Skip to main content

একজন প্রাক্তন ছাত্রের মা ফোন করলেন। বললেন, "জানেন স্যার, ওর (সে ১৭+) হাতে তো মোবাইল দিই না, কিন্তু রোজ রাত হলেই সে বলবে, মা মোবাইলটা দাও, রামায়ণ দেখব। আচ্ছা বলুন তো, রোজ রোজ রাতে রামায়ণ দেখার কী আছে? আমি বলি আয় না বাবু আমার আর বাবার মাঝখানে শুবি, ছোটোবেলায় যেমন শুতিস, কী ভালো লাগবে, কী যে তুই আলাদা ঘরে শুস পড়ার জন্য.... ভালো লাগে বলুন স্যার?"

এই "বাবু" দের নিয়ে আমার ভীষণ ভয়। এই "বাবু"রা একদিন বিয়ে করে। তারপর সেই অন্য বাড়ির মেয়েটা ধীরে ধীরে তার বরের "বাবু" রূপটা দেখতে পায়। ছেলে জানে মা বাবার টাকা, সম্পত্তি, জমিজায়গা, উপরি নানাবিধ সুবিধা, প্রশ্রয়ের জন্য এই "বাবু" মডেলে থেকে যাওয়াটা ভীষণ ভালো স্কিম। বউ পিষে যায়। "বাবু" উতরে যায়। বউ দেওয়ালে মাথা ঠোকে। "বাবু" মায়ের কাঁধে মাথা রেখে আদর খায়। পাড়ায় সবাই জানে "ভালো ছেলেটা" বউয়ের হাজার "প্ররোচনা" তেও মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি। মেয়েটার যত "দোষ" মা ছেলে মেনে নিয়েছে। ইত্যাদি ইত্যাদি।

সীতার জন্য লঙ্কাকাণ্ড করা যায়, দ্রৌপদীর জন্য কুরুক্ষেত্র করা যায়, কিন্তু উচিৎ সময়ে উচিৎ কথাটা বলা যায় না - এ আমাদের মহাকাব্য থেকেই জেনেছি আমরা। ওতে স্ত্রৈণ, কামুক, ইন্দ্রিয়পরবশ, কাপুরুষ, সংস্কারহীন, দাম্ভিক ইত্যাদি ইত্যাদি নানা তকমা জুটে যায়।

"বাবু" রাতে "রামায়ণ" দেখে, একা। দিনে কার্টুন দেখে সবার সামনে। "জানেন এই বয়সেও ও কার্টুন দেখবে, একটুও বড় হয়নি".....সঙ্গে কান এঁটো করা ন্যাকা একটা হাসি। ব্যস, একদম আজন্ম শুকদেবের জিন বহন করা বাবুরা সমাজের ছাড়পত্র পেয়ে যায়। ভালো ছেলে হওয়ার।

সমাজে বহু মানুষ আছে, মিথ্যা বলে না, চুরি করে না, কারোর কোনো ক্ষতি করে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তারা কেউ সুখী নয়। শান্তিতেও নেই। মনের মধ্যে ঈর্ষা থেকে শুরু করে নানা বিকারের আস্তানা। সে নিজেকে বোঝায় আমি তো সৎ, ভালো তাও কেন আমার মনে শান্তি নেই? এই বাবুরাই একদিন বয়স্ক হয় আর এমন ধারার মানুষ হয়। তাদের সব চাইতে বড় দোষ যে তাদের দুর্বলতা, সেটাকে স্পষ্ট জানতেই পারে না কোনোদিন। সব দুর্বলতাকে সে মায়ের ন্যারেটিভে ভালোত্ব হিসাবে দেখে এসেছে। বা অন্যভাবে বলতে গেলে দেখার দৃষ্টিটাই শেষ হয়ে গেছে।