Skip to main content

তুমি থাকবে না

মাটিতে সুর আছে। জলেতে ছন্দ আছে। আকাশে বিশ্বাস আছে। বাতাসে ইচ্ছা আছে। আগুনে আনন্দ আছে।
একদা এক কালে সামগান ছিল। একদা এক কালে মৈত্রী-করুণা-নির্বাণ ছিল। একদা এক কালে আজান ছিল। একদা কালে ওয়াহে গুরু ছিল।
একদিন মাটি ভেঙেছিল। একদিন নদী ভেঙেছিল। একদিন হৃদয় ভেঙেছিল। একদিন বিশ্বাস ভেঙেছিল। একদিন মানুষ ভেঙেছিল।
...

ডালপালা

ডালপালা সরিয়ে একটা ছোটো পাখি উঁকি দিয়ে গেল। কি পাখি বলতে পারব না। ডালপালা সরিয়ে আবার বেরোবে কিনা অপেক্ষায় আছি। ডালপালা সরিয়ে খুঁজতে যেতে ভয়, যদি উড়ে যায়!
দিন গড়িয়ে বিকাল হল। সন্ধ্যা হব হব। সন্ধ্যার আকাশে ঘরে ফেরা পাখির ঢল, তা দেখতে দেখতে বিভোর হলাম। পাখির সংখ্যা গুনতে গিয়ে আঙুলের কড় হারালাম। গতিপথ বুঝতে দিক হারালাম। হঠাৎ মনে এলো ডালপালার আড়ালের পাখিটার কথা। পাখিটা কি উড়ে গেছে? ওই ঘরে ফেরা পাখিদের মধ্যে কি ছিল ও? ডালপালা সরিয়ে দেখতে ভয়, অপেক্ষায় উদ্বিগ্নতা এখন।
...

রসবোধ

শিল্পী বসলেন। তানপুরা বাঁধা হল। তিনি গান শুরুর আগে বললেন, আমি কিছু বলতে চাই শুরুতেই। সবাই উৎসুক, গানের আগে শিল্পী কথা বলবেন? এতো দারুন, জনসংযোগ, এরকম বিদেশেই দেখা যায়, কি বলেন? আশেপাশের সব লোক বলল, বটেই তো, বটেই তো।

নিরাশ্রয় চোখদুটো

নিরাশ্রয় চোখদুটো তুলে বললেন, ও মারা যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে গিচি, ছেলেটা বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে, শুনেছেন হয়ত।
নিরাশ্রয় নিঃসঙ্গ চোখ দুটো তুলে বাড়িটা দেখালেন, বাড়ির কাজটা সম্পূর্ণ করচি। ওর ইচ্ছা ছিল দোতলার। সাইকেলে ঝোলানো ব্যাগে তরকারি। বললাম, এই দুপুরে বাজার?
শুধু এই রবিবারটাই করি। ওতেই হপ্তা চলে যায়। ছেলেটা আসলে অবিশ্যি...একলা ফেলে চলে গেল..কাল ঢালাই... শরীর ভেঙেছে। চশমাটা নাকের গোড়ায়, মোছা হয় না। প্যান্টটা কোমর থেকে নীচে নেমে যাচ্ছে বারবার। তুলে নেওয়া অভ্যাস হয়ে গেছে।
...

কবিতা নয়

ধর্ম সংবেদনশীল। ধর্ষণ নয়। ওটা নিয়ে কথা চলুক। আগেরটা নয়। অন্ধ বিশ্বাস? না তো, কিছু সহজ সরল মানুষের বিশ্বাস। যা তাদের নাকি শান্ত রেখেছে। নাকি তাদের আত্মমগ্ন রেখেছে। নাকি তাদের আশায় রেখেছে। দুষ্টুমি তো করে দুষ্টু লোকেরা।
ঈশ্বর কথাটা সংবেনশীল। ধর্ষণ নয়। ওটা নিয়ে কথা চলুক। অন্ধ বিশ্বাস? না তো, বহু মানুষের জীবিকা শুধু না, চিন্তাশূন্য, প্রশ্নশূন্য, ফার্নেস মস্তিষ্কের চিরাগ।
...

