তখন স্কুলে পড়ি। এ ক্যাসেটটা ছিল আমার প্রাণ। কতবার যে শুনেছি। এ ক্যাসেটটায় সুচিত্রা মিত্রও আবৃত্তি করেছেন, "কাছে এলো পুজার ছুটি.. রোদ্দুরে লেগেছে চাঁপা ফুলের রঙ...."
সুচিত্রা মিত্র গাইছেন, "আমার ছুটি ফুরিয়ে গেছে কখন অন্যমনে"...... গাইছেন, "আকাশে আজ কোন চরণের আসা যাওয়া".....
শরতের..... পুজোর ছুটি..... বর্ষার... এক নাগাড়ে বৃষ্টির ছুটি... গ্রীষ্ণের দ্বিপ্রহরের অলসতার ছুটি...... সব মিলিয়ে হঠাৎ করে উদাস হয়ে যাওয়ার ছুটি..... সব ভরে ছিল এই ক্যাসেটটা....
সর্বনাশ করেছে আমার.... বড্ড সর্বনাশ..... এ গান, এ কবিতা, 'ছুটি' গল্পের ফটিক..... তার জলের গভীরতা মাপার ডাক... তার মায়ের জন্য কান্না..... সব কেড়েছে.... এমনকি অবচেতনের মনে আনাচে-কানাচেতে সুচিত্রা মিত্রের গলা..... "আমি না জেনে প্রাণ সঁপেছি তোমায়"..... এ গানটা নেই এই ক্যাসেটে... কিন্তু প্রাণে তো আছে......
রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বারবার সেতু গড়ে দেন সুচিত্রা মিত্র..... সুচিত্রা মিত্রই আমার বিশ্বভারতী এক্সপ্রেস..... ধানক্ষেতের মধ্যে নিয়ে, নীলাকাশকে ছুঁতে ছুঁতে বলেন, চল যাই.... চল নিয়ে যাই সেখানে..... যেখানে গেলে সর্বনাশের সবটুকু আশা পূরণ হবে..... সব জ্বালা জুড়াবে.....
সুচিত্রা মিত্র বলেছিলেন, অন্ধকারে বসা হাজার হাজার শ্রোতাদের সঙ্গে যেন নিজেরও চিত্তশুদ্ধির ব্রতে গেয়ে যান তিনি..... সুচিত্রা মিত্র না হলে কার কাছে এত সহজে হাত পাততাম..... বলতাম, একটা গান দাও, মাথায় বুকে মাখি...... "এই মলিনবস্ত্র ছাড়তে হবে..... ছাড়তে হবে আমার এই মলিন অহংকার..... দিনের কাজের ধুলা লাগি, অনেক দাগে হল দাগি.... এমনি তপ্ত হয়ে আছে সহ্য করা ভার... আমার এই মলিন অহংকার....."
শুভ জন্মদিন..... কৃষ্ণকলি... চিত্রাঙ্গদা.... কমলিকা.....