Skip to main content

হাতের কাছেই...

বুদ্ধিমান মানুষ মিথ্যুক হয় না, কপট হয়। মিথ্যা সত্যকে অস্বীকার করে। কপটতা সত্যকে গ্রাস করে। দ্বিতীয়টা তাই বেশি ভয়ংকর। অপ্রিয় তেতো সত্যকে প্রিয় মধুর কপটতা ঢেকে রাখতে দেখেছি। সে মধুরকে বিশ্বাস করতেও ইচ্ছা করেছে। ঠকছি জেনেও ঠকেছি।
একজনকে গোলাপ আনতে বললে। সে বাগানে গেলই না, এসে বলল বাগানে গোলাপ নেই। সে একবারই আঘাত করবে, যখন জানবে সে মিথ্যা বলেছিল।
...

স্বেদ

১২৫টা সিঁড়ি ভেঙে ওঠার পর, মন্দিরে শিবের মাথায় জল দেওয়ার পর, যখন ভক্তি, শান্তি না এসে শুধু তেষ্টা আর খিদে চাগাড় দিল, সন্ধ্যা বুঝল, এই চুয়াত্তরটা বছর ভগবান তাকে শুধু ঠকিয়েইছে। সে-ও ঠকিয়েছে বিস্তর। ভগবান আর তার মধ্যে সারা জীবন শুধু লুকোচুরি খেলাই হয়েছে। স্বামীকে ঠকিয়েছে, ছেলে-মেয়েদের ঠকিয়েছে, আত্মীয়-স্বজনকে ঠকিয়েছে। আর নিজেকে তো ঠকিয়েছেই। তারাও ঠকিয়েছে তাকে। 
    বিয়ের আগে আর পরে নিজেকে যখন দেখে, নিজেকে মনে হয় হরিদ্বারের গঙ্গা, আর কলকাতার গঙ্গা। না, শুচিতা-অশুচিতার ধার ধারেনি সন্ধ্যা কোনোদিন। তার শরীরে প্রথম খাবলা বসিয়েছিল তার ঠাকুর্দার ভাই, জগন্নাথ ভট্টাচার্য। সে-ই যখন পুজো-আচ্চাকে জীবিকা করে আশি বছর জীবন কাটিয়ে সজ্ঞানে মারা গেল, সন্ধ্যার বিশ্বাস হয়েছিল যে শুচি-অশুচি মানুষের। সে শুধু মেয়েমানুষের মনে ভগবানের ভয়ের শিকল পরিয়ে পোষ্য বানাবার কল বই আর কিছু নয়।
...

আশ্রয়

তুমি আমার ভাগ্য
ভবিতব্য তো নও 

চিরকালের আশ্রয় 
    আকাশ না-ই বা হলে
ক্ষণকালের বর্ষার মেঘের 
   ছায়াটুকু তো হও

[ছবিঃ Aniket Ghosh]

নিষ্ঠুর

মেঘলা আকাশ

তবু
 "নির্ঘাত বৃষ্টি হবে" 
       শতাব্দী প্রাচীন
           বটবৃক্ষ আর বলে না

বোকা উইয়ের ঢিবি

মানিয়ে তো নিতেই হবে। চ্যালেঞ্জটা হল নিজস্বতাকে হারাতে দেওয়া যাবে না। সেকি সম্ভব? নিজেকে না বদলে বদলকে মেনে নেওয়া যায়?
    দর্জির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এই সব ভাবছিল জনাই। তার ছিটটা আস্ত জামা হয়ে গেল। অথচ তার জীবনটা… নাহ্, ভালো দর্জি সে হতে পারল না। এখন আশা ছেলেটাকে নিয়ে। স্বপ্ন। ছেলেটা অঙ্ক করতে এসেছে। ক্লাস নাইনে পড়ে। রাত দশটায় ছাড়বেন স্যার। অর্ধেক মাইনে নেন। 
    নিজের টোটোটার দিকে তাকালো। মানুষ কত কি বানায়! লোহা পিটে, টিন পিটে, কাপড় কেটে। সামনের বড় বড় ফ্ল্যাটগুলোর দিকে তাকালো। সিমেন্ট, ইট দিয়েই তো বানিয়েছে। মানুষের মাথায় কত কি ভাবনা! অথচ জীবনটা যেমন চায় বানাতে পারে না। কেন? 
...

