Skip to main content

এইটুকুই তো তাঁকে দেওয়ার

কথা হল, সবই তো হল, কিন্তু আসল কথাটা কি হল? 

             দীর্ঘ আলোচনার পর, বাইকে চড়ে আপিস থেকে ফেরার সময় নন্দলালবাবু ভাবছিলেন, আলোচনাটা কি হল? স্কুলের পরীক্ষায় রবীন্দ্রনাথের সব গান নেওয়া যাবে না। কারণ করোনার অতিমারীতে সব গান শেখানোই যায়নি ঠিক করে। তবে কোন গান রাখা যাবে আর কোন গান রাখা যাবে না এই নিয়ে ভীষণ ঝক্কিতে পড়লেন নন্দলাল।

নীচে চলো

প্রচণ্ড রেগে আছে সকাল থেকে। যতবার কাছে গেছে ততবার ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে। আজ তো গায়েও হাত তুলেছে। এখন একটা কেক দিয়েছে যদিও। কিন্তু রাগে খিদেতে স্বাদই পাচ্ছে না কেকের। মাঝে মাঝেই আঁচলটা দিয়ে মুখটা মুছছে। থুথু ছেটাচ্ছে। কেকটা গলায় আটকে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। চোখটা যেন বাইরে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। কোনোরকমে গিলে ফেলছে। 

হনুমান আর দুষ্টু

দুপুরবেলা। সবাই ঘুমাচ্ছে। তার বয়েস কত হবে? হয় তো দশ কি এগারো। তার মনে একটা অদ্ভুত প্রশ্ন। তার ঠাকুমা, ঠাকুর্দা, দাদু, দিদিমা, মা, বাবা --- এরা সবাই ঠাকুরের সামনে বসে কি ভাষায় যেন কথা বলে। ওটা নাকি সংস্কৃত। এমনকি স্কুলে সরস্বতী পুজোর সময়, সেখানেও পুরোহিত ঠাকুর, মানে তার স্কুলের ভূগোলের স্যার সংস্কৃত বলে বলে পুষ্পাঞ্জলি দিতে বলেন। কেন ঠাকুর কি বাংলা, ইংরাজি, হিন্দি বোঝেন না? সে তো সবক'টা ভাষাই বলতে পারে, বুঝতে পারে। ঠাকুর যখন ছোটো ছিল তখন কি তবে কার্টুন সব সংস্কৃতে হত? তবে ঠাকুর বড় হয়ে বাকি ভাষাগুলো শেখেননি কেন?

থেকেই যা

শুভ একাই থাকে, অন্তত আমি তো তাই জানি। যখন টেক্সট করল 'চাবিটা নিয়ে নিস', আমার একটু অবাকই লাগল। আমি আসব জেনেও কেন থাকবে না?

          যা হোক, বাড়ির চাবি কোথায় রাখে আমি জানি। সেইমত দরজাটা খুলে ঢুকলাম। ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘর। কেমন একটা বোঁটকা গন্ধ। কদ্দিন নেই বাড়িতে? ফোন করলাম। সুইচ অফ্।

পাপের ইচ্ছা

পয়সাকড়ি নেই, মেয়েমানুষ পাবো কোত্থেকে?


    কথাটা সত্যি নয়। সনাতন পুরোহিতের কথায় নেশা আছে। আজ অবধি কত মেয়েমানুষের সঙ্গ করেছে সে নিজেও গুনে বলতে পারবে না। সনাতন পুরোহিতের বয়েস ছাপান্ন। এক ছেলে অম্বর, এম. এ. পাস করেছে। সংসারে সচ্ছলতা নেই ঠিক, কিন্তু শান্তি আছে। অণিমা সব জানে। মাথা ঘামায় না। 

খয়ের

ভিক্ষায় বেরোতে আলিস্যি লাগে এখন। বৃষ্টি পড়লে তো আরো। বিছানায় শুয়ে শুয়েই চালডালের হিসাব হল। আরো দুদিন চলে যাবে। দেওয়ালের কোণে একটা মাকড়সা। ঝড়জলে ঘরে এসে ঢুকেছে। ঘরে যা আরশোলা ওর সারাজীবন চলে যাবে। পশুপাখি-কীটপতঙ্গ ভিক্ষা করে না। খাবার খোঁজে। কাড়াকাড়ি করে। সে ভিক্ষা করে। রত্না বোষ্টুমি। লোকে বলে। সে নিজেকে বলে - "অখাদ্য!" যত বয়েস বাড়ছে তত মাথার মধ্যে প্যাঁচ বাড়ছে। সংসার

আমি কি ভুল?

ওর কি হয়েছে বলুন তো? ঘুমাচ্ছে না ক'দিন হল। সারারাত এপাশ ওপাশ করে। মশারি তুলে বাইরে এসে জিজ্ঞাসা করে আমায়, দাদা, এখন রাত না দিন? আমি বলি, রাত তো! সে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। তারপর মাথার চুলগুলো টানতে টানতে বলে, আমারও তো তাই মনে হচ্ছে, এখন তো রাত, তবে!?

আরশিনগর

গোঁসাই বসে দীঘির ধারে। গুনগুন করে গান ভেসে আসছে, “গেরাম বেড়ে অগাধ পানি, নাই কিনারা নাই তরণী পারের... বাঞ্ছা করি দেখব তারে কেমনে সেথা যাই রে…”

    গোঁসাই, বসি একটু?

    গোঁসাই চোখের ইশারায় বলল, বসো। 

মা যা করেন

("শংকর কহেন, জগৎ মায়া; প্লেটো কহেন জগৎ ছায়া; কান্ট কহেন, জগৎ আমাদের মনের প্রতীতি মাত্র, সত্য পদার্থ নহে। পৃথিবীর তিন বিভিন্ন প্রদেশে এই এক মত দেখা দিয়েছে, কিন্তু ইহার বৈজ্ঞানিক প্রমাণ কেবল কান্ট-দর্শনের মধ্যেই আছে।"- রবীন্দ্রনাথ) 


    কাণ্ট (ইম্যানুয়েল কান্ট, ক্রিটিক অব পিওর রিজন -এর লেখক) জিজ্ঞাসা করলেন, উনি কি ঘরে আছেন?

মালী আর লোকটা

লোকটা বাগান খুব ভালোবাসত। রোজ রোজ তার বাগানে কত রঙের, কত রকমের ফুল ফোটে। লোকটা সকালে উঠে বাগানে আসে। খুব খুশি হয়, আবার দুঃখও পায়। কেন দুঃখ পায়? কারণ একটু পরেই একজন লোক আসবে, সব ফুল তুলে নিয়ে গাড়িতে ফেলবে, বাজারে চলে যাবে। লোকটা শুধু একটা ফুল রোজ বাঁচিয়ে নিয়ে আসে তার বউয়ের জন্য। কিন্তু তাও রোজ হয় না, এক একদিন সেই ফুলটাও নিয়ে চলে যায় ওই বাজারের লোকটা। 

Subscribe to অনুগল্প