- তা দেখুন, আমাদের মধ্যে একটা কসমোপলিটান, সেক্যুলার ব্যপার আছে।
- মানে কি?
- কসমোপলিটান মানে আমরা নিজেদের বিশ্বনাগরিক মনে করি। পৃথিবীর যেখানে যা কিছু ঘটে আমরা প্রতিবাদ করি। সে প্যালেস্টাইন হোক, ভিয়েতনাম হোক, আমরা সারাটা বিশ্ব আমাদের দেশ মনে করি।
- আর সেক্যুলার মানে?
- মানে আরকি আমাদের কোনো রিলিজিয়াস সেন্টিমেন্ট নেই।
- আচ্ছা, ইদানীং আপনাদের দিকে কেউ কেউ আঙুল তুলছেন আপনারা নাকি এই প্রতিবেশী দেশের ঘটনায় সে অর্থে ঠিক প্রতিবাদ করেননি…. মানে…
- বুঝেছি…. আরে দেখুন... নিজের দেশের মাইনরিটি নিয়ে কথা বললে সেটা একটা সেক্যুলার এসেন্স বহন করে, বিশেষ করে মেজরিটির দলে থেকে... আর অন্য দেশের মাইনরিটি নিয়ে কথা বললে, লোকে কি বলবে, দেখো নিজের ধর্মের সেন্টিমেন্ট বেশ টনটনে.. যেই নিজের ধর্মে আঘাত লেগেছে…. অমনি চিল্লাছে…. ইমেজটার কি হবে তখন আমার?
- মানে, কিন্তু সেটাও তো মানবিক অত্যাচার…
- হতে পারে…. কিন্তু দেখুন এইসব দু'দিনে আপনিই থেমে যায়…. তখন লোকে মনে রাখে কি? ব্যতিক্রমী ঘটনাগুলো মনে রাখে... মানে আপনি যখন এক ধর্মের মানুষ হয়ে অন্য ধর্মের জন্য দাঁড়ালেন... এটা একটা উদারতার কথা হল কিনা?
- আরেকটু যদি এক্সপ্লেন করেন….
- মানে ধরুন, আপনার বাড়িতে আগুন লাগল…. আপনি বাঁচাবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়লেন... এটা এক। আর ধরুন পাশের বাড়ি আগুন লাগল... আপনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন.... কোনটায় বাহবা বেশি?…
- অবশ্যই অন্যের বাড়ির…
- কোনটায় ফুটেজ বেশি?….
- অবশ্যই অন্যের বাড়িরটায়..
- কিন্তু এটা তো দ্বিচারিতা…
- বোকা, এই জন্য বাংলা ভাষাটা কোনঠাসা ভাষা…. এটা হল ডিপ্লোম্যাসি... এতেই একটা ইমেজ থাকে... আমায় বলো কোনটা বেশিদিন থাকে... মানুষটা, না ইমেজটা?…
- মানে?
- আরে তুমি তো বড় বোকা হে…. রবীন্দ্রনাথ আছেন, না রবীন্দ্রনাথের ইমেজ আছে এখন?
- ওহ বুঝেছি... আপনার পায়ের ধুলো নিই দাদা?
- নিতে পারো, তবে ওসব সেন্টিমেন্ট আমাদের নেই সেটা জেনেই নিয়ো কিন্তু… মানে আমাদের মনের তুষ্টিকে আমরা বাইরের উচ্চ উদার মার্গের চর্চায় ঢেকে রাখি বুঝলে…
- কি আর বলি স্যার... তবে আপনার দিক থেকে কোনো কবিতা বা লাইন…
- সবাইকে বলো শান্তিতে থাকতে... এসব উস্কানিতে পা না দিতে... আমরা বাঙালি... আমাদের সঙ্গে ইউরোপ, আমেরিকার তুলনা... মানে অস্কার, গ্র্যামি, নোবেল এইসবের দিকে তাকিয়ে আমাদের দিন কাটে... আমাদের খাটতে হয় ওসবের জন্য…. আমাদের লক্ষ্য কত উঁচুতে সে খেয়াল আছে?…. এই উঁচু বলতে মনে পড়ল, এই যে আখাতারি সাহেব বললেন না, ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রির উপরের লোকেদের আইনের লোকেরা হিংসা করে হেনস্থা করে... শুনেছ তো?
- শুনেছি
- তা দেখো, ওনার কাছে প্রমাণ আছে বলেই না উনি বলেছেন... আসলে নামী লোকেদের নামিয়ে লোকে আনন্দ পায়…
- মানে আপনি বলছে আশারাম, রামরহিম... এরাও সব এই ঈর্ষার শিকার…
- তুমি একটু গবেট... তোমাদের আসলে কোনো শিক্ষা হয়নি... মিশেল, ফুকো, সার্ত্রে এসব না পড়লে আমাদের পালস বুঝবে না... যাও, আর সময় নষ্ট কোরো না আমার… আর লাইন কি লিখবে... সবাইকে বলো যে ভীষণ শান্ত থাকতে…
- আর কিছু না?
- আরো কিছু চাও?? আস্পর্ধা কি গো? এই এতগুলো কথা বললাম... এরপরেও? এমনিতেই আমার অষ্টমীর অঞ্জলির মন্ত্র মাইকে শুনে শুনে মাথার লেফট হেমিস্ফিয়ারটা টাটাচ্ছে…. যা উজবুকের দল...