রক্তমণি

মোবাইলটা অফ্ করে চার্জে বসিয়ে, এসিটা অফ্ করে ঝুল বারান্দায় এসে বসল মল্লিকা। আঁচলে মুখটা মুছে বলল, উফ্...। 
    রাত এগারোটা। সারাদিন বৃষ্টি। কেটেছে খানিক আগে। গোটা আকাশ যেন মুছে গেছে কেউ ন্যাতা দিয়ে, যত্ন করে। সবক'টা তারা বসার ঘরের শৌখিন সাজানো জিনিসের মত জ্বলজ্বল করছে। 
    তারা দেখলেই এই তিয়াত্তর বছর বয়সটা একটা বাইরের ঘটনা মনে হয়। সমস্ত ছেলেবেলা যেন বুক আঁকড়ে বসে আছে। লুকিয়ে। তারারা ওদের বাসা জানে। ঠিক বার করে আনে। স্কুলের ব্যাগ, ভাত মেখে খাওয়ানোর সময় মায়ের চুড়ির আওয়াজ, বাড়ির সামনের পুকুর, রাস্তা... সব মনে পড়ে যায়। 
...

আনন্দময়ী

তুমি কি আনন্দময়ী? আমার রেজাল্ট বেরিয়েছে। আমি ফেল করেছি। বাবা যখন পুজো দিতে আসবে মন্দিরে, বাবাকে একটু বুঝিয়ে বোলো না, আমায় যেন না মারে!
       সিক্সে পড়ে। নাম বুলবুল। বাবা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। তান্ত্রিক, জ্যোতিষীও বটে। গ্রামে নামডাক বেশ। 
    বুলবুল বাড়ি এসে, নাকেমুখে গুঁজে মাসির বাড়ি চলে গেল। একাই। সাইকেল নিয়ে। বলে গেল দুদিন পর ফিরবে। মা নেই। এক লতায়পাতায় পিসি আছে। সে না থাকলেই খুশি হয় বেশি। 
...

মোহনা

স্মৃতি নয়, জীবন। সময় তো শুধু বাইরেই সামনের দিকে এগোয়। অন্তরে তো নয়। সেখানে সময় উভমুখী। চাইলেই পিছনে যেতে যেতে কোন ভাঙা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়। ফেলে আসা একটা শুকনো পাতা তুলে বলে, মনে পড়ে? 
    আমি বলি, কেন অকারণ ব্যথা জাগাও?
...

জাহাজ আর লোকটা 

লোকটা যখন জেগে উঠল, তখন জাহাজটা মাঝ সমুদ্রে। বিশাল বড় জাহাজ। লোকটা হামাগুড়ি দিয়ে জাহাজের পাটাতনে এলো। মাথাটা উঁচু করে তাকালো। চারদিক জল জল আর জল। আকাশের দিকে তাকালো। নীল নীল আর নীল। শূন্য সব। লোকটা বুকের কাছে হাতটা নিয়ে গিয়ে নিজের বুকটা খামচে ধরল। সে জানে সে ডুবে যাবে। এ জাহাজ ডুবে যাবে। সবাই শেষ হয়ে যাবে। না, না, না, এ হতে পারে না। লোকটা নিজেকে গুটিয়ে শামুকের মত কুঁকড়ে শুয়ে থাকল। 
    
    পিঠে কারোর ছোঁয়া লাগল। সে ঘুরে তাকালো। জাহাজের কর্মচারী একজন। সে বলল, কি হয়েছে? বমি পাচ্ছে? 
...

ভালোবাসি

ভালোবাসি

তোমার ইচ্ছার পাশে
     নিজের ইচ্ছা সাজিয়ে যেতে
...

মাটি আকাশ আর ঘুড়ি

নিজেকে লাটাইয়ের সুতোর মত ছেড়ে দিতে দিতে মানুষটা থমকে দাঁড়ালো। নিজের যেদিকটা অসীমকে ছুঁয়ে আছে, তাকে আর স্পষ্ট নীচ থেকে দেখা যায় না। আর যেদিকটা মাটিতে আটকে আছে সেখানে সুতো নেই পর্যাপ্ত। আর দুইপাক ঘুরলেই সুতো শেষ। শূন্য লাটাই পড়ে থাকবে মাটিতে। এখন কি করবে সে? 
    হঠাৎ ঝড় উঠল। আকাশ ঘিরে এলো দস্যুর মত কালো মেঘ। এক ধাক্কায় আকাশ থেকে ছিঁড়ে পড়ল তার অসীম ছোঁয়া আমি মাটিতে। আকাশে ওড়া সুতোতে লাগল কাদা। তার অসীম ছোঁয়া আমিকে স্নান করিয়ে গেল আকাশ ধোয়া বৃষ্টির জল। এবার? 
....

