আবার একটা মৃত্যু
আবার একটা মৃত্যু! না ইতিহাসের দৃষ্টিতে নতুন কিছু না। শুধু ইতিহাসের গতিপথটা বুঝছি না।
বার্টান্ড রাসেলের দুটো উক্তি ভীষণ ভাবে মনে আসছে। ওনার জীবনের একদম শেষের দিকে একটা টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে, ওনাকে আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু বলতে বলা হয়েছিল (ইউটিউবে প্রাপ্য)।
টেবিল ক্লথ
টেবিল ক্লথের উপরে এত নক্সা কেটেছো কেন?
আমায় একটা সাদা টেবিল ক্লথ আনিয়ে দাও
টেবিলের ওপর রাখা
কাগজ, কালি, পেন ছুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলেছো
বহুবার
যেই ওরা আড়াল করেছে নক্সা,
লোককে দেখিও তোমার টেবিল ক্লথ নিজের সারা গায়ে জড়িয়ে
আমার টেবিল থেকে সরিয়ে নাও
তোমার রঙীন সূতোর নক্সা কাটা টেবিল ক্লথ
আমার অসুবিধা হচ্ছে
উদারচেতা
কলকাতায় কিছু বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ, কবি ইত্যাদিরা জমায়েত হয়ে গোমাংস ভক্ষণ করে প্রতিবাদ জানালেন - খাবারে কোনো ফতোয়া মানছি না।
অবশ্যই এঁরা উদারচেতা। তা প্রমাণ করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতার চেয়ে নিরাপদ স্থানও নেই, এও তাঁরা ভালভাবেই জানেন।
এসো
তুমি এসো
তোমার নিজের জায়গায়
নিজের মত বসো
আমি বাইরে থেকে খানিক আসি ঘুরে
বলে আসি ওদের -
তোমায় আমি পেয়েছি অন্তঃপুরে
খেলাঘর
যে মানুষের সব সুখ-দুঃখ কোনো একটি বিশেষ মানুষকে ঘিরে, তার পক্ষে স্বাস্থ্যকরভাবে ভাল থাকা খুব মুশকিল। কারণ কোনো মানুষেরই ক্ষমতা নেই কোনো মানুষের এতটা মনোযোগের ভার বইতে পারে। এমনকি সে চাইলেও। অনেকেই যেমন কতটা খাবার খাওয়া তার স্বাস্থ্যের পক্ষে অনুকূল বুঝতে না পেরে, আকণ্ঠ খেয়ে হাঁসফাঁস করেন। তেমনই বহু মানুষই ঠিক কতটা প্রেম হজম করতে পারেন, তা না বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারপর? সেই হাঁসফাঁস!!!
যাই
সব ছড়ানো থাকবে
আমি চলে যাব
চলে যাব
আমার পায়ের ছাপ
উড়িয়ে নেবে হাওয়া
ধূলো উড়িয়ে চলে যাব
ঝড় থামিয়ে চলে যাব
আছো
ভিতরে আছো
ভিতর হয়ে আছো
মিলিয়ে আছো
ভিতর বাইরে জুড়িয়ে আছো
ঘিরে আছো
চারপাশেতে পরিধি হয়ে
প্রেমের বৃত্তে কেন্দ্র হয়ে আছো
হয় না
মেয়েটার কিছু শাড়ি আলনায় রাখা
এগুলো রোজ লাগে
কিছু শাড়ি আলমারীতে তোলা, গোছানো
ভাঁজের পর ভাঁজ খোলে
আবার ভাঁজ করে রাখে
ভাঁজের রেখায় রেখায় আটকে তার শখ
সর্বজনীন অসর্বজনীনতা
আমাদের ধর্মের সাথে উৎসবের খুব একটা মূলগত যোগাযোগ আছে বলে মনে হয় না। ধর্মের কোনো একটা দিক একে অনুপ্রাণিত করে, এতটাই সত্যি। এরপর বাকিটা আমরা আমাদের মত বানিয়ে নিই।
অসত্য
যে আগুন জ্বালিনি
সে আগুনে পুড়ল ঘরদোর
যে ঝড়কে ডাকিনি
সে ঝড় উড়িয়ে নিল এক উঠান শিউলি
যে কথা বলিনি
সে কথা পাঁচকান হেঁটে এসে বসল বিছানায়
যে স্বপ্ন দেখিনি
সেই স্বপ্ন ঘুমের আকাশে আনল ধূমকেতু
এ সবের পরেও
আমি নিষ্ঠুরের মত পিঁপড়ের গর্তে জল ঢেলেছি
ওদের গোপন দংশনকে উপেক্ষা করে
যে আমি ওদের ডাকিনি
তাদেরই ভাসিয়ে ছেড়েছি
মহারাষ্ট্রের পথে পথে
অষ্টমীর অঞ্জলিতে না
ডাণ্ডিয়ার তালে তালে
মহারাষ্ট্রের পথে পথে
অজন্তা
আবছায়ার কথা
ছায়ার ভিড়ে ভিড়ে সার দিয়ে
মিশে কিছু কথা
ওদের ছায়া পড়ে না
রাতের বেলায় পেঁচার ডাকে
যখন সাদাডানা পরীরা দুঃস্বপ্ন দেখে
হাড় হিম করা ঠাণ্ডা হাওয়া
কবরের গায়ে আঁচড় কাটে
তখন ওই ছায়ারা মুখের ঘোমটা সরিয়ে
উৎসব
উৎসবের পিছনে এককীত্বের একটা খোঁচা থাকে। সব উৎসবের। আমরা যে প্রতিদিন বিচ্ছিন্ন থাকার অভ্যাসগুলো সযত্নে গড়ে তুলি- তার বিরুদ্ধে একটা তো কিছু করা চাই!
