তিনি বললেন, হৃদয় লাগে, প্রেম লাগে, আনন্দ লাগে।
ওনারা বললেন, ও কথা তোমার জন্য না। তোমার জন্য - গুরু লাগে, মন্ত্র লাগে, প্রণামী লাগে, শাস্ত্র লাগে, আসন লাগে, দীপ লাগে, ধূপ লাগে, নৈবেদ্য লাগে, শুদ্ধবস্ত্র লাগে,চোখ বন্ধ করা লাগে, খোলা লাগে।
সে শুনল। নিয়ে গেল দক্ষিণা দিয়ে চকমকি পাথর - অদৃশ্য - শব্দীয়। উচ্চারণে স্ফুলিঙ্গ ছুটবে। হৃদয়ে ধরবে আগুন। সে আলোতে তিনি আসবেন। যিনি সত্য, যিনি প্রেম, যিনি আনন্দ।
বছর গেল। মনের সঙ্গে চকমকি মন্ত্রের লাগল কত সংঘাত। তাপ বাড়ল। আলো জ্বলল না। নিজেকে ধিক্কার দিল। ভাগ্যকে ধিক্কার দিল। জন্মক্ষণকে ধিক্কার দিল। একদিন গেল হতাশ হয়ে ওনাদের কাছে।
ওনারা বললেন, কে তুমি?
আমি সে-ই, যাকে দিয়েছিলেন চকমকি শব্দরাজি….কিচ্ছু হল না।
ওনারা বললেন, লাগে অনন্তকাল। সবেমাত্র শুরু! যাও যাও।
সে গেল। তবে আর চকমকি ঠুকল না। ভীরু মন তার চকমকির আঘাতে আঘাতে জর্জরিত, তার কাছে ঘেঁষে না। এখন এল। এসে, সে ভয়ে ভয়ে চকমকির দিকে তাকাল। বলল, আবার কি ঠুকবে?
সে হতাশ হয়ে বলল, নাহ্।
মন বলল, হতাশ হও কেন? সে বলেছে, চাই হৃদয়, চাই প্রেম, চাই আনন্দ।
সে বলে, কোথায় পাই?
মন বলল, নিজের দিকে তাকিয়েছ কোনোদিন প্রাণভরে, নিঃসংশয়ে, তুলনা-ঈর্ষায় না ক্ষুব্ধ হয়ে? এই দ্যাখো….এই তো সব…..
সে বলল, কোথায় পেলে?
মন বলল, এখানেই তো ছিল…. তোমার জিনিস তুমি নিজেই আজ পেলে!
সে বলল, কী হবে আমার সাধন?
মন বলল, গান।
কী হবে আমার তপস্যা?
মন বলল, সংসারের একের পর এক আঘাত সহ্য করা….করতেই হবে….
সে বলল, ভয় করছে…. হারিয়ে যাব মনে হয়… ভ্রষ্ট হব।
মন বলল, তাই হবে না হয়…. তবু কিছু তো হবে।