ছিন্ন পরিত্যক্ত মাকড়সার জাল। কুয়াশা ঘেরা বসন্তের সকালে সে চোখ মেলে চেয়ে দেখে, তার পাশে ফুটেছে পলাশ। কি তার রূপ, কি তার রঙ! ছিন্ন জাল মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ পলাশের দিকে। সম্মোহিত তার দৃষ্টি। হঠাৎ ভ্রমরের গুঞ্জনে তার ঘোর ভাঙল। ভ্রমর এসেছে পলাশের ঘুম ভাঙাতে।
ছিন্ন জাল নিজের দিকে তাকালো। উদাস হল। সে কেন এমন রিক্ত? যে বুনেছিল তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। তাকে ফেলে গেছে এই পলাশ গাছের ডালে কি শূন্যতায় রেখে!
আজ তার সারা শরীরে ভিজে শিশিরের কণা। যেন সমস্ত অশ্রুজল বুক থেকে চুঁইয়ে চুঁইয়ে বাইরে এসে ভিজিয়েছে তাকে। রিক্ত সিক্ত করে ।
পলাশ পূর্ণযৌবনা। কি অনির্বচনীয় আনন্দ তার প্রকাশে! জাল একটা দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে, স্মিত হেসে বলল,
- ভাই তুমি খুব সুন্দর!
পলাশ হাসল, বলল, তুমিও তো ভাই খুব সুন্দর! জাল বিস্মিত হয়ে বলল, আমি!
পলাশ বলল, না কেন? তোমার সাদা শরীর ভিজেছে শিশিরে, তাতে পড়েছে সূর্য্যের কিরণ, মনে হচ্ছে মুক্তার মালা। আমি ভ্রমরকে এখনি বলছিলাম, দে না ভাই আমায় এই মুক্তার মালাটা গলায় পরিয়ে। তা সে ভয় পেয়ে গেল। বললে, না ও বাঁধবে আমায়।
জাল বললে, ঠিকই বলেছে ভাই। আমি বেঁধেছি অনেক।
পলাশ বললে, বাঁধতে তো চাই আমরা সবাই। তুমি বাঁধো ফাঁদে, আমি বাঁধি রূপে।
জাল শুনতে শুনতে অন্যমনস্ক হল, সত্যি তাকে মুক্তার মালার মত দেখাচ্ছে?!
বেলা বাড়ল। সূর্য্যের তাপে মুক্তামালা হল অদৃশ্য। জাল রইল নীরব। সে জানে, যে সৃষ্টি করে, রিক্ত করে সে-ই।
এমন সময় এল বসন্ত সমীরণ। জালে লাগল দোলা। পলাশের পাঁপড়িতে লাগল ঢেউ।
পলাশ সমীরণকে বলল, দাদা আমার একটা অনুরোধ রাখবে?
সমীরণ বলল, কি?
- আমার একটা পাঁপড়ি দেবে ওই জালের বুকে আটকে? সে পাক রঙ, আর আমি পাই মুক্তার মালা, প্রতিদিন ভোরে।
সমীরণ বলল, তাই হোক।
জালের চিত্ত পূর্ণ হল কৃতজ্ঞতায়। কিছু বলল না। সে জানে তার ভাষা নেই, আছে শিশির সিক্ত অশ্রু আর রিক্ত দেহের লজ্জা। তবু সে হাসল পলাশের দিকে চেয়ে। মনে মনে সমীরণকে বলল, ধন্য করলে আমায়।
(ছবিঃ সমীরণ নন্দী)
(এ লেখা Samiran দার তোলা একটা ছবি দেখে অনুপ্রাণিত। তিনি আমায় তাঁর ছবিটা এই লেখার সাথে দেওয়ার অনুমতি দিয়ে চিরকৃতজ্ঞ করেছেন। ওঁনার অসাধারণ প্রতিভার প্রতি আমার শ্রদ্ধার্ঘ্যস্বরূপ এ লেখাটা ওঁনাকেই নিবেদন করলাম)