অভিমান
অনেক ধূলোবালি এক জায়গায় জড়ো করলে,
নিষ্ঠা নিয়ে।
ভাবলে তার মাথায় হবে
একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ
হল না
ধূলোবালি মাখা সারা গায়ে
নিজের হাতের আঁকিবুঁকি কাটা আস্তরণ
ভেবেছিলে ওগুলো হবে আলপনা,
কল্কা কাটা নকসা
হল না
ভেজা ভেজা মন
ভেজা ভেজা মন
শোন বারণ
ভুলে থাক সব কঠিন পণ
ভেজা ভেজা মন
শোন শাসন
মুছে ফেল চোখ, কাট বাঁধন
তর্পণ
যেদিনই তোমার জন্মদিন থাকত
আমি বলতাম-
ধুর্, মায়ের আবার জন্মদিন হয় নাকি!
যেমন আকাশের কোনো জন্মদিন নেই
মাটির কোনো জন্মদিন নেই
খুশীর কোনো জন্মদিন নেই
তেমন তোমারও কোনো জন্মদিন নেই।
তুমি হাসতে
দুই বিন্দু জল
বিকার ও সম্পর্ক
মন আর শরীর। এ দুটোই অস্তিত্ব। ভাগাভাগি করে নেই, বেশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে।
কিন্তু এই দুটোতেই তো পরিচয় শেষ হয় না আমার। পরিচয় হয় সম্পর্কের সূত্রে। সম্পর্ক মনের সাথে, শরীরের সাথে। শুধু আমার না, আমার চারপাশের সাথেও। শুধু জীবন না, জড়ের সাথেও। বিভিন্ন সম্পর্কের সূত্রে পরতে পরতে গড়ে ওঠে আমার এই পরিচয়।
সেই ভাল
সব হাসি কি প্রসন্নতার?
কত হাসি মতলবেরও
সব খবর কি ঘটেছিল?
কত খবর কল্পনারও
যা কিছু ভাই এদিক ওদিক
বুঝবি যে সব, তার নেই ঠিক
তার চেয়ে ভাই আশমানেতে
ঠ্যাঙ তুলে শো, চিৎপাতেতে
মারুক ধরুক কাড়ুক নাড়ুক
ফুল চন্দন কি পোকাই পড়ুক
তোর কি কাজ সেদিক পানে
মন মজা তোর মাঠের গানে
রামধনু
একবিন্দু জল,
মেঘের বুক থেকে
সাগরের বুকে পড়ল
বলল, আমি এখানে কেন?
