Skip to main content

Pro নত

জন্ম থেকেই বলা হল, মাথা নীচু করো। কোথায়? ওই ছবির ফ্রেমের সামনে। ওই পাথরের মূর্তির সামনে। ওই মাটির মূর্তির সামনে। উনি গুরুদেব, ওনার সামনে। উনি বয়োজ্যেষ্ঠ, ওনার সামনে। উনি শিক্ষক, ওনার সামনে।
  ‘মাথা নীচু’ পর্ব চলছেই। একটা বাচ্চা বুঝতে পারছে না কি তাদের মহত্ব, কেন সে মাথা নীচু করবে? সে শুধু জানে তাকে মাথাটা নীচু করে যেতে হবে, কারণ বড়রা বলছেন। বড়দের কথাটা শুনতেই হয়। সমস্যা হচ্ছে, এই বিনা মহত্বের অনুভবে মাথা নীচু করাটা ক্রমে অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। গাছকে দেখলে মাথা নীচু করে
...

চুতিয়া

গামছায় হাত মুছে, চায়ের কাপটা ডিস থেকে তুলে চুমুক দিতে দিতে বলল, সবাই চুতিয়া।
  সিঙ্গাড়ায় পুর পুরতে পুরতে একবার মালিকের দিকে তাকিয়ে কর্মচারী বলল, তা আর বলতে। মনে মনে নিজের 'চুতিয়া' উপাধি পাওয়ার যোগ্য কাজগুলো ভেবে একটু হাসল।
  ঠিক তক্ষুণি একটা টিকটিকি ছাদের থেকে টপাক করে
...

অবশ্যম্ভাবী

ঠিক বাইরে না
ভিতরে ঘুণ ধরা দেখছি
যে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে
  সে আমি নই
   আমারই অবয়ব যেন
...

রামদাসী মল্লার

ট্যাক্সিটা দাঁড়ালো। হলুদ ছাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির ছাঁট স্ট্রিট লাইটের হলুদ আলোয় ঝরণার মত লাগছে। গাড়িটার মেশিন বন্ধ করল ড্রাইভার। পিছনের দিকে ফিরে বলল, বেশি দেরি করবেন না।
বাঁদিকের দরজাটা একটু খুলে গেল। সাদা শাড়ি পরা একজন মহিলা নামল। ছাতাটা এক হাতে শক্ত করে ধরা, সাথে ফুলের তোড়া। আরেক হাতে শাড়িটা উঁচু করে ধরে
...

বিষফল

কপালে তিলক কেটে আয়নায় নিজের মুখটা ভালো করে দেখে ডাকল, এই ওঠ...ওঠ...

  ভোরের আলোয় ঘুম জড়ানো শরীরে মেয়েটা পুকুরের ধার দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মিলিয়ে গেল।

  মন্দিরের দরজা খোলা হল। বাসি মেঝে মোছা হল। যুগান্তরের স্থির অভিব্যক্তি মুখে দেবতা পাথরের বেদির উপর স্থির দাঁড়িয়ে রইল।

  ঘন্টার আওয়াজ। বাচ্চার চীৎকার। মালার গন্ধ।
...

মটরশুঁটির বন্ধ খোলার মত

হঠাৎ মনে হল,
ঘরে বসেই মনে হল,
বাইরে যেন ভীষণ চীৎকার করছে কারা....
  গলার শিরাগুলো ফুলে ফুলে উঠছে
   ভারতের মানচিত্রে নদী তারা..

বাইরে বেরিয়ে এলাম
...

POSTCARD

একজন পোস্টম্যান, তাকে ঘিরে তিনটে গল্প। মারাঠি সিনেমা, পোস্টকার্ড। আমার বেশ লাগল সিনেমাটা, আমাজন প্রাইমে দেখলাম। গল্প বলার ভঙ্গিও বেশ ছিমছাম। কোনো অতিচেষ্টা নেই।
   প্রথম গল্প একজন বৃদ্ধের, যিনি দীর্ঘদিন এক কাঠচেরাইয়ের দোকানে কাজ করতে করতে শেষ জীবনে এসে দাঁড়িয়েছেন। মালিকের ছেলে লোভী, অমানুষ, নির্দয়। সেই এখন
...

ব্যথা

ব্যথা
মূক
...

গভীরতা নয়... গতি...

বুক খাবলে, শরীর খাবলে কতটা সুখ জমালে? নদীর বুকে দেখো? শ্যাওলা না চাঁদ?

নদীর জল চঞ্চল... কিছু দেখা যায় না... না মুখ, না শ্যাওলা, না চাঁদ...

