সন্ধ্যের অন্ধকারে টিমটিমে প্রদীপের আলোর সামনে এসে সে দাঁড়ালো। জোড়হাতে বলল, বাইরে ভীষণ বৃষ্টি, ঝড়, বিদ্যুৎ। আসব ভিতরে?
দরজার ভিতর থেকে উত্তর এলো, প্রদীপ নিভু নিভু। খানিক বাদেই যাবে নিভে। ঘরের ভিতর তখন মৃত্যুর চেয়েও ঘন অন্ধকার। আসবে?
বাইরে থেকে সে বলল, জানলা বেয়ে যে আলোটুকু এসে পড়েছে, সেই আলোটুকুই চেনালো পথ। যদি অন্ধকারে হয় শেষ সে পথ, হবে। তুমি দরজা খোলো।
কোনো উত্তর নেই। বাইরে বেড়েছে ঝড়ের বেগ। প্রদীপের আলো গেছে নিভে। সে আবার বলল, না-ই খোলো দরজা, সাড়াও কি দেবে না? এ তো অন্ধকারের চাইতেও ভয়ংকর!
কোনো উত্তর নেই। প্রবল বৃষ্টি বাইরে। বৃষ্টির জলে ভিজে স্নান করে যাচ্ছে সে। বিদ্যুৎ চমকে উঠে অন্ধকারের বুকে জাগাচ্ছে আরো গভীর অন্ধকার। তার মনে হল, এই তার জীবনের শেষ রাত। ঠিক করল, তবে তাই হোক। নামি পথে। যা হবার হোক পথেই।
সে ঘুরে দাঁড়াতেই দমকা বাতাসে দরজা গেল খুলে। সে দাঁড়িয়ে পড়ল, হতবাক। তার মনে হল, যে বাতাসে নিভালো প্রদীপের আলো, সে বাতাসই দিল খুলে বন্ধ দরজা!
সে হাঁটু মুড়ে বসল মাটিতে। মাথা ঠেকালো মাটিতে। বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে যে মাটি। বলল, আমিই ছিলাম ভুল, ভেবেছিলাম এ ঝড় তোমার। বুঝিনি, তুমিই এ ঝড়! আমার ভয় নেই আর। এ অন্ধকারও তুমি।
ঘরের ভিতরে গিয়ে দাঁড়ালো সে। নেভা প্রদীপকে খুঁজল বিদ্যুতের ঝলকানিতে। এই তো, এখনও উষ্ণ গা।
কেউ বলল, প্রদীপ জ্বালো। হয় তো কেউ খুঁজছে পথ।
সে বলল, নিভবে যে আবার হাওয়ায়।
কেউ বলল, তাই তো জ্বালবে আবার!