সাগর বলল, বুঝবে মেঘ হলে,
এই বলে সে
একরাশ বাস্প উড়িয়ে হাসল
সূর্যের কিরণ পড়ল সে মেঘে
রামধনু দিয়ে আকাশ সাগরকে বাঁধল
যেখানে সেখানে
মাথা যদি শ্রদ্ধায় আপনি নীচু হয়, সে ভাল। তেমন শ্রদ্ধার স্থান সংসারে কদাচিৎ মেলে। কিন্তু যদি সে অভ্যাসের বশে যেখানে সেখানে নীচু হয়ে পড়ে, তবে সে মাথায় জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল।
আবছা
কয়েক পশলা বৃষ্টি
মন খারাপের ঝিরঝিরে কথা
হঠাৎ আসা আবছা আঁধারে
ফেলে আসা দিনের ছেঁড়া পাতা
বিশ্বাস
বিশ্বাস চোখ রাঙিয়ে আনা যায় না, বিশ্বাস বাক চাতুরীতে টেকে না, বিশ্বাস বড় অঙ্কের সংখ্যা জন্ম দেয় না।
বিশ্বাস জন্মায় আরেকটা শুদ্ধ বিশ্বাস থেকে। যেমন প্রাণ থেকে প্রাণ, শিখা থেকে শিখা, তেমন বিশ্বাস থেকে বিশ্বাস।
পর্দা
ঘরের অন্ধকার
মেঘের অন্ধকারের চেয়ে
ছিল বেশি
বন্ধ জানলার পর্দাটা
পাখার হাওয়ায় উড়ে বলছিল -
'জানলাটা খোলো
আমি খোলা হাওয়ায় ভাসি'
ফিরে এলো
দরজা খুললে
রাস্তার আলো
পথ দেখালো
তোমায়
দমকা হাওয়া দিল
তুমি রাস্তায় নামলে
ফিরে তাকালে
আমি নিঃশব্দে বললাম,
যেও না
তুমি
আমার কল্পনা আসে না
তোমায় আমি 'তুমি' বলেই জানি
আমার তুলনা আসে না
তোমায় আমি 'আমার' বলেই মানি
আমার বুকের মধ্যে বোবা অনুভূতি
প্রাণকেন্দ্র তুমি
এতটা জানি
তোমায় হারালে সংসারে আমার
কিছু নেই আর হারাবার
তা প্রতিটা শ্বাসে মানি
বসন পরো মা
মা দূগ্গা, পরেরবার কুমোরটুলিতে আসার সময়, আগে থেকেই বক্ষবন্ধনীটা শ্বশুরবাড়ী থেকে নিয়ে নামিস মা। চিত্রগ্রাহকদের চিত্রের ঠেলায় তোকে যে রুপে দেখতে হচ্ছে... আর তো পারা যায় না মা। আদিরস, ভক্তিরসে মিশে ঘেঁটে একাকার দেখি গো চারদিক। বলি বসন পরাটুকু একটু ধৈর্য ধরলে না গো!
যাবার আগে
যাবার আগে
আলোটা নিভিয়ে
দরজাটা ভেজিয়ে যেও
যেন তুমি আসোনি কখনো
আমি মনকে ভুলিয়ে
পাপোশটা ঝেড়ে আসব
মুছে আসব চটির দাগ
এটা আমার রোজকার অভ্যেস
গণতন্ত্র
গণতন্ত্র আবার কি? গণতন্ত্র মানে হল, গণ নির্বাচিত রাজতন্ত্র। অভিধানে যাই লেখা থাক, এটাই আমরা বুঝি।
ভিক্ষা
সেদিন ভিক্ষা নিতে
হাতে লেগেছিল হাত
পাগল সেদিন থেকে
ভিক্ষা নিতে
মন না দেয় সাথ
খুড়োর কল
আজকাল 'যোগ্যতা' নিয়ে আলোচনা খুব একটা দেখি না। আপনি কি যোগ্য? এ প্রশ্ন আত্ম-সম্মানে লেগে যাচ্ছে সরাসরি।
'ইচ্ছা থাকলে মানুষ কি না পারে?' ... 'চেষ্টা করলেই সব হয়' .... 'ও করতে করতে শিখে যাবে' ..... 'জলে না নামলে কেউই সাঁতার শিখতে পারে না' ..... ইত্যাদি সব যুক্তির দোহাই-এ 'কারে দিলে রাজার পাঠ' হয়ে যাচ্ছে যে চারদিকে! যেমন কয়েকটি ঘটনাঃ
তৈলাক্ত কটাক্ষ
ইতিহাস সাক্ষী - একটি জাতির নিকট আরেকটি জাতির পরাজয়, একটি দেশের অপর দেশের নিকট বশ্যতা স্বীকার। কোনো একটি সংস্কৃতির অপর কোনো সংস্কৃতির নিকট নতি স্বীকার।
কিন্তু অধুনা প্রত্যহ সংবাদপত্র, বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা যে পরাজয় স্বীকারের ইঙ্গিত মিলিতেছে, সে লজ্জা অবহ, অসহনীয়।
অভিসার
সমুদ্রস্নান সেরে সে তীরে বসেছিল। ভেজা কাপড় শুকিয়ে নিচ্ছিল ভাগাভাগি করে, কিছুটা রোদ, কিছুটা হাওয়া। তার চোখের মণিতে যে সাগরের ঢেউ আছাড় খাচ্ছিল, সে সাগরের সাথে তার বুকের সাগরের কোনো মিল নেই, আবার আছেও। তার মনের মধ্যের সমুদ্র বাইরের সমুদ্রের সাথে কথা বলছিল। ভিতরের সমুদ্র কথা করল শুরু।
-তোর এত ঢেউ? কে যোগায়?
-বাতাস, তোর জল এত স্থির কেন?
মুক্তির ভয়
তালাগুলো ভেঙে গেছে
চাবিগুলো গেছে রয়ে
নতুন তালা ফিরছি খুঁজে
বাজারে হন্যে হয়ে
হলই না হয় বাঁ হাত
আমায় দেবে বলে, সে এলো-
অনেকগুলো কাঁটা
এক পাত্র বিষ
আর এক দাবানল আগুন
নিয়ে