হাওয়ায় চঞ্চল... স্থির হয় না... বরফ গলা জল...
...

"সত্যিই কি আমরা ভুল দিকে এগোচ্ছি?"

সুনীতিকুমার মহাশয়ের একটা লেখায় আছে, একবার শরৎচন্দ্র মহাশয় নরেনদেব ও রাধারাণীদেবীর সাথে অনেক রাতে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরছেন। হঠাৎ দেখেন একটা জটলা। এগিয়ে গিয়ে দেখেন একটা পোঁটলায় করে শিশু কেউ ফেলে গেছে। রক্ত মাখা সদ্যজাত পুরুষ শিশু।
  শরৎচন্দ্র রাধারাণীদেবী
...

JOGWA

মারাঠি সিনেমা। আমাজন প্রাইমে আছে, নাম JOGWA। বিষয় - দেবদাসী প্রথা, যৌনতা - লিঙ্গান্তরের সামাজিক অবস্থান। কেমন সিনেমা? আন্তর্জাতিক স্তরের কিনা? ভুলে যান। আমি সে কথা বলতে লিখছি না।
   আমি বলতে চাইছি আমাদের ভুলে যাওয়া
...

আমা হতে ঊর্ধ্বে কে?

অবশেষে রশিতে টান পড়িল। বুদ্ধি বিহ্বল হইয়া বলিয়া উঠিল, অহো ভাগ্য, আমা হতে ঊর্ধ্বে কে?
   দেশপতি বলিয়া উঠিলেন, ঐতিহ্য।
   বার্তাবহ পত্রিকায় রোগ সংক্রমণের সংখ্যা ঊর্ধ্বগামী। সেই সংখ্যা জনতার দিকে চাহিয়া কহিল, ভয় নাই?
   জনতা কহিল, রোগ উহাদের হয়? আমাদিগের নহে।
   ঊর্ধ্বগামী সংখ্যা আরো দুটি
...

মন মোর মেঘের সঙ্গী

আজ অবধি যতপ্রকার ত্রুটি নিয়েই মানুষ জন্মাক না কেন, মন ছাড়া জন্মেছে, এমন উদাহরণ নেই। রবি ঠাকুর গাইছেন, মন রে ওরে মন/ তুমি কোন্ সাধনার ধন / পাই নে তোমায় পাই নে/ শুধু খুঁজি সারাক্ষণ।।
   ভালো কথা, এ খোঁজারই বস্তু। কিন্তু খুঁজলেই আর মেলে কই? তবু একেবারেই কি আর মেলে না? তা বললে হবে কেন? তো সেই মনের খোঁজের
...

লজ্জার, ভীষণ লজ্জার

আজকে 'এই সময়ে' খবরটা পড়লাম। তারপর আরেক সূত্রে জানলাম জয়রামবাটিতেও নাকি সূর্যগ্রহণের আগে আগে রান্নাবান্না হয়ে যাবে, খাওয়াও হয়ে যাবে।
   একদিন ধর্মান্ধতা গ্যালিলিওকে অন্ধ করে দিয়েছিল, একদিন ব্রুনোকে পুড়িয়ে মেরেছিল। আজ আমার মনের গভীর থেকে ধিক্কার এলো আরো গভীরভাবে। এত মানুষের মনের মধ্যে অন্ধকারকে
...

লকডাউন ও ছাত্র-ছাত্রী

লকডাউনের শুরুতে একটা লেখায় আশঙ্কা প্রকাশ করি – অনলাইন ক্লাস নিয়ে। মনে হয়েছিল অর্থনৈতিক সামাজিক অবস্থানের পার্থক্যের জন্য কিছু কিছু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আজ দেখছি তা ঘটছেও। হয়তো নানা কারণে আমরা অনেক কিছু নিয়ে ব্যস্ত বলে সেই ঘটনাগুলো নিয়ে তেমনভাবে আলোচনা করার, দিশা খোঁজার দরকার মনে করছি না, কিন্তু ঘটছে। না তাকাতে পারি, অস্বীকার করতে পারি না।
   শিবানী কুমারী শাউ। বয়েস ষোলো। হাওড়ায়
...

দেবতা ও করোনা

সক্কালবেলা জেঠিমা দেখি মুখে সার্জিক্যাল মাস্ক পরে পুজো দিচ্ছেন।
   ভেবে দেখলাম ঠিকই করেছেন। এত বাড়ি, মন্দির, গাছতলা, দোকান, সকালবেলা উনি পুজো নিতে যান.... বলা যায় না...মানুষের শরীরই যদি এমন ধারা সংক্রমণযোগ্য, তবে দেবতনুর সংক্রমণ
...

