জল নয়। আগুন নয়। মাটি নয়। আকাশ নয়। শব্দটা মন। মন পাত্র। তবে ফুটো পাত্র। সে ফুটোর নাম সময়। সব গলে গলে পড়ে যাচ্ছে... হো হো হো... সব... তোমার ও যৌবন রূপ ভালোবাসা সুখ... সব সব সব... পৃথিবীর বুকে সময় একটা বড় ছেঁদা, বুঝলে কি না, সব গলে গলে পড়ে যাচ্ছে। একটা জীবনও রাখতে পারবে না গো... সে তুমি যতই চেষ্টা করে করে মরো...
তবে ঈশ্বর? সে কেন গলে যায় না?
হো... এইটা একটা কথা হল? ঈশ্বর হল গিয়া শূন্য, তাই গলে গেলেও যা থাকে, গলে না গেলেও তাই থাকে। শূন্যের আবার হিসাব কি গো? কারোর পিছনে জুড়লে তবে শূন্যের দাম। এই যেমন ধরো একের পিছনে জুড়লে দশ, দুইয়ের পিছনে কুড়ি... এ জগত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, এ সব হল সে শূন্যকর্তার সংখ্যা...
তুমি তো বললে অবশেষে সব শূন্য?
হ তো, তাই তো।
এ শূন্যকে কেউ অনুভব করে না?
শূন্যকে অনুভব করবে কে? শূন্য নিজেই নিজেকে অনুভব করে। মানুষও নিজেকে শূন্য অনুভব করলে মুক্ত, নিজেই সে খোদা।
কি বলো? নিজেকে শূন্য ভাবলে মানুষ তো বিষাদে মরে?
সে শূন্য তুলনার শূন্য, সে মিথ্যা শূন্য – ওর আছে, আমার নাই। এ ফাঁদ। আর এ শূন্য নিজেকে খুঁজতে যেয়ে শূন্য, এ অমৃত। বিষাদ কই গো?
তবে কি সব মিথ্যা?
তাই বললাম বুঝি? শূন্যকে ব্যর্থ বললে মিথ্যা। শূন্যকে পরিণতি বললে, সার্থকতা। তুমি কি বলবে তোমার উপর।
তুমি কি কপট? ভণ্ড? আমি কপট। আমি ভণ্ড।
কেন?
আমার আসল হওয়ার সাহস নেই। তাই।
সেজে আছো? মিথ্যাতে আছো? ছলে আছো?
হ্যাঁ
কি পাচ্ছ?
নিরাপত্তা, ভবিষ্যতের আশ্বাস
তারপর?
তারপর আর কিছু নেই। সব ফাঁকা। তোমার শূন্যের মত।
নিজেকে ভয় পাও?
ঘেন্না করি। প্রতিদিন আত্মহত্যা করছি। একটু একটু করে।
ঈশ্বরে বিশ্বাস করো?
অস্তিত্বে না করুণায়?
দুটো আলাদা নাকি?
আলবাত আলাদা। করুণাময় কেউ নেই। একজন নিষ্ঠুর উদাসীন মেগালোম্যানিয়াক ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করে। সব হিসাব সোজা হয়ে যায়। গলায় মাল ঢাললে, মাথার মধ্যে চিন্তাগুলো ঝাপসা হলে, সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখি, একটা মেগালোম্যানিয়াক ঈশ্বর। শ্যালা...
শরীর জাগে?
জাগে। মন তখন হাওড়া স্টেশানের ভিখারিগুলোর মত নিজের ইগোর পোঁটলা সামলে স্টেশানের বারোয়ারি কুত্তার রমণলীলা দেখে, নাক সিঁটকায়। শরীর বারোয়ারি। মন আধা সন্ন্যাসী আর আধা বেশ্যা। বুদ্ধি বেশ্যাপাড়ার দালাল। এই তো জীবন....
ক্ষতি করেছ কারোর?
মারতে দিয়েছি এন্তার, মারিনি...
প্রার্থনা করো?
রান্নাঘর থেকে বেড়ালে মাছ নিয়ে গেছে সেই সুযোগে...
তবু বাঁচতে ইচ্ছা করে?
করে
তবু ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা করে?
করে
ছেড়ে দাও
কি?
বিশ্বাস... সব বিশ্বাস...
তারপর?
চাও
কাকে? কি?
শূন্যকে
আশ্বাস নেই তোমার কাছে?
শূন্যের কাছে আছে। যদি পারো শূন্যকে বলো – আশ্বাস। সব ভেসে যাক। আটকিও না।
আমি? আমার কি হবে?
ভেসে থাকো। সময় বাতাস। প্রাণ ঢেউ। তুমি কে? আলোর ঢেউয়ে এসে পড়া বিচ্ছুরণ।
কার আলো?
যার সাগরের তুমি ঢেউ...
কার সাগর?
যে সাগর, সেই আলো...
কে সে?
...... কই কই কই তুমি... বলে যাও কে সে? ... কই কই কই... কোথায় গেলে... বলে যাও কে সে...?