরম
রাস্তাঘাট শুনশান
একটা ফেরিওয়ালার ডাক শুনতে পাচ্ছি বহুদূর থেকে 
অনেকক্ষণ ধরে 
ভাবলাম
   সে হয়ত ডাকতে ডাকতে এদিকেই আসবে
অপেক্ষা করতে করতে ঝিমুনি এসে গেল
 গ্লাস পড়ে যাওয়ার আকস্মিক আওয়াজে চোখ খুললাম

তুমি অর্থ খুঁজলে


তুমি অর্থ খুঁজলে
আমি খুঁজলাম অনুভব

তুমি মিথ্যা নিলে
আমি নিলাম সত্য

তুমি দোপাটি লাগালে
আমি লাগালাম গম

তুমি সমুদ্রে ঘুরতে গেলে
আমি বেড়াতে গেলাম জঙ্গলে

তুমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে নদীকে বললে, এবার? 
আমি উদাস হয়ে আকাশকে বললাম, ধুর

বড় মামুর জন্মদিন


        বড় মামুর জন্মদিন। মায়ের সাথে ওর শেষ জন্মদিন। মায়ের এই একটাই ভিডিও আছে। খুব শখ ছিল মায়ের দৈনন্দিন রোজনামচা রেকর্ডিং করে রাখব, একান্ত ব্যক্তিগত সংগ্রহ করেই। হল না। মায়ের জন্য আমার কেনা সাধের শাড়িও মায়ের অন্তিম যাত্রায় আগুনে পুড়তে লেগেছিল। এমনই হতভাগ্য ছেলে আমি। 

আমি কবিতা লিখছি না


আমি কবিতা লিখছি না। আমি জলের দিকে তাকিয়ে আছি। জলে আজ এত ঢেউ কেন?

চপ

        বললে তো হবে না, অনেকেই বারণ করেছিল বিশুদাকে বাড়িটা কিনবেন না, কিনবেন না। ভালো না বাড়িটা। এখন পস্তাচ্ছেন। 

ওরা প্রতিবাদ করবে না


তুমি একটা কফিনে 
আরো কয়েকটা মৃতদেহ রাখতে পারো
অথবা কিছু মৃতদেহ
    আধপোড়া করে নদীর চরে ফেলে রাখতে পারো

মৃতদেহরা প্রতিবাদ করবে না

বজ্র আঁটুনির ফস্কা গেরো

        কথায় বলে বজ্র আঁটুনির ফস্কা গেরো। আজ সকালে অনেকের ফেসবুক প্রোফাইলে দেখলাম লেখা আছে Profile is Locked. ভালো কথা। অর্থাৎ আমার প্রাইভেসি মান্যতা পাচ্ছে, সুরক্ষিত থাকছে। কিন্তু একি সেই 'ওরকম মনে হয়' গোত্রের কিছু হয়ে যাচ্ছে না? 

বিচিত্র এ সংসার

        বাবা খানিক সুস্থ। অবশ্যই অনেকের শুভেচ্ছায়, যত্নে, চিকিৎসায়। সিদ্ধান্ত হল আয়া রাখার দরকার নেই তবে আর। সেন্টারে ফোন গেল, তারা উৎসাহে বললেন, "বাহ! মেশোমশাই ভালো তবে, এতো খুব ভালো কথা!"

কুহক


        সন্ন্যাসী নদীর তীরে। একটাই গেরুয়া। স্নানের পর নগ্ন শরীরে বসে। পাশে মেলা গেরুয়াবাস। সন্ন্যাসীর চোখে বিতৃষ্ণার দৃষ্টি। সংসার - মিথ্যা কুহকাবৃত ছলনার স্রোত, মূঢ় মানুষ। শুদ্ধতার সাধন নেই।

প্রতিশ্রুতি

        ব্যস্ত সন্ধ্যে। গুমোট শহর। পাদানিতে দাঁড়ানো অধৈর্য অস্থির উদ্বিগ্ন মানুষের সারি। যেন সব কিছু হারিয়ে যাবে এখনই ঝাঁপ না দিলে। ঝাঁপ দিলেও পাওয়া যাবে সে নিশ্চিন্ততাও নেই। বিভ্রান্তিতে লক্ষ্যহীন দৌড়াদৌড়ি।
        ছেলেটার গায়ে নীল টিশার্ট তার সাথে চলতি কালারের বাজার উপচানো সস্তা জিন্স। সদ্য যৌবনে পা। খেটে খাওয়া শরীরের সন্ধ্যের অবসরের সস্তা শৌখিন বিলাস।         সিগারেটের দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে। পা দোলাচ্ছে। ঠোঁটে দুলছে জ্বলন্ত সিগারেট, একটার পর একটা। ফোন কানের কাছে উঠছে বারবার, "একবার এসো, প্লিজ..."। জীবনবাজি ডাক।
...

