Skip to main content

সাদা মেঘ

মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়েই দেখল চাঁদের দুপাশে দুটো ডানা। নীল ডানা। সেই নীল ডানার নীল রঙ দিয়েই আকাশটা নীল। আর চাঁদের গা থেকে জোনাকির মত আলো বেরিয়ে বেরিয়ে হয়েছে তারা। এত তারা। আঙুলের কড়ে গোনা যায় না। এমনকি খাতাতেও লিখে শেষ করা যায় না।

চাঁদ না মেঘ

 

মন্দিরের দরজায় তালা লাগিয়ে, মঠের দরজায় তালা লাগিয়ে সাধু নিজের ঘরে গিয়ে বসলেন। একাই বসে। কোনো ভক্ত সমাগম নেই। খাঁ খাঁ করছে মন্দির প্রাঙ্গণ। কি এক রোগ এলো!

শপিংমল আর ঘুণপোকা

একটা সহস্রতলা শপিংমল তৈরি করা হচ্ছিল। সবার কাজ ভাগ করে করে দেওয়া হচ্ছিল। অনেকে থাকবে বাইরে, তারা বাইরে থেকে শপিংমলের যোগানদার হবে। তাদের শপিংমলের উঁচু থেকে খাবার ছুঁড়ে দেওয়া হবে। আর বাদবাকিরা থাকবে ভিতরে। এক একজন এক এক তলায়। সামর্থ্য অনুযায়ী। সবাইকে একটাই জিনিস দিতে হবে, জীবন। আর জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে বাদবাকি যা

মেঘ আর ঠাকুমার গল্প

আচ্ছা, আমি কুসুম ঠাকুমার গল্প কি বলব? একটা দরমার বেড়া দেওয়া ঘর। ছাদ বলতে টালি। টালির কয়েকটা আবার ভাঙা। একটা জানলা মাঠের দিকে। একটা জানলা রাস্তার দিকে। ঘরের দক্ষিণ দিকে একটা খাট। খাটের উপর একটা পাতলা তোষক। একটা তেলচিটে মাথার বালিশ। খাটের পাশে একটা কুঁজো। তার মাথায় টুপির মত রাখা একটা স্টিলের গ্লাস। দেওয়ালে ঝুলছে চার বছরের আগের একটা ক্যালেন্ডার। কৃষ্ণের ছবি, ভুল বললাম, গোপালের মাখন খাওয়ার ছবি আছে বলে ঠাকুমা ফেলেনি। একটা আলনা উত্তর দিকে রাখা। কয়েকটা সাদা শাড়ি। গামছা। বিছানার চাদর দুটো। বাড়ির সামনে একটা ছোটো ঘর। ঠাকুমার ছাগলগুলো থাকে। দুটো বড় ছাগল। তিনটে বাচ্চা ছাগল। ঠাকুমা দু’বেলা ছাগল চরাতে মাঠে যায়। শাকপাতা যা পায় নিয়ে আসে। বেলায় একবাড়ি বাসন মাজে, কাপড় কাচে। এইতেই চলে যায়।

মেটে, না হৃদয়?

এতটা কোনোদিন আসে না। আজ কি খেয়াল হল কে জানে? কিছু ভাবছিল কিনা নিজেও মনে করতে পারল না। আর মনে করেই বা কি হবে? ভাবনা তো ভাবনাই। নদীর মত। বয়েই যাচ্ছে। বয়েই যাচ্ছে। ওহ...

দৌড়ে কি হবে?

পরেশ সামন্ত "ধুর শালা, নিকুচি করেছে ঘুম" বলে উঠে পড়ল বিছানা ছেড়ে। বিছানায় ছারপোকা থাকলে মানুষ এমনিই দার্শনিক হয় - এমন একটা গভীর উপলব্ধি নিয়ে, ঘর্মাক্ত কলেবরটাকে ঘেমে যাওয়া বিছানা থেকে তুলে আবার বলল, শালা। মানদা ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক। মূঢ় জীব!

টগরেশ্বরী

বাড়ি ফিরে দাওয়ার উপর বউকে মরে পড়ে থাকতে দেখে আর বাড়িমুখো হয়নি চিকুন ভিখারি। এমনকি এই অবস্থায় বাড়ি ছেড়ে গেলে পুলিশে খোঁজ করতে পারে বলেও তার মনে হয়নি। স্রেফ মনে হয়েছে আর বাড়ি থেকে কি করবে, তাই রাস্তায় হাঁটা লাগিয়েছে। আঠারো বছরের দাম্পত্য জীবনে এক মুহূর্তে দাড়ি টেনে দিল।

আকাশ মাটি বৃষ্টি আর ভালোবাসা

মিত্তির মশায় আলি সাহেবের কবরের সামনে এসে প্রায় প্রতি রবিবার বিকেলে বসেন। দুজনেই ছেলেবেলার বন্ধু, প্রাণের বন্ধু ছিলেন। কর্মসূত্রেও সারাটা জীবন কাছাকাছিই থেকে গেলেন। কিন্তু ভাগ্যের খেলায় আলি সাহেব চলে গেলেন মাত্র কয়েকদিন জ্বরে ভুগে। সবাই বলল, স্বাভাবিক সময়েই গেলেন। কিন্তু মিত্তির মশায়ের মন বলল, তাই কি? তবু মেনেই নিলেন, কারণ কথাটা সংসারের হিসাবে তো সত্যি।

আমরা এখানেই থাকি, আসিস

ধুধু মাঠ। একটা অশ্বত্থ গাছের নীচে হেলান দিয়ে বসে আছি। চারদিকে তাকানো যাচ্ছে না, এত রোদ। এগারোটা বারোটা হবে হয় তো। আজ বৈশাখ মাসের প্রথম দিন, হ্যাঁ, মানে নববর্ষ, ১৪২৮। বৈশাখ মানে তো, হে নূতন, দেখা দিক আর-বার... আর বুদ্ধ। বুদ্ধের জন্ম ঠিক বৈশাখে না হলেও, এই গরমকাল এলেই মনে হয় সেই বিকালে গোল চাঁদ - বুদ্ধপূর্ণিমার চাঁদ। 

হংসবলাকা

দূরত্ব মাপো তুমি। আমিও মাপি। একটা নদীও যেন বাঁশডোবা জল পেল না। চরায় ঠেকে যাওয়ার ভয় দাঁড় বাইতে বাইতে ক্লান্ত মাঝি ঘুমিয়ে পড়ে। জ্যোৎস্নায় শরীর ভেসে যায়। জানতে পারে না। ঘুমের মধ্যেও ডোবা চরের আতঙ্ক।
জঙ্গলের মধ্যে দাঁড়িয়ে কে ও? যেন শতাব্দী আগে দাঁড়িয়ে ছিল এখানে। অবচেতন মনে পূর্বজন্মের হাজারও জিজ্ঞাসার ভিড়। জিজ্ঞাসা করলাম, আমায় চেনো? উত্তর দিল না। মিলিয়ে গেল। এখন জঙ্গলজুড়ে পাখির ডাক। ঘুমন্ত মাঝি। জ্যোৎস্নায় ভাসা নদী।
Subscribe to অনুগল্প