লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের আকস্মিক মৃত্যুতে
কিছু মৃত্যু মেনে নিতে বড় কষ্ট হয়
যখন চারিদিকে আজ ভীষণ ভীষণ
দুঃসময়
(লেখিকা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের আকস্মিক মৃত্যুতে)
আশ্বাস
প্রভু,
প্রদীপটা না নিভুক,
আমার হাতের আড়াল পাশে
তোমার হাতের পরশ রাখো।
ভয়ে কেঁপে কেঁপে ওঠা শিখা-
তাকে করূণা পদ্মে ঢাকো।
এমন শকতি নেই প্রভু নেই
যা কিছু সব আনি
অনেক প্রণামে স্বার্থ মিশেছে
প্রণত হওয়াকে দিয়েছে গ্লানি।
আশ্বাস দাও, ফিরাবে না আর
যত দোষ ত্রুটি থাক
করূণাধারার প্লাবনে হে প্রভু
চিত্তশুদ্ধি পাক।
বাঁক
তুমিও জানো
অনেকটা পথ যেতে বাকি
তুমিও জানো
তবু কেন প্রতি পায়ের হিসাব রাখো
অনেক আরো সইতে বাকি
তুমিও জানো
তবু কেন সব ক্ষতকে জাগিয়ে রাখো
অনেক কিছু দিতে বাকি
তুমিও জানো
তবুও কেন কুড়িয়ে নুড়ি বেলা কাটো
অনেক কিছু ভাঙার বাকি
তুমিও জানো
তবুও কেন বালির ঘরে আগল ঘেরো
চোখ
চোখ না তো
ভলক্যানো
না ভলক্যানো না
শানানো ধারালো ছুরি যেন
না ছুরি না না
গিলেটিনের পাত যেন
না, তাও না, তাও না
গোলাপের কাঁটা যেন
কাঁটা বলব না গোলাপ?
তুমি বলবে প্রলাপ!
প্রলাপ না, প্রলাপ না - নেশা
চাবি হারিয়ে, ঘর হারিয়ে
এখন পাগল পাগল দশা
সুখ ও আনন্দ
আনন্দ আর সুখের পার্থক্যটা হল খোলা হাওয়া আর পাখার হাওয়ার মত।
পাখার হাওয়া পেতে আমার কিছু শর্ত আছে। একটা ঘর চাই, পাখা চাই, তার চাই, সুইচ চাই, সর্বোপরি বিদ্যুৎ চাই। তবে গিয়ে পাখার হাওয়া।
শুধু তাই না। পাখার নীচে যদি কেউ বসে, তাকে তাড়াবার কৌশলও ভাবতে হয়। সুখ এমন ধারাই। অন্যকে তাড়াতে চায়। না হলে তার নিজের ভাগে কম পড়ে।
এক সমুদ্র অনন্ত
তুমি চেয়েছিলে-
তাই অসীম থেকে হলাম সসীম
নিরাকার থেকে হলাম সাকার
তুমি ফিরে গেলে-
সসীম থেকে হলে অসীম
সাকার থেকে হলে নিরাকার
তোমার আর আমার মাঝে এখন
এক সমুদ্র অনন্ত
আমার কি?
তুমি আসলে
চোখের শান্তি
আমার কি?
তুমি বললে
কানের শান্তি
আমার কি?
তুমি ছুঁলে
দেহের শান্তি
আমার কি?
তোমার চুমুতে
ঠোঁটের শান্তি
আমার কি?
তুমি চলে গেলে
সব চলে যায়
আমার কি?
না আমারই যায়!
তবু তা আন্তরিক হোক
ওগুলো কি ফুল?
প্লাস্টিকের?
ফেলে দাও
বরং আনো কিছু বুনোফুল
তবু তা প্রকৃতির হোক
ওটা কিসের কাগজ?
গানের খাতা?
সরিয়ে দাও
না হয় দু'লাইনই গাও
তবু তা প্রাণের হোক
এ কিসের মিছিল?
প্রভাতফেরী?
বন্ধো করো
না হয় নিভৃতে বসো তাঁর কাছে
একান্তে একটা প্রণামই জানাও
তবু তা আন্তরিক হোক
আমার মা
আজ কিছু কথা মায়ের ব্যাপারে বলতে ইচ্ছা করছে। খুব অদ্ভুত মানুষ। উড়িষ্যার কালাহান্ডির খড়িয়ার নামের এক গ্রামে মায়ের জন্ম। দাদু ছিলেন সরকারী হাসপাতালের ডাক্তার। খুব নামডাক ছিল তাঁর। দাদুরা ছিলেন প্রবাসী বাঙালী। খুব রোগীবৎসল চিকিৎসক। গ্রামের অচ্ছুত, অশিক্ষিত, সব স্তরের মানুষের খুব কাছের লোক ডাক্তার শিবপদ চ্যাটার্জী।