ছোটোরা না হয় ছোটোদের মতই থাকুক

ছোটোরা না হয় ছোটোদের মতই থাকুক। তাদের কল্পনা, ভাষা মাড়িয়ে, নাই বা হেঁটে গেল বড়দের কাদা মাখা পা?

"কি আঁতলামি মশায়? কাদা কি সংসারে নেই?"

আছে। অবশ্যই আছে। আপনার আমার সংসারে সে বাঞ্ছিত না হলেও আছে। দিব্যি আছে। কিন্তু

...

ডুব

দীর্ঘদিন শিক্ষকতার জন্য কিনা জানি না, আমি দেখেছি আমি অকারণ কারোর মেজাজ নিতে পারি না। সে যেই হোক, যিনিই হোন। এই স্বভাবটা যত বয়েস বাড়ছে বেড়েই চলেছে। চিরটাকালই একা থাকতে বেশি পছন্দ করি। সাথে বন্ধুবান্ধবও পছন্দ করি। কিন্তু একটা গণ্ডী অবধি। তারপর নিজের সাথে নিজের যে সম্পর্ক, সেখানে কাউকেই পছন্দ করি না। অনেকে নিষ্ঠুর মনে করে, রূঢ় মনে করে
...

দিশা

অনেকবার অনেকে জিজ্ঞাসা করেছেন, "কোন বই আপনার জীবনে পথের দিশা দিয়েছে?"

   আমাকে এর উত্তর ভেবে বলতে কোনোদিন হয়নি, আজও হয় না। উত্তরটা সোজা - অবশ্যই রেলের
...

সে কি এলো?

টবের মধ্যে মাটি। মাটির মধ্যে গাছ। গাছের উপর ছাদ। গাছের সামনে গ্রিল।

গ্রিলের সামনে ফাঁকা। ফাঁকার ওপারে গ্রিল। গ্রিলের সাথে আস্ত আরেকটা ফ্ল্যাট।

রোদ গেল। টব বলল, কি হল? দিনের বেলায় রোদ গেল। ছায়া হল?

হাওয়া দিল। হাওয়ার গা ভেজা ভেজা।
...

কৌতুহল

এখন আমাদের প্রচণ্ড কৌতুহল।

   কেন মারা গেল? কেন গলায় দড়ি দিল? ঠিক কি কি খেয়েছিল? ক'বার হিশু করতে গিয়েছিল? হিশুর রঙ কি ছিল? ফ্লাশ করেছিল কোন হাতে? দড়ি না চাদর? কোন কোম্পানির চাদর? রঙ কি ছিল? দাড়ি কেটেছিল? শুনেছি গলায় দড়ি
...

অন্য আকাশ

আকাশটা গুটিয়ে
খাটের তলায় রেখে দিয়েছি
  ট্রাঙ্ক বন্ধ করে

আমায় কেউ বাইরে খেলতে ডাকলে বলছি,
  না যাব না
...

জি এন দাস

জি এন দাস। পুরো নামটা মনে নেই। রামকৃষ্ণ মিশনের এককালীন অধ্যক্ষ স্বামী রঙ্গনাথানন্দজীর মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। সেই দাস মহাশয়ের জীবনে তখন তুমুল দুর্যোগ। ব্যবসায়, ব্যক্তিগত জীবনে, বন্ধুবান্ধব মহলে, এমনকি নিজের স্বাস্থ্যের দিক থেকেও। চিঠি লিখলেন
...

মিথ্যা

তোমার মুখের জায়গায় দেবতার মুখ

তোমার ছবির জায়গায় মহাপুরুষের ছবি

তোমার নাম। তোমার কীর্তি। তোমার সংসার।

দেবতার মুখোশে
...

জালিয়ানওয়ালাবাগ ২০২০

রাস্তায় ঘাটে কি বানিয়েছ?

জালিয়ানওয়ালাবাগ

রাস্তাঘাটে মরছে কারা?

ঘরে ফিরছে
...

বললাম না তো

আমি যদি বলতাম
   একটা গাছও উপড়ে যেতে দেব না

আমি যদি বলতাম
   একটা শিশুকেও হারিয়ে যেতে দেব না

আমি যদি বলতাম
...

বেঞ্চ

ছোটো স্টেশান। একটা বেঞ্চ দেখেছিলাম। কাঠের। পরিত্যক্ত। লতানে গাছ উঠে গেছে বেঞ্চের পায়া জড়িয়ে হাতল ছুঁয়ে পিঠ ঠেকানোর জায়গা অবধি। কত রকম ফুল ফুটেছে সে লতানো গাছগুলোতে। বসার জায়গাটায়
...