অভিসার

        অবশেষে বর্ষা এলো। আজ থেকে যাও। আমায় একবার আজ ছাদে নিয়ে যাও। সিঁড়ির ঘরের দরজার সামনে আমার হুইলচেয়ারটা রেখো। হাত বাড়িয়ে সিঁড়ির ঘরের কার্ণিশ চোঁয়ানো জল এসে পড়ুক আমার হাতের তালুতে। হাতের তালুর ভাঁজে ভাঁজে বৃষ্টির জলের নদী।

        আমি জানি আকাশটায় আজ কাল পরশু মেঘ থাকবে। আমি জানি সারা সপ্তাহ মেঘ থাকবে। আমি জানি সারা মাস মেঘ থাকবে, যতদিন না কাশ এসে বলে, এবার তোমার ছুটি। মিনতি বৌদি আবার চীৎকার শুরু করবে কাল থেকে, “কাচা জামাকাপড়গুলো কোথায় মেলব? আমার মাথায়?... কি গন্ধ হয়েছে... একটাও শুকালো না... কবে যে সুয্‌যের মুখ দেখব?”... সেই মিনতি বৌদিই দুপুরবেলা “শাঙনগগনে ঘোর ঘনঘটা” গাইবে... ছায়া ঘনাইছে বনে বনে... গাইতে গাইতে কাঁদবে... তুমি রাতে কান পাতলে শুনবে আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার..... আসলে সব মানুষই তো অভিসারে যেতে চায়... ক'জন যেতে পারে বলো?... আমার সন্দেহ হয় রাধাও কি পেরেছিল... একটা মেয়ে এত ভালোবাসা সারাজীবন কোনো পুরুষের পায়?... রাধা পেয়েছিল?... ওই মেঘ সেই পুরুষ... রাধা কি তবে ওই সবুজ মাঠ?... এই কি অভিসার!
...

গভীরতা

        তুমি গভীরতা ছুঁতে চাও? নিতে পারবে অতটা শ্বাস? 
        যে বাতাসে ভেসে থাকতে চাও, সে বাতাসে ঝড়ও ওঠে। সে ঝড়ের তালে দিতে পারবে তাল? পাগল নারকেল গাছটার মত?
        তুমি গভীরতা ছুঁতে চাও? কতটা জল জমেছে বুকে? কাঁদার শেষে তাকাতে শেখে চোখ। টইটুম্বুর কান্না বাঁধ দিলে, জীবন হ্রদ স্থির। কি ভেবেছিলে কেঁদেই জীবন পার হবে?

প্রতিশ্রুতি

        ব্যস্ত সন্ধ্যে। গুমোট শহর। পাদানিতে দাঁড়ানো অধৈর্য অস্থির উদ্বিগ্ন মানুষের সারি। যেন সব কিছু হারিয়ে যাবে এখনই ঝাঁপ না দিলে। ঝাঁপ দিলেও পাওয়া যাবে সে নিশ্চিন্ততাও নেই। বিভ্রান্তিতে লক্ষ্যহীন দৌড়াদৌড়ি।
        ছেলেটার গায়ে নীল টিশার্ট তার সাথে চলতি কালারের বাজার উপচানো সস্তা জিন্স। সদ্য যৌবনে পা। খেটে খাওয়া শরীরের সন্ধ্যের অবসরের সস্তা শৌখিন বিলাস।         সিগারেটের দোকানের সামনে বেঞ্চে বসে। পা দোলাচ্ছে। ঠোঁটে দুলছে জ্বলন্ত সিগারেট, একটার পর একটা। ফোন কানের কাছে উঠছে বারবার, "একবার এসো, প্লিজ..."। জীবনবাজি ডাক।
...

দমকা হাওয়া

সেই দমকা হাওয়াটা কই? সেই দমকা হাওয়াকে চাই। তার নিজের কিছু নেই - না ভার, না দায়, না শোক, না ক্ষোভ। সে আসবে, বিনা আমন্ত্রণেই আসবে। সিংহদুয়ার খোলা না পেলে ঢুকবে খিড়কীর দরজা দিয়ে। ঘরের গুমোট হাওয়াকে বলবে, চল। দরজা জানলাগুলো কাঁপতে কাঁপতে খুলে যাবে, খুলতে না চাইলে ভেঙে যাবে। আমি হঠাৎ দেখব ভাঙা জানলার বাইরে সমুদ্র। যার গর্জন আমি আগে শুনেছি - ঘুমে। ভাঙা পাল্লাটা থরথর করে কাঁপছে ভয়ে, আত্মগ্লানিতে। আমার চোখ-মুখ নোনতা হাওয়ায় চটচটে হয়ে উঠছে। আমি দরজাটায় হাত দিতেই দরজাটা বালির মত ঝুরঝুর করে পড়ে গেল, যেন কত বাধ্য সে আজ আমার। 
...

গভীর রাত

গভীর রাত। বাউল নদীর তীরে একা বসে, একতারার তারে, তর্জনীর আঘাতে ফুলকির মত সুর সৃষ্টি করছিল। 
    এক আকাশ তারা কখনো প্রজাপতির মতো কখনো জোনাকির মতো উড়ে উড়ে আকাশে অক্ষর সৃষ্টি করছিল।
...
Subscribe to গদ্য কবিতা