সময়
বউটার বিষম ব্যামো।
ডাক্তার বললে, কঠিন রোগ
তান্ত্রিক বললে, মা ক্ষেপেছে
জ্যোতিষী বললে, শনি এয়েচে
বন্ধু বললে, হুম বিপদ দেখি
শত্রু বললে, বেশ হয়েছে
স্বামী তাকালো রাতের আকাশে
মন বললে, সময় হয়েছে।
স্বীকারোক্তি
আমার হাঁটতে
শুধু দুটো পা না,
মাটিও লাগে
আমার কাজে
শুধু দুটো হাত না,
সংসারকেও লাগে
আমার শ্বাসে
শুধু ফুসফুস আর নাক না,
বাতাসও লাগে
আমার দেখতে
শুধু দুটো চোখ না,
আলোও লাগে
আমার বাঁচতে,
শুধু হৃৎপিণ্ড আর রক্ত না,
তোমাকেও লাগে
অপরিচিত
কিছু অনুভবের নাম দিও না
ঠিকানা চেয়ো না
জানতে চেয়ো না কি রঙ তার গালে
পড়তে চেয়ো না তার চোখের অবুঝ ভাষা
শুধু বুক পেতে দাও নরম ঘাসের মত
সে ফিরুক হেঁটে চলে
বসুক নির্জনে,
একটা বকুলগাছ লাগিও না হয়
মাঠের একটা কোণে, ওর জন্য।
সামিয়ানা
নিজের খেয়ালের সামিয়ানা টাঙিয়ে
ওই যে ছেলেটা শুয়ে
আমিও ওর সাথেই ছিলাম
ওরই পাশে, ওর হাতেতে হাত রেখে।
ওর কোঁচড়ে এখনো আঁটির ভেঁপু?
এখনো ও মেঘেতে গল্প দেখে?
দিঘীর জলে টুপ করে কি পড়ে -
এখনো সে বুঝি অবাক হয়ে খোঁজে?
আমার ওর আজ বিস্তর ব্যবধান
তবু যেন সামিয়ানাটা ঘিরে
রাতের আকাশ এখনো ভিড় করে
কালের গতির উলটো স্রোতে ফিরে
তোমায় ছোঁব বলে
তোমায় ছোঁব বলে
অনেকটা পথ এলাম।
'উদভ্রান্ত' বললে কেউ
সচকিতে ভাবি,
'তবে কি হারিয়ে গেলাম'?
হয় নি তা -
এখন বুঝি,
আমি ছোঁয়ার বহু জন্ম আগে
তোমার ছোঁয়া ছুঁয়ে গেছে আমায়!
অবসাদ
অবসাদ আছে
যায়, আবার ফিরে আসে।
কারণেই যে আসে - তা না,
অকারণেও আসে।
ওর উদাস দুটো চোখে চোখ রাখি।
জীবনকে দেখার এও তো দৃষ্টিকোণ -
অবসন্নতা।
ভাঙন
চলতে ফিরতে যদি এদিকে তাকাও
তাকিয়ো
আমিও তাকাব
বিনা অনুরোধে
বিনা যন্ত্রণায়
বিনা আশঙ্কায়
বিশ্বাস করব, তুমি ভাল আছো
বিশ্বস্ত থাকব, আমার ব্যাথার কাছে
যে বলেছিল, ওকে আর চেয়ো না
আমি আরেকটা ভাঙন নিতে পারব না।
তাই
ঘন জঙ্গলে না,
তোমায় পেয়েছি
উত্তাল সাগরে
তাই সারা গা
নোনতা আমার
ভাগ্যের জোরে না
তোমায় পেয়েছি
ভাগ্যের সাথে লড়াই করে
তাই সব হাতের রেখা
রক্তাক্ত আমার
কৃতজ্ঞ
জ্যোৎস্নাকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে দেখেছি।
জানি না, কে কার কাছে কৃতজ্ঞ থাকে।
জ্যোৎস্না পৃথিবীর কাছে?
সে বুক পেতেছে বলে
না পৃথিবী জ্যোৎস্নার কাছে?
সে বুকে এসেছে বলে।
আমিও জানি না
কে বেশি কৃতজ্ঞ,
আমার 'আমি' না তোমার 'তুমি'?
যে ভাবে তুমি মিশেছ আমাতে।
শুধু জানি আমি ভয় পাই
কালো মেঘ আর গ্রহণের আড়ালকে।
প্রভু
রথের দিন,
সাজো সাজো রব চারিদিকে।
কেউ গাঁথছে মালা, কেউ বাঁটছে চন্দন,
কেউ গাইছে ভজন, কেউ করছে নর্তন।
মালীর ছোট মেয়ে,
বছর আটেক হবে
বলে, নিজের গাঁথা মালাখানি
প্রভুর গলায় দেবে।
বাড়ির লোক কত বোঝায়
আরে আমরা যে জাত নীচু
বোঝায় যত বাড়ে জেদ
বলে শুনব না তো কিছু!