দেওয়াল জুড়ে একের পর এক ছবি। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে নিখুঁত ছবি আঁকার কাজ চলছে। গ্রামের নাম রঘুরাজপুর। পুরী থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে। অনেকেই যান। আবার অনেকেই যান না। পুরী থেকে অটোতে আধঘন্টা।
ছোটো ছোটো ঘরে ঢুকছি, ছবির পর ছবি দেখছি। বিস্মিত হচ্ছি। সে সব ছবির ছবি তুলতে তাঁরা বারণ করলেন। অনেকেই পুরস্কার পাওয়া শিল্পী।
সে সব ছবি তুললাম না। কিন্তু দেওয়াল জুড়ে যে সব ছবি সেই বা কম কী! গ্রামের মধ্যে বাচ্চারা খেলা করছে। দৌড়াদৌড়ি করছে। শিল্পীরা ছবি আঁকছে। বিক্রি করছে। বাড়ির মেয়েরা রান্না করছে, ঘর সামলাচ্ছে, দোকান সামলাচ্ছে। কেউ কেউ ছবিও আঁকছে।
এক বাড়িতে বসে বসে ছবি দেখছি, সেই বাড়ির বউ সদ্য স্নান সেরে, এক বালতি কাচা কাপড় নিয়ে ঘরে ঢুকল, উপায় নেই, এই ঘর দিয়েই তার ছাদে যাওয়ার রাস্তা। চুলটা গামছায় জড়ানো, সারা শরীর লেপে নীল ভিজে শাড়ি। আমি এক ঝলক তাকিয়েই আবার ছবির দিকে তাকালাম। শিল্পী বোঝাচ্ছে রাধার বিরহের ছবি। গীতগোবিন্দ থেকে অনুপ্রাণিত। সেই রাধার চোখে মুখে আমি সদ্য সিক্তবসনা গৃহিনীকে দেখতে পেলাম। নীল শাড়ি গায়ে নীল আকাশের নীচে ছাদে ভেজা কাপড় মেলছে। এখনই শ্রাবণের আকাশ জুড়ে আসবে মেঘদূত। হয় তো সে ভেজা চুলের আবরণ গামছাটা খুলে দেবে। কালো মেঘের সজল ছায়া এসে পড়বে তার কালো চুলে।
"দাদা একবার আমার বাড়ি আসুন।"
সবাই ডাকে। কাকে ছেড়ে কার বাড়ি যাই। দেবতা থেকে মহাপুরুষদের লীলার ছবি একের পর আঁকা। সঙ্গে আছে আদিবাসীদের নিত্য জীবনের ছবি। গাছের ছবি। আরো কত কত ছবি।
আমি ফিরব। অটোতে উঠতে যাব। মনে হল কী যেন করা হল না। একটা ছবি মনে ধরেছে। আবার নেমে গিয়ে কিনে ফেললাম। মা ছেলের ছবি। কমেন্টস বক্সে দিচ্ছি আলাদা করে।
মন কোনোদিন একা থাকে না। মনকে এক করার সাধন সাধকের। মনকে ডোবাবার সাধন সাধকের। পাগলের মত খুঁজে বেড়াচ্ছে কোথায় নিজেকে ডুবিয়ে পাবে শান্তি। তুলির টানে ডুবেছে মন, এখানে এসে দেখলাম। মন এক হলে মন থাকে না, প্রার্থনা হয়ে যায়। গোটা গ্রাম জুড়ে যেন বিন্দু বিন্দু প্রার্থনার শিশির জমে। সাবধানে হাঁটতে হয়। সাবধানে দৃষ্টি দিতে হয়। সাধন মানেই তো সাবধান হতে শেখা। সাধু সাবধান!
যারা যাননি, পারলে ঘুরে আসবেন। শূন্য হাতে ফিরবেন না, কথা দিতে পারি। ছবিগুলো ক্রপ ইত্যাদি করলাম না, যেমন দেখেছি তেমন দিলাম।