শান্তি আরেক অধ্যবসায়

হিংসা তোমায় পুড়িয়ে যাচ্ছে অহরহ 
ঘৃণা তোমায় শান্তি দিচ্ছে না একদণ্ড
ঈর্ষাকে কোলেপিঠে করে মানুষ করে
      তলিয়ে যাচ্ছ তারই চাপে
                অন্ধকারে 
...

সম্পর্ক - মন্থন

সম্পর্ক, সে তো মন্থন। জীবন মন্থন। শুধু কি অমৃতই উঠবে বলো? বিষও উঠবে। ধৈর্য ধরো। বিষকে ধারণ করে মহাদেব। মানে মহাকাল। কালের হাতে ধীরে ধীরে ছেড়ে দাও বিষ। নিজে ধারণ করতে যেও না। নিজে হজম করতে যেও না। শেষ হয়ে যাবে। সে বরং সময়ের হাতে থাক। বিন্দু বিন্দু করে দিয়ে দাও। অল্প অল্প করে নির্ভার হও।
...

আমি তৈরি, সেই কবে থেকে

পায়ের গিঁটগুলো শক্ত হয়ে গেছে। কালো। দইয়ের বাঁক নিয়ে স্টেশানে এসে দাঁড়ালো যখন আষাঢ়ের আকাশ জুড়ে প্রথম বর্ষার মেঘ। 
...

আকাশ হতে যাইনি

আকাশকে ছুঁতে চাইনি তো
আকাশের ছোঁয়া চেয়েছিলাম
...

গোলাপ

বাচ্চাটা বারবার গোলাপটার দিকে হাত বাড়াচ্ছে। যতবার হাত বাড়াচ্ছে ততবার অস্বস্তিতে পড়ছে অনোখ। ভাতিণ্ডা থেকে বিরাশি বছরের মাকে নিয়ে এসেছে শিরডি, সঙ্গে অবিবাহিতা বোন, কুসুম। তার মায়ের ভীষণ ইচ্ছা সাঁইবাবার মন্দিরে আসবে। অনোখের জন্মের আগে থেকেই নাকি মানত ছিল মায়ের। আসা হয়নি। গরীবের পক্ষে চৌকাঠ পেরোনো হিমালয় পেরোনোর সমান।

    গতকাল মাকে বোন নিয়ে এসেছিল মন্দিরে। অনোখের সময় হয়নি। সে আসলে একটা ব্যবসার কাজ নিয়ে এসেছে শিরডি। ভাতিণ্ডাতে তার ছোটোখাটো একটা ব্যবসা। আর সেই জন্যেই শিরডি আসা। মায়ের জেদ, সেও আসবে। তাই মা আর বোন সঙ্গে এলো। 
...

আমি বনাম বাজার

KK বনাম রূপঙ্কর থামতে চায় না, এদিকে আবার শুরু হল হার্ট অ্যাটাকের পাঁচালি। এমনিতেই বাঙালির ঘরে ঘরে ডাক্তার, সে এমবিবিএস পাস করুক চাই না করুক। স্বাস্থ্য ও ওষুধ নিয়ে নিজের কোনো বিধান নেই এমন বাঙালি দুর্লভ। তার উপর মেডিক্যাল ক্লাস এখন খবরের কাগজের পাতার পর পাতা জুড়ে শুরু হয়েছে। বিষয় --- হার্ট অ্যাটাকের সাতকাহন। কি করে বুঝবেন, আপনার কখন হার্ট অ্যাটাক হবে, কি কি করবেন, করবেন না ইত্যাদি। ওরে ভাই, UN থাকতেও যেমন একশো দিন ধরে যুদ্ধ চলে, তেমন হাজার একটা বিধিবিধান জানা থাকলেও ও হবেই। কতদিক সামলায় মানুষ! তাছাড়া স্বাস্থ্য নিয়ে অতি আদিখ্যেতা আর বাড়াবাড়ি করার সময় ক'জন মানুষের আছে?

    একবার আমার এক আত্মীয়ের ভীষণ শরীর খারাপ। তার বয়েস হয়েছিল। তো একজন পাড়ার ডাক্তারকে ডাকা হল, যিনি আদতে কম্পাউণ্ডার ছিলেন, কিন্তু তারপর চেম্বার করে বসেন এবং অনেকের অগতির দুর্গতি হন। তো তিনি স্টেথো, ব্যাগপত্তর নিয়ে তো এলেন। এসে আমার সেই আত্মীয়কে ভালো করে দেখেশুনে বললেন, ওনার মনে হচ্ছে আজ বা কাল বা পরশু'র মধ্যে একটা হার্ট অ্যাটাক হবে, আপনারা তৈরি থাকবেন।
...

সঙ্গগুণে 

কানাই গাইয়ে ফিরছে। বুকের কাছে দলা পাকানো অভিমান, কান্না। আজ সুর লেগেছে, সুর জাগেনি। না বেহাগে, না শিবরঞ্জনীতে। 

    রাত তো অনেক। গ্রামের ফাঁকা রাস্তা। মাথার উপরে বাঁকা একফালি চাঁদ। রাস্তার দু ধারে মাঠ। কেউ তার সঙ্গে ভালো করে কথা বলছে না। কানাই সাইকেল থেকে নামল। সাইকেলটা স্ট্যান্ড করে রাস্তার পাশে বসল। গলাটা অল্প অল্প ব্যথা করছে। তার বয়েস কত হল? সামনের অক্টোবরে বত্রিশে পড়বে। কিন্তু এখনও নিজের মন বসল না। গোটা জীবনটাই ছড়ানো। গুরু বলেন, কানাই জীবনে কিছু দুঃখ গ্রহণ করে নিতে হয়, কিছু দুঃখকে বরণ করে নিতে হয়। নইলে জীবন চাষবাসহীন ক্ষেতের মত পড়ে থাকে। সে অভিশাপ। 
...

কিছু প্রশ্নচিহ্ন 

kichu prasnachinha

কিছু প্রশ্নচিহ্ন 
একা একা দাঁড়িয়ে থাকে

বড্ড আত্মবিশ্বাসী 

কোনো উত্তরের অপেক্ষা না রেখেই 

কাঁঠাল

যা ভাবা হয়েছিল তাই। গাছে একটাও কাঁঠাল নেই। মানে শুধু ছাল পড়ে আছে। একটা বীজও নেই। এবার বীজগুলো এদিকে ওদিকে পড়ে থাকবে। মানে বীজ হজম তো তেনারা করতে পারবেন না, কিন্তু ছড়াবেন। 

শিল্পীর নান্দনিকতা

ছোটোবেলায় ঠাকুমার সঙ্গে ভাগবতপাঠ শুনতে যেতাম। তো সেখানে একটা গপ্পো আমার খুব মনে ধরেছিল। কৃষ্ণ নাকি কখনও কারো দোষবর্ণন করতেন না। 

গুহা

ভেবেছিলাম
একটা অন্ধকার গুহা বানাব
তারপর সব কিছু থেকে নিজেকে সরিয়ে
সেখানে নিয়ে গিয়ে বাঁচব একা
    নিশ্চিন্তে

ধুনুচি

মন তো, ধুনুচি তো নয়, যে এর ওর দুষ্টুমির ছোবড়া মনে করে করে আনবে আর অভিমানের,আক্রোশের কর্পূর দিয়ে রাতদিন ধিকিধিকি জ্বালিয়ে রাখবে। তারপর সারা ঘরদোর ধোঁয়া, ধোঁয়া। ধরতে গেলে ছ্যাঁকা। ধুর ধুর, ওভাবে হয় নাকি! 

    পোড়াতে হলে অভিমান পুড়ুক। পাঁচ কান হওয়া কথা, মনের দীঘিতে ডুবে মরুক। দশ কান হওয়া নিন্দা নিরুদ্দেশ হোক আর নতুন কোনো কান না পেয়ে। 
...

KK

কলকাতার বুকে বহু বছর আগে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল নক্ষত্রস্বরূপ শিল্পী উস্তাদ আমির খানের। ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪। খাঁ সাহেবের বয়েস ছিল ৬১। 

    গতকাল রাতে কেকের খবরটা পাওয়া ইস্তক ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। আজ সকাল থেকে পেপারগুলো পড়ার পর আরো মনটা খারাপ। জানি না এসব কনসার্ট ডাক্তারের ব্যবস্থা থাকে কিনা। আচমকা কোনো সমস্যা হলে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ রাখা হয় কিনা, জানি না। কিন্তু যে শহরকে এক সময় শিল্পীর চূড়ান্ত পরীক্ষাস্থল বলা হত, সে শহরে এমন মর্মান্তিক ঘটনা আরো মর্মান্তিক লাগে। 
...