কোরাস


যদি রাস্তার এক ধারে দাঁড়িয়ে থাকো
দেখবে ব্যস্ততার একটা ছন্দ আছে
সব মানুষের হাঁটার, হাত দোলানোর, চাহনির, মাথা নাড়ার একটা নিজস্ব ছন্দ আছে
তুমি সব মিলিয়ে একটা সিম্ফনি বলতে পারো
   অথবা কোরাস

প্রতিটা আঙুল দেখো, প্রতিটা উচ্চারণ শোনো
  প্রতিটা মুখভঙ্গি দেখো
     কোথাও তোমার সাথে মিল আছে

চর্চা-মনন-পাঠ

        'চর্চা' শব্দটার আগে বানান ছিল 'চর্চ্চা'। চর্চ্চ শব্দটার অর্থ আলোচনা, আন্দোলন, উচ্চারণ। সেই থেকে চর্চ্চা, তার থেকে চর্চা। চর্চা মননের শব্দ। মুক্তো কি করে হয়?

আবার ধুপধাপ আওয়াজ

        আবার ধুপধাপ আওয়াজ। এবার রান্নাঘরের উপরের তলা থেকে। যতই হোক, রাত্তিরবেলা সেই আওয়াজটাও বিরক্তিকর। কিন্তু যতবারই উপরের তলায় দরজায় ধাক্কা দেন, কেউ দরজা খোলে না। দিনের বেলায় তালা দেওয়া থাকে। কি ঝক্কি!

শাসিত


এত অবাধ্য বলেই
ঘাসের শিকড়ে জমে রক্ত
নত হও
শান্ত রাখো দেশ
স্বাধীনতা মানে অধীনতা প্রসাদ
লাগাম টানো, হয়ে ওঠো রাজভক্ত

টালি


ছাদের ফাটা টালি ক'টা সারানো হয়নি
   জ্যোৎস্না ঘরোয়া
         বৃষ্টি নয় তো!
ফাটা টালির ফাঁক দিয়ে নেমে আসা জ্যোৎস্না
      বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে
চৌকি, জামা-কাপড়ের স্তূপ, ঠাণ্ডা মাটির উনুন

সদর দরজা

মনের একটা সদর দরজা আছে। সেই দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকলে সার দিয়ে কত যে ঘর তার ঠিকঠিকানা নেই। তবে মুশকিল হল সে ঘরের চাবিগুলো আমার হাতে নেই। কার হাতে যে আছে তাও জানা নেই। তবে কারোর হাতে নিশ্চয় আছে।
...

ফিরে যাও

ফিরে যাও
পিছনে না তাকালেও হবে

হয়ত লজ্জা পাব
   কুণ্ঠিত হব

অন্তরীপ

আমি এখন বার্ন ওয়ার্ডে বসে আছি। সকাল থেকে বসে আছি। বাচ্চাটা বাজিতে পুড়ে গেছে। সারা গা দগদগে পোড়া দাগ। শুকাচ্ছে। টান লাগছে। বাচ্চাটা এবার মারা যাবে। হয়ত আজকে রাতেই, কিম্বা কাল।
...

সাবধান!!! ( to whom it may concern)


        তারা ঠারেঠোরে আমায় মেসেঞ্জারে দীর্ঘদিন ধরে বলেছে, আমি স্পষ্টাস্পষ্টি বলে রাখলুম। আমায় যারা ব্যক্তিগতভাবে চেনেন তারা জানেন শৌখিন, পেলব ভদ্রতা ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন, যে দেশে একটা শিশুকন্যাও সুরক্ষিত নয়, সে দেশে হেঁচে-কেশে 'সরি' বলার মত সৌজন্যবোধ আমার আসে না।

Noise


কিছু শব্দ শব্দহীনও হয়
তুমি শব্দহীন শব্দ নিয়ে শব্দ তুললে

বললে, প্রতিবাদ

আমি উড়ে যাওয়া বকের দল দেখলাম 
      আকাশকে আকাশ রেখেই

যাবো?

        বৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল কি? না বোধহয়। তবু কালো হয়ে গেল ভরদুপুরে চারদিক। ঝমঝম করে বৃষ্টি নামল। তুমি কি ঘুমালে? ঘুমের মধ্যে বৃষ্টির আওয়াজ যাচ্ছে কানে তোমার? এরকম একটা দুপুর ঘুমিয়ে কাটাবে? অবশ্য একদিক থেকে ভালো। মেঘ দিনের আলো কেড়ে নিলে, স্মৃতির আলো ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর স্মৃতি মানেই তো অকাজের কথা, বলো?

নিজেকে সাজিয়ে


নিজেকে সাজিয়ে
   পরিপাটি করে আনা যেত

আনিনি

ঘাসের শিকড়
   মাটি ছাড়া করে তুলিনি