-শুধু ঠকলাম
-কে ঠকালো
-তার চাইতে জানতে চাও কে ঠকালো না
-বেশ। তাতে কি হয়েছে? খুব ক্ষতি হয়ে গেছে কি?
-তা হয় নি! আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারি না এখন
-কি মনে হয়?
-মনে হয় মুখোশ সব
-ছিঁড়ে ফেললেই হয়!
-একটা আলপটকা কথা বললেই হয়! কে ছিঁড়বে? আর কত ছিঁড়বে?
-তা হলে উপায়?
-উপায় আর কি, মেনে নাও চুপচাপ। যে পিছন থেকে ছুরি মেরে গেল, সেও যখন আসবে ভদ্রবেশে, ভদ্রসমাজে তোমার সামনে, তাকে দেখেও তখন দাঁত ক্যালাও। উফ! কি জ্বালা!
-জ্বালার কি হল?
-তুমি তো আচ্ছা আহাম্মক লোক হে। একটা বিশ্বাসঘাতকের সাথে সৌজন্যতামূলক আচরণ করা চাট্টিখানি কথা নাকি, অ্যাঁ!
-কেন, তুমি তো ঠকাও নি। ঠকিয়েছে তো সে। অস্বস্তি তো তার লাগবার কথা।
-সে যুগ আর নেই চাঁদু! এখন সবাই সবাইকে ব্যবহার করে। সেই ব্যবহার করাতে যে ব্যবহৃত হয় সে আরেকজনকে ব্যবহার করার তাল খোঁজে।ওসব অনুতাপ-টাপ পুরোনো সেন্টু দাদা, কেউ মাথা ঘামায় না।
-তা হলে তোমার রাগের কারণ, ওর আগে তুমি কেন ওকে ঠকালেনা? কেন তুমি ঠকে গেলে আগে, এই তো?
-না, ঠিক তা নয়। আমি ঠকাতে চাই নি কোনোদিন কাউকে। কিন্তু তাই বলেই কি আমায় ঠকিয়ে যেতে হবে সব্বাই কে?
-আমি বুঝি। তাই বললাম, তুমি তো কাউকে ঠকাও নি ভাই। তুমি মরমে মরছ কেন?
-কিন্তু আমি আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না যে!
-এই তো করতে পারছ। তুমি যে কোথাও বিশ্বাস করছ যে-সবাই মিথ্যুক, এও তো বিশ্বাস।
-এ বিশ্বাস? তা হলে সন্দেহ কি?
-যা বিশ্বাস করতে চাই না, তাকেই বিশ্বাস করতে চাওয়াকে সন্দেহ বলে। তাও বিশ্বাসেরই আরেকটা রূপ।
-মাথাটা গুলিয়ে দিলে
-কিছুই গোলাই নি। তুমি আশা-ভরসাগুলো, ধ্যান-ধারণাগুলোকে আবার ধোয়া মোছা করো দিকিনি। দীর্ঘদিন একই রকম থাকতে থাকতে ওগুলোতে মরচে ধরেছে।
-যে ঠকায় তার সাথেও ভাল করে কথা বলতে হবে?
-আরে বাবা, যে ঠকালো, সে তো সেখানেই ইতি টানল ঘটনাটার। তুমি কি করছ? তাকে হিঁচড়ে টেনে নরকে পাঠাবার মতলব আঁটছ রাতদিন মনের মধ্যে। এতে করে, সে কতবার নরকে যাবে জানি না, কিন্তু তুমি দিনে কতবার যে সেদিকে যাচ্ছ সে খেয়াল আছে? নিজের জীবনটাকে শাস্তি দিচ্ছ কেন, অন্যকে শাস্তি দিতে গিয়ে?
-তা ঠিক
-তবে সে মতলব ছাড়ো ভাই। যাঁর হাতে সব বিচারের ভার তাঁকেই দিই না কেন। নিজে নিয়ে কি দরকার নাস্তানাবুদ হওয়ার তো বুঝিনা। বরং আরেকটু এগিয়ে বলি, ভুলে যাও। যা পাল্টানোর নয়, তা নয়ই। বরং এসো আমরা পাল্টে যাই। কাউকে অবিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করেই - যে সেও একটা মানুষ। দোষে-গুণে ভরা জলজ্যান্ত মানুষ। এসব নিয়েই যখন চলতে হবে, তখন এভাবেই চলি, অতীতকে ঝেড়ে ফেলে সামনে দিকে! কাসন্দী বরং কৌটোতেই থাক। আর নেড়ে কাজ নেই। কি বলো?
সৌরভ ভট্টাচার্য
22 February 2015