Skip to main content

f01

 

 

ফারাহ্ পড়তে চায়। শহরে গিয়ে পড়তে চায়। প্যালেস্টাইনের ছোট্টো একটা গ্রামের মেয়ে। সেখানে কেউ পড়ে না। বিয়ে করে সংসার করে। গ্রামের মুরুব্বিরা তার বাবাকে বলে কোরাণ পড়েছে আর কি পড়ার আছে? কিন্তু সে পড়তে চায়। সে বলে, কেন? ইতিহাস, ভূগোল, অঙ্ক, ইংরাজি পড়ার আছে।

বাবা রাজী হয়। মেয়েকে শহরের স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হওয়ার ফর্মও ফিলাপ করে দেয়। মেয়ে খুশীতে নেচে ওঠে। তার শহুরে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে দোলনায় ঝুলতে ঝুলতে। ফারাহ্ তার স্বপ্নের কথা বলছে, সে অনেক পড়াশোনা করবে, তারপর এই গ্রামে এসে সে মেয়েদের জন্য স্কুল খুলবে। শুধু মেয়েদের জন্য।

ইজ্রায়েলি সেনা ঢুকে পড়ে গ্রামে। শুরু হয় তছনছ। হত্যা।

ফারাহ্-র বাবা ফারাহ্কে চলে যেতে বলে তার বান্ধবী ফারিদার সঙ্গে। কিন্তু সে গাড়িতে উঠেও ফিরে আসে। বাবাকে ফেলে সে যেতে চায় না।

ফারাহকে ভাঁড়ার ঘরে আটকে, বাইরে থেকে পাথর চাপা দিয়ে ফারাহ্-র বাবা চলে যায়, যাওয়ার আগে বলে যায় সে যেন অপেক্ষা করে তার ফিরে আসার জন্য।

ফারাহ্-র যেন অন্তহীন অপেক্ষা শুরু হয়। দিনরাত চলে যায়। বাবা ফেরে না। বাইরে গুলির শব্দ চলতে থাকে। কিন্তু ফারাহ্-র জগত তো বাইরে থেকে বিচ্ছিন্ন। ক্রমে বাইরে সব শান্ত হয়। সে দেওয়ালের একটা গর্ত দিয়ে বাইরের আলো দেখে, বৃষ্টি দেখে, বৃষ্টির জল খায়।

একদিন দেখে এক প্যালিস্টাইনের পরিবার তাদের বাড়ি ঢোকে। দুটো বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে এক বাবা তার আসন্ন প্রসবা স্ত্রীকে নিয়ে ঢোকে। ফারাহ্ দেখে সেই স্ত্রী তাদেরই উঠানে এক পুত্র সন্তানকে জন্ম দেয়। এত দুর্যোগের মধ্যেও খুশীতে ডগমগ করে ওঠে গোটা পরিবার। কিন্তু ক্ষণিকের জন্য। বাইরে এসে দাঁড়ায় ইজ্রায়েলি সেনা। হত্যা করে সবাইকে। বাচ্চাটাকে তাদের উঠানে ফেলে রেখে যায়। মৃত্যুর জন্য।

বাইরে বাচ্চাটার কান্না আর ভাঁড়ারঘরে অসহায় ফারাহ্। দরজা ভাঙার শতচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এদিকে ফারাহ্ রজঃস্বলা হয়। ওদিকে ক্রমে বাচ্চাটার কান্না শান্ত হয়। এক সময় থেমে যায়। ফারাহ্ ডালের বস্তার মধ্যে লুকানো বন্দুক, কার্তুজ খুঁজে পায়। দরজা ভাঙে। পাগলের মত জল খায় পাশেই রাখা পাত্র থেকে। কয়েক পা এগিয়ে শোনে মাছির ভনভন শব্দ। তার উঠানে শুয়ে মৃত শিশু।

ফারাহ্ গ্রাম ত্যাগ করে। বাবাকে কোনোদিন খুঁজে পায় না। অন্য দেশে গিয়ে বাকি জীবনটা কাটায়। তার এই নির্মম দুঃস্বপ্নের মত বাস্তব গল্প পরের প্রজন্মকে শুনিয়ে যায়।

সিনেমার নাম ফারাহ্। ১৯৪৮ এর প্রেক্ষাপটে বানানো সত্য ঘটনা নিয়ে সিনেমা। পরিচালিকা দারিন জে সালাম। এই প্রথম সিনেমা। কোনো ক্ল্যাসিক কাজের স্পয়লার হয় না। যেমন 'পথের পাঁচালি', 'মেঘে ঢাকা তারা' ইত্যাদি সিনেমা বারবার দেখার, সবটা জেনেও, নতুন করে দেখার। তাই সেটা ক্লাসিক। এ সিনেমাও তাই। আইএমডিবি ৮.১, রটেন টম্যাটো ১০০%। সময় দৈর্ঘ্য, দেড় ঘন্টা।

আজ যদি আমার মোবাইলে, বাড়ির দরজায় আসা খবরের কাগজে প্রতিদিন এই নৃশংস যুদ্ধের খবর না বেরোতো আমি এই সিনেমাকে ভাবতাম মানুষের নৃশংসতার এক দলিল। ইতিহাস। কিন্তু আজ? গাজার হাস্পাতালের ছবি? এত এত নৃশংস শিশু মৃত্যুর খবর?

সিনেমাটা আমার মনে হয় দেখা আবশ্যক। ভীষণ ভীষণ আবশ্যক। ফারাহ্-র মত আমরাও আটকে। অসহায়তায়। আমাদের সবাই অনেক কিছু বোঝাচ্ছে। কিন্তু আসল কথাটা কেউ বলছে না, এটা ধর্ম না, নির্মম রাজনীতির শিকার হচ্ছে মানুষ। ধর্ম তো অজুহাত মাত্র। প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িয়ে অনেক শক্তিশালী দেশ।

সিনেমা হিসাবে এটুকু বলতে পারি, অভিনয় আর সিনেমাটোগ্রাফি এতটাই সজীব যেন আমি ওই রণক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে। আর পরিচালিকাকে কি বলব? কিছু কিছু শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তকে হয় তো আজীবন মনে থাকবে। নৃশংস বলে না। এত নিষ্ঠুরতার মধ্যেও ফারাহ্-র বেঁচে থাকার ভীষণ গল্পটাকে এইভাবে বলার জন্য।

কোথায় দেখলাম? নেটফ্লিক্স-এ।

এ সিনেমা নিয়ে আলোচনা হবে না। বড় বড় রিভিউ হয় তো পাওয়া যাবে না। এ সিনেমা জাগিয়ে রাখবে তখন, যখন ঘুমিয়ে পড়া পাপ। ভীষণ পাপ।

f02