পুকু'র একটা ছোটো জগন্নাথ আছে। বাবা এনেছিল পুরী থেকে। পুকু দশটা টগর গাঁথলেই তার জগন্নাথের মালা হয়ে যায়।
=======
একদিন পুকু বাবার সঙ্গে শ্রীরামপুর গেছে। বাবা বলল, চল পুকু তোকে মাহেশে'র জগন্নাথ দেখিয়ে আনি।
পুকু বাবার কোলে চড়ে জগন্নাথ দেখল। কী বড় মালা! পুকু জানতই না জগন্নাথ এত্ত বড়! তার চোখ ভরে এলো জলে। তবে কী তাকে বাচ্চা পেয়ে সবাই ঠকালো? তার জগন্নাথ কী তবে খেলনা? মিছিমিছি?
=======
পুকু মন খারাপ নিয়ে বাড়ি এলো। সবাই জিজ্ঞাসা করল, কী হল পুকু? জ্বর? পেটব্যথা?
পুকু উত্তর দেয় না। তার ছোটো জগন্নাথের দিকে তাকায় আর অভিমানে জল ভরে আসে চোখে।
=======
হঠাৎ বাইরে এলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। পুকু বিছানায় শুয়ে শুয়ে শুনল বৃষ্টির আওয়াজ। তাদের টিনের চালে, পাশের আমগাছ, পেয়ারাগাছের পাতায় পড়ছে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। বাইরে রাখা সাইকেল, গামলা, টবে… সবেতে পড়ছে বৃষ্টি, আর কতরকম আওয়াজ!
পুকু শুনতে শুনতে গেল ঘুমিয়ে।
=======
ঘুম যখন ভাঙল, পুকু খোলা জানলার দিকে তাকিয়ে দেখল কী দারুণ চাঁদের আলো বাইরে। পুকু উঠল। বাইরে এলো। উঠানে এসে দেখে কী তাজ্জব ব্যাপার, উঠানে, গামলায়, সাইকেলের সিটের খাঁজে, টবে, ভাঙা চেয়ারের হাতলে, তুলসীমঞ্চের গোড়ায়…. যেখানে জল জমেছে সেখানেই চাঁদের ছবি। টলটল করছে। পুকু এক দৌড়ে বাড়ির পিছনে পুকুরধারে গেল। কী বড় চাঁদের ছবি পুকুরের জলে। শুধু কী তাই! কচুপাতায়, পুকুরের সিঁড়ির খাঁজে জমা জলে, সব জায়গায় চাঁদের ছবি। পুকু দেখল চাঁদের ছবিতে যেন কার হাসির মিল। আরে! এ তো তার ঠাকুরের হাসি। জগন্নাথ ঠাকুরের হাসি।
পুকু হাততালি দিয়ে নেচে উঠল। তার মানে তো তার জগন্নাথও খেলনা নয়। আসল তো! হোক ছোটো। তবু আসল।
=======
পুকু পুকুরে নেমে এক আঁজলা জল নিয়ে ধীর পায়ে বাড়ির দিকে এগোতে লাগল। তার আঁজলার মধ্যে টলমল করছে জল। আর সে জলে চাঁদের হাসিমুখ। জগন্নাথ ঠাকুরের হাসি।
মা জিজ্ঞাসা করল, হাতে কী রে পুকু তোর?
পুকু ফিক্ করে হেসে বলল, জগন্নাথ ঠাকুরের হাসি গো মা….