অচিন পাখির ঠাহর

পাখি কখন উড়ে যায়.... বদ হাওয়া লেগেছে গায়...
   মেট্রোরেলের ভিড়ের মধ্যে প্রহ্লাদ ব্রহ্মচারীর গলা। ধীরে ধীরে গাইছেন। আমার হাতে ধরা মায়ের নানা পরীক্ষার রিপোর্ট। ভালো না রিপোর্ট। ডাক্তার বলেছেন
...

সানগ্লাস

মাস্ক ঢাকা। তাই চোখজোড়া স্পষ্ট এখন। কত রকম চোখ। কত রকম চাহনি। নিরুত্তাপ, উদ্বিগ্ন, হাসিহাসি, কান্নাকান্না, রাগী রাগী।
   সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা হবে। টিভিতে একটা চটুল হিন্দী গান চলছে। ডিস্পেনশারিতে লোক
...

চিকিৎসকের জন্য

গতকাল লিখেছিলাম সংখ্যার কথা। মৃত মানুষের। আজ লিখছি চিকিৎসকের কথা। এই করোনাযুগ আমায় একটা বড় শিক্ষা দিল। চিকিৎসকের জন্য চিন্তা করতে। ভাবতে। দুশ্চিন্তা করতে। কষ্ট পেতে।
...

রেডজোন

আমার বাড়ি থেকে মিনিট তিনেকের হাঁটাপথেই দু'জন মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। না, তাতে ভয় পাওয়ার মত কিছু অনুভব করছি না। কারণ এটা হওয়ারই আছে। সারা বিশ্ব তথা ভারত তথা বঙ্গ থেকে তো
...

চেতনা নির্মম

চেতনা নির্মম, এতগুলো সংখ্যা, এত বড় সংখ্যা, তবু যন্ত্রণাহীন। নির্বিকার।
   সংখ্যার সাথে সম্পর্ক হয় না। মানুষের সাথে হয়। চোখ, হাসি, কথার সাথে হয়। সংখ্যার সাথে বাস বিস্ময়ের। সংখ্যার সাথে বাস আতঙ্কের।
...

ও মোর দরদিয়া

জ্ঞান কি আনন্দের বিষয় হতে পারে? হতে পারে। একমাত্র দর্শনে হতে পারে। নইলে জ্ঞান কেবল ব্যবহারের বিষয়। তা তো নয়। জ্ঞান মুক্তি। জ্ঞান সুখ। জ্ঞান আনন্দ। জ্ঞানের পাতায় ভক্তির জলের বিন্দু।
...

হামিটামি বন্ধ

কাল ছিল ভরা মাথা
  আজ কোথা গেল ওরে
বল দেখি তোরা ব্যাটা
  চুল কই গেল
...

অন্য বিষাদের গল্প

কারণ বাবার বেঠিক হওয়ার ক্ষমতা নেই। বাবার পছন্দ, বাবার বিচার, বাবার সিদ্ধান্ত – সব সময় নির্ভুল। ঈশ্বর বাবাকে এ ক্ষমতা দিয়েছেন। সবার ভুলের উপর বাবার নিষ্ঠুর নির্ভুল কটাক্ষ। বাবার চোখ কোনো ভুল এড়িয়ে যায় না। বাবার উপস্থিতি ভয় আর নিশ্চিন্ততার একটা মিশ্র উপস্থিতি। বাবার সাথে
...

বলে যাও... কে সে?

জল নয়। আগুন নয়। মাটি নয়। আকাশ নয়। শব্দটা মন। মন পাত্র। তবে ফুটো পাত্র। সে ফুটোর নাম সময়। সব গলে গলে পড়ে যাচ্ছে... হো হো হো... সব... তোমার ও যৌবন রূপ ভালোবাসা সুখ... সব সব সব... পৃথিবীর বুকে সময় একটা বড় ছেঁদা, বুঝলে কি না
...

বাচ্চা নৌকা

একটা বাচ্চা নৌকা। সমুদ্রকে বলল, আমি আসব?

সমুদ্র বলল, এখন না।

ঝড় উঠল। পারে বাঁধা রশি গেল ছিঁড়ে। বাচ্চা নৌকা ভাসতে ভাসতে এসে পড়ল সমুদ্রে।

সমুদ্রের বুক আতঙ্কে আকুল। নৌকা ঘূর্ণীর আঘাতে
...