Skip to main content
purikando

এট্টু যদি ভালো করে ছবিটা দেখা যায়, দেখা যাবে আমার আর আরাধ্যার মাঝখান দিয়ে ইয়াব্বড় একটা হাতি দেখা যাচ্ছে। এটা নন্দনকানন। সেই যে বেড়াতে গিয়েছিলুম কয়েক মাস আগে, তার ছবি।

হল কি, রোদে পুড়ে পুড়ে, ঘুরে ঘুরে আমি আর আরাধ্যা একটা বসার জায়গা খুঁজছি। কি রোদ কি রোদ! বাঘ, ভাল্লুক, উল্লুক যে-ই দেখছে সেই আমাদের দেখে হেসে কুটিপাটি। বলে, এই ঠা ঠা রোদে আমাদের দেখতে এসেছিস? কেন বাবা, একটা ফোন করে দিলেই আমরা সব্বাই মিলে পুরীর বীচে আসতাম। তারপর খাজা-টাজা খেয়ে, সমুদ্রে দুটো ডুব দিয়ে, তোদের পুরী স্টেশানে গিয়ে ট্রেনে তুলে দিয়ে এক্কেবারে ফিরতাম!

তো ওরা যদি সব্বাই পুরীর বীচে যেত তবে কি কি হতে পার‍ত, আর কি কি হতে পারত না, এইসব আমরা আলোচনা করছি। বাঘগুলো চেয়ারে বসে বসে চা বিস্কুট খাচ্ছে। বীচের উট আর ঘোড়াগুলো হঠাৎ এত বাঘ, ভাল্লুক দেখে লজ্জায় দূর দিয়ে দূর দিয়ে চলে যাচ্ছে। জিরাফগুলো সমুদ্রের ওপারে যারা থাকে তাদের ঘাড় উঁচু করে করে দেখছে আর বর্ণনা দিচ্ছে আর হনুমানগুলো বসে বসে সে সব ছবি আঁকছে। এইসব হচ্ছে আর কি। এর মধ্যে হঠাৎ কি হল, দুটো হাতি ঝপাস করে ফুর্তির চোটে জলে হাইজাম্প দিল। ব্যস সমুদ্রের জল উপচিয়ে রাস্তায়, হোটেলে ঢুকে একাক্কার কাণ্ড। হোটেলের সব সাদা সাদা বিছানা বালিশ ভিজে যা তা। যারা টোটো করে যাচ্ছিল সব স্নান করে গেল। আর যত দোকানের খাজা ভেসে সমুদ্রে। মায় কাকাতুয়াটা উড়ে সিমলিপালের জঙ্গলে চলে গেল।

এর ফলে কি হল? সমুদ্রে এত খাজা মিশল যে সমুদ্রের জল এক্কেবারে মিষ্টি! সার দিয়ে পিঁপডের দল আসতে শুরু করল দেশ বিদেশ থেকে। এ এক দৃশ্য। আর বাকি সব? সব্বাই বলল, আর নন্দনকাননে গিয়ে কি হবে? চলো সবাই জঙ্গলে চলে যাই। এই বলে কেউ কেউ সিমলিপালে, কেউ কেউ সুন্দরবনে আর যারা খুব হাঁটতে দৌড়াতে পারে তারা আমাজনের জঙ্গলে চলে গেল।

এই সব ভেবেটেবে আমরা তো আবার হাঁটছি। দেখতে দেখতে কুমীরদের খাঁচায় এলাম। হঠাৎ দেখি একটা কুমীর আমাকে আর আরাধ্যাকে চোখ টিপে টিপে ডাকছে। আমরা তো হাত ধরাধরি করে নিজের মনে বেশ হাঁটছিলাম, কুমীরের ইশারায় একটু ঘাবড়ে গিয়ে দুজনেই ভয়ে ভয়ে এগোলাম।

কুমীর আমাদের কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে বলল, প্ল্যানটা ভালো... কিন্তু অত মিষ্টি সমুদ্রে থাকতে থাকতে আমাদের যদি ডায়াবেটিস হয়ে যায়?

আমি ভাবছি কি বলব.... এর মধ্যে আরাধ্যা স্মার্টলি বলে দিল, সে নিয়ে ভেবো না.... তারও উপায় আছে.... আমরা অনেক নিমকি এনেছি... ওগুলো ঢেলে দিয়ে যাব। মিষ্টিটা একটু কমবে!

কুমীরটা খুশী হয়ে বলল, খাসা! খাসা!

আমরা এইবার ফিরব। আমি আর আরাধ্যা বাসে বসলাম। বসেই ঘুমিয়ে পড়লাম। কণ্ডাক্টার আমাদের কানে জোরে "কু" করে ডেকে দিল। বলল, এই যে নামো, পুরী তো এলো।

কি বলব, পুরীতে নেমেই দেখি সমুদ্রের ধারে হুলুস্থুল কাণ্ড.... কয়েকটা তিমিমাছ নাকি লাইটহাউসের দিকে বসে খাজা খাচ্ছিল, এমন সময় একটা কাক এসে নাকি তাদের বলে গেছে, তোমাদের আর পাড়ে বসে খাজা খেতে হবে নাকো.... সব খাজা জলে এসে পড়বে.... কত খাও... খেয়েই যাবে.....

তিমিমাছের মধ্যে যে একটু বয়স্ক, যে পাথরে খাজা পিষে পিষে খাচ্ছিল, সে বলল, কে বলল গো.....

তা সেই কাক নাকি বলেছে, হালিশহর থেকে দুজন এসেছে, তারা নন্দনকাননে চিঠি পাঠাবে...... ওরা সব দল বেঁধে আসবে... তারপর...  ইত্যাদি ইত্যাদি

সেই সব খবর নাকি পুলিশের কানে পৌঁছেছে। তারা নাকি খুঁজছে কারা এসেছে হালিশহর থেকে।

এই শুনে আমি আর আরাধ্যা একবার নিজেদের দিকে তাকালাম। তাকিয়েই বুঝতে পেরে গেলাম কি করতে হবে!

এক দৌড়ে হোটেলে গিয়ে, জিনিসপত্র নিয়ে, সোজা স্টেশানে। দুটো সিটও পেয়ে গেলাম। কিন্তু এদিকে খাওয়া তো কিছু হয়নি। আমি আরাধ্যাকে বললাম, তুই বোস, আমি চাউ নিয়ে আসি।

আরাধ্যা বলল, আমিই বা বসে থেকে কি করব, আমিও যাই।

আমরা চাউয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, হঠাৎ একটা ছুঁচো দোকানের নীচ থেকে বেরিয়ে এসে বলল, ওদের চিঠি লেখার কথাটা ভুলো না কিন্তু.... ওরা প্যাকিং শুরু করে দিয়েছে....