Skip to main content

 

প্ল্যাটফর্মে তখনও ট্রেনটা দাঁড়িয়ে। বন্ধু এসেছে বিদায় জানাতে না, ছাড়তে। অসুস্থ মা'কে নিয়ে যাচ্ছি দক্ষিণে। অচেনা জায়গা। অসুস্থতার আশঙ্কাও তো অনেক।

সময় হল। হুইসেল দিল ইঞ্জিন। ধাক্কা দিয়ে নড়ে উঠল ট্রেন। ছেড়ে যাচ্ছে হাওড়া স্টেশান, চেনা ভাষা, চেনা মাটি, চেনা আদবকায়দা, আত্মীয়পরিজন, বন্ধুবান্ধব... একটা ধাক্কায় সরে সরে যেতে শুরু করল সব। দরজায় দাঁড়িয়ে তাকালাম শেষবারের মত ছেলেবেলার বন্ধুর মুখের দিকে। অসহায় দুটো চোখ মেলে নিঃশব্দে বলল, সম্ভব হলে আমিও যেতাম.....মুখ ফিরিয়ে নিল....চোখ সামলাতে...জল আটকাতে...।

দাঁড়িয়ে রইলাম দরজায়। হাওড়া ছাড়লেই সেই মাথার উপর ঢেউ খেলানো ব্রীজ ছেড়ে যাচ্ছে....এসির দরজা ঠেলে ভিতরে এলাম। মা শুয়ে। ঘুমিয়ে পড়েছেন। ক্লান্তিতে। এবার? বাইরে তখন অগ্রহায়ণের দুপুরের রোদ। এসির কাঁচের বাইরে নিরুপায়। এই রোদ, ওইসব ঘরবাড়ি সব একে একে ছেড়ে যাচ্ছে। করমণ্ডলের স্পিড তখন তুঙ্গে। তারা বাইরে থেকেই কাঁচের উপর দৃষ্টি ছুঁয়ে বলছে, সম্ভব হলে যেতাম...যেতাম... যেতাম....।

কয়েক বছর গেল, একদিন আমিও বললাম মা'কে....সম্ভব হলে আমিও যেতাম....

সম্ভব হলে আমিও যেতাম..."যেতে নাহি দেব"র...ফেরতা সুর। ভালো থাকতে গেলে নাকি শুধু বর্তমান নিয়ে বাঁচতে হয়। তাই কী হয়? আমার সবটুকুই যদি আমাতেই, এই ক্ষণেই শেষ হয়ে গেল তবে আমার অতীতে, সামনে যারা এদিকে ওদিকে....তাদের জন্য আমি নেই? মানুষ কেন্দ্রেও বাঁচে, পরিধিতেও বাঁচে....অসহায়ের মত বাঁচে.... নিজেকে টেনে হিঁচড়ে যতটা পারা যায় বাড়িয়ে বাড়িয়েই বাঁচে....পারে না.....তবু চায় তো....আর চায় বলেই এত সাহিত্য, গান, ছবি, সিনেমা....নইলে শুধু বাজারের ফর্দ লিখেই কলমের কালি শেষ হয়ে যেত। মানুষ ফুরিয়েও ফুরায় না বলেই সে না মানুষ!