সংকীর্ণ হৃদয়ের ধারালো যুক্তি ভীষণ ভয়ংকর। ফুলকে সে গাছের জননাঙ্গের বেশি ভাবতে পারে না। তার সে কথায় যুক্তি আছে, কিন্তু কি যে নেই, সে না তো বোঝে, না তো তাকে বোঝানো যায়! সেখানে তর্ক চলে না, দূরে সরে দাঁড়ানোই স্বাস্থ্যকর।
রুচি নিয়ে তর্ক চলে না, রবি ঠাকুরের লেখায় পড়েছি। সমস্যা হচ্ছে, যে গরুর দুধের বাইরে আর কোনো প্রয়োজন আছে বলে মানে না, তার কাছে গোটা গরুটাই বাড়তি, শুধু গরুর দুধ দোয়ানোর অঙ্গটুকু ছাড়া। তাকে বোঝানো যায়না, ভাই সবটা নিয়েই সবটা। একদেশি করে কোনো জিনিস দেখা সত্য নয়।
মত আর সত্যের মধ্যে পার্থক্য আছে। রামকৃষ্ণদেব বলছেন, মত কিছু ঈশ্বর নয়। মানে মত মানে মতই, সত্য নয়।
এখন এই মতামত কি শুধু তথ্যনির্ভর হয়? দুর্ভাগ্যবশত নয়। মত তথ্যের সঙ্গে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, রুচি, অনুভবের ক্ষমতা মিলিয়ে হয়। রামকৃষ্ণদেব বলছেন, তামসিক ভক্ত দেখে, মা পাঁঠা ধরে খায়। সাত্ত্বিক ভক্ত দেখে মা জগদীশ্বরী।
দুটো মতামতই খাঁটি। কিন্তু রুচি অনুযায়ী সত্য। আমায় একজন আমির খাঁ এর রাগ মারোয়ার তান শুনে বলেছিল, কে গার্গেল করছে? সেও সত্য। তার অনুভবে। তার মনের বিকাশ অনুযায়ী। রুচি অনুযায়ী।
মুশকিল হল মতকে সত্য বলে ধরে নেওয়া। একজন ভিখারিকে টাকা দেয় যখন, কেউ বলে, দেখাচ্ছে। কেউ বলে, শালার অনেক টাকা, পুণ্য কামাচ্ছে। কেউ বলে, দয়ায় দিচ্ছে। এইভাবে মানুষ আরেকজন মানুষের বিচার করে বসে।
যুক্তি দিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিচার সার্থক হয়। কিন্তু একজন মানুষকে যথাযথ বুঝতে গেলে দরদ লাগে। তাকে তার চারপাশ, পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে বোঝা লাগে। নইলে রামকৃষ্ণদেবের ভাষায় "এক গোয়াল ঘোড়া" হয়ে যায়। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, পাবলো এস্কোবারের মত দুর্ধর্ষ ক্রিমিনালকেও সে দেশে দরদ দিয়ে বোঝা আর দেখানোর অভ্যাস তৈরি হয়েছে। আর এ পোড়া দেশে, স্তুতি আর নিন্দার বাইরে দরদ দিয়ে বোঝা আর দেখার মত চর্চা তৈরি হয়নি। আসলে রুচিটাই ভীষণ একমেরুর। অভ্যাস হয়ে গেছে। ভাঙা শক্ত। তাই মহতের চরিত্রহনন এখন